#গল্প#শপিং_কোবরা#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য
-- আরে! রথীন না?-- অনি-- তুই এখানে ? এতোগুলো বছরে কি চেঞ্জ হয়েছে রে তোর! তুই নিজের থেকে কথা না বললে তো তোকে চিনতেই পারতাম না রে...-- তুইও অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছিস রথীন। কলেজের রেস্টলিং চ্যাম্পিয…
#গল্প
#শপিং_কোবরা
#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য
-- আরে! রথীন না?
-- অনি-- তুই এখানে ? এতোগুলো বছরে কি চেঞ্জ হয়েছে রে তোর! তুই নিজের থেকে কথা না বললে তো তোকে চিনতেই পারতাম না রে...
-- তুইও অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছিস রথীন। কলেজের রেস্টলিং চ্যাম্পিয়নের চেহারার একি হাল? গাঁজা টাঁজা টানছিস নাকি আজকাল? না কোনো কঠিন রোগ বাঁধিয়ে বসেছিস?
-- তুই তো শালা সব জানিস, নেশার ধার দিয়ে গেছি কোনোদিন ? তবে কঠিন রোগই বটে। একটা কষ্টমিশ্রিত হাসি ফুটে উঠলো ওর চোখে মুখে।
আমি বড়বড় চোখ করে ওর দিকে তাকালাম -- কি হয়েছে রে?
ও শশব্যস্ত হয়ে বলল -- আরে, আমার নয়। আমার স্ত্রী জয়িতার।
-- সেকি রে! কি হয়েছে কি ওর?
-- সে অনেক বড় কাহিনী। একদিন আমার বাড়িতে আয়, সব বলবো।
রথীন আমার কলেজের বন্ধু। সেদিন একটা ওষুধের দোকানের সামনে বহুবছর পর হঠাৎ ওর সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল। তবে কথা আর বেশী এগোয়নি। জয়িতা দু'হাতে দুটো বড় বড় ব্যাগ নিয়ে শশব্যস্ত হয়ে হাজির হয়েছিল সেখানে। মনে হয় কোনো বিয়ে বাড়ির শপিংটপিং ছিল। খুব হাসিখুশী আনন্দোচ্ছ্বল মেয়ে জয়িতা। ওকে দেখে তো মনেই হলো না, ওর কোনো কঠিন রোগ থাকতে পারে। আমাকে কতোবার ওদের ফ্ল্যাটে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করলো, সে একেবারে হাত ধরে টানাটানি। সেই তুলনায় রথীনের ইচ্ছাটা একটু কম বুঝতে পেরে আমিই কোনোমতে একটা কিছু অজুহাত দিয়ে ছাড়া পেয়েছি। বললাম -- ফোন নং পেয়ে গেছি, ঠিকানা পেয়ে গেছি, এবার তো যাবোই। কলেজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু, রথীনের ফ্ল্যাটে না গেলে কোথায় যাবো?
যেতে যেতে গাড়ি থেকে মুখ বার করে জয়িতা বলল -- আসবেন কিন্তু-- আমরা অপেক্ষায় থাকবো--
জয়িতার ব্যবহারে আমি সত্যিই অবাক হলাম। ওকে দেখে কেউ বলবেই না, রে আজ আমাদের পরিচয়ের প্রথম দিন।
রথীন পরে আরও দু'তিনবার ফোন করেছে আমাকে ওদের ওখানে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমিই সময় করে উঠতে পারিনি। আজ বিকেলের দিকে আবার জয়িতাকে একটা শপিং সেন্টার থেকে দু'হাতভর্তি মাল নিয়ে বেরোতে দেখে, মনে পড়ে গেলো ওদের ওখানে যাওয়ার কথা। ভাবলাম -- আজ কোনো ফোন টোন না করে হঠাৎ ওদের বাড়িতে পৌঁছে গিয়ে সারপ্রাইজ দেবো ওদের।
ডিউটি থেকে বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যার ঠিক পরে পরেই পৌঁছে গেলাম ওদের ফ্ল্যাটের সামনে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে, রথীনের পাঠানো এস এম এসটা দেখে ঠিকানাটা আরো একবার মিলিয়ে নিলাম। একেবারে ঠিক জায়গায় এসে পৌঁছেছি। কলিংবেলের সুইচে চাপ দিলাম, সাথে সাথে ভেতরের কলিংবেলের আওয়াজ কানে এলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম, কেউ দরজা খুললো না। আরো দু'বার কলিংবেল বাজালাম। ভেতর থেকে কারো কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ভাবলাম -- কেউ বোধহয় বাড়িতে নেই, ফিরে যাওয়াই ভালো। একটা ফোন করে আসাই উচিত ছিল।
বাড়ি ফিরবো বলে আমি সবেমাত্র পেছন ফিরেছি, হঠাৎ ভেতর থেকে ধরাস্...করে কিছু একটা পড়ার শব্দ। আমি চমকে দরজার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম। এবার ভেতর থেকে বিকট একটা গোঁ-গোঁ করে গোঙ্গানির শব্দ কানে এলো আমার। আমি তাড়াতাড়ি দু'চারবার কলিংবেল টিপে দরজা ঠক্ঠক্ শব্দ করে কেউ খুলছে না দেখে, সজোরে দরজায় কয়েকটা লাথি মারলাম। লকভেঙ্গে দরজা খুলে গেল। ঘরে ঢুকে আমারতো চক্ষু চড়কগাছ। গোটা ঘরে জিনিসপত্র ছড়ানো, সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত জয়িতার দেহটা ছটফট করছে, আর তার মুখ থেকে সেই বিকট গোঙ্গানির শব্দ বেরিয়ে আসছে।
পাশে পড়ে থাকা স্টুলটা ওর পায়ের নীচে দিয়ে, তুলে ধরলাম ওকে। গলার ফাঁসটা অনেক শক্ত হয়ে আটকে বসে যাচ্ছিলো গলায়। অনেকটা কেটে গেছে গলাটা। অনেক কষ্টে সব খুলে ফেলে ওকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুয়িয়ে দিলাম। আশেপাশের ফ্ল্যাটে খবর দিতেই ছুটে এলো অনেকে। রথীনকে ফোন করতেই, আধঘণ্টার মধ্যে সেও এসে গেল।
জয়িতাকে নার্সিংহোমে অ্যাডমিট করে রথীনকে আমার বাড়িতেই নিয়ে গেলাম। ওর মন মেজাজ মোটেই ভালো নেই, রাত্রে কিচ্ছুটি মুখে তুলতে পারলো না। একপ্রকার খালি পেটেই চুপ করে শুয়ে রইলো আমার পাশটিতে। মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে আর আমি ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছি -- চিন্তা করিস না, দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু মনের ভেতর বারবার একটা প্রশ্নই জাগছে -- কেন এমন হলো? ওদের মধ্যে সম্পর্ক কি ঠিক নেই তাহলে?
অথচ এই মুহূর্তে রথীনকে এসব জিজ্ঞাসা করাও তো উচিত নয়। মনে প্রশ্ন নিয়েই আমিও চুপ করে শুয়ে রইলাম। জয়িতার মুখটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে, ঘুম আসছে না কিছুতেই। হঠাৎ রথীন নিজেই মুখ খুললো -- জয়িতা আগেও একবার সুইসাইড অ্যাটেম্প্ট করেছিল জানিস! সেবার যদিও এতোটা এগোয়নি। জাস্ট ফ্যানে শাড়িটা বাঁধতে যাবে, আর আমি চলে এসেছিলাম। তোকে বলেছিলাম না? ওর একটা কঠিন রোগ আছে... রোগটার নাম 'অনিমেনিয়া'।
এই রোগের নামটা আমি কোনোদিন শুনিনি। তাই জিজ্ঞেস করলাম -- এটা আবার কি রোগ? শুনিনি তো কখনো!
-- সহজ বাংলায় এই রোগ হলো তীব্র শপিং এর প্রতি আকর্ষণ। ব্যাপার টা শুনতে খুব সহজ বা হাস্যকর লাগতে পারে, কিন্তু ভুক্তভোগীদের জন্য অনেক বেশী কষ্টকর। শপিং এর আকাঙ্ক্ষাটা তখনই রোগ হিসেবে পরিগণিত হয়, যখন বারবার শপিং করাটা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। ইন্টারেষ্টিং ব্যাপার হচ্ছে, রোগী শপিং চলাকালীন সময়ে তার যাবতীয় কষ্ট ভুলে থাকে এবং দারুণ প্রফুল্ল থাকে।
-- সে তো হবেই। রোগটির সূচনা যে শপিং এর প্রতি আকর্ষণ থেকেই ! কিন্তু এর সাথে আত্মহত্যার প্রবণতার কি সম্পর্ক? জয়িতার সাথে কি তুই শপিং করার জন্য ঝগড়া করতিস?
-- না রে... মুশকিলটা হচ্ছে, রোগী যখনই শপিং সেরে বাড়ি ফিরে যায়, তখনই সে তার কিছুক্ষণ আগের করা অপচয়ের জন্য অনুশোচনায় ভুগতে থাকে। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা এই ধরণের শপিং এর জিনিসপত্র একেবারেই নষ্ট করে ফেলে, যাতে পরের বার আর সে না যায়।
-- সেই জন্যই তোর বাড়িতে দেখলাম, আজকেরই শপিং করা জিনিষগুলো জয়িতা ভাঙ্গা ছেঁড়ার চেষ্টা করেছে। গোটা ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জিনিষগুলো।
-- ঠিক ধরেছিস। ও এটা মাঝে মাঝেই করে। কিন্তু হলে কি হবে, রোগের সংজ্ঞাই বলে, শপিং তাকে করতেই হবে !!!!
-- ফলে আবার শপিং, আবার মানসিক যন্ত্রনা। আর ঐ একই কারণে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা। শপিং তো নয়, যেন বিষাক্ত কি