Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

গল্প : অনাটনকলমে : স্বপন মন্ডল১৭/১০/২০২০
এ বছর পুজোয়,কোনকিছু কেনাকাটি হবেনা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল সঞ্জয়বাবু৷একটা ছোট্ট খাবারের দোকান অাছে৷লকডাউনের কবলে,ব্যবসার প্রায় অচল অবস্থা৷তার উপর সঞ্জয়বাবুর স্ত্রী অনিমাদেবী,শারীরিক ভাবে বেশ …

 


গল্প : অনাটন

কলমে : স্বপন মন্ডল

১৭/১০/২০২০


এ বছর পুজোয়,কোনকিছু কেনাকাটি হবেনা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল সঞ্জয়বাবু৷একটা ছোট্ট খাবারের দোকান অাছে৷লকডাউনের কবলে,ব্যবসার প্রায় অচল অবস্থা৷তার উপর সঞ্জয়বাবুর স্ত্রী অনিমাদেবী,শারীরিক ভাবে বেশ কাছুদিন অসুস্থ৷হাইপ্রেসার ও হাইসুগারে একেবারে কাবু হয়ে গেছেন বেচারা!রেগুলার অনেকগুলো টাকার ঔষধ ও সংসার চালাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে সঞ্জয়বাবুর৷


ছেলে,মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সঞ্জয়বাবুর সুখের সংসার৷বেশ হাসি খুশিতে দিন অতিবাহিত হচ্ছিল৷কিন্তু,সেই সুখের জোয়ারে ভাঁটা হয়ে দাঁড়ালো....করোনার প্রকোপ! ছেলেটা কলেজ শেষ করে বেকার হয়ে বসে অাছে৷এখনো কোন চাকুরির সন্ধান হয়ে উঠেনি৷ছেলেটা স্বাবলম্বী হলে হয়তো কিছুটা সাশ্রয় হতো,কিন্তু সেগুড়ে ও বালি৷ অার মেয়ে,সবে চোদ্দ পার হয়ে পনের'তে পা দিয়েছে৷এ বছর মাধ্যমিক দেবে৷ 


যাইহোক,সঞ্জয় বাবু দোকান খুলতে যাবে বলে তৈরী হচ্ছেন....এমন সময় অনিমাদেবী,সঞ্জয় বাবুকে উদ্দেশ্য করে

—একটা কথা  বলবো তোমাকে !

—হ্যাঁ বল,কি বলবে!

—বলছিলাম,ওরা ছোট মানুষ...ওরা কি অভাব বোঝে!পুজোতে ওদের দুই ভাই-বোনের জন্য,একটা করে কি নতুন পোশাক কিনে দেওয়া সম্ভব হবে না!অন্য বছর তো,দু'তিন সেট করে জামা-প্যান্ট হতো!

—অনিমা,তুমি তো সবই বোঝ...কি করে সম্ভব বলতো!দেখছো তো,ওদের পেটে দু'বেলা ঠিক মতো ভালো খাবারও দিতে পারছি না৷তার উপর প্রতিদিন এতগুলো টাকার ঔষধ তোমার জন্যে কিনতে হচ্ছে৷

—সবই বুঝি৷চাপ দিচ্ছি না,যদি সম্ভব হয় চেষ্টা করো৷ ওরা অনেক বোঝে৷এই তো,সুমি(মেয়ে)সেদিন ফোনে ওর বন্ধুদের সাথে পুজো মার্কেটিং নিয়ে অনেকক্ষণ গল্প করছিল৷কিছু কথা কানে ভেসে অাসছিল৷তবে জান তো,তোমার মেয়ে অনেক বুদ্ধিমান ও বড় হয়ে উঠেছে৷ও বলছিল এ বছর যখন পুজোতে কোথাও বার হব না,তাহলে এক গাদা টাকার জামা কাপড় কিনে ঘরে ফেলে রেখে লাভ কী!তাছাড়া,সারা বছর তো কেনা-কাটি লেগেই থাকে৷বরং এ বছর পুজোতে ঘরে বসে ভালো ভালো খাবার খাবো৷

—সবই বুঝি অনিমা৷মাঝে মাঝে নিজেকে না,বড় অসহায় মনে হয়৷ তুমি জান,টাকার অভাবে একসাথে তোমার ঔষধ গুলো পাতা পাতা কিনতে পারিনা৷কেটে কেটে প্রতিদিনের ঔষধ প্রতিদিন অানতে হয়৷ দোকানদার অবশ্য বলেন,একসাথে নিয়ে যান পরে চুকিয়ে দেবেন৷কিন্তু,বাকি করার অভ্যাসটা এখনো ভালোভাবে রপ্ত করতে পারিনি৷চিন্তা করো না,দেখা যাক কোন উপায় বের করা যাই কিনা!

(ঘরে বসে পড়াশুনা করছিল সুমি৷বাবা,মায়ের সব কথা শুনে ঘর থেকে বাইরে এসে...)

—এ সব নিয়ে একেবারেই কষ্ট পেওনা বাপি৷ দাদার সাথে অামার প্ল্যান হয়েই অাছে৷এ বছর পুজোতে অামরা কীভাবে অানন্দ উপভোগ করবো৷তাছাড়া,অামাদের কি জামা কাপড় নেই!এখনো গত বছরের দুটো সেট অালমারীতে তোলা অাছে,ঠিক মতো ব্যবহারই হয়নি৷এমনিতেই ক্লাবের ঠাকুর ছাড়া কোথাও যাবার নেই৷ তাহলে নতুন পোশাকের কি দরকার! জান বাপি,এ বছর অামি মহা অষ্টমীতে মায়ের ঐ সুন্দর গরদের শাড়িটা পড়ে অঞ্জলি দেব৷অার মা'কে এ বছর উপোস করতেই দেব না!মায়ের হয়ে এ বছর অামি উপোস করবো৷ তবে একটা অবদার কিন্তু অাছে,না করতে পারবে না!

—বল মা,কি তোর অাবদার!

—অাবদারটা হল এই যে,(অাদর মাখা কন্ঠে)এবার পুজোয়,অামার বাপি,অামার ও দাদার জন্যে...দু'প্লেট বিরিয়ানি কিনে খাওয়াবে৷ এটা কিন্তু না করতে পারবে না!

—এত বড় অাবদার তোর!অবশ্যই কিনে দেব৷

—সত্যি বলছো!

—হ্যাঁরে মা,সত্যি বলছি৷ (দু'চোখ জলে ভরে যাবে)

—তুমি এত বোকা অামি জানতাম না বাপি!সামান্য ব্যাপারে চোখে জল অাসে বুঝি! তুমিই তো ছোট থেকে শিখিয়েছ...অভাব মেনে নিতে হয়,অল্প জিনিস ভাগ করে খেতে হয় অারও অনেক কিছু৷তবে কেন শুধুশুধু কষ্ট পাও!

—কবে এত বড় হয়ে গেলি তুই,বুঝতে তো দিলি না!পুরো অামার মায়ের মতো  হয়েছিস৷ কষ্ট পেলেও বুঝতে দিস না কখনো৷

—অামি অার দাদা ভাগ্যবান৷তাই তোমাদের মতো বাবা-মা পেয়েছি৷ অামরা খুব হ্যাপি৷দেরী হয়ে যাচ্ছে,দোকান খুলতে যাবে না!তাড়াতাড়ি যাও৷তবে,বিরিয়ানির কথাটা যেন মাথায় থাকে!