।।সখী,অন্য পুজো কারে কয়।।সুদীপ মাইতি পুজোর অন্য কথা। সেটা কিরকম হতে পারে তাই বুঝতে পারছি না। প্রতি বছর নিয়ম মেনে মা আসেন। সেই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, এবং দেখেও চলেছি। তাই অন্য কথা কি হতে পারে? ছোটবেলায় যখন হয়তো হাঁটি হাঁটি পা পা,…
।।সখী,অন্য পুজো কারে কয়।।
সুদীপ মাইতি
পুজোর অন্য কথা। সেটা কিরকম হতে পারে তাই বুঝতে পারছি না। প্রতি বছর নিয়ম মেনে মা আসেন। সেই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, এবং দেখেও চলেছি। তাই অন্য কথা কি হতে পারে? ছোটবেলায় যখন হয়তো হাঁটি হাঁটি পা পা, তখন নিশ্চয় বাবা মায়ের হাত ধরে বা কোলে করে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি। হয়তো প্যান্ডেলের সামনে দাঁড়িয়ে বা কোলে থাকা অবস্থায় হাত জোড় করে প্রণাম করেছি। তবে সেটা মাকে না মহিষাসুরকে বলতে পারবো না। আসলে তখন কাকে কি চাইতে হবে তা জানা ছিল না। আজ যদিও কিছুটা বুঝতে পারি। তাই এখন যদি কিছু আমাকে চাইতে বলা হয় তবে মহিষাসুরের কাছেই চাইবো। কারণ সব ক্ষমতা আজ তাদেরই হাতে।ঠাকুর এখানে নিমিত্ত মাত্র।
তারপর একটু বড় হয়ে হয়তো জামা বা প্যান্ট কোনো একটা নতুন কিছু পরে ঠাকুর দেখতে যেতাম। পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে। পুজো বলেই এই স্বাধীনতা। যা মিলে মিশে যেত প্যান্ডেলে বাজা এই গানটার সঙ্গে।
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে,
শাখে শাখে পাখি ডাকে
কত শোভা চারিপাশে,
আজকে মোদের বড়ই সুখের দিন
আজ ঘরের বাঁধন ছাড়া
মোরা হয়েছি স্বাধীন।
একবার হলো কি, বন্ধুদের সঙ্গে প্যান্ডেলে ঘুরছি। বন্ধুদের একজনের হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। পড়বি পড় এক পাড়াতুতো কাকার সামনে। বন্ধুটি কিছু করতে না পেরে পিছনে দাঁড়ানো আমার হাতে চালান করে দিলো জ্বলতে থাকা দন্ডটিকে। পাড়াতুতো কাকার চোখে পড়লো আমার হাতে জ্বলছে কেউ। যথারীতি খবর পৌছালো বাবার কানে। বাবা জিজ্ঞাসা করলেন তুমি সিগারেট খাও? আমি বললাম না। আমি শুধু ধরেছিলাম। শুনে বললেন আমার কানে আর যেন এরকম খবর না আসে। সেখানেই সেই নাটকের সমাপ্তি ঘটে যায়।
এরপরও পুজো এসেছে। নতুন সাজগোছে বেরিয়েছি বন্ধুদের সঙ্গে। তখন শহরের এ মাথা থেকে ও মাথা আখ চেবাতে চেবাতে ঘুরে বেড়িয়েছি। আর কানে কানে ভেসে এসেছে
আমি দূর হতে তোমারেই দেখেছি
আর মুগ্ধ হয়েই চেয়ে থেকেছি
কিংবা
কতদিন পরে এলে, একটু বসো
তোমায় অনেক কথাই বলার ছিল
বা,
ভেসে আসতো
পথ হারাবো বলেই এবার পথে নেমেছি
সোজা পথের ধাঁধায় আমি অনেক ঘুরেছি।
এভাবেই সময় এগিয়েছে। তখনও বছরে বছরে ঠাকুর দেখতে গিয়েছি।বাড়িতে বলেছি একা। ঠাকুর দেখেছি হয়তো একা নয় দোকা।
তখন ও প্যান্ডেলে অনেক গানের মধ্যে যে গানটা মনে থেকে গেছে সেটা হলো
সে রাগলে আমি খুশি,
জানি মনটা যে তার মৌভরা মৌটুসী,
সে যে মিষ্টি ঝালে মিশিয়ে
আমার করলো মনোহরন
দেখতে সে নয় মন্দ
আহা পুতুল পুতুল গড়ন।
এরপর দিন এগিয়েছে। পুজো ঘুরে ফিরে এসেছে।আমরাও পুজো দেখতে বেরিয়েছি। তখন আবার কাউকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে নিয়ে বেরোতে হয়েছে। তখন ও ঠাকুর দেখছি।যদিও ততদিনে ঠাকুর থেকে চোখ প্যান্ডেলে বেশি সময় দিয়েছে।তবে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে যে গানটায় সে সময় কানে আটকে যেত। সেটা হলো
কাটে না সময় যখন আর কিছুতেই
বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না।
মনে হয় বাবার মতো কেউ বলে না
আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়।
আবার এই সময়কালেও প্যান্ডেলে যেতে হয়।পুজো পরিক্রমায়। চার পাঁচদিনের মধ্যে কোনো একটি বা বড় জোর দুটি দিনের জন্য হয়তো। না হলে ঘরে বসে শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে ঠাকুর এবং প্যান্ডেল সব দেখে নেওয়া যায় টিভির পর্দায়। তবে এখন বেরোলে যে গানটি কানের মধ্যে দিয়ে মরমে গিয়ে আঘাত করে সেটি হলো,
সখী ভাবনা কাহারে বলে,
সখী যাতনা কাহারে বলে,
তোমরা যে বলো দিবস রজনী,
ভালোবাসা ,ভালোবাসা,
সখী ভালোবাসা কারে কয়,
সেকি এমনি যাতনামায়?
আসলে সূর্যতো স্থির থাকে। গ্রহরা শুধু তার চারিদিকে নিরন্তন ঘুরে বেড়ায়। তেমনি পুজো প্রতিবছর নিয়ম মেনে ঠাকুর আসেন। আমরা শুধু পাল্টে পাল্টে যাই।জীবনকে দেখতে দেখতে।