Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#য়া_দেবী_সর্বভূতেষু#শ্রীপর্ণা_চক্রবর্তী 
প্রথমেই সবাইকে জানাই শারদ শুভেচ্ছা...আসুন না... একটু অন্য রকম ভাবে ভাবা যাক! 
স্বর্গে সকল দেবতা এবং মর্ত্যলোকে সকল মানবরা যখন মহিষাসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ, তখন, মা মহামায়া রণদেবী মা দুর্গা রূ…

 


#য়া_দেবী_সর্বভূতেষু

#শ্রীপর্ণা_চক্রবর্তী 


প্রথমেই সবাইকে জানাই শারদ শুভেচ্ছা...

আসুন না... একটু অন্য রকম ভাবে ভাবা যাক! 


স্বর্গে সকল দেবতা এবং মর্ত্যলোকে সকল মানবরা যখন মহিষাসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ, তখন, মা মহামায়া রণদেবী মা দুর্গা রূপে আবির্ভাব হন।

আজকে আমাদের সমাজেও সমগ্র নারীজাতির প্রতি নানান রকম অত্যাচার এত বেড়ে গেছে (যাকে আমরা মহিষাসুরের রূপ দিতে পারি) যে সমস্ত মানবজাতিই  ভীত-সন্ত্রস্ত।

মাদুর্গা কে সমস্ত দেবতাকুল সজ্জিত করেছিলেন দশ অস্ত্র, ত্রিনয়ন এবং বাহন সিংহ দিয়ে। ওনারা সম্পূর্ণ ভাবে মাদুর্গাকে প্রস্তুত করেছিলেন, সমস্ত রকম রণকৌশলের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন রণভূমিতে যাওয়ার আগে। কিন্তু, প্রশ্ন হলো, আজকের সমাজে আমরাও কি আমাদের কন্যাদের সফলভাবে, সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারছি, যাতে ওরাও পারে রণভূমিতে মহিষাসুরের সাথে লড়াই করতে?

মা দুর্গাকে যেমন দশ অস্ত্র চালনা করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, সেরকম আমাদের ঘরের কন্যাদেরও যদি-

১. শিক্ষা 

২. আত্মবিশ্বাস 

৩. স্বনির্ভরতা 

৪. আত্মসংরক্ষণ

৫. সাহস-জোগানো 

৬. সর্বদা পাশে থাকার অঙ্গীকার 

৭. উপস্থিত-বুদ্ধি

৮. ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতার প্রশিক্ষণ

৯. আত্মসম্মান

১০. এ জগতে সমস্ত 'সু' এর প্রতি সম্মান

-এই দশ অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তাহলে আমার মনে হয় তারা নিজেরাই 'মহিষাসুর'কে বধ করতে সক্ষম হবে।

আসুন এই দশ অস্ত্রদের আর একটু ভালো ভাবে চিনে নি আমরা! 


১. শিক্ষা- 

আমাদের ঘরের প্রত্যেকটি উমা যেন শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে সেটা আমাদের দেখতে হবে। একমাত্র সঠিক শিক্ষাই পারে সঠিক পথ দেখাতে।


২. আত্মবিশ্বাস- 

আমাদের ঘরে 'উমা'রা জন্মানোর সাথে সাথে আমরা তাদের আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে দেই এই বলে "ছেলে নয়! মেয়ে হয়েছে!"

যেখানে একটা 'ছেলে' আর একটা 'মেয়ে' জন্ম দিতে একটি মাকে একই যন্ত্রণা সহ্য করতে, একই নয়-দশ মাস গর্ভে ধারণ করতে হয় , একটি 'ছেলে' ও একটি 'মেয়ে' কে বড় করে তুলতে একই কর্তব্য পালন করতে হয়, সেখানে আজকের দিনেও কেন এই মিথ্যা ভেদাভেদ???  

সেটা কি শুধু মাত্র সমাজের ভয়ে, যেটা কিনা আমাদেরই সৃষ্টি, আমাদেরই জন্যে???

আমাদের কে আমাদের 'উমা'দের বোঝাতে হবে "তুমি ছেলে বা মেয়ে হয়ে নয়, একজন 'মানুষ' হয়ে জন্মেছ। একজন মানুষের মতন মানুষ হয়ে ওঠাই তোমার জীবনের মন্ত্র।


৩. স্বনির্ভরতা-

আমাদের সমাজে একটি কন্যার প্রতি তাদের পিতার যেন একটাই গুরুদায়িত্ব 'মেয়ের বিবাহ দেওয়া' !!! অথচ একটি পুত্রের প্রতি তাদের পিতার গুরুদায়িত্ব তাকে 'স্বনির্ভর' করা! আমার মনে হয় প্রত্যেক পিতারই গুরুদায়িত্ব হওয়া উচিত তাদের 'সন্তান'দের পুরপুরি 'স্বনির্ভর' করে গড়ে তোলা এবং তারপরেই তার বিবাহের জন্য ভাবা।


৪. আত্মসুরক্ষা 

প্রতিটি 'উমা'কে আমাদের সম্পূর্ণ 'আত্মসুরক্ষা'র প্রশিক্ষণ দিতে হবে। একটি মেয়ে ক্যেরাটে শিখলে  অনেকেই বলে ওঠেন- "মেয়েকে ক্যেরাটে শেখাচ্ছ! গান শেখাও, আঁকা শেখাও, কিন্তু মেয়ে সন্তানকে মারপিট শেখানো কেন বাপু...?!!"

আমার মনে হয় প্রত্যেকটি কন্যাকে আত্মসুরক্ষার শিক্ষা দেওয়া উচিত । প্রতিটি স্কুলে ক্যেরাটে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা উচিত।


৫. সাহস জোগানো এবং 

৬. সর্বদা পাশে থাকার অঙ্গীকার-

প্রতিটি মুহূর্তে তাকে "তুমি 'মেয়ে' " বলে 'এই... করো, এই... কোরো না ' এর বিশাল এক ভারী বিশাল বোঝা, আমাদের উমাদের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে মানষিক ভাবে কমজোর না বানিয়ে, আমাদের উচিত সবসময় তার সাথে থাকা, পাশে থাকা তাকে সবসময় উৎসাহিত করা যে 'তুমি অবশ্যই পারবে'। 

কন্যার পিতা-মাতার এটা মনে করা উচিত নয় যে 'মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে, ও বিদায় হয়ে গেছে, তাই ও পর হয়ে গেছে! আর মেয়ের প্রতি আমাদের কোনো কর্তব্য নেই , দ্বায়িত্ব নেই!' 

বরং তাকে এটাই বোঝানো উচিত যে রক্তের সম্পর্কের টান কখনও এত ঠুনকো নয়, সেটা কোনো দিনও শেষ হবার নয়। তাই একটি কন্যার বিবাহ হোক আর না হোক তার বাবা-মা তার কাছে একই রকম 'নিজের বাবা-মা'ই থাকবে আর তাদের 'কন্যা'ও তাদের কাছে তাদের ঘরের 'উমা'ই থাকবে। তাই যখনই তাদের উমার তাদেরকে পাশে পাওয়ার, সাথে পাওয়ার সময় হবে (মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরেও), উমা যেন সবসময় চোখ বন্ধ করে সেই সাহস টা পায় যে ওর পাশে, ওর সাথে সর্বদা কেউ আছে, যারা আগেও থাকত, আজও আছে আর সবসময় থাকবে।


৭. উপস্থিত বুদ্ধি এবং 

৮. ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষমতা -

আজকাল তিন-চার বছরের ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদেরকে স্কুলে 'গুডটাচ, ব্যাডটাচ'এর শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। কেন বলুন তো? আমাদের ছোটবেলায় তো এসব ছিল না! তাহলে এখন কেন? 

কারণ যুগের সঙ্গে, বর্তমান পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থাও পরিবর্তনশীল করতে হবে। বদলে যাওয়া জগতের সাথে যাতে আমরাও সঠিক ভাবে জেনে-বুঝে চলতে পারি। 

আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থা শুধুমাত্র পুঁথিগততে সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না, বরং এমন করতে হবে যাতে উপস্থিত বুদ্ধির আরো বিকাশ ঘটে আর ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে প্রত্যেকটির শিক্ষর্থীর।


৯. আত্মসম্মান-

অনেকেই 'আত্মসম্মান বোধ' আর ' অহম বোধ'কে একসাথে গুলিয়ে ফেলে! দুটো কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। আমার মা একটা কথা প্রায় বলেন - "অতি বার বেরো না - ঝরে ঝড়ে যাবে, অতি ছোট হয়েও না - ছাগলে মাথা খাবে!"

এটাই অহম আর আত্মসম্মানের পার্থক্য! 

যেখানে দেখবে আত্মসম্মানে আঘাত লাগছে, শুধু মাত্র 'মেয়ে বলে' 'চুপ করে সহ্য করে' যাওয়াটা একেবারে অনুচিত। বরং সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করার দরকার আছে।


১০. এ জগতে সমস্ত 'সু' এর প্রতি সম্মান-

'কু' কে যেমন বর্জন করতে জানতে হবে সেই সাথে সমস্ত 'সু' কে গ্রহন করে নিতে হবে, কদর দিতে জানতে হবে এবং সেই সাথে নিজের মধ্যে সেটা সমাহিত করতে হবে।

আমাদের ঘরের 'উমা'দের এই দশ অস্ত্রে সজ্জিত করার ভূমিকা কিন্তু শুধুমাত্র তার পিতা-মাতা বা শিক্ষকের নয় বরং সকলকে এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সকল মাতা-পিতা,সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাড়াও সকল দাদা-দিদি, ভাই-বোন, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী, বন্ধু-বান্ধব, সকলকেই এই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।


আমাদের ঘরের 'উমা'কেও গড়ে নিতে হবে তার নিজের দশ হাত যা সম পারদর্শিতায় নিপুণ-


১. মাতৃ-রূপেণ-

'উমা'র প্রথম দুই হাত হবে মাতৃরূপে নিপুণ। 

মাতৃ রূপে আমাদের উমাকে তার সন্তানকে (ছেলে বা মেয়ে) সঠিক সুশিক্ষা প্রদান করতে হবে। পুত্র কন্যা উভয়কেই শেখাতে হবে নারী-পুরুষ সমানাধিকারে সম্মান করা। 

শ্বাশুড়ি-মায়েরও উচিত তার পুত্রবধূকে একজন মানুষ হিসাবে তার যোগ্য সম্মানটুকু দেওয়া, কারণ সে নিজেও একজন 'উমা' এবং এক মাতা।


২. শক্তি-রূপেণ-

উমাকে তার আরো দুই-হাত গড়ে নিতে হবে শক্তি রূপে। 

এই পরিপ্রেক্ষিতে বলি, আমার এক বান্ধবীর কথা এই ক্ষেত্রে মনে পড়ছে হঠাৎ! 

ও ওর ব্যাগে সবসময় একটা 

পিপার-স্প্রে রাখত আর একটা বড়সর সেফটি-পিন রাখত!!! 

আমরা জিজ্ঞেস করলে বলত- "ভিড় ট্রেনে-বাসে পিছন থেকে যারা উত্যক্ত করে এই সেফটিপিনটা তাদের জন্যে...!!! আর রাস্তা-ঘাটে যদি হঠাৎ কোনো অসুর উত্যক্ত করে তবে এই স্প্রেটা তার জন্যে!"

আমাদের 'উমা'দের এটা মনে রাখতে হবে যে ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলে চলবে না! নিজের শক্তি সম্পূর্ণ নিজের কাছে, তার নিজের মতন করে তাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। জীবনটা কোনো রূপকথার গল্প নয় যে কোনো রাজপুত্তর এসে  অসুর মেরে তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে! তাই তাকে নিজেকেই নিজে রক্ষা করতে জানতে হবে, তার নিজের মতন করে বুদ্ধি লাগিয়ে।


৩. বিদ্যা-রূপেণ-

সম্পূর্ণ শিক্ষার গুনে পারদর্শি করে গড়ে তুলতে হবে নিজের আরো দুটো হাতকে।


৪. কন্যা-রূপেণ-

একজন কন্যা-রূপে উমার দুই হাতে শক্ত করে হাল ধরতে হবে অনেক কর্তব্যের। তার যেমন কর্তব্য আছে তার নিজের বাবা-মায়ের প্রতি, ঠিক একই রকম সমান কর্তব্য আছে নিজের শ্বশুর-শাশুড়িমায়েরও প্রতি, কারণ সে একজন 'উমা' এবং একজন 'কন্যা'।


৫. যুদ্ধ-রূপেণ-

জীবনে চলার পথে অনেক বাধা-বিঘ্ন আসবে। আমাদের 'উমা' কে তার শেষ দুই হাত বলিষ্ঠ করতে হবে সেই বাধার সাথে লড়াই চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ।  ভেঙ্গে পরে, থেমে গেলে চলবে না। একটু বিরতি নিয়ে, আরো শক্তি সঞ্চার করে আবার নতুন করে উঠে দাড়িয়ে লড়াই চালিয়ে নিয়ে যেতেই হবে তাকে।


আমার মনে হয় এরকম ভাবে যদি আমাদের 'উমা'রা সত্যই মহিষাসুরমর্দিনী হয়ে উঠতে পারে তাহলে মনে হয় দুর্গাপূজার মাতৃবন্দনার আনন্দ আরো অনেক অনেক বেড়ে যাবে। 


আচ্ছা আপনারই বলুন তো আপনার পূজোটা কেমন কাটবে  যদি---

দুর্গাপুজোর ঠাকুর দেখার লাইনে আনন্দ করে সবাই মিলে দাড়িয়ে আছেন, পাশ থেকে আপনার বোন বা কন্যা বা বান্ধবী বা যে কোনো 'উমা'কে কিছু অসুররূপী কেউ বাজে টোন-টিটকিরি-মন্তব্য ছুড়ে দিল! 

অথবা 

খুব ভিড়ে দাড়িয়ে মাকে মন ভরে প্রণাম করছেন, কিছু অসভ্য আসুরিকতার প্রমাণ পেলেন  পিছনে কিন্তু ভিড়ের অসহায়তার কারণে আপনি কিছুই করতে পারলেন না! 

অথবা 

সকালে খবরের কাগজ খুলেই দেখতে পেলেন- "পূজোর মণ্ডপে শ্লীলতাহানি!"

? ? ? ? ?