Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#মাতৃরূপেণ---#সন্মিতা
              আজ তৃতীয়া । চারিদিকে বেশ একটা পুজো পুজো ভাব এসেছে । পুঁটির বস্তির কাছেই একটা বড়ো পুজো হয় । প্যান্ডেল শেষ হয়ে গেছে , ঠাকুরও এসে গেছে । পুঁটি অনেকবার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেছে কিন্তু প্যান্ডেলে…

 


#মাতৃরূপেণ

---#সন্মিতা


              আজ তৃতীয়া । চারিদিকে বেশ একটা পুজো পুজো ভাব এসেছে । পুঁটির বস্তির কাছেই একটা বড়ো পুজো হয় । প্যান্ডেল শেষ হয়ে গেছে , ঠাকুরও এসে গেছে । পুঁটি অনেকবার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেছে কিন্তু প্যান্ডেলের লোকরা ওকে ঢুকতে দেয়নি । ওরা বলে বস্তির এইসব ছোট ছোট বাচ্চারা নাকি চোর হয় । পুঁটির মা টুম্পার কানে কথাটা যেতেই ও পুঁটিকে আর ওই প্যান্ডেল মুখো হতে দেয়নি । পুঁটি তবু রোজ দূর থেকে দেখে প্যান্ডেলটাকে । 


            বেলা এগারোটা বাজে । টুম্পা দরজার সামনে গালে হাত দিয়ে বসে আছে । ঘরে চালের একটা দানা নেই । দুটো বাড়িতে কাজ করে যা পায় তাতে মাসের শেষের দিকে হাত একদম খালি হয়ে যায় । পুকুর ধারের বাড়িটার বৌদি খুব ভালো ছিল । এরকম মাসের শেষে এক - দুশো টাকা ধার চাইলে দিয়ে দিত । কিন্তু সেই বৌদি অন্য পাড়ায় চলে যাওয়ায় এখন ওকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে । দাস বাবুর বাড়ি আর দত্ত বাড়ি - এই দুই বাড়ির কেউই ওকে আগাম টাকা দিতে অথবা ধার দিতে রাজি হয় না । দত্ত বাড়ির বৌদি তো এমন কটমট করে তাকায় যে ও আর কিছু বলতে পারে না । ইনিয়ে বিনিয়ে মেয়েটার খিদে তৃষ্ণার কথা বললেও কেমন রেগে যায় । টুম্পার ইচ্ছে হয় ওই বাড়ির কাজ ছেড়ে দেয় , শুধু মুখ ঝামটা দেয় বৌদি । কিন্তু ছাড়তে পারে না । মাস গেলে ওই টাকাই বা এমনি এমনি কে দেবে ওকে ? আর হঠাৎ করে নতুন কাজই বা জোটাবে কোথা থেকে ? তাই বাধ্য হয়ে মুখ বুজে কাজ করে যায় । এখন একটাই চিন্তা ওর মাথায় ঘুরছে , মেয়েটাকে কি খেতে দেবে আজ ? সেই কোন সকালে সামনের চায়ের দোকান থেকে চেয়ে চিন্তে দুটো বিস্কুট এনে দিয়েছে । ব্যাস ওই দুটো বিস্কুট খেয়েই মেয়েটা এখনো অবধি রয়েছে । কোথায় যে গেছে কে জানে ? হয়তো প্যান্ডেলের আশে পাশেই কোথাও ঘুরছে । নিজের পেটে এখনো অবধি একটা দানা পড়েনি । তবু নিজের খিদের কষ্ট সে সহ্য নিতে পারবে । কিন্তু মেয়েটার ? এই যদি এখুনি এসে বলে - মা খিদে পেয়েছে , খেতে দাও । তাহলে কি দেবে ওকে ? ভেবে ভেবে কোনো কূল কিনারা করতে পারল না ।


              মেয়েটা এখনো বড়ই ছোট । মোটে তো সাত বছর বয়স । তবু এই বয়সের অনেক মেয়ে কতকিছু বুঝে যায় , কিন্তু এই মেয়ে এখনও অনেক কিছুই বোঝে না । পুঁটির যখন দেড় বছর বয়স , তখন ওর বাবা একটা অন্য মেয়েকে নিয়ে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় । এত বছরে একবারও আর ঘরমুখো হয়নি । কে জানে বেঁচে আছে না মরে গেছে । পুঁটির মা তবু সিঁথি ভরে সিঁদুর পড়ে ওই লম্পট স্বামীর মঙ্গলকামনায় । ওদের বস্তির অনেকেই অনেক কথা বলে ওর স্বামীকে নিয়ে । কতসময় পুঁটিকেই বলে ,


--- "ওরে পুঁটি , তোর মাকে বল আর সিঁদুর পড়তে হবে না । তোর বাপ আর ফিরবে না ।


একথা শুনে টুম্পা রেগে উত্তর দেয় ,


--- মরণ , বলি ওর বাপ ফিরবে না তো তোর বাপের কি লো ?


পুঁটি বোঝে না ওরা কেন ওইকথা বলে ? মা তো বলে ওর বাবা মিস্ত্রি । অনেক দূরে কাজ করতে গেছে । একদিন ঠিক ফিরে আসবে । পুঁটির বাবার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বস্তির অনেকেই টুম্পার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকায় । ওদের দেখে টুম্পার জিভ বের করা কুকুর ছাড়া আর কিছু মনে হয় না । একবার তো এলাকার এক মাতব্বর বাবলু এসে সরাসরি টাকার বিনিময়ে টুম্পার একটা রাত কিনতে চেয়েছিল ! গালাগালি দিয়ে বঁটি হাতে নিয়ে টুম্পা তাড়িয়ে দিয়েছিল ওকে । এবার মনে হয় আর সতীত্ব ধরে রাখতে পারবে না । টাকা না থাকলে মেয়েটার মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেবে কিভাবে ? কি হবে এমন সতীত্ব রেখে যেখানে ওর স্বামীই আর কোনোদিন ফিরবে না ? কার জন্য সতীত্ব ? প্রশ্ন করে নিজেকে । উত্তর পায় না । তবু যখন কল্পনা করে একটা অন্য পুরুষ তার শরীরের অঙ্গগুলো স্পর্শ করছে তখনই ওর গা গোলাতে থাকে , বমি পায় । না খেয়ে মরা ওর কাছে এর চেয়ে অনেক ভালো মনে হয় । পেটটা গোলাতে থাকে ওর । খিদেতে নাকি এইসব নোংরা চিন্তাতে ও বোঝে না ।


            বেলা বাড়তে থাকে । নাহ , এইভাবে বসে থাকলে আর চলবে না । কোথাও কিছু পাওয়া যায় কিনা দেখতে হবে । টুম্পা বের হল ঘর থেকে । আশেপাশে কয়েকটা ঘরে গিয়ে একটু চাল বা মুড়ি চিঁড়ে চাইতে গেল । বস্তির সবাই গরীব । তবু তার মধ্যেও কারোর কারোর অবস্থা একটু ভালো । তাদের মধ্যেই একজন কয়েকমুঠো চাল আর দুটো আলু দিল । তাড়াতাড়ি ঘরে এসে উনুন ধরিয়ে হাঁড়ি চাপিয়ে দিল । একটা আলু ওবেলার জন্য রেখে দিয়ে দু'মুঠো চাল ধুয়ে হাঁড়িতে দিয়ে দিল । পুঁটির রোগা চেহারা , বস্তির অন্য বাচ্চাদের তুলনায় ওর খোরাক কম । টুম্পা ভেবে দেখল ওইটুকু চালের ভাতে ওর পেট ভরে যাবে । নিজে যা হোক কিছু খেয়ে একটা বেলা কাটিয়ে দেবে । যাক , পুঁটির রাত্রের খাওয়ার ব্যবস্থাও হয়ে গেল । কিন্তু ঘরে কাঠ কম । জ্বালানির ব্যবস্থা করতে হবে । বস্তির শেষের দিকে কয়েকটা গাছ কাটা হচ্ছিল ও দেখেছে । পুজোর ভিড় সামলানোর জন্য রাস্তায় বাঁশ পুতবে , ওই গাছগুলোর ডাল নাকি একেবারে রাস্তায় এসে পড়ছিল - তাই কাটা হচ্ছিল গাছগুলোকে । ও জানে ওই কাঠ বিক্রির জন্য চলে যায় । তাই তাড়াতাড়ি দুটো একটা ছোট খাট ডালপালা আনতে হবে । না হলে পরে আর পাবে না । কয়েকটা পেলেও ওর কয়েকদিন চলে যাবে । মা - মেয়ের পেট , আর এমনিতেও কিই বা এমন রান্না হয় । হাঁড়িতে চাল আলু দিয়ে ও চলে গেল বস্তির শেষে । গাছ কাটার কাজ চলছে । ছোট খাট ডালপালা পাতায় চারিদিক ছড়িয়ে আছে । সবে একটা ডাল নিতে গেছে এমন সময় কোথা থেকে একটা লোক ধমকে উঠল ,


--- এই , একটাও ডাল নিবি না ।


--- বাবু , এই একটুকুন নেব ।


--- একদম হাত দিবি না । ভাগ এখান থেকে ।


--- ঘরে হাঁড়ি চড়বে নি বাবু ।


--- ঠিক হাঁড়ি চড়বে । তোদের আবার খাবারের অভাব নাকি ? তোরা বাইরেই ওরকম দেখাস ।


--- না বাবু , আমার ছোট মেয়ে আছে । ওকে খেতে দিতে হবে , তাই....


‌--- ওই , বেশী কথা বাড়াস না যা । তোরা এমনিতেও চোর সবকটা ।


--- চোর বলবেনি কো বাবু । বলে দিলুম । আমরা গরীব হতে পারি কিন্তু ছোটনোক নই ।


--- ইস , মাগীর মেজাজ দেখ । যা পালা এখান থেকে । নইলে এই ডাল দিয়েই পিটবো তোকে ।


পাশে দাঁড়ানো আর একজনের বোধ হয় একটু দয়া হল টুম্পাকে দেখে । সে বলে উঠল ,


--- আরে ছাড় না , নিক । কত নেবে আর ?


টুম্পা দেখে আশ্চর্য হল , যে এতক্ষণ ওর ওপর এত চোটপাট করছিল সে চুপ করে গেল লোকটার কথা শুনে । বোধহয় লোকটার বড়বাবু হবে । টুম্পাও এই সুযোগে আর দেরি না করে ঝটপট কয়েকটা ডাল কুড়িয়ে নিয়ে ঘরের দিকে হাঁটা দিল । উফ , রোদে সব যেন পুড়িয়ে দিচ্ছে । মেয়েটা যে কোথায় ঘোরে এই রোদে ! ভাবতে ভাবতে আকাশের দিকে তাকায় । গাঢ় নীল আকাশে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ ভেসে বেড়াতে দেখল । কি রোদ বাবা ! মেয়েটা আকাশ দেখতে বড়ো ভালোবাসে । কি যে দেখে এই রোদের মধ্যে ওই জানে ! 


              টুম্পার বড়ো সাধ হয় মেয়েকে ইস্কুলে পড়ায় । কিন্তু পারে না । কয়েকবার পাঠিয়েছিল একটা ইস্কুলে । কিন্তু মেয়ে শুধু পালিয়ে আসে । কেমন যেন বড্ড পালাই পালাই মন ওর সব কিছু থেকে । ঘরেও বেশিক্ষণ থাকতে চায় না । যদি ও ওর বাপের মতই হয় ? যদি টুম্পাকে ছেড়ে চলে যায় ? একথা ভাবতেই ওর বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠে । পুঁটির বাবাকে ও হারিয়েছে এবার আর পুঁটিকে হারাতে পারবে না । না কোনোমতেই নয় । পুঁটি যে ওর নাড়ী ছেঁড়া ধন । ওকে ছেড়ে ও বাঁচতে পারবে না । চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসে ।  ঘরে গিয়ে দেখে পুঁটি এসে গেছে । ওকে দেখে যথাসম্ভব সংযত হয়ে বলল ,


--- আর বেরোস নি । ভাত হয়ে গেলে একেবারে খেয়ে নিবি ।


--- মা , এদিকে এসো ।


পুঁটি ইশারায় মাকে ডাকে ।


টুম্পা তখন হাতা দিয়ে ভাত তুলে দেখছে সেদ্ধ হয়ে কিনা । ওর দিকে না তাকিয়েই বলল ,


--- কি হয়েছে বল ।


--- আরে , এদিকে এসো না ।


পুঁটির গলায় চাপা উত্তেজনা ।


সেই উত্তেজনার আভাস পেয়ে টুম্পা ওর কাছে যায় । দেখে ওর হাতে একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ । উৎসুক হয়ে জানতে চায় ,


--- কি আছে রে এতে ?


--- এই দেখো ।


বলে ব্যাগটা খুলে দেখাল মাকে । ব্যাগের ভিতর থেকে একটা লালা রঙের শাড়ি উঁকি দিচ্ছিল । ব্যাগ থেকে বের করে হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে লাগল । দেখে ওর মনে হল খুব দামী শাড়ি , যদিও কত দাম হতে পারে তার কোনো আন্দাজ করতে পারল না । কাজের বাড়ি চেয়ে কটা পুরোনো শাড়ি নিয়ে এসেছে । ছেঁড়া হলে সেটাকে গিঁট দিয়ে পড়ে । ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এগুলোই ওর পড়ার শাড়ি । দামী শাড়ি কোনোদিন ছুঁয়েই দেখেনি । তবু শাড়ির প্যাকেট আর রঙ - জড়ি দেখে ওর মনে হল ওটা খুব দামী শাড়ি ।


অবাক হয়ে টুম্পা জিজ্ঞেস করল ,


--- এটা কার ?


--- তোমার ।


--- আমার !


--- হ্যাঁ ।


পুঁটির মুখে রহস্যের হাসি ।


--- কে দিল ?


--- কেউ দেয়নি । প্যান্ডেলের ওই দিকে যে চায়ের দোকানটা আছে না ? ওইখানে একটা লোক আর একটা বউ বসে চা খাচ্ছিল । কি বোকা ওরা , ওদের পাশে ব্যাগটা রাখা ছিল । ওরা দুজনে এত গল্প করছিল আমি যে ওদের পাশ থেকে আস্তে করে ব্যাগটা তুলে নিয়ে দৌড় দিলাম , ওরা টেরই পেল না ।


বলেই খুব হাসতে লাগল । যেন কত মজার একটা ঘটনা ঘটেছে । টুম্পার চোখ লাল হয়ে গেল । রাগে ওর সারা শরীর জ্বলতে লাগল । পুঁটি হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে । ওর হাসি থামছেই না । টুম্পা শাড়িটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে আচমকা ওর চুল ধরে টেনে তুলে ওকে ঠাস ঠাস করে দুইগালে দুটো চড় মারল । ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমটায় পুঁটি থতমত খেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল , তার একটু পরেই গলা ফাটিয়ে কাঁদতে শুরু করল । টুম্পার রাগ তখনো পড়েনি । ওকে কিল চড় মারতে মারতে বলতে লাগল ,


--- হারামজাদা , তুই চুরি করেছিস ? চুরি ? তোকে কি আমি এইজন্য পেটে ধরেছিলাম ? পোড়ারমুখি তোর বাপ কবে ছেড়ে চলে গেছে দাঁতে দাঁত চেপে রয়ে গেছি তোকে মানুষ করব বলে । এই মানুষ হচ্ছিস তুই ? তোর মুখের দিকে তাকিয়ে এখনো বেঁচে আছি রে শয়তান । নইলে কবেই গলায় দড়ি দিতাম । আর তুই.... ? মরিসনা কেন ? তুই মর মর.....আমার পোড়া কপাল আমার মরণ হয় না ।


--- না মা , তুমি মরে যেও না । তাহলে আমি কার কাছে থাকব ? কে খেতে দেবে আমাকে ? কে আদর করবে ?


কাঁদতে কাঁদতে বলল পুঁটি ।


মেয়েকে এত মেরে শেষে টুম্পাও কেঁদে ফেলল । কোনোদিন মেয়েটা ওর হাতে এত মার খায়নি । রাগ এবার কষ্টে পরিণত হয়ে ওর দু'চোখ দিয়ে ঝরে পড়তে লাগল । মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল ,


--- কেন চুরি করলি তুই ?


পুঁটির কান্না তখনো থামেনি । চোখ মুছতে মুছতে বলল ,


--- তুমি কোনোদিন নতুন কাপড় পড়োনা । পুজোর সময় সবাই দেখি নতুন জামা পড়ে । শুধু তুমিই পড়ো না মা । তুমি দুগ্গা ঠাকুরকে পুজো দেবে বলেছিলে না ? তাই জন্যই তো এই কাপড়টা তোমার জন্য আনলাম ।


মেয়ের কথা শুনে ওর দুচোখের জল বাঁধ মানল না । হায়রে পোড়া কপাল , যদি ওর বাপ এমন করে ওর কথা ভাবতো তাহলে কি আজ আর ওকে এই দিন দেখতে হত । মেয়েকে এত জোরে মেরেছে যে গালে আঙ্গুলের লাল দাগ হয়ে গেছে । মারের জায়গাগুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল ,


---ওরে বোকা । চুরির জিনিস পড়লে যে ঠাকুর পাপ দেয় । এত অভাব আমাদের , তবু কোনোদিন দেখেছিস আমি চুরি করেছি ? আর তুই আমার জন্য কাপড় এনেছিস ? তুই নিজে কি পড়বি পুজোয় সেটা একবারও ভাবলি না ? তোর তো একটাও ভালো জামা নেই । সব জামাই তো ছেঁড়া রে ।


--- ওই কেলাব থেকে তো দেবে নতুন জামা ।


--- আর বার দিয়েছে বলে কি এই বারও দেবে ?


--- হ্যাঁ , ঠিক দেবে দেখো ।


পুঁটিকে দুই হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে । অঝোরে কাঁদতে লাগল টুম্পা । কি করে বোঝাবে ওই অবোধ মেয়েকে ? নিজে নতুন কাপড় পড়ার চেয়ে মেয়েটা নতুন জামা পড়লে ও বেশী খুশি হবে । ওর বয়সী আশেপাশের ঘরের মেয়েরা নিজের মাকে নিয়ে এত ভাবে না । তারা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে । আর এদিকে ওর মেয়েটা প্রথমবার চুরি করল , যদি ধরা পড়ে যেত ! ধরা পড়ার ভয়েতেই তো এক ছুটে চলে এসেছে মায়ের কাছে । নাঃ , এই মেয়ে কোনোদিন ওকে ছেড়ে যাবে না । চোখের জল কিছুতেই বাঁধ মানছে না , আনন্দে না কষ্টে সেটা ও বুঝতে পারল না । শাড়িটা অনাদরে পড়ে রইল মাটিতে । বাইরে আকাশে আগমনীর সুর । সোনালী রোদের একফালি ভাঙা জানলা দিয়ে ওদের এক টুকরো ঘরে এসে পড়েছে । মা দুর্গা বোধ হয় সব জানে । সেও তো মা । মেয়ের মন তো সেও বোঝে । মনে মনে তাই মাকে ডাকতে লাগল টুম্পা ,

" মা দুগ্গা ওকে মাপ করো । ওর পাপ নিও না । বড্ড বোকা আমার এই মেয়েটা । যা শাস্তি দিতে হয় আমাকে দিও । শুধু দেখো ঠাকুর ও যেন কোনোদিন আমাকে ছেড়ে না যায় । "

টুম্পার এই আর্তি মায়ের কাছে পৌঁছালো কিনা কে জানে ? তবে বাতাসে ভেসে বেড়ানো পূজোর সুরে মৃন্ময়ী মাতৃরূপ আর চিন্ময়ী মাতৃসত্তা এক হয়ে মিশে গেল । সামনের চায়ের দোকান থেকে বিজ্ঞাপনের সাথে ভেসে এল মহালয়ার গান -


             " বাজলো তোমার আলোর বেণু ।

                মাতলো রে ভুবন................."


#copyright_protected