# দুগ্গাপুজোর গল্প# কলমে মনীষা পলমল23/10/20
সে অনেককাল আগের কথা রাঙা নদীর কূলে এক প্রত্যন্ত গ্রাম কুসুমডিঙা। কয়েক ঘর হিন্দু মুসলমানের বসবাস সেখানে।" সবাই সেটা সহজ সুখী বাধা বাঁধনহারা আবাদ করে বিবাদ করে সুবাদ করে তারা।&qu…
# দুগ্গাপুজোর গল্প
# কলমে মনীষা পলমল
23/10/20
সে অনেককাল আগের কথা রাঙা নদীর কূলে এক প্রত্যন্ত গ্রাম কুসুমডিঙা। কয়েক ঘর হিন্দু মুসলমানের বসবাস সেখানে।" সবাই সেটা সহজ সুখী বাধা বাঁধনহারা
আবাদ করে বিবাদ করে সুবাদ করে তারা।"
এমনই এক সুখি গ্রামের দুর্গা পূজার গল্প শোনাই। আব্দুল সাকিনা ফরিদার সাথে রতন চাঁপা কানাই একসাথে বড় হচ্ছে। খুশির ঈদ এর ফিরনি সিমাই এর সাথে বিজয়ের পরমান্ন ও নাড়ু একসাথেই ভাগাভাগি করে খায়। অশ্বিনের পেঁজা তুলোমেঘ যখন নীল আকাশে ভেসে বেড়ায়, রাঙা নদী র চর কাশের দোলায় মেতে ওঠে তখন ওরা ঠানদির কাছে দুর্গা ঠাকুরের গল্প শোনে। কিভাবে দুগ্গা ঠাকুর মহিষাসুরকে বধ করে দেবতাদের স্বর্গরাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তার গল্প।
এমনই এক শরৎ সন্ধ্যায় আব্দুল সাকিনারা এসে জুটেছে ঠানদির ঘরে। তাদের আবদার --তুমি আমাদের দুর্গা ঠাকুরের গল্প বলো! ঠানদি বলে--- দাঁড়া, এবার তোদের দুগ্গা ঠাকুর দেখার ব্যবস্থা করছি! তখন তো এখনকার মত বারোয়ারি পুজোর চল ছিলনা। কোন কোন সম্পন্ন জমিদার বাড়িতে দুর্গাপূজা হতো। কুসুম ডিঙ্গা থেকে দুটি গ্রাম পরে এক জোতদারের বাড়িতে দুর্গাপূজা হয়। ঠানদি লোকজন জোগাড় করে গরুর গাড়িতে করে বাচ্চাগুলোকে পুজো দেখতে পাঠান। কচিকাঁচা গুলোর আনন্দ আর ধরে না। সবাই ঠাকুর দেখে ফিরেছে--- ভীষণ উত্তেজিত সবাই! ঠানদির বারান্দায় বসে সবাই ঠাকুর দেখার উত্তেজিত আলোচনা করছে----
ঠানদি এসে কেমন ঠাকুর দেখলো এটা জানতে চাই তেই---- উত্তেজিত আব্দুলরা শুরু করল দুগ্গা ঠাকুর দেখার বর্ণনা--------
আব্দুল---" বলদে চড়িয়া শিবে শিঙ্গায় দিলা হাঁক
শিঙ্গা শুনি মর্ত্যেতে বাজিয়া উঠিল ঢাক ।
শিবের সনে কার্তিক গণেশ লক্ষ্মী সরস্বতী
আশ্বিন মাসে বাপের বাড়ি আসেন ভগবতী।"
সাকিনা---" গৌরী এলো দেখে যা লো
ভবের ভবানী আমার ভবন করিল আলো।"
কানাই আব্দুল একসঙ্গে হাত পা ছুঁড়ে বলতে লাগলো----" ও দেখি সিংহের উপর উইঠা ছুঁডি
অসুরের টিক্কি ধরি , গলায় দিছে সাপ জরাইয়া
বুকে মারছে খুচা
কি দুগ্গি দেখলাম চাচা কি ঠাকুর দেখলাম চাচী।"
এবার চাঁপা ও সাকিনা চোখ গোল গোল করে দু হাত নেডে বলতে লাগলো---" ওই যে এক তুম্বা বদন, দাঁত দুইটা তার মুলার মতন, কান দুইটা তার কুলার মতন -- মাথা লেপাপোঁছা
কি ঠাকুর দেখলাম চাচা, কি দুগ্গি দেখলাম চাচী।"
রতন ও কানাই এবার শুরু করলো ---
" আসে ডাইনে বামে দুইটা ছেমরি
পইরা আসে ঢাকাই শাড়ি
ঘুরতে দেখছি বাড়ি বাড়ি
ঠমক দেহায় ভারী ।"
চাঁপা সাকিনা সাথে সাথে বলতে লাগলো--
" ময়ুরের উপর বৈঠেন যিনি
উনার বড় ছিকছিকানি
ধুতি পরসেন কোঁচা
কি দুগ্গি দেখলাম চাচা, কি ঠাকুর দেখলাম নানী!"
ওদের দুগ্গা ঠাকুর দেখার বর্ণনা সারা আকাশ বাতাস ছড়িয়ে পড়তে লাগলো--- গৌরী এলো দেখে যা লো----
ঠানদি বললেন-- শোন রে---
সপ্তমী তে মা জননী মন্ডপে মন্ডপে
অষ্টমীতে মা জননী ফুলে ফলে ধুপে!
নবমীতে মা জননী নিশি পোহাইলা
দশমীতে পাগলা ভোলা নাচিতে লাগিলা।
শিবে দুর্গা রে লইয়া যাবে কৈলাস ভুবন
বিসর্জনের বাজনা বাজে বিজয়া গমন ।
নীলকন্ঠ পাখির ডানায় ভর করে আসে বিষাদ বিধুর বিজয়াদশমী। মা আবার ফিরে যান কৈলাসে। মর্তবাসী প্রতীক্ষা করে পরের বছরের।