Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

গল্প :- হঠাৎ অশনির আলোয় ।ভাষ্যে :- লক্ষ্মীকান্ত দাস ।০৪.১০.২০২০--------গল্প মানুষের মনের ঢাল তৈরি করে আবার অর্থাৎ গল্প কে কোন মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে সে ব্যাপারে একটা প্রচ্ছন্ন মদতদাতা র ভূমিকায় প্রায়ই থাকে , ছোটবেলা থেকে উল্কাদ…

 


গল্প :- হঠাৎ অশনির আলোয় ।

ভাষ্যে :- লক্ষ্মীকান্ত দাস ।

০৪.১০.২০২০

--------

গল্প মানুষের মনের ঢাল তৈরি করে আবার অর্থাৎ গল্প কে কোন মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে সে ব্যাপারে একটা প্রচ্ছন্ন মদতদাতা র ভূমিকায় প্রায়ই থাকে , ছোটবেলা থেকে উল্কাদার জীবন সংগ্রাম , একটু আলোয় আসার লড়াই , একটু বড় মানুষ হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা যেন গল্প থেকে বেড়ে স্থানীয় কিংবদন্তীর পর্যায়ে পৌঁছেছিল । সেই গল্প যেমন কারোর মনে অনুরণন তুলতে পারতো , অনুরাগ তৈরি করত , তেমনি আবার কোনো না কোনো কারণে তা কারোর মনে কোন না কোনো কারণে বা অকারণে ঈর্ষারও জন্ম দিত ভয়ংকর , তারা কখনোই সহ্য করতে পারতো না উল্কাদাকে , তারা উল্কাদা কে দেখলেই জ্বলে উঠত রাগে , মনে মনে উল্কাদার ভীষণভাবে ক্ষতি চাইতো , উল্কাদার জনশ্রুতি সুদীপ্তার মনে হয়তো সঞ্চার করেছিল অনুরাগ , প্রায়ই সে উল্কাদার অনিয়মিত খাপছাড়া জীবন বৃত্তের অক্ষের কাছাকাছি চলে এসে ইঙ্গিত দিতো সহযাত্রী হবার, সুদীপ্তা সহজ সরল স্বচ্ছন্দ নিরূপদ্রব জীবনের উদাহরণ , উচ্চাবচ কি সে জানেনা , জীবনের মানে সে বুঝতে না, তবু গল্প তাকে অনুরাগের সংক্রমণে আচ্ছন্ন করেছিল , আর অনুরাগকে উল্কাদা বিশ্বাস করেছিল স্থায়ী হতে চাওয়া ভালোবাসা বলে , কিন্তু ঋতুর বদলে যাওয়ার মতোই মনের অনুরাগ যে বদলায় , তা স্বয়ং কালিদাসও বুঝতে পারেনি বলেই না মেঘদূত সৃষ্টি হয়েছিল , কিংবা কুমারসম্ভবম । যাইহোক নির্মমভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল তার অস্পষ্ট অনুচ্চারিত প্রেমপ্রস্তাব , সৌজন্য শত্রুর প্রতিগল্পে , নায়ক চরিত্রহীন অপকর্মকারী প্রতিপন্ন হতে হয়তো একটা মুহূর্তই যথেষ্ট, যা সব বিশ্বাসকে ভেঙে এক লহমায় তছনছ করে দেওয়ার জন্য অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, তারপর থেকে জীবনের রুক্ষতা মরুর আকার নিতে থাকে , মাঝে মাঝে হয়তো অপ্রত্যাশিত মেঘের সঞ্চার হয় জীবনের আকাশে , দু এক পশলা বৃষ্টির ফোঁটাও ক্যাকটাস জীবন পেয়ে ধন্য হয় ,তবু ভালোবাসার অধরা সে পরশটুকু , সেই প্রথমবার অস্থিরতার অনুভূতিটা পরে আর কোথাও কোনোভাবে অনুভূত হয়নি জীবনে , কোনো অঙ্কে এই প্রথম প্রেমকে আহামরি হয়তো বলা যাবে না , তবু চেতনা দিয়ে তাকে অতিক্রম খুব কঠিন । 

একরকম  অস্তিত্বের লড়াই করতে করতে উল্কা প্রায় ভুলেই যেতে বসেছিল প্রথম প্রত্যাখ্যাত প্রেমের অপমানের গল্পটা ও কষ্টটাও , কিন্তু বৃষ্টি সেতো বারবার সময়ে - অসময়ে নামে তপ্ত ধরাকে শীতল করতে, অধরাকে ধরিয়ে দিতে প্রানের পরশ , মনের হরষে সে অমিত্রাক্ষর ছন্দেও সে নাচে , সে বাষ্পীয় ছোঁয়া হয়ে ছুঁয়ে যায় মনের নিষিদ্ধ আনাচ কানাচ , এরকম তুমুল এক বৃষ্টির সন্ধ্যায় , প্রয়াস- লব্ধ প্রতিষ্ঠার উল্কাদা নিজের মারুতিটা নিজে চালিয়ে , প্রায় আধমাতাল অবস্থায় বাড়ি ফিরছে , নিজের রাতের স্বপ্ন নিবাসের পথে , কিন্তু তুমুল বৃষ্টির ঠেলায় পাইক পাড়ার মোড়ের আগেই রাস্তা ধরে গাড়ি দাঁড় করলো উল্কাদা , আচমকা অন্ধকার , বিদ্যুৎ বিভ্রাট , আরও প্রত্যাশিত আচমকার অশনির আলো , ঘন ঘন পড়ছে আমার নায়িকার মুখে , হ্যাঁ প্রায় দশ বছর পর দেখতে পেলো সুদীপ্তাকে , এখন অসুখী ডাক্তার ঘরণী , আর জি করের নার্স সুদীপ্তা পাইকপাড়ায় থাকে , অথচ উল্কাদার পাইকপাড়া ভাড়াটে জীবনের সূত্রে অনেকটাই চেনা জায়গা , অথচ অনেকদিন পর ফিরে আসা , এই প্রত্যাশাতীত প্রাপ্তির তাগিদে , বন্ধ নীল কাছের ভিতর থেকে দেখতে পেলো সুদীপ্তাকে , ছেলেমানুষি হাসির রেশ , তার লেশমাত্র নেই তার চোখে মুখে , যেন খাপছাড়া বেয়াড়া বিক্ষিপ্ত উদ্বেগ তার চোখে মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে । হয়তো সুদীপ্তা দেখতেই পায়নি উলকাদাকে , পেলে কি সে ঘৃণার আগের অনুরাগ নিয়ে উদ্বেল হতো অতৃপ্ত ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে , নাকি আবারও উপেক্ষা করতো তাকে শেষবারের মতো । যাইহোক উল্কাদা আর সাহস করেনি গাড়ির দরজা খুলে তাকে ভেতরে আসতে বলতে , উল্কাদা একবার ভেবেছিল , অন্তত এটুকু মানবিক বন্ধু সে না হয় হলো , কিন্তু অবশিষ্ট নিজের ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখতে নতুন করে আর প্রত্যাখ্যাত হতে মন চাইলো না উল্কাদার, একটু বৃষ্টির রেশটা কমতেই বিপন্ন প্রেমকে পেছনে ফেলে উল্কাদার গাড়ী আলো ফেললো রাস্তায় , রাত্রি নিবাসের পথে ।