Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

গল্প:- অন্তর্জলি যাত্রাছন্দশ্রী দাস ***********আচ্ছা ইন্দ্র তোমার গৌতম ঘোষের 'অন্তর্জলি যাত্রা' ছবি টা মনে আছে? হ্যাঁ আছে। কেন বলো তো দেয়া? না এমনি বললাম। তুমি এমনি তো কখনো কোনো কথা বলো না দেয়া!তোমার সব কথার শেষে একটা অন্…

 


গল্প:- অন্তর্জলি যাত্রা

ছন্দশ্রী দাস 

***********

আচ্ছা ইন্দ্র তোমার গৌতম ঘোষের 'অন্তর্জলি যাত্রা' ছবি টা মনে আছে? 

হ্যাঁ আছে। কেন বলো তো দেয়া? 

না এমনি বললাম। 

তুমি এমনি তো কখনো কোনো কথা বলো না দেয়া!

তোমার সব কথার শেষে একটা অন্য কথা লুকিয়ে থাকে। বলো কি হয়েছে? 

আসলে এই নৌকা করে ভাসতে ভাসতে দুধারে ঢালু ঘাসে ভরা জমি ও গঙ্গার চরা দেখে ঐ বৌটার কথা মনে পড়ে গেল। তুমি কখনো ঐ বৌটার কথা ভেবে দেখেছ? 

কোন বৌটা! 

ঐ যে গো যেই বুড়োটা মৃত্যু শয্যায় শুয়েও কুলীন ঘরের আইবুড়ো কন্যাকে উদ্ধার করলো। সেই বৌটা।

নাহ আমি অতো কখনো ভেবে দেখেনি। 

সত্যিই তো তাকে নিয়ে ভাবার কি আছে বলো! কুলীন বামুনের মেয়ে তাকে বিয়ে করে ঐ মৃত্যপথ যাত্রী তাকে ও তার বাপের কুল রক্ষা করেছে। তার বাপ কুলীন সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার সদ্য কিশোরী নবপরিণীতা কন্যা আইবুড়ো নাম ঘুচিয়ে আজ গঙ্গার তীরে অশীতিপর স্বামীর মৃত্যু শয্যার পাশে বসে প্রহর গুনছে কখন তার স্বামী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে আর সে সতী হয়ে পিতৃ ও শশ্রুকুলের মুখ উজ্জ্বল করবে। 

তখনকার সমাজ ব্যবস্থাটাই যে এই ছিল দেয়া। 

মনে আছে ইন্দ্র সেই বুড়ো গঙ্গার খোলা বাতাসে আবার প্রাণ ফিরে পেয়ে বলেছিল ,বৌ বড় মুখ দেখতে ইচ্ছা করছে,বলে তার হাতটা তুলে ধরেছিল। আর মেয়েটি সেই মৃত্যপথযাত্রী বৃদ্ধর হাতটা আপন বক্ষে চেপে ধরেছিল অতৃপ্ত শরীরী কামনায়। তারপর একটি সরা করে জল এনে ধরেছিল স্বামীর সামনে। সেই জলে আপন মুখচ্ছবি দেখে বৃদ্ধর মুখ হাসিতে ভরে গিয়েছিল। সে আরো বাঁচতে চেয়েছিল। 

তুমি এত মন দিয়ে দেখেছিলে! 

বাহ রে দেখবো না। ও তো দেখার মতোই জিনিস। আর মেয়েটির সংসার শুরু হয়েছিল নির্জন গঙ্গার তীরে শিয়াল কুকুরের সাথে একাকী নির্জনে খোলা আকাশের নিচে এক অর্ধ অচেতন বৃদ্ধ মানুষের সাথে। 

কেউ ছিল না তাকে সাহায্য করতে। শুধু মাঝে মাঝে ডোম এসে খবর নিয়ে যেত শেষ যাত্রার রুগী বেঁচে আছে না মরেছে। 

তা সে ও আসত নিজের পেটের ধান্ধায়। মৃতদেহ পুড়িয়ে সে দু পয়সা উপার্জন করবে বলে। 

ডোমের তো তাই কাজ। 

আর বৌটা!! তার কথা ভাববে না!! তার নবযৌবন যে বৃথা যায়!! 

সে তো জেনে শুনে বসেছিল বিয়ের পিঁড়িতে। 

হ্যাঁ। কিন্তু বাধ্য হয়ে সমাজের যূপকাষ্ঠে বলি প্রদত্ত হয়ে। তাকে বোঝানো হয়েছিল সতী মাহাত্ম্যের কথা। তাকে কখনো এ বলা হয়নি যে সে বিয়ের পর একটা সুন্দর সংসার পাবে। তার অশিক্ষিত মন তাই সতী হওয়াকেই জীবনের পরম পাওয়া বলে মনে করেছিল। কিন্তু গঙ্গার তীরে সে যখন পেল তার বিবাহিত জীবনের কিছুদিনের সোহাগ সিঁদুর তার কি হবে!! কে তার সোহাগ মিটাবে!! 

কেউ না। তার যৌবন বিফলে যাবে। 

না যায় নি। এখানেই পরিচালকের মহানুভবতার পরিচয় পাওয়া যায়। সে তার সোহাগ মিটিয়েছিল ঐ ডোমকে ভালোবেসে। আর তাদের ভালোবাসার কাছে অন্তর্জলি হয়েছেিল সেই বৃদ্ধ। 

আচ্ছা তারপর ছবিটা শেষ হয়ে গেল কেন ইন্দ্র?? সেই ডোম আর বৌটা কি আবার অন্য কোথাও অন্য কোনখানে গিয়ে নতুন করে ঘর বাঁধবে!!!নাকি বৌটা তলিয়ে যাবে সমাজের পাঁকে। প্রতিদিন প্রতিরাতে নিজেকে নতুন করে মারবে আবার নতুন করে বাঁচবে?? 

আমি জানি না দেয়া। তোমার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। 

দেখেছ ইন্দ্র সন্ধ্যা হয়ে গেছে। গঙ্গার জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে হয় জোয়ার আসছে।

এই রকম জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল সে তার সব পরিচয় নিয়ে। শুধু পিছে পড়েছিল ঐ বৌটা ঠিক আমার মতো। 

তোমার মতো!! 

হ্যাঁ আমার মতো। আজ আমার পিছে পড়ে রয়েছে আমার সব পরিচয়। আমার জীবন থেকে মুছে গেছে আমার সব পূর্ব পরিচয়। আমি কি আবার নতুন করে বাঁচতে পারি না! নাকি আমাকে এই সমাজের যূপকাষ্ঠে আবার বলি দিতে হবে আমার আমিকে। 

কেন দেবে তুমি , তোমার তুমিকে বলি!! তোমারো বাঁচার অধিকার আছে। 

আছে। কিন্তু আমার বয়স! আমার সন্তান তারা কি তা বলবে!! না সবাই সেটা মেনে নেবে! 

সবাই মানবে কি মানবে না সেটা বড় কথা নয়।আর যে সন্তান যে পরিবার তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে তাদের কথা তুমি ভাববে কেন? তুমি নিজের মনে তৈরী তো!! নতুন করে বাঁচার জন্য!! 

আমি জানি না। আমি বুঝতে পারছি না। ঐ কালো অন্ধকারের মতো লাগছে আমার চারদিক। কোথাও কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না। কেন দেয়া কেন!! তোমার ছেড়ে যাওয়া স্বামী যদি তার প্রেমিকাকে নিয়ে নতুন করে ঘর বাঁধতে পারে তবে তোমার বাঁধতে অসুবিধা কোথায়? 

অনেক অসুবিধা আছে ইন্দ্র তুমি বুঝবে না। তোমার বোঝার বাইরে। সন্তানের ধিকৃত দৃষ্টি কোনো মা কখনোই সহ্য করতে পারে না। 

কেন দেয়া আমার বোঝার বাইরে কেন? তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা সে তো মিথ্যা নয়। আর তুমি কি আমাকে ভালবাসো না? আর সন্তানের কথা বলছ!! যখন সে বুঝতে পারবে তখন সে তার নিজের ব্যবহারে লজ্জিত হবে। ফিরে আসবে। তখনো আমাকে এমনি করে ভালোবাসবে তো দেয়া? 

বাসবো ইন্দ্র খুব ভালবাসবো। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তাই তো বড় ভয়। আবার না তোমাকে হারাই। আমি তোমাকে হারাতে চাই না। ভালোবাসা বারবার আসে না জীবনে ইন্দ্র। 

নাগো দেয়া ভালোবাসা বারবার ফিরে ফিরে আসে নতুন করে নতুন রূপে। আমরা তাকে বুঝতে পারি না। তাকে সাময়িক উত্তেজনার রেশ বলে পায়ে ঠেলে দূরে সরে যাই। যদি তুমি সত্যিই ভালোবাসো তাকে তুমি কখনোই ভুলতে পারবে না। 

এই তোমার আমার ভালবাসার কথাই ধরো। হয়তো আমাদের দুজনের অনেক বাধা আছে একসাথে মিলতে। তবু তো আমরা নতুন করে পরস্পরকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছি। সে তো তুমি অস্বীকার করতে পারো না। 

তা পারি কি করে। তুমি আমার পাশে না থাকলে আমি ও হয়তো কবে ঐ বৌটার মতো জোয়ারের জলে ভেসে চলে যেতাম। কেউ খুঁজে পেত না। 

আমি তোমাকে কখনো ভেসে যেতে দেবো না দেয়া। তোমার ইন্দ্র ডোম তোমাকে রক্ষা করবে। বাঁধবে নতুন করে ঘর, সাজাবে এক সুখের সংসার এই সমাজে মাথা উঁচু করে। কখনো হবে না তোমার অন্তর্জলি যাত্রা। 

**************17/10/2020**************