Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

কিছুদিন আগে অন্য একটা গ্রুপে একটা ইভেণ্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, বিষয় ছিল ফুচকা, ভারি সময়কে লঘু করতে এখানে পোস্টালাম৷
#লঘুরসের_গল্প
#পুঁটি_ফুচকা_ও_মাখন
#শুভজিৎ_সিংহ_রায় (০৫/০৬/২০২০)
যাহারা পশ্চাত হইতে আরম্ভ করিয়া মাখনের সঙ্গে ফুচকার সম্বন্ধ…

 


কিছুদিন আগে অন্য একটা গ্রুপে একটা ইভেণ্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, বিষয় ছিল ফুচকা, ভারি সময়কে লঘু করতে এখানে পোস্টালাম৷


#লঘুরসের_গল্প


#পুঁটি_ফুচকা_ও_মাখন


#শুভজিৎ_সিংহ_রায় (০৫/০৬/২০২০)


যাহারা পশ্চাত হইতে আরম্ভ করিয়া মাখনের সঙ্গে ফুচকার সম্বন্ধ খুঁজিয়া আশ্চর্য হইতেছেন তাহাদের বলি- যবনিকার পিছন হইতে দেখিবেন না, সম্মুখে উপবেশন করিয়া ধৈর্য ধরুন, একে একে পর্ব উন্মোচন হইবে৷ 

প্রথমেই আসি পুঁটিরাণীর কথায়, পুঁটি নামটি অধিক মধুর হইলেও উহার একটি পোষাকি নামও আছে - পল্লবী রায়, তবে আমরা এক্ষণে উহাকে পুঁটি বলিয়াই ডাকিব৷ পুঁটি অত্যন্ত ফুচকা খাইতে ভালোবাসে৷ ফুচকাওয়ালা যখন তাহার চোঙা সদৃশ ঝুড়ি হইতে বাছিয়া একটি মচমচে ফুচকায় আপন বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠির মৃদু চাপে মচ করিয়া শব্দে একটি গর্ত প্রস্তুত করে তখন সেই শব্দ যেন পুঁটির কানে মধু ঢালিয়া দেয়, তিন্তিড়ি সিক্ত জলের হণ্ডি হইতে উদ্গত সুবাস তাহার রসনা রসসিক্ত করে এবং পরিশেষে তীক্ষ্ণ ঝাল পুরগর্ভী সেই ফুচকা মুখস্থ করিয়া চক্ষু নিমীলিত করিয়া গাল ফুলাইয়া দন্ত রাজির মৃদু চাপে পুঁটি যখন চিবাইতে থাকে তখন তাহার মুখ দেখিয়া বুঝা যায় স্বর্গ সুখ কাহাকে বলে৷ 

পুঁটিরানীর এই ফুচকা প্রেম অবশ্য তাহার উত্তরাধিকার, তাহার মাতাঠাকুরাণী যাহাকে সকলে ননীবালা বা ননী বলিয়া জানে সে নবনীতের ন্যায় কোমল স্বভাবা না হইলেও তাহার মনের অন্তরে ফুচকার প্রতি অত্যন্ত কোমল একটি জায়গা ছিল৷ এই ফুচকার প্রতি ভালোবাসায় সে পলাইয়া ধর্মেন্দ্রকে বিবাহ করিতে পর্যন্ত উৎসুক হইয়া পড়িয়াছিল৷ এক্ষণে যাঁরা ভাবছেন ফুচকা প্রেমের সহিত ধর্মেন্দ্রের কি সম্পর্ক! তাহাদের অবগত করি এ ধর্মেন্দ্র সে রূপালি পর্দার ধর্মেন্দ্র নহে, এ হইল সেই ফুচকাওয়ালা যাহার প্রেমে থুড়ি যাহার ফুচকার প্রেমে আমাদের ননী ঘর ছাড়িতে প্রস্তুত হইয়াছিল৷ গরীব ফুচকাওয়ালার ঘরে ভাত রুটির অভাব হইলেও স্বামীর হাতের ফুচকার অভাব হইবেনা, আর কি চাই? কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় বামেরা শুনা যায় বিধির অস্তিত্ব না মানিলেও বিধি সর্বদাই বাম, খবর পাওয়া গেল মুঙ্গের জিলায় ধর্মেন্দ্রর স্ত্রী পুত্র কন্যা সহ একটি আস্ত সংসার বিদ্যমান, অতএব ভগ্নমনোরথে আমাদের ননী তাহার করপুট গোবরের দিকে বাড়াইয়া দিতে বাধ্য হইল৷ আবার গোবর শুনিয়া গোময় ভাবিয়া যাহারা নাকসিঁটকাইতাছেন কিম্বা পরম ভক্তিভরে করজোড় করিতেছেন তাহাদের বলি এ গোবর হইল আমাদের গোবর মুদি, গোবর্ধন রায়, এক্ষণে আমার পুঁটিরাণীর পিতা৷ 

এমনিতে কঞ্জুস বলিয়া গোবর মুদীর নামগর্ব থাকিলেও অধিক বয়সের একমাত্র কন্যার প্রতি তাহার স্নেহ কিছু অধিক ধারায়ই বহিত৷ সুতরাং পুঁটিরাণীর প্রাত্যহিক ফুচকা ভক্ষণের পয়সার অভাব হইত না৷ 

প্রত্যহের মত এক গোধুলিতে একটি নধর ফুচকা গলধঃকরণ করিয়া ঝাল ও আনন্দ বিগলিত মুদিত অক্ষি যুগল উন্মিলীত করিয়াই পুঁটি দেখিল তাহার মুখের পানে চাহিয়া গ্যাদগ্যাদ করিয়া উষ্ণ আবেগে মাখন যেন গলিয়া পড়িতেছে৷ 

মাখনলাল ছেলেটি ভালো, পুঁটি উহাকে বালিকা বেলা হইতেই বিলক্ষণ চিনে, শান্ত স্বভাবের ছেলেটি বাপের চালের আড়তে বসিয়া এক মনে আঁক কষিত, দুই বেনী দুলাইয়া চঞ্চল পদে ইস্কুলে যাইতে যাইতে যাইতে পুঁটি উহাকে বহুবার দেখিয়াছে৷ পুঁটির মনে হইয়াছে সে আড় নয়নে পুঁটিকে নজর করে কিন্তু কখনোই সে পুঁটির পানে সরাসরি তাকায় নাই এবং পুঁটিরও হৃদয়ে কিছু দোলা লাগে নাই৷ কিন্তু আজ কি হইল, মদনের কোন গোপন অভিসন্ধিতে চারি চক্ষুর মিলন হইল, পুঁটি দেখিল তাহার মুখপানে চাহিয়া মাখন গলিয়া পড়িতেছে, মাখন দেখিল হস্তে ধৃত শাল্মলী পত্রের আধারে ফুচকা অবহেলায় পড়িয়া আছে, পুঁটির নজর সেদিকে নাই, তার দৃষ্টি মাখনলালের বিগলিত বদন হইতে ধীরে ধীরে আপন চরণ যুগলের দিকে নামিতেছে৷

দুই জন তরুন তরুণী একে অপরকে নতুন করিয়া দেখিল আর উহাদের দেখিল এবং আশ্চর্য হইয়া জীবনে প্রথম গনতি ভুলিল তরুন ফুচকাওয়ালা, ধর্মেন্দ্র সাউএর জেষ্ঠ পুত্র রাজেশ...

তার পর কি হইল জানে শ্যামলাল৷