#লাইমলাইট#সায়নদীপা_পলমল
সপ্তমীর সকালে স্নান করে পাড়ার মণ্ডপে এসে মা’কে প্রণাম করতে যেতেই দেবজিৎ শুনতে পেলো কেউ যেন কাছাকাছি বলে উঠল - “এমন লোককে মণ্ডপে ঢুকতে দেওয়াই উচিৎ না।” আরেকজন তাকে সমর্থন করে বলে উঠলেন - “ পুজোটা যেতে দিন তা…
#লাইমলাইট
#সায়নদীপা_পলমল
সপ্তমীর সকালে স্নান করে পাড়ার মণ্ডপে এসে মা’কে প্রণাম করতে যেতেই দেবজিৎ শুনতে পেলো কেউ যেন কাছাকাছি বলে উঠল - “এমন লোককে মণ্ডপে ঢুকতে দেওয়াই উচিৎ না।” আরেকজন তাকে সমর্থন করে বলে উঠলেন - “ পুজোটা যেতে দিন তারপর মিটিং ডেকে এর ব্যবস্থা করতে হবে। ছিঃ কে ভেবেছিল অমৃত বাবুর মত লোকের ছেলের এমন চারিত্রিক অধঃপতন হবে!”
বাবার নামটা কানে লাগতেই কথাগুলো যে তাকে উদ্দেশ্য করে বলা এ নিয়ে আর কোনো সন্দেহই রইলনা দেবজিতের। তবুও সে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে বেরিয়ে এলো মন্ডপ থেকে, তারপর বাইকে বসে উড়ে চলল তার গন্তব্যে…
★★★★★
“কাকু কাকু পুজো কখন শুরু হবে? বামুন ঠাকুর কই?”
বাইক থেকে নামা মাত্রই বাচ্চাগুলো হৈহৈ করে ছুটে এসে ঘিরে ধরল দেবজিৎকে। একটা বড় করে শ্বাস নিল সে তারপর ওদের মধ্যে সবথেকে পুচকেটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “যদি কাকুই বামুন ঠাকুর সাজে কেমন হয়?”
আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল অবুঝ বাচ্চাগুলো, কিন্তু পাড়ার সব থেকে প্রবীণ সদস্যা মিনতির নজর এড়ালো না দেবজিতের চোখের অসহায়তা। সে কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, “কোনো বামুন আমাদের পাড়ায় আসতে রাজি হয়নি তাই না বাবু?”
মিনতির কথায় চমকে উঠল দেবজিৎ, তারপর চোখ তুলে বলল, “পুজো আমি করব।” এই বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল সে, খেয়ালও করল না একজোড়া চোখ দূর থেকে তাকে অনুসরণ করে যাচ্ছে।
★★★★★
নাহ এখানের পুজোয় নেই কোনো চটকদারী থিম, নেই প্যান্ডেলের আড়ম্বর বা মূর্তির বৈচিত্র নিয়ে মাতামাতি। নেহাতই সাদামাটা একটা প্রতিমা কিন্তু তাও এই পুজোকে ঘিরে মিডিয়ার কৌতূহলের অন্ত নেই। কিভাবে যেন খবর পেয়ে সেই অষ্টমীর দিন থেকে একটু একটু করে আসছিল তারা, আজ দশমীর বিকেলে তো উপচে পড়া ভীড়। সবাই স্যুট করতে চায় “পতিতাদের” সিঁদুর খেলার দৃশ্য।
“তাহলে এই ছিল আপনার আসল উদ্দেশ্য, আমাদের ব্যবহার করে মিডিয়ার নজরে আসল! স্বার্থপর লোক একটা...” অষ্টমীর দিন মিডিয়া দেখে গর্জে উঠেছিল পায়েল, তারপর থেকে একদিনও আর মণ্ডপে আসেনি। আর তাই হয়তো খেয়ালও করেনি এই স্বার্থপর লোকটা যে সবার অনুরোধ উপেক্ষা করে একবারও ক্যামেরার সামনে এসে দাঁড়ায়নি, একবারও জাহির করতে চায়নি নিজের কৃতিত্ব।
দশমীর বিকেলে সবাই যখন সিঁদুর খেলায় মত্ত গুটিগুটি পায়ে পয়েলের ঘরে এলো দেবজিৎ। আজ থেকে মাস ছয়েক আগে নিজের দুঃসময় থেকে পালাতে আচমকাই একদিন এই ঘরে এসে হানা দিয়েছিল দেবজিৎ, তারপর সব কিছু পাল্টে যায় ওর জীবনে। নিজে জীবনের কাছে হেরেও এই বঞ্চিত মানুষগুলোকে জিতিয়ে দেওয়ার পণ নেয় সে। পথটা সহজ ছিলনা কিন্তু যাকে দেখে এতো কিছু করা সেই তো আজ অবধি বিশ্বাস করতে পারল না তাকে।
ঘরের মধ্যে ওকে দেখে চমকে উঠল পায়েল, রীতিমত গর্জে উঠলো সে,
“কি করতে এসেছেন এখন? কাজ তো মিটেই গেছে। আমাদের জন্য এত কিছু করার পেছনে আপনার উদ্যেশ্যটা আমার জানা হয়ে গেছে।”
তাই! তা কি উদ্যেশ্য আমার?
কি আবার! লাইমলাইটে আসা!!
“তা কিছুটা সত্যি। লাইমলাইটে আমি আসতেই চেয়েছিলাম, তবে সেটা মিডিয়ার লাইমলাইটে নয়। আর ওদের ডাকিও নি এখানে।" বলতে বলতে ধীর পায়ে পায়েলের দিকে এগলো দেবজিৎ। তারপর পায়েলের নিষ্পলক, নিস্তব্ধ চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে বলল, " তোমার এই বাদামী চোখদুটোর লাইম লাইটে আসতে চেয়েছিলাম।।
সারা বিশ্বের কাছে বিখ্যাত হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই পায়েল, শুধু তোমার কাছে নিজের অস্তিত্বের স্বীকারোক্তি দিতে চাই আমি। বলেই দেব্জিৎ পায়েলেএ হাত দুটো ধরলো, তারপর ওকে নিজের কাছে টেনে। পায়েলের অবাক হচ্ছিল ক্ষণে ক্ষণে। নিজেকে দুষছিল এই মানুষটাকে সন্দেহ করার জন্য। মানুষটা সত্যি ওকে এতটা ভালোবাসে!! তবুও কোথাও যেন একটা দ্বিধার কাঁটা খচখচ করছিল মনে।
ওর ঘন ঘন নিশ্বাসে ভিজে যাচ্ছিল, দেবজিতেরর মন, অনুভব। পায়েল ওর বুক থেকে মাথা না তুলেই জিগ্যেস করলো আমার মত মেয়ের সাথে কি কাটিয়ে দেওয়া যায় সারাটা জীবন?
দেবজিৎ আলতো হেসে সাহায্য নিল জয় গোস্বামীর।
"পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন…”