তরুন চট্টোপাধ্যায় আজ মহাসপ্তমী।করোনা আবহে পুজোর লাবন্য কমেছে বৈকি।আর কি ভাবে থাকবে।প্যান্ডেলে তো ঢোকা যাবেনা।পুলিশ নো এন্ট্রি বোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে গেছে।বাইরে থেকেই মা দুর্গা দর্শন ।ঠাকুর অবশ্য আমি কোন দিন ই দেখাতাম না।আসলে ঐ ভিড় ঠেল…
তরুন চট্টোপাধ্যায়
আজ মহাসপ্তমী।করোনা আবহে পুজোর লাবন্য কমেছে বৈকি।আর কি ভাবে থাকবে।প্যান্ডেলে তো ঢোকা যাবেনা।পুলিশ নো এন্ট্রি বোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে গেছে।বাইরে থেকেই মা দুর্গা দর্শন ।ঠাকুর অবশ্য আমি কোন দিন ই দেখাতাম না।আসলে ঐ ভিড় ঠেলে ভিতরে যাবার ইচ্ছা হতো না বলেই।তখন তো আর করোনার ভয় ছিল না।তবুও কেন যেন জানি না জনস্রোত দেখলে আমার ভিতর কি যেন কাজ করতো।তাই দূর থেকেই কপালে হাত।আজ কিনা সেই দিন এলো।ভিড় হঠাও।
তাবলে এই নয় ছেলেবেলা তে এমন ছিলাম ।থাকতাম মফঃস্বলে।তখন ইস্কুলে পড়ি।দাদারা গ্রাম থেকে লরী ছাড়লো।কলকাতার ঠাকুর দেখার জন্য ।আমাকেও সেই দলে নিলো।
ভারি উৎসাহ ।কলকাতা যাচ্ছি ।লরী চেপে।ঠাকুর দেখবো বলে।সে ভাবে কিছুই চিনি না।হাওড়া ব্রীজ ছাড়া ।দ্বিতীয় হূগলী সেতু তখন ও হয়নি।কলকাতা সেদিনের আর আজ আসমান জমির ফারাক।তবুও মিল আজও এক জায়গায় ।সেটি হলো দুর্গা পুজো কে কেন্দ্র করে জনস্রোত।যেটি এ বছর কেড়ে নিয়েছে করোনা।
যাইহোক চলেছে আমাদের লরী।কোথাও দাঁড়াতে দিচ্ছে না পুলিশ ।চক্রাকারে ঘুরছে আমাদের লরী।ঠাকুর দেখবো কোথায় ।
ড্রাইভার কেবিনের মাথায় দাদারা।আমাদের ওখানে বসার পাসপোর্ট নেই।তাই আমরা নীচে।চারদিকে ঘেরা।পড়বার কোন চ্যান্স নেই।
মনে মা দুর্গা কে দেখার ইচ্ছে ।কিন্তু দেখবো কি করে পুলিশ যে আমাদের লরী কে প্যান্ডেলের আশে পাশে ঘেঁষতেই দিচ্ছে না।ফলে সারারাত কলকাতার রাস্তায় চক্কর দিয়ে শেষে দক্ষিনেশ্বরের মন্দির।
ভোর তখনও হয়নি।হবে হবে করছে।মানুষ জন সেভাবে আসেনি।ঠাকুর তো একটিও দেখা হলো না।শেষমেষ গঙ্গায় ডুব।
ভোরে মায়ের মন্দির খোলার পর মাকে দর্শন ।সব দুঃখ গলে ক্ষীর।যেই দুর্গা সেই কালী।ঠাকুর না দেখার দুঃখ ভুলে জগৎজননী মার মূর্তি দেখেই ফিরে আসা।
তারপর থেকে আর কোনদিন গ্রাম থেকে ঠাকুর দেখার জন্য লরী ছাড়েনি।এবছর বোধহয় ছাড়লে ভালো হতো।জনস্রোত তো হাওয়া।
এতদিন নানা চেষ্টা করেও পুলিশ পারেনি ভিড় আটকাতে ।আর আজ একটি ভাইরাস আর মহামান্য কোর্টের নির্দেশ কলকাতার জন সমুদ্র কে এক লহমায় ফিকে করে দিলো।
সামনে বছর আবার জন স্রোত নামুক রাজপথে।জন সমুদ্র হয়ে উঠুক কলকাতার রাস্তা ঘাট।মানুষ ফিরুক আবার সেই জীবনে।যে জীবন কদিনের জন্য কেড়ে নিয়ে গেছে করোনা ভাইরাস।