Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#দুর্গা#শম্পাশম্পি চক্রবর্তী #ছোটগল্প --" দুর্গা তোর পুজোর টাকাটা মাইনের সাথেই দিলাম একটা শাড়ি কিনে নিস।" চৌধুরী বৌদির দেওয়া মাইনের হাজার টাকা আর তার সাথে পাঁচশো টাকা পুজোর বোনাস পুরোপুরি দেড় হাজার টাকা মনটা আনন্দে ভরে …

 


#দুর্গা

#শম্পাশম্পি চক্রবর্তী 

#ছোটগল্প 

--" দুর্গা তোর পুজোর টাকাটা মাইনের সাথেই দিলাম একটা শাড়ি কিনে নিস।" চৌধুরী বৌদির দেওয়া মাইনের হাজার টাকা আর তার সাথে পাঁচশো টাকা পুজোর বোনাস পুরোপুরি দেড় হাজার টাকা মনটা আনন্দে ভরে উঠলো দুর্গার। মনে মনে একটা হিসেব ও কষে নিলো। বর মহাদেবটার জন্য লুঙ্গি,  দুই ছেলে পটল আর রবির জন্য গেঞ্জি আর ছোট একরত্তি মেয়ে সোনার জন্য একটা লাল টুকটুকে ফ্রক পাঁচু বাবুর বাজার থেকে কিনে নিয়েই আজ বাড়ি ঢুকবে। উফ্ কাল থেকে দুগ্গা পুজো। ওদের মুখে হাসি তো ফোটাতেই হবে। বচ্ছরকার একটা দুটো দিন। "


 ভাবতে ভাবতেই হঠাত্ পেটের ভেতরটা কে যেন নড়াচড়া করে জানান দিলো আমাকে কিছু খেতে দাও। আমার যে খিদে পেয়েছে । কাপড়ের থলিটা থেকে বিস্কুটের প্যাকেট টা বার করে কয়েকটা বিস্কুট খেয়ে নিতেই পেটের ভেতরটা শান্ত হলো দুর্গার। সাত মাসের পোয়াতি যে সে। এই মাসটা মনিবদের বাড়ি গুলো কাজ করে শেষের দু মাস ছুটি নেবে ঠিকও করে ফেলেছে।


 কিন্তু ছুটি যে নেবে তিন ছেলেমেয়ে, স্বামী আর সে নিজে খাবে কী? বর মহাদেব টা যে কোনো কাজকর্ম করে কিছু টাকা সংসার কে দেবে তা আশা করাই বৃথা। তার চাইতে চোলাই খেতে খেতে ইয়ার দোস্তের সাথে আড্ডা দেওয়া ঢের ভালো তার কাছে। অগত্যা দুর্গা ই হাল ধরেছে  সংসারের।


 ভোর থাকতে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে চোখ মুখ ধুয়ে তৈরী হয়ে নেওয়া। তারপর দীর্ঘ দু কিলোমিটার রাস্তা পার হয়ে ক্যানিং লোকালে করে শহর কলকাতাতে এসে একটি ফ্ল্যাট বাড়ির তিন ঘরে কাজ করা। সংসারটা মোটামুটি চলে যায় । মহাদেব ও খুশী রোজগেরে বৌ তার। রাতের বেলা আদর করে খোস মেজাজে। সোয়ামী গুলোর কাছ থেকে একটু আদর  পেতে দুর্গার  মতো কে না চায়?  আর তার সাথে বাচ্চা গুলোর মুখে অন্ন ও তো জোটে। 


চৌধুরী বৌদি আর দু বাড়ির মিলিত টাকা গুলো আরো একবার গুনে নেয় দুর্গা । মোট পাঁচ হাজার টাকা। ব্লাউজের ভেতর থেকে ছোট মানি ব্যাগটা বার করে তাতে পুরে নিয়ে সযত্নে বুকের খাঁজে চালান দেয় সেটা। তারপর খুশী খুশী মনে ছমছম নূপুরের শব্দ তুলে দুর্গা ভিড়ে ঠাসা ক্যানিং লোকালটা ধরে ফেলে। 


ট্রেন তার নিজ গতিবেগ নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

 ট্রেনের দুলকি চালে চোখ দুটোতে নেমে আসছে ঘুম। সাত মাসের পোয়াতি শরীরটা যেন নুইয়ে পড়তে চাইছে। সহৃদয়বান একজন একটু সরে গিয়ে বসতে দিলে বসে পড়ে দুর্গা। তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে কে জানে। 


--" এই মেয়ে ওঠ। সবাই নেমে গেছে। ঘুমোচ্ছিস যে বড়ো? " চোখ মেলতেই  উর্দি পরা এক মহিলা কনস্টেবল। খালি কামরা ধরমর করে উঠে পড়ল দুর্গা। বুকের কাছে কাপড়ের থলিটা চেপে ধরে ট্রেন থেকে নেমে কী মনে হতে ব্লাউজের মধ্যে হাত ঢোকাতেই বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। 

--" এ কী ট্যাকার ব্যাগটা কোথায় গেল? "প্রাপ্তির পাঁচ হাজার টাকা সযত্নে যে সে বুকের মাঝে রেখেছিল। "তাহলে কী?"


--"হ্যাঁ রে দুর্গা আজ কতো ট্যাকা চুরি করতে পারলি রে মা? " এগারো বছরের ছোট্ট দুর্গা চোখটা এতো ক্ষণ উল্টে ভিখারি সেজে ট্রেনে ভিক্ষে করছিল। ক্যানিং স্টেশনে ট্রেনটা থামতেই বৃদ্ধ বাবা অশক্ত শরীরটা নিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসতেই ট্রেন থেকে এক লাফে মেয়ে টা নেমে বলে ওঠে--" একটা বৌ ঘুমাচ্ছিল রে বাপ। আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কায়দা করে ওর বালাউজের মধ্যে থেকে ট্যাকার ব্যাগটা তুলে নিয়েছি। বৌ টার তাতেও ঘুম ভাঙেনি। আর ভাঙলেও অন্ধ মনে করে সে কেন? কেউ আমাকে সন্দেহ করতো না। এখন দেখ দেখি বাপ কতো ট্যাকা আছে?"


দূরে তখন কোথাও মাইকে ঘোষণা হচ্ছে--" আজ মহা ষষ্ঠী । আপনারা একে একে মন্ডপ পরিদর্শন করে বেরিয়ে যাবেন। প্রতিমার গায়ে হাত দেবেন না। দশ কেজি সোনা পরিহিতা মা কে দর্শন করে দ্রুত মন্ডপ ত্যাগ করুন। এবারের দুর্গা স্বর্ণময়ী।"

#সমাপ্ত