#ছোটো গল্প পারফেক্ট দাম্পত্য কলমে - সুকৃতী.............................
পর্দার ফাঁক দিয়ে ঝলমলে রোদ্দুর এসে অরিত্রর ঘুম ভাঙিয়ে দিল। ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়েই এক লাফে উঠে বসল অরিত্র। আজ অফিসে আরজেন্ট মিটিং তাই নয়টা ত্রিশ এর মধ্যে ত…
#ছোটো গল্প
পারফেক্ট দাম্পত্য
কলমে - সুকৃতী
.............................
পর্দার ফাঁক দিয়ে ঝলমলে রোদ্দুর এসে অরিত্রর ঘুম ভাঙিয়ে দিল। ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়েই এক লাফে উঠে বসল অরিত্র। আজ অফিসে আরজেন্ট মিটিং তাই নয়টা ত্রিশ এর মধ্যে তাকে অফিসে ঢুকতেই হবে। এখন ঘড়িতে আটটা চল্লিশ বাজে। রিমিতাকে বলেছিল সকাল ছয়টায় ডেকে দিতে, কিন্তু রিমিতা ডাকলোনা কেন ! ও ভুলে গিয়েছে নাকি , এই ভেবে অরিত্র '' রিমি...রিমি ''বলে ডাকতে ডাকতে রান্না ঘরে গেল। কিন্তু ওখানে রিমিতাকে পেলো না । ঠাকুর ঘরেও নেই , একটু অবাক হয়ে তাদের বেডরুম অ্যাটাচড বারান্দায় গিয়ে দেখে রিমিতা আরাম চেয়ারে ঘুমিয়ে আছে। অরিত্র একটু ভয় পেলো কারন রিমিতা তো কখনো এমন করেনা ! তাই আলতো করে ওর মাথায় হাত রাখলো। অরিত্রর স্পর্শে রিমিতা চমকে উঠলো
- ওহ তুমি উঠে পরেছো ! অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে না? তোমার অফিসে লেট হয়ে যাবেনা তো ! তুমি একটু ওয়েট করো আমি চা করে তোমার টিফিনটা বানিয়ে দিচ্ছি।
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে মাথা ঘুরে গেলো রিমিতার , অরিত্র ধরে নিলো ওকে।
- একি রিমি কি হয়েছে তোমার ! একটু শান্ত হয়ে বসে আগে বলো তুমি এখানে এভাবে ঘুমিয়ে ছিলে কেন? কখনই বা এখানে এসেছো ?
- সে সব কথা পরে বলবো খন অরি, এমনিতে তোমার লেট হয়েছে এবার রেডি না হলে......।
- রিমি আমি বলছিনা তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো!আগে বলো তোমার শরীর খারাপ তাইনা? তা না হলে এভাবে মাথা ঘুরলো কেন? কি হয়েছে বলো আমাকে রিমি।
- কিছু হয়নি অরি, আসলে কাল মাঝ রাতে আমার পিরিয়ডস স্টার্ট হয় আর তুমি তো জানো স্টার্টিং এর সময় আমার খুব পেটে ব্যাথা করে।
- কিন্তু রিমি তোমার ডেট তো এখনো দুদিন বাকি!
- হ্যাঁ গো কিন্তু এবার এরম কেন হলো বুঝতে পারছিনা, আর পেট ব্যথাটাও এবার খুব বেশি হচ্ছিল। আমি ছটফট করছিলাম ব্যথায়। আমার জন্য যাতে তোমার ঘুম না ভেঙে যায় , তাই ওষুধ খেয়ে এখানে এসে বসি তার পর কখন ঘুমিয়ে পরেছি। সরি গো তোমাকে ডেকে দিতে পারিনি।
- রিমি তুমিকি পাগল , রাতে এতো কষ্ট পেয়েছ আর আমাকে একবার ডাকলেনা পর্যন্ত !?
- আসলে তোমাকে সকালে উঠতে হতো সেজন্যই তোমার ঘুম ভাঙাতে চাইনি, আর ওষুধ তো খেয়ে নিয়েছিলাম তাই আর। তুমি চিন্তা করোনা আমি এখন ঠিক আছি তুমি যাও ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নাও এমনিতেই অনেকটা লেট হয়ে গিয়েছে।
- হ্যাঁ সে তো আমি দেখতেই পাচ্ছি আপনি কতটা ঠিক আছেন তাই মাথা ঘুরে পরে যাচ্ছিলে।
শোনো একদম চুপটি করে বসো। এক পাও নরবে না , আমি চা নিয়ে আসছি। আমি ডক্টরকে ফোন করে রাখছি তোমাকে নিয়ে যাব। এরম কেনো হলো একবার চেকআপ করিয়ে নিতে হবে।
- কিন্তু অরি আজই তো তোমার অফিসে মিটিং আছে , এই মিটিং এর উপর ডিপেন্ড করছে তোমার প্রমোশন !
- তোমাকে বললাম না চুপটি করে বসো।
এই বলে অরিত্র রান্না ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ এর মধ্যে দুকাপ চা নিয়ে এলো।
- আচ্ছা রিমি এইবার যদি আমার প্রমোশনটা না হয় তবে কি আমাদের কোনো অসুবিধা হয়ে যাবে? এমনিতে তো দৈনন্দিন জীবন জাপানের আমাদের কোনো অভাব নেই। এখন যা সেলারি পাই তাই দিয়ে দিব্যি কাটছে আমাদের ভালোবাসার দিন গুলো। আর বসকে অসুবিধার কথা বুঝিয়ে বললে আশাকরি উনি বুঝবেন। তাপর যা হবে দেখা যাবে।
- না গো অসুবিধা কেনো হবে। তুমি আমাকে যেভাবে রাখবে আমি তেমনি ভাবে থাকবো। শুধু সারাজীবন এভাবেই আগলে রেখো। মুড়িয়ে রেখো আমাকে তোমার ভালোবাসায়। আর কিছু চাইনা আমি।
- তাহলে তুমি কি করে বলছো তোমাকে এই অবস্থায় রেখে প্রমশনের লোভে আমি অফিসে ছুটবো। আমি আজ অফিসে যাবনা , মিটিং অ্যাটেন্ট করতে পারবোনা সেটা ফোনে জানিয়ে দিয়েছি।
তুমি এই নিয়ে একদম চিন্তা করোনা। চলো স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে তুমি বরং পুজোটা দিয়ে দাও । আমি টিফিন আর তোমার জন্য সুপ বানিয়ে রেখে স্নান করবো , তারপর একসাথে টিফিন করব।
- অরি আজ তো আমি পুজো দেবনা ! তুমি বরং পুজোটা দিয়ে দিও আমি টিফিন বানাচ্ছি।
- না রিমি তোমার শরীরটা প্রচণ্ড উইক তাই মাথা ঘুরেছে তুমি রান্না ঘরে যাবেনা , আর পুজো দেবেনা কেনো !? তোমাকে না কতোবার বলেছি এই কুসংস্কারচ্ছন্ন ভুলভাল চিন্তাগুলো থেকে নিজের মনকে মুক্ত করো। এবার তোমাদের বদলানোর সময় এসেছে। এভাবে আর কুসংস্কার নিয়ে বেঁচে থেকো না। পিড়িয়ডস পুজো না দেয়ার মতো কোনো ইস্যু না , ওই সমস্ত সেকেলে দাদু - ঠ্যাম্মা আমলের চিন্তাধারা থেকে বেড়িয়ে এসো, বুঝেছ আমার পাগলি?
- আচ্ছা বাবা আমি আর এসব নিয়ে ভাববো না। কুসংস্কার মানবো না । এবার থেকে আমিই পুজো দেব , তাহলে তুমি খুশিতো? তোমাকে খুশি করতে আমি সব করতে পাড়ি জ্যানাব।
এই বলে মৃদু হেসে অরিত্র কে জড়িয়ে ধরলো রিমিতা। অরিত্র রিমিতাকে নিজের বুকের কাছে চেপে ধরে কপালে ভালোবাসার আদর এঁকে দিয়ে হাসতে হাসতে বললো
- দ্যাটস লাইক অ্যা গুড বউ।