Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

~~~"অশ্রু"~~~♠~~~'ছোট গল্প '~~~
.............. ত্রিদিব  কুমার  বর্মণ  ।..............
কমলা দেবী'র বয়স এখন সত্তরের কিছু বেশি.......।
সংসারের টানাপোড়েনে শরীরের রুক্ষতাচোখে বেশ ধরা পড়ে। কৈশোরে পরিবেশছিল শান্তিনিকে…

 


~~~"অশ্রু"~~~♠~~~'ছোট গল্প '~~~


.............. ত্রিদিব  কুমার  বর্মণ  ।..............


কমলা দেবী'র বয়স এখন সত্তরের কিছু বেশি.......।


সংসারের টানাপোড়েনে শরীরের রুক্ষতা

চোখে বেশ ধরা পড়ে। কৈশোরে পরিবেশ

ছিল শান্তিনিকেতন , তারপর প্রায় ছয় ' 

যুগ অতিক্রান্ত ক'রে এখন কমলা দেবী কিছুটা জুবুথুবু হ'য়ে পড়েছেন...... ।


স্বামী পরিত্যক্তা এক সন্তানের জননী হ'য়ে

ও শান্তি  যেন হারাতে বসেছেন। মনের সুখকে তিনি অতীত করতে চান না...... ।

..... তাই সময়ে - অসময়ে রবি ঠাকুরের

গান, কবিতা, বই... ইত্যাদি নিয়ে এখনো

ঘাটাঘাটি ( চর্চা ) করার অভ্যেসটি রয়েছে

.......।

২৫ শে বোশেখের কথা উনি কখনো ভোলেন না। এই তো' গত মংগলবার , দেড় বছরের  নাতিকে ঘুম পাড়িয়ে জুঁই-

ফুলের মালা কিনতে অতিকষ্টে ফুলবাজারে বেরিয়ে পড়লেন। ছেলে--

বৌমা দু 'জনেরই অফিস, ছুটি নেই। ওরা

নিজেদের জন্মের তারিখ ভুলে যায়,ওদের

কাছে আবার জন্মদিন রবি ঠাকুরের !! .....

ওদের ত ' সবসময়ই ব্যস্ততা। তা'ছাড়া কবি-লেখকদের জন্মদিন পালন ---- এ'সব

নাকি ওদের কাছে ব্যাক্ ডেটেড্..... ।


নাতি থাকে কমলা দেবীর কাছে। সারাদিন নাতির মুখ দেখে সময় কেটে যায়। অফিস ছুটির পর রাতে ছেলে-- বৌমা ফেরে, তখন নাকি ওরা ক্লান্ত থাকে। নাতিকে ওর মায়ের আস্তানায় পাঠিয়ে দিয়ে সেদিনের মত কমলা দেবী অবসর পান।


সে'দিন ফুলবাজারে জুঁই ফুল নেই। পড়ে রয়েছে টগর, বেলফুল, গন্ধরাজ আর গোলাপের মালা। কমলা দেবীর আসার খাটুনিটাই বৃথা হ'লো...... ।

দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলেন, -----

জুঁই ফুলের মালা নেই দেখছি...!

দোকানদার উত্তর দিল , ---- শেষ হ'য়ে গেছে। অন্য কিছু নিন না।

আমার ত ' জুঁই ফুলের প্রয়োজন। অন্য ফুল দিয়ে আমার কাজ মিটবে না.... ।

দোকানদার জবাব বসাল, --- এ' বাজারে

আর কোথাও এই অসময়ে পাবেন না।

কমলা দেবী জানতে চাইলেন, -----

কোথায় পাব, বলতে পারবে বাছা ! ....

---- এক কাজ করুণ,  পাঁচ মিনিটের পথ, হেঁটেও যেতে পারেন.... । একটু কষ্ট ক'রে

রিক্সায় যদি সরকার বাজারে চলে যান,

ওখানে পেয়ে যাবেন...।দোকানদার বুঝিয়ে বলে দিল... ।

 কিন্তু,  কমলা দেবী হাঁটা পথ ধরলেন ।

কারণ, পয়সার একটু টান রয়েছে।সরকার বাজারে জুঁই ফুলের মালা কিনে বাড়ীর পথে পা '  বাড়ালেন... । ক্লান্ত হ'য়ে ফিরলেন। তবুও ক্লান্তি তাঁর কাছে গৌণ ।

মূখ্য জুঁই ফুলের মালা। প্রাপ্তির আনন্দে উনি আত্মহারা..... ।


ফেরার পথে এক প্রতিবেশী'র সাথে দেখা

হয়েছিল। বয়সে বেশ ছোট। দু 'হাতে বড়

প্লাস্টিকের প্যাকেট। চোখে চোখ পড়তেই,

----বৌমা ; কোথায় গিয়েছিলে ! প্লাস্টিকের ব্যাগটা তো' ছিঁড়ে যাবে দেখছি...স্টিলের দু 'টো থালা ও রয়েছে। খুব ভারী লাগছে...!  একটা ব্যাগ আমাকে

দিতে পার..... ।কমলা দেবী বললেন... ।

উত্তর এলো ;--- না,না,ধরতে হ'বে না। আপনার কষ্ট হ'বে। আমি পারব। এই ত'

এসে গিয়েছি। বই পাড়ায় গিয়েছিলুম... ।

একটা " গীতবিতান " কিনলে দু 'টি থালা

' ফ্রি '....। তা'ই কিনলাম.... । মাঝ বয়সি

ভদ্রমহিলা পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন.... ।


কথা আর বাড়ালেন না কমলা দেবী।

চলতে চলতে ভাবলেন ,  যুগের কী পরিবর্তন !  পরিবর্তন  মানসিকতার... ।

" গীতবিতান " এখন মূখ্য নয় , আসলপ্রাপ্তি দু'টি ' স্টিলের থালা '.... ।

সত্ত্যি, প্রয়োজন !!

" গীতবিতানে "র মর্যাদা এ'ভাবেই হারাতে বসেছে......... ।


কমলা দেবী ফিরলেন ।

নাতির কান্না শুনতে পেলেন। মুহূর্তে কান্নাও থেমে গেল। মেঝেতে নাতি হামাগুড়ি দিচ্ছে। ফ্যানের হাওয়ায় জিরিয়ে নিলেন কমলা দেবী কিছুসময়।

এ'দিকে আশেপাশের লোকজনের ও গাল- মন্দ বেশ শুনলেন, -- একলা ঘরে 

কচি বাচ্চাকে একা রেখে কী ক'রে বাজারে গেলেন !   যদি কিছু হ'য়ে যেত !! ......


ঠাকুর রক্ষা করেছেন.... । মনে মনে জপ করতে লাগলেন কমলা দেবী..... ।

জুঁই ফুলের মালাটা তখন ও মেঝেতে... ।

ঘরময়  ম '..  ম '... করছে, সুবাস।

কমলা  দেবী'র মুখে-চোখে যেন তৃপ্তির আনন্দ। নাতিকে কিছুক্ষন কোলে নিয়ে আদর ক'রে, ওকে সেবা- যত্ন ক'রে মেঝেতে ছেড়ে দিলেন..... । নাতি মনের আনন্দে খেলছে, কমলা দেবীও ইতিমধ্যে

দেয়ালে টাংগানো রবি ঠাকুরের ফটোটা

অতিকষ্টে চেয়ারে উঠে নামালেন.... ।

শরীর কাঁপছে, তবুও আনন্দে গুনগুন করছেন...... "আমার সকল দু:খের প্রদীপ

জ্বেলে......... "

স্বপ্নে বিভোর...,  মনে পড়ল, কোথাও একবার যেন গুরুদেব বলেছিলেন, ----

...." শুধু কপালে চন্দন ফোঁটা, আর গলায় জুঁই ফুলের মালা পরালেই আমি খুশী হ'ব......। "


সে'কথা মনে ক'রে কমলা দেবী চন্দন তৈরী করেন।  রবি ঠাকুরের ফটোটি'কে নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে ভালো ক'রে

ধূলো সরিয়ে মুছলেন। সাজালেন চন্দনের ফোঁটায়..... ।


ঠিক তখনি, কমলা দেবীর খেয়াল হ'লো,

জুঁই ফুলের মালা ছিন্ন-বিছিন্ন.. । নাতি অজান্তে করেছে..... । খেলা করছে ছেঁড়া মালা নিয়ে.... । ফুলগুলো হাওয়ায় মেঝে - ময়.... । কমলা দেবীর সে' দৃষ্টিশক্তি আজ আর নেই যে, ও গুলো দিয়ে আবার মালা গাঁথবেন...।  কিংবা নতুন ক'রে মালা কিনে আনবেন.......... ।


অবোধ নাতির দিকে তাকালেন...... ।


রবি ঠাকুরের ফটোতে শুধু দু ' ফোটা 

' অশ্রু ' গড়িয়ে পড়ল কমলা দেবী'র... ।


ওই দিয়েই হ'লো এবারকার .......

...." রবি বন্দনা "..... ।।


~~~~~~~~~~~♥~~~~~~~~~~~

নিবেদন:-----

কবিগুরু  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০ তম

জন্মদিবস উপলক্ষে আমার ' গল্প ' প্রথম

হয়েছিল.... ' টেলিফিল্ম ' হয়েছিল। ' তারা - বাংলা ' চ্যানেলে(১১.০৫.২০১১.) দেখানো হয়েছিল........ ।

~~~~~~~~~~~~♠~~~~~~~~~~