Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

#আচ্ছাদন 
✒️ #Bharati_Das ✒️
আজ ছোট্ট গ্রামটা-তেও শহুরে ছোঁয়ার প্রলেপ লাগতে শুরু হয়েছে ধীরে ধীরে।
একটার 'পর একটা বাঁশের খুঁটিতে ঝোলানো হল তার। বিদ্যুৎ এলো একদিন আঁধারের বুক চিরে। রাতের আঁধারে এখন আর জোনাকি চোখে পড়ে না।গ্রামে ব…

 


#আচ্ছাদন 


✒️ #Bharati_Das ✒️


আজ ছোট্ট গ্রামটা-তেও শহুরে ছোঁয়ার প্রলেপ লাগতে শুরু হয়েছে ধীরে ধীরে।


একটার 'পর একটা বাঁশের খুঁটিতে ঝোলানো হল তার। বিদ্যুৎ এলো একদিন আঁধারের বুক চিরে। রাতের আঁধারে এখন আর জোনাকি চোখে পড়ে না।

গ্রামে বনেদি বাড়ি বলতে দত্তদের দালান। সন্ধ্যার পর যেন মেলা বসে যায় সেখানে।

আমি প্রথম টেলিভিশন দত্তদের বাড়িতেই দেখেছিলাম। সে প্রায় বছর পঁয়ত্রিশ আগের কথা। দুই দাদার আমি একমাত্র বোন। সংসারে অভাব থাকলেও আদর ছিল অফুরন্ত। দিনমজুরের মেয়ে আমি, অষ্টম শ্রেণী পেরোতেই হয়ে গেলাম রিক্সাওয়ালার বউ।


সময়টা কখন হাতের ফাঁক গলে পেরিয়ে গেল, হিসেব মেলাতে পারিনি। ছেলে-মেয়ে দুটোকে নতুন কাপড় দিতে হবে, সামনেই দুর্গাপুজো। ঘরের ভাঙা টালি গুলো পাল্টাতে হবে, খোকার বাপের অসুখ, কাজ নেই, মহামারী কবে যে যাবে কে জানে.... 


"সরমা দি বাড়ি আছো?"

কে যেন জীর্ণ দরজার কড়া নাড়ছে। গলাটা বেশ চেনা লাগলো। বাইরে এসে দেখি ছেলেটা অনেকদিন পর এলো শহর থেকে।


শুধালাম, "এবার ক'ঘন্টার কাজ অতনু"

"তিনটে সিটিং মানে মোট ছ'ঘন্টা, দিদি"

"আগের রেটে কাজ করতে পারবো না, সামনে পুজো, সবই তো বোঝো ভাই। "

"না দিদি, এবার পুরো ১০ হাজার দেবো।"

"ওটা পুরো ১২ হাজার করে দাও, ভাই, মহামারীতে জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া। "


অতনু একপ্রকার নিরুপায় হয়েই সম্মতি জানালো। ওরা ছ'জন মিলে দু'হাজার করে দিলে কারোর ওপর চাপ পড়বে না। 

"বুঝতেই তো পারো ভাই, কাজের বাড়ি গুলো থেকে ছুটি নিতে হবে, মাইনে কাটা যাবে। পুজোর সময়। তোমার কাছে কবে আর কোথায় যেতে হবে জানিয়ে দিও। "


আজ পঞ্চমী। পুজো প্যান্ডেলে প্রতিমা নিয়ে যাবার তোড়জোড়। ঢাকের বাদ্যি, ধুনোর গন্ধ আকাশে বাতাসে আর আমি একটা করে সুতো শরীর থেকে সরিয়ে রেখে হয়ে উঠি নিশ্চল মানবী। সিমেন্টের বেদীর ওপর 'ওদের দেখানো অদ্ভুত ভঙ্গিমায়' কেটে যায় মূল্যবান সময়। 'আর্ট পিপাসু' ছেলেমেয়ে গুলো দ্রুত হাতে গ্রাফাইট আর কাগজে ধরে রাখতে মরিয়া আমার দেহের আদিমতা।


নতুন জামাকাপড় নিয়ে ফিরতেই ঘরে বেশ খুশির বাতাবরণ। ছেলে-মেয়ে দুটো পাশের ঘরে ঘুমোতে গেলে এসে বসি স্বামীর পাশে। আত্মগ্লানিতে মুখটা কালো খোকার বাবার। 

"তোমার জন্য কিছু কেনো নি?"

"আমার তো তোমরাই সব"

"বছর শেষে মা আসছে, একটুকরো নতুন বস্ত্র......"


.....কথাটা শেষ হবার আগেই বলে উঠি

"আর্ট কলেজের স্টুডেন্ট গুলো আছে, তাই আমরাও বেঁচে আছি গো এই চরম দুরবস্থায়।আমার আবৃত শরীরের কোন দর দাম নেই। যা কাপড় আছে, তাতেই আমার হয়ে যাবে, তুমি চিন্তা করো না" ....


আজ অন্ধকার টা খুব খুব আপন মনে হচ্ছে। দিনযাপনের গ্লানিবোধ মন থেকে সরিয়ে রাখতে অন্ধকারের চাদরে গা ঢাকলাম।