#গল্প_রিমির_স্বপ্ন#সর্বানী
রিমি বীরভূমের তারা পীঠের কাছে একটি সরকারী কলেজে পার্ট টাইম লেকচারারের চাকরি পেয়েছে । কলেজের কাছেই ছোট একটি দোতলাবাড়ির উপর তলাতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।দুটো ঘর একটা রান্না ঘর এট্যাচ বাথরুম ।মোটের উপর বেশ ভা…
#গল্প_রিমির_স্বপ্ন
#সর্বানী
রিমি বীরভূমের তারা পীঠের কাছে একটি সরকারী কলেজে পার্ট টাইম লেকচারারের চাকরি পেয়েছে । কলেজের কাছেই ছোট একটি দোতলাবাড়ির উপর তলাতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।দুটো ঘর একটা রান্না ঘর এট্যাচ বাথরুম ।মোটের উপর বেশ ভালোই ,সাথে একই কলেজের আরেকজন কলিগ দেবলীনা ওর সাথে থাকবে।নীচে বৃদ্ধ বাড়িওয়ালা আর ওনার স্ত্রী। কলেজের দারোয়ান নন্দ যাকে সবাই নন্দু বলে ডাকে প্রিন্সিপাল ম্যাম ওদের হাট বাজার টুকটাক ফাই ফরমায়েশ কাজ করার জন্য ঠিক করে দিয়েছেন। এছাড়া একজন ঠিকে কাজের লোক রোজ কাজ করে যায়।।বাড়ীর সবার একটু আপত্তি ছিল কিন্তু রিমি এই পার্ট টাইম জব করবে বলে একেবারে ক্ষেপে ওঠাতে কেউ আর আপত্তি করেনি। রিমিরা এক ভাই এক বোন।দাদা বাবা দু জনেই চাকরী করেন ,মা হাউস ওয়াইফ। রিমি তাড়াপীঠের কাছে থাকাতে ওর মার ইচ্ছে মেয়ের কাছে কয়েকদিন কাটিয়ে মায়ের মন্দিরে পূজো দেবেন সাথে চারপাশটা একটু ঘুরে দেখবেন।
সেই মতো রিমির বাবা মা তিনদিন ছুটি পড়তে রিমির কাছে গিয়ে উপস্থিত। ঠিক হয় পরের দিন ওরা তারাপীঠ মন্দিরে গিয়ে মায়ের পূজো দেবেন।রিমি ওদের সাথে ওর রূমমেট দেবলীনা কেও যেতে বলে। দেবলীনা রাজী হয়ে যায়।ওরা দশটা সাড়ে দশটা নাগাদ অটো রিজার্ভ করে মন্দিরে যায়।সব ব্যবস্থা নন্দু করে দেয়।ওরা গিয়ে খুব ভালো ভাবে পূজো দেয়। এবার ওরা তারাপীঠ মহা শশ্মান দেখতে যায়।ওখানে গিয়ে বামদেবের মন্দিরে পূজো দেবে বলে রিমির বাবা মা পূজোর জিনিসপত্র কিনছিলেন দেবলীনা কে সাথে নিয়ে। রিমি কিছুটা দূরে একা দাঁড়িয়ে।খানিকটা অন্যমনস্ক,এমন সময়ে হঠাৎ এক দীর্ঘ দেহী লালবস্ত্র পরিহিত জটাধারী এক সন্ন্যাসী এসে রিমির সামনে থেমে বলেন দুটি ভিক্ষা দিবি মা।রিমি চমকে তাকিয়ে সন্ন্যাসীকে ব্যাগ থেকে টাকা বার করে ভিক্ষা দিতে যায়।সন্ন্যাসী স্মিত হেসে ওর হাত থেকে টাকা নিয়ে খানিক্ষণ রিমির দিকে তাকিয়ে বলে মা সামনে তোর বড় বিপদ আছে।তবে তারা মাকে স্মরণ করবি আর মায়ের পায়ের এই ফুলটা সব সময়ে নিজের কাছে বিশেষ করে বাইরে যাবি যখন তখন সাথে রাখবি তোর বিপদ কেটে যাবে। রিমি মন্ত্র মুগ্ধের মত ফুলটা নেয় কিছু বলতে যাবার আগেই দেখে সন্ন্যাসী ভীড়ের মধ্য এগিয়ে চলে গেলেন।সমস্ত ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটে যে রিমি নিজেই বিস্ময়ে হতভম্ব। বাবা মাকে বলবো ভেবেও রিমি শেষ পর্যন্ত কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নেয়। ওরা বাড়ী ফিরে আসে।রিমির বাবা মা নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ী ফিরে যায়।
তারাপীঠ থেকে ফেরার কিছুদিনের মধ্যেই রিমির সাথে অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটতে থাকে আর প্রায়ে এক দু দিন বাদে বাদে,সেটা হলো রিমি ভোরের দিকে স্বপ্ন দেখে একটা স্টেজ,তাতে প্রোগ্রাম চলছে সামনে অনেক লোক প্রোগ্রাম দেখছে কিছুক্ষন বাদে হলটা পুরো ফাঁকা,একটাও লোক নেই।রিমি স্টেজের উপর একা দাঁড়ানো ।এমন সময়ে স্টেজের সামনের স্ক্রীন টা সরে যায় আর একটা লোক সিঁড়ি দিয়ে স্টেজের উপর উঠে আসে ছুড়ি দিয়ে কাউকে খুন করবে বলে রিমি যেন তার সামনে হটাৎ এসে পড়েছে এখন লোকটার দৃষ্টি রিমির দিকে কিন্তু প্রতিবারই মুখটা দেখার আগে ঘুমটা ভেঙে যায় একটা আতঙ্ক নিয়ে।প্রথম দুদিন রিমি উড়িয়ে দিয়েছে কিন্তু তিন নম্বর দিন থেকে বেশ ভয় পেয়ে গেছে।তারাপীঠের সেই সন্ন্যাসীর কথা মনে পড়ে যায়। এর মধ্যে রিমি এক শুক্রবার বাড়ী চলে যায় ।বাড়ী গিয়ে যে তিনদিন ছিল সে তিনদিন কোনো স্বপ্ন আর দেখেনা।রিমি খুব ফুরফুরে মেজাজে ফিরে আসে।
রিমি এখন খুব ব্যস্ত ওদের কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠান হবে।রিমি ভালো গান করে নাটকের সাথেও এক সময়ে যুক্ত ছিল বলে প্রিন্সিপাল ম্যাম ওকে কলেজের নৃত্যনাট্যের পরিচালনা করতে বলেছেন।ওদের কলেজ থেকে এবার রবিঠাকুরের শ্যামা নৃত্যনাট্য পরিবেশিত হবে। জোর কদমে রিহার্সাল চলছে।রিমির নিশ্বাস নেওয়ার সময় নেই।এক সপ্তাহের মধ্যে নাটক মঞ্চস্থ হবে। কিন্তু রিমি হঠাৎ করে সেই স্বপ্ন আবার দেখে শুরু করে।এবার রিমি নিজেও বেশ ভয়ে পেয়ে যায়।সন্ন্যাসীর দেওয়া সেই ফুলটা সব সময়ে সাথে রাখে।রাতে ও মাথার পাশে রেখে দেয়।
দেখতে দেখতে ফাংশনের দিন এসে যায়। রিমিরা খুব সুন্দর করে শ্যামা নৃত্য নাট্য পরিবেশন করে।বিরাট করে স্টেজ তৈরি করা হয়েছে। রিমিদের প্রোগ্রাম শেষে রাখা হয়েছিল। তার আগে অন্যান্য প্রোগ্রাম হয়েছে।তাই প্রোগ্রাম শেষ হতে বেশ রাত হয়ে গেছে।এখনো রিমির কিছু কাজ বাকী রয়ে গেছে তাই রিমি দেবলীনাকে বাড়ী চলেযেতে বলে। আর ফোন করলে যেন দরজা খুলে দেয় একথা বলে।
রাত্রি বারোটা নাগাদ রিমি কলেজ থেকে বের হয় বাড়ী যাবে বলে দুজন ছাত্র এগিয়ে এসে বলে ম্যাম আপনাকে বাড়ী পৌঁছিয়ে দেব? রিমি না করে বলে সামনে বাড়ী চলে যাবো। ছাত্ররা চলে যায়।রিমি বাড়ীর দিকে যেতে থাকে।বেশ রাত তার উপর নির্জন রাস্তা,রিমির বাড়ীর থেকে কলেজ হাঁটা পথে মিনিট সাত আটের পথ।হেঁটেই বেশীর ভাগ দিন কলেজ যায়। আজ কে পথ টা খুব লম্বা মনে হচ্ছে।এখানে বেশ গাছ পালা।ফাঁকাফাঁকা ঘরবাড়ী।সামনে বিশাল একটা বট গাছ তারপরে দুটো বাঁক পেরিয়ে রিমির বাড়ী। পাশে একটা মজা পুকুর। পুকুরের ধারে একটা ভাঙ্গাচোরা দোতলা বাড়ী আছে এখন বাড়ীটা পরিত্যক্ত। পাশে আগাছার জঙ্গল।এখানে রাতে নাকি জুয়ো খেলা হয়।এই জায়গাতেএক সময়ে নাকি ছিনতাই হত রিমি নীচের কাকীমার কাছে শুনেছে।রাস্তাতে একটা কুকুর পর্যন্ত নেই।রিমির বেশ ভয় লাগছে।মনে মনে ভাবছে ছেলে গুলোকে এগিয়ে দিতে বললে
ভালো হত। আকাশে বেলে বেলে জোৎস্না।
বট গাছের গাছের সামনে এসে রিমির দেখে জনা তিনেক লোক নিজেরদের মধ্যে তর্কাতর্কি করছে বেশ চাপা গলায় তার মধ্যে একটি গলা বেশ পরিচিত যাকে ও দুবেলা শোনে সে হল নন্দ রিমির ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে কিছু এক গোলমাল আছে।রিমি বট গাছের সাথে সেটে দাঁড়ায়। নন্দ আর সাথে আরেকটা লোক একজনকে টাকার জন্য হুমকি দিচ্ছে এটা রিমি পরিষ্কার বুঝতে পারে। মিনিট খানেক বাদে নন্দ আর নন্দের সাথে আরেকজন একটা লোককে টানতে টানতে ভাঙা বাড়ীর দিকে নিয়ে যেতে থাকে নন্দ হিসহিস করে বলতে থাকে আমি লোক মারি এই বদনাম আমার আছে তুই জানিস তোকে আজকে শেষ করবো। রিমি বট গাছের তলায় অন্ধকারে ভয়ে কাঁপতে থাকে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড়। সাথে ব্যাগে সন্ন্যাসীর দেওয়া মায়ের আশীর্বাদী ফুল। বুকের সাথে চেপে রাখে। তারা মাকে স্মরণ করতে থাকে। মিনিট পাঁচেক ওখানে দাঁড়িয়ে কোনোরকমে বাড়ীর সামনে গিয়ে দেবলীনা কে ফোন করে ,দেবলীনা এসে দরজা খুলে রিমিকে দেখে অবাক হয়ে যায়।রিমির কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে রিমি বলে আমার শরীর খারাপ লাগছে।আমি শুয়ে পড়ছি। সারারাত রিমি ঘুমাতে পারেনা নন্দর ভয়ঙ্কর গলাটা ওর মনে হতে থাকে ।পরদিন ভোরে উঠে রিমি দেখে ওদের নীচের কাকীমা ছাদের দিকে যাওয়ার সময় ওদের ঘরের সামনে ওদের ডেকে বলছেন কাল রাতে নাকি সামনের ডোবাতে একটা খুন হয়েছে পাশের পাড়ার একটি ছেলে। পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে। রিমির ভয়টা আবার জাঁকিয়ে বসে।কিছুক্ষন বাদে বাথরুম থেকে শোনে কেউ একটা বেল দিচ্ছে তারপর রোজকার মতো নন্দ বাজার করতে লাগবে কি না জিজ্ঞাসা করতে এসেছে।রিমির বাথরুমের মধ্যে থেকে ভয়ে আতঙ্কে নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম। রিমি ঠিক করে কিছুতেই বাথরুম থেকে বেরোবেনা।এমন সময়ে শোনে নন্দ ওর কথা জিজ্ঞাসা করছে ও বাথরুমে আছে শুনে আর সেদিনের বাজার করতে হবেনা জেনে বেরিয়ে যায়।
রিমি বাথরুম থেকে বেরিয়ে বুঝতে পারে বিপদ সাথে সাথে আছে।ও তাড়াতাড়ি ব্যাগে দরকারী জিনিসপত্র ভরতে শুরু করলে দেবলীনা অবাক হয়েজিজ্ঞেস করাতে বলে মায়ের জন্য মন খারাপ লাগছে কয়েকদিন বাড়ীতে থাকবে।কলেজে মেইল করে জানিয়ে ।দেবে।রিমি ট্রেনে করে সোজা বাড়ী আর ওখানেই সখের চাকরীর ইতি।রিমি কখনো আর যায়নি।
পরে সমস্ত ঘটনাটা চিন্তা করে রিমির মনে হয়েছে স্বপ্নটাতে হয়তো ও আগাম বিপদের কথা দেখতো।সেই সন্ন্যাসী আর মা তারার আশীর্বাদে ও হয়তো বড় কোনো বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল।