রম্যরচনাআজকের বিষয়: মালকৌশিক চট্টোপাধ্যায় ৷
ব্যাপারটা এতই বহুমুখি যে কোথা থেকে শুরু করবো ভেবেই পাচ্ছি না ৷ শেষমেষ মহাগুরু শিবরাম (নাকি শিব্রাম) চক্রবর্তীর পদধূলি মাথায় নিয়ে শুরু করেই দিলাম ৷
বছর কয়েক আগে চন্ডীদাস বাজারের মোড় দিয়ে…
রম্যরচনা
আজকের বিষয়: মাল
কৌশিক চট্টোপাধ্যায় ৷
ব্যাপারটা এতই বহুমুখি যে কোথা থেকে শুরু করবো ভেবেই পাচ্ছি না ৷ শেষমেষ মহাগুরু শিবরাম (নাকি শিব্রাম) চক্রবর্তীর পদধূলি মাথায় নিয়ে শুরু করেই দিলাম ৷
বছর কয়েক আগে চন্ডীদাস বাজারের মোড় দিয়ে আসছি ৷ সন্ধ্যেবেলা ৷ দুর্গাপূজো সবে শেষ হয়েছে ৷ এখন চর্তুদশী ৷ আগামীকাল লক্ষীপূজো ৷ বেশ কিছু পসারি প্রতিমা নিয়ে হাঁকাহাঁকি করছে ৷ এমন সময় চমকে উঠলাম ৷ শুনি এক পসারি আরেকজনকে বলছে, "তোর কটা মাল বিক্রি হলো ?" ওই প্রতিমা বিক্রি হয়ে গেলেই ঠাকুর ,নয়তো "মাল" ৷
এমনিতে জিনিসপত্র বোঝাতে মাল বলা হয় ৷ বলা হয় মালপত্র ৷ দোকানদারেরা হামেশাই বলে " বাবুর মালগুলো ঠিকঠাক দিবি ৷ আগেকার দিনে রেলওয়ে তে মালবাবু বলে একটা পোস্ট ছিলো । তার কাজ ছিল মালপত্রের হিসেব রাখা । কিন্তু কখনো কখনো মেয়েদেরও মাল বলে ৷ বিশেষ করে কলেজে বা তার কিছুটা পরেও সুন্দরী , ভালো মেয়ে দেখলে ছেলেরা বলে , " দ্যাখ দারুন মাল আসছে ৷ " ৷ " গুরু, কি মাল পটিয়েছো ! " মানে এটাই চলে আসছে ,কেন জানি না ৷ আবার কোনো ধুরন্ধর ছেলে বা ঝানু লোককেও মাল বলা হয় ৷ "বাব্বা, উনি তো মাল লোক ৷ " অতএব মাল কথাটি পুংলিঙ্গ নাকি স্ত্রীলিঙ্গ বলা মুশকিল ৷
আবার খুব বড়লোক মানে পয়সাওলা লোক হলেও তাকে মালদার লোক বলা হয় ৷ সে জীবনে মালদা না গেলেও ৷ ওইজন্য লটারি সেন্টারের নাম হয় মালামাল উইকলি ৷
খুব মাল কামিয়েছে মানে পয়সা কামিয়েছে ৷ আবার মাল মানে বোঝা ৷ বড়বাজারে কুলিরা মাল নামায় ঘাড়ে করে আর শেঠজীরা মাল কামায় গদীতে বসে ৷
সর্বশেষ আরেকরকম মালের কথা বলতেই হয় ৷ তা হলো মাল ৷ মানে মাল খাওয়া ৷ " চল আজ একটু মাল খাই ৷ " বললে আর বোঝাতে হবে না যে কি বলতে চাইছে ৷ এ মালের ভাগ নেয়নি এমন লোক খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর ৷ ব্যাপারটা এমন যে কিছু মালদার লোক ( মালদা বাসী নয়) প্লেটে কিছু মাল নিয়ে গ্লাসে করে মাল খাচ্ছে ৷ তবে যারা এই কম্মোটি করছে তাদের মাল আছে আর যারা এই পরিসেবা দিচ্ছে তারা মাল কামাচ্ছে ৷
আজকের পৃথিবীতে সবই চলছে এই মাল কামানোর খেলা ৷ মার্কস বলে গেছিলেন যে পুঁজিপতিরা মাল কামানোর নেশায় এতো মত্ত থাকবে যে নিজের ফাঁসির দড়িটাও বিক্রি করতে পিছপা হবেনা ৷ তিনি কোনো জ্যোতিষি ছিলেন না ৷ সমাজবিজ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গীতে বিশ্লেষন করেছিলেন ৷ আজ দেখুন লক্ষাধিক লোক মারা যাওয়া সত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন তুলে দেওয়া হয়েছে ৷ ভাববেন না এ মেহনতী মানুষকে বাঁচানোর জন্য ৷ শুধু এখানে নয় পৃথিবীর সর্বত্র লকডাউন তোলা হচ্ছে যাতে লোকের পকেটে মাল আসে ৷ এই যে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুঃখে নেতারা চোখের জলে নদী তৈরি করে লোকগুলোকে মালের মতোই গাদাগাদি করে বিদায় করে দিচ্ছেন যেমনভাবে লোকে আপদ বিদায় করে তা সে না করে সেই পরিমান মাল যদি ওদের পকেটে দিতেন তবে ওদের হয়রানি করে এভাবে আসতে হতো না ৷ মাল কামানোর নেশায় টলমল সবাই ৷ পুঁজিপতি, সরকার , জনগণ সবাই ৷ তবু তার মধ্যেই কিছু শুভবুদ্ধি সম্পন্ন লোকের দেখা মেলে যারা অকাতরে মাল বিলিয়ে যায় গরীবদের জন্য ৷ তাদের লাখো সেলাম ৷
মাল নিয়ে অনেক কথাই বলা যায় তবে আজ এই পর্যন্তই থাক ৷ মাল কামান ৷ ভালো থাকুন ৷
কৌশিক চট্টোপাধ্যায় ৷