Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

কবি ও লেখক রব গর্গের কবিতা গুচ্ছ

চন্দ্রাবলী লো....                               রব গর্গ।
চন্দ্রাবলী লো,বলতো আমার এতো প্রেম কেন আসে!দিন-কাল-বার কিছুই না মানে,সকাল বা দুপুরে বিকেল বা সাঁঝে।নাই ভাঁটা,নাই চরা,নাই কোন চোরা স্রোত.......  বলতে পারিস ননদিনি,আমার প্রেমে …

 


চন্দ্রাবলী লো....

                               রব গর্গ।


চন্দ্রাবলী লো,বলতো আমার এতো প্রেম কেন আসে!

দিন-কাল-বার কিছুই না মানে,সকাল বা দুপুরে বিকেল বা সাঁঝে।

নাই ভাঁটা,নাই চরা,নাই কোন চোরা স্রোত.......  

বলতে পারিস ননদিনি,আমার প্রেমে কেবল-ই জোয়ার কেন আসে?

সুখের অভাব কেন রে আমার স্বামীর সকাশে,স্বামী-গৃহবাসে?

সুখ শুধু পাই কেন শ্যামের বাঁশিতে,পীত-পিন্ধনবাসি শ্যামের পরশে?

যেদিকে তাকাই,যে দিকে ফিরাই চোখ সদাই দেখি কালো বরন...

তেগিয়া সমস্ত কিছু সদা প্রান চায়,কালার সাথে করতে কাল হরণ!

একি হলো রে আমার ঘরেতে টেকে না মন,সংসারে 

পাই না কোন রুচি।

কোন ওঝা কি করে,বৈদ্যেরও অসাধ্য কাজ,যমুনার 

তীরে গেলেই যেন বাঁচি!

চন্দ্রবলী,ওলো সখী বলতে কি পারিস.......

এই অভাগীর মনে কোথা থেকে আসে প্রেমের এত বারিষ! 

ননদি-শাশুড়ির মুখে বড় খর-তাপ.....

করে ফালা ফালা যেন অগ্নি-শলা!

ধিক!এই জীবনে,আমি একা যে হই কলঙ্কভাগী,

বাকি তোরা সব যেন শশিকলা!

কুল-মান সব গেল যেন হায়...!

করে মন ত্যাজি প্রান ওই যমুনার জলে...

কৃষ্ণ-দাস কবি কয়,বান্দরের হাতে যদি পরে "মোতি", হায়! 

"মোতি"-র যে কি হয় দুর্গতি দেখুক সকলে!

...............................................................

বিফল বাসর।


চন্দ্রাবলী,ও লো সখী,

একটা কথা বলো দেখি,

কেন মোদের দিন কাটে হায় পুষ্প চয়নে!

কত করি বাছা-বাছি কিছুই যেন ধরে না নয়নে।

সেই পুষ্পে সাজায়ে বাসর,

সাজায়ে চিকুর-চাঁচর....

বৃথা যে যায় বিভাবরী সখী,একাকী জাগরণে....

উতলা বড়ই রাই....শ্যাম অ-দর্শনে।

ধৈরয ধরে না আর ক্লিষ্ট-কলেবর...

বিকল হৈল' সকল সজ্জা,বিফলে যায় বাসর...

কোন রাজ-কার্য করে রে যশোদা-কুমারে!

করয়ে করাঘাত রাই নিজের কপালে।

পূরি-তে দাসীর অভিলাষ কিছু-মাত্র ঘড়ি নাহি মেলে!

প্রান-নাথ আসার আশা যায় যে সখী অস্তাচলে....

হৈল যে প্রায় নিশি অবসান,দিবা শুরু হৈল বলে!

উচাটন মন,ধনি করয়ে রোদন....কোথা রৈলে' বলে।


শ্রীমতী-পতি-র চরণে করেন প্রণতি ভক্ত কবি এক জনা।

ফরিয়াদ আছে কিছু প্রভু করি নিবেদন,অগ্রে চাহি যে মার্জনা......

পুষ্প জীবন হয় কি পূরিত বিনে মকরন্দ?

কাব্য কবহুঁ সার্থক হয় যদি না থাকে তায় ছন্দ?

রাই-র সাঁজ হয় কি পূরণ কবরীতে কুন্দ মালা বিনে?

সরোবরের শোভা হয় না যৈছে স্বচ্ছ সলিল বিনে!

প্রেম-বাসরের শোভা তুমি তো নিজে ঠাকুর......!

রাধা কদা সম্পূর্ণ হয় শ্যামলাল বিনে?

কিছুই কি অজানা তোমার?

তোমার পরশনে সুর যে খোলতাই হয় শ্রীরাধার মনো-বীনে!

অ-গতির গতি,তুমি ত্রিভুবন পতি....কৃপা করি রাখিও

এই ভক্তেরে ধেয়ানে।


রব গর্গ।

২১/১/১৯

......................……………………………….............

আকুতি 


এক দিন শেষ হয়ে যাবো .... 


কুয়াশার ভারে ম্লান হয়ে যাওয়া ভেপার ল্যাম্প এর মতো আবছা এ জীবন ..এক দিন শেষ হবে।



অথবা বরফে চাপা মাছের চোখের মতো অস্বচ্ছ, শীতল এ জীবন,

কোনো  আরক - ই যাতে আর মদিরতা আনে না।

এক দিন তা শেষ হয়ে যাবে।


কোনো নবান্নের দেশে ফিরবো না আর কখোনো,

কোনো ভাদু,টুসু বা অন্য কোনো টোটেমের দেশে ও না 


কোনো হিজল,হেতাল বা পাকুড় এর দেশ বা

শিউলি ঝড়া, শিশির ভেজা কোনো পথেও ফিরবো  না আমি।

পুই মাচানের পাশে নিকনো কোনো আঙিনাতে ও না,

কোনো  সাগর, কোনো মরুর দেশে ও ফিরে পাবে না।


আমায় পাবে সন্তানের চাহনিতে,সন্তানের চোখের তারায় খুঁজে  নিও আমায়। 

             খুঁজে  নিও আমায়।

আর থাকব তোমার স্মরণে...অবিরাম।

জল সিঞ্চন কোরো স্মৃতিতে তোমার,আমি জীবন্ত  থাকব তোমার শীরায় - উপশীরায়, প্রতি পলে.... অনুপলে.......। 


রব গর্গ।

৩০/১১/১৭

.............................................................

কবির প্রেম।

            রব গর্গ,৮২৫০৯৩৭৯৩১,৯৬৩৫৭৬৪৯৩৩


আকাশে আজ আবার কুমারি মেঘেদের জমায়েত।

যৌবনের ভারে তাদের গাতি স্লথ!

প্রচন্ড রোদের তাপে তাদের গায়ের রঙ তামাটে। 

তীব্র কালবৈশাখী ওদের বুকের আঁচল উড়িয়ে নিয়ে

গেছে কারো কারো!

বাকি রা কালবৈশাখীকে তাড়া করছে ওদের যেন 

বে-আব্রু হতে না হয়!

লজ্জায়,আভিমানে নগ্ন বুকের যুবতী মেঘদের চোখে জল।

হাল্কা ভাবে ঝরে পড়া সেই অতি পবিত্র জলে তৃষ্ণা

মেটানোর জন্য দেখ চাতক এর দল সারা আকাশ উড়ে বেড়ায়!


পৃথিবীর এক কোনে এক কবি নির্জনে বসে ওই মেঘ

দের কামনা করছে।

কবি মনে মনে চাইছেন ওই নগ্ন বুকের যুবতী মেঘে রা

নেমে আসুক পৃথিবীতে...কবির নগ্ন বুকে এসে মিশে যাক তাদের ভেজা শরীর নিয়ে!

তাদের পবিত্র অনাঘ্রাতা শরীর পুরুষের স্পর্শ পেয়ে আরো কমনীয় হয়ে উঠুক।

কবি কে তৃপ্ত করে উড়ে যাক ইন্দ্রপুরী,দেবরাজ- এর

কাছে গিয়ে গর্বের সাথে পরিচয় দিক নিজেকে.... কবি-র প্রেমিকা হিসাবে!

......................................................................

প্রেম।

                              রব গর্গ।

                                     

সাত সমুদ্র পার হতে পারব না.......


এখানেই,এই সমুদ্রের সামনে দাড়িয়ে এক সমুদ্র প্রেম নিবেদন করছি তোমায়....

কথা দিচ্ছি কোনো দিন হারিয়ে যাব না,

সামনে যত গুলো ঢেউ দেখছ, তত গুলো জনম ধরে একসাথে থাকব.......


                  চল্লিশ বছর আগে কলেজ পড়ুয়া এক যুবক তার সহপাঠিনীর হাতে হাত,চোখে চোখ রেখে বলেছিল এই কথা গুলো.......


কলেজ থেকে এক্সকারসানে এসে দলছুট হয়ে  বেরিয়ে পরেছিল ওরা,সবার নজর এড়িয়ে.....


কালের নিয়মে সংসার হয়েছিল,সন্তানও হয়েছিল।

ব্যস্ততা বাড়লেও ওই বিশেষ তারিখে ওরা এখানে আসত প্রতি বছর,বিশেষ দিন টি কে স্মরন করার জন্য....


২০০৪ এর সুনামি দুজনকেই ভাসিয়ে নিয়ে যায়....


তিন দিন পর হাস্পাতালে চেতনা ফিরেছিল বছর ষাট এর মিস্টার সেন এর।

শ্রীমতি সেন  নিখোঁজ সেই থেকে.....


...........   আজ হাতে একটা ফুলের তোড়া নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মিস্টার  সেন কন্যাকুমারীতে,  সুনামিতে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের স্মরণে বানানো  সৌধের দিকে.......


 জল ভরা চোখে অস্ফুট স্বরে বলে চলেছেন.....সাত সমুদ্র পার হতে পারব না............

.....…..............................................................

শাল্মলী এবং....


তোমার কি হয়েছে বলতো সৌম্য?

কেমন যেন হয়ে গেছ তুমি আজকাল।

এত পরিবর্তন তোমার কেন হচ্ছে!


কাল রাতে যখন বিয়ে বাড়ী থেকে ফিরলাম আমি,

বাচ্চারা তো ঘুমিয়ে পড়েছিল গো।

বিয়ে বাড়ী যখন গিয়েছিলাম তখন তো ফের নি তুমি।

তোমার পছন্দের রং এর শাড়ী পরেই গিয়েছিলাম,

মাথায় ফুল ও দিয়েছিলাম।

মাথায় ফুল দেওয়াটা তো তুমি ভালবাস,তাই তো আমি দিই,বিয়ের আগে আমি দিতাম না। 

আমি কিন্তু মনে মনে রোমাঞ্চিত হতে হতে এসেছিলাম...তুমি নিশ্চই আমায় দেখে চমকে যাবে!

অনেকটা ভাল লাগা এসে ভীড় করবে তোমার চোখে!

একটু হলেও তুমি আমায় জড়িয়ে ধরে আদর করবে

আজ...


কি অবাক কান্ড,তুমি এর কিচ্ছুটি করলে না.... 

ভ্রূক্ষেপও করলে না তুমি আমার দিকে!

দরজা টা খুলে দাড়িয়েই রইলে,যেন অচেনা মানুষ....

কি হল তোমার!


আমি উপরে গেলাম,অপেক্ষা করলাম তোমার জন্য..

তুমি নিচে,তোমার অফিস ঘরেই রইলে।

শাড়ীর পিছনের দিকের পিন টা খুলে দেবার জন্য 

ডাকলাম আমি তোমায়।

তুমি আসতেও দেরী করলে উপরে।

কোন রকমে খুলে নিয়েছিলাম আমি।

তুমি যখন উপরে এলে শোবার ঘরে হাল্কা আলো 

জ্বলছিল...

তোমার এনে দেওয়া, তোমার পছন্দের অন্তর্বাস টুকুই

মাত্র ছিল আমার শরীরে তখন!

আমি বার বার চাইছিলাম বক্সার জংগল থেকে তুমি 

এক থাবা বন্যতা ধার করে নিয়ে এসে আমার মাংসল বুকে ঝাপিয়ে পড়ে আমায় একটু আদর কর...

....একটু বুনো আল্পনা এঁকে দাও আমার ভরাট বুকে!

আমার প্রায় উন্মুক্ত শরীরে তোমার নখ দিয়ে একটা 

মানচিত্র এঁকে ফেল যেটা "রায়মাটাং"বন বাংলোয় যেতে সাহায্য করবে।

ওখানে যেতে যে আমরাও পথ হারিয়েছি কত  বার!


 কিছু না হোক,এই টুকু চেয়েছিলাম.. 

এই মাঝ রাতে তুমি আমার নিজের শরীরের মানচিত্রটা অন্তত একবার হলেও আগ্রহ নিয়ে দেখবে......হারিয়ে যেতে চাইলে হারাবে!


আশ্চর্য! 

তুমি ঘরে এলে,কি একটা নিয়ে আবার নীচে নেমে

চলে গেলে!

সৌম্য কি হয়েছে গো তোমার?

আমার চোখের দিকে একটি বার তুমি তাকালেও না!!

এত নির্লিপ্ততা কেন তোমার আমার উপর?


রাগে-দুুঃখে শুয়ে পরেছিলাম একাই,কখন তুমি এসে 

শুয়েছিলে টের পাই নি। 


আবার দেখ কাল...

কাল রাতে তুমি গিয়েছিলে বিয়ে বাড়িতে।

মাঝ রাত অবধি আমি জেগে রইলাম তুমি ফিরবে বলে।

দরজা খুলে দিলে তুমি ঢুকলে ভিতরে...

...আমি চাইছিলাম ওই আধো অন্ধকারে দাড়িয়ে তুমি আমায় একটু হলেও আদর করবে!

আমার ঠোঁট দুটো রাঙিয়ে রেখেছিলাম তোমার পছন্দের রঙ-এর লিপষ্টিকে।

ঠোঁট দুটো আমার খুব উত্তেজিত হয়ে অপেক্ষা করছিল তোমার জন্য....

খুব চেনা একটু উষ্ণতার ছোঁয়া পাবে বলে।

দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে রেখে আমায় তুমি একটুও ভালবাসতে পারলে না!

একবার তোমার বুকে টেনে নিতে পারলে না!

এমন ডাকাতি তো তুমি করেছ আগে অনেক বার....


কি করে তুমি এই ভাবে আমায় এড়িয়ে উপরে উঠে গেলে!

আমার দিকে তাকালেও না ভাল করে।



সৌম্য,তোমার মধ্যের ভিসুভিয়াস টা কোথায় গেল! 

আগাম কোন সংকেত না দিয়েই যা মাঝে মাঝে আগুন উগরে দিত আমার মধ্যে!

আমি কেন দেখতে পাচ্ছি না সেটা তোমার ব্যবহারে!


 আমি কি ফুরিয়ে গেছি তোমার কাছে?

তোমাকে প্রজ্জ্বলিত (Ignite)করবার ক্ষমতা কি আমি হারিয়ে ফেললাম সৌম্য?

সৌম্য,আমরা কি আগুন হয়ে আর জ্বলব না এক সাথে কোনদিন,কখনো!


গলার পেশীগুলোয় বড্ড চাপ টের পাচ্ছে শাল্মলী,

ঢোক গিলতেও পারছে না!

অনেকটা কান্না দলা পাকিয়ে উঠে আসছে উপরে.....

একটা জান্তব শব্দ শুধু বেরিয়ে এল ওর গলা দিয়ে....

"সৌম্য আমি যে এখনও মাত্র ৪২!!"


রব গর্গ।

১/২/১৯

.............….....…..................................