Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

# বন্ধুত্ব#অমৃতা গুহ দে
এরকম মানুষ খুঁজলেও পাওয়া যাবেনা যার জীবনে ভুল বোঝাবুঝি হয়নি। আজ আমি এরকম একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের কাছে বলবো।
বিকম ফাইনাল এক্সাম শেষ হয়ে গেছে। আমি, অনন্যা, অংশু, তৃণা, নীল,রবিন, রক্তিম আর শুভ স্কুল লাইফ থেকে …

 


# বন্ধুত্ব

#অমৃতা গুহ দে


এরকম মানুষ খুঁজলেও পাওয়া যাবেনা যার জীবনে ভুল বোঝাবুঝি হয়নি। আজ আমি এরকম একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের কাছে বলবো।


বিকম ফাইনাল এক্সাম শেষ হয়ে গেছে। আমি, অনন্যা, অংশু, তৃণা, নীল,রবিন, রক্তিম আর শুভ স্কুল লাইফ থেকে বন্ধু। আমাদের 8 জনের গ্রুপে নীল আর তৃণা দুজন প্রেম করতো ক্লাস XI থেকে। আমাদের কাছে ওরা একদম সিনেমার হিরো হিরোইন ছিল। রোজ জিজ্ঞাসা করতাম কথায় গেলি? কি খেলি ?কি হলো?  ইত্যাদি। নীলের পদবী ছিল হাতি আর তৃণার ছিল গাঙ্গুলি। আমরা মাঝে মাঝে তৃণা হাতি বলে ক্ষেপাতাম। দুজনেরই বাড়িতে জানাজানি হলে তৃণার বাবা একদম এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে ছিল। অনেক মার ধোর অশান্তি চলছিল বাড়িতে । তৃণার মা ছোটবেলায় মারা গিয়েছেন। ওরা তিন বিন পিঠোপিঠি। আর নীলের বাড়ি ব্যাবসায়ী পরিবার আর একমাত্র ছেলে বলে ওর দিকে কোনো অসুবিধা ছিলনা। 


আমাদের বয়স তখন অনেক কম মানে 19/20 হবে। সবেতেই করেঙ্গে ওর মরেঙ্গে টাইপের। রেজাল্ট বের হওয়ার আগেই তৃণার সমন্ধ দেখা শুরু হয়। অনন্যা একদিন ওর বাড়ি গিয়ে খবরী হয়ে সব ইনফরমেশন নিয়ে আসি। তৃণার বিয়ে প্রায় ঠিক হয়ে গেছে। ওর তো কেদে কেদে অবস্থা খারাপ। আমরা প্রায় 7/8 জন মিলে খুব চিন্তা আলোচনা করে যাচ্ছি। আমি যখনকার কথা বলছি তখন শুধু ল্যান্ডলাইন ছিল। মোবাইল খুব কম লোকের কাছে ছিল। তাই তৃণার বাবা অফিস গেলে আর ওর পিসি স্নানে ঢুকলে একটু কথা বলতে পারতাম আমরা।


একদিন রাত 3টে নাগাদ সারা বাড়ি কাঁপিয়ে  ল্যান্ডলাইন বেজে উঠলো অনন্যার বাড়িতে ।  অনন্যার  মা সমস্ত রকম  অভিশাপ দিতে দিতে  এসে বললো হ্যালো বলতেই কেটে দিয়েছে।অনন্যার  কি সন্দেহ হতে তৃণার বাড়িতে ফোন করে । তৃণা ফোনটা বাজতে না বাজতেই উঠিয়ে জানায় কাল বিকেলে ওরা মুম্বাই চলে যাচ্ছে ফ্লাইটে। ওখানেই ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে 12 দিন পরে। কাল যেকোনো সময় তৃণা বাড়ি থেকে পালাবে। ওর বন্ধুরা  যেনো হেল্প করে। এর মধ্যেই মা ঘরে ঢুকে চেঁচাতে থাকে বলে তুই গোল্লায় গিয়েছিস । কে কথা বলছে ? এরপর গুম গুম করে কিল থাপ্পড় খায় অনন্যা । 


যাইহোক অল্প বয়স আমাদের তখন । টাকা পয়সা আজ কালকার বাচ্চাদের মতন হাতে থাকতোনা । সকাল হতেই অনন্যা   সবাইকে ডেকে জানায়। আর  আলোচনা করে ফাঁসির আসামির মতন তৃণার বাড়িতে অনন্যা যায় তৃণাকে যে করেই হোক বাচাতে   হবে। নীল আমি আর বাকি বন্ধুরা বেনারসী ধুতি পাঞ্জাবি কিনতে গিয়েছি (তাও ধারে আমাদের  কলেজের বন্ধুর বাবার দোকান থেকে) নীলের ছোট ভাই বাইক নিয়ে একটু দুরে দাড়িয়ে আছে অনন্যাদের  জন্য। 


অনন্যা  তৃণার বাড়ি গিয়ে দেখে ওদের গোছগাছ হোয়ে গেছে। তৃণার চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে। অনন্যা আসতেই ওর  বাবা বললো তাড়াতাড়ি কথা বলেনে। আমাদের তৈরি হতে হবে। তৃণা নাইটি পড়ে আছে। অনন্যা ওকে হাত আর চোখের ইশারায় সব বুঝিয়ে বলে। ও ঘরে ঢুকে ড্রেস চেঞ্জ করতে যেতেই ওর বাবা বলে কোনো দরকার নেই এখন চেঞ্জ করবার। আমরা 2/3 ঘণ্টা পরেই বের হবো। অনন্যাকে গেট ওবধি এগিয়ে ফিরে আসছে  বোলে তৃনা বাইরে বেড়িয়ে আসে।অনন্যা এগোতেই তৃণা হঠাৎ ওর হাত ধরে দৌড়াতে থাকে। এরিমধ্যে নীলের ভাই বাইক নিয়ে এসে ওদের দুজনকে বাইকে উঠিয়ে চম্পট দেয়। 


আমরা দূর থেকে দেখি ওরা আসছে। আর তৃণার নাইটিটা হাফ প্যান্টের মতন হয়ে আছে কারন ও দুদিকে পা দিয়ে বসে আছে। এত টেনশনের মধ্যে আমরা খুব হাসতে থাকি। ততক্ষনে প্রায় বিকেল হয়ে গেছে। খুব খিদেও পেয়েছে। একটা শশাওয়ালা যাচ্ছিল আমরা ওর শুধু ঝুড়িটা খাইনি বাকি  খোসা শুধু সবগুলো শশা খেয়েছিলাম। যাইহোক রক্তিম এসে বললো সামনে একটা মন্দির আছে আর ওখানে 2/3 টে বাথরুম আছে। আমরা হাতে চাঁদ পেলাম। সবাই  ফ্রেশ হতে গিয়ে পুরো জল চপচপে হয় বাথরুমের ভেতরটা। ওরই মধ্যে ওদের পাজামা পাঞ্জাবী আর বেনারসী পড়তে হবে। 


আমার হাতেই একটা প্যাকেট এ পাজামা পাঞ্জাবী আর একটাতে বেনারসী ( তাড়াহুড়োতে পেটিকোট ব্লাউজ কিনতে ভুলে গিয়েছে সবাই) আমি বললাম কিছু হবেনা তুই নাইটির ওপরে বেনারসী পরেনে। ব্লাউজ আর পেটিকোট এর কাজ দুটোই হবে।

এখন মনে হলে খুব হাসি পায়। 


ওরা দুজনেই জানালো ঘেমে একসা হয়ে গিয়েছি সারাদিনের টেনশনে তাই "আমরা স্নান করবো বাকিরা গিয়ে বিয়ের আয়োজন কর তুই (মানে আমি ) আমাদের অন্য দুটো প্যাকেটে আমাদের নাইটি আর হাফ প্যান্ট গেঞ্জি ভরে নে। স্নান হয়ে গেলে কোনরকমে আমরা চেঞ্জ করে নেব"।


শুভ আর রবিন  গিয়েছে সিঁদুর মালা আনতে। বাকিরা মন্দিরের পিড়িতে ফেবিস্টিক দিয়ে লাল কাগজ লাগাচ্ছে। আমি বাথরুমের বাইরে অন্ধকারে অসংখ্য মশার কামর খেতে খেতে আর চুলকাতে চুলকাতে  প্যাকেট গুলি নিয়ে দাড়িয়ে আছি। আটজনের মধ্যে দুজন বিয়ে করবে বাকি ছয়জন সামলাছি এগুলি। হঠাৎ আমাদের বন্ধু অংশু দৌড়ে এসে কি সব বললো। শুধু বুঝলাম "পালা" । ও পালানোর আগেই আমি প্যাকেট ফেলে ওকে চেপে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে কি বলছিস ? যা বললো ওর মানে তৃণার বাবা অনেক গুলি পাড়ার লোক নিয়ে চলে এসেছে। পালাতে হবে। আমি বললাম অনেক উঁচু  পাচিল আর একটাই  ঢোকার আর বেরোনোর গেট কি করে পালাবি? আমি বাথরুমে ধাক্কা দিয়ে যতটা পারি শর্টকাটে বলে ওদের হাতে দুটো প্যাকেট দিয়ে বাকি দুটো প্যাকেট কোনে ফেলে দৌড়ে মন্দিরের পেছনে লোকাতে গিয়ে দেখি বাকি 5জন ওখানে মশার কামড় খাচ্ছে আর এ ওর মুখ চেপে বসে আছে । 


আলো আঁধারিতে বসে গেটের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছিলাম বেশ অনেক লোক জনের হাঁটাচলা কথা। তৃণার বাবার গম্ভির আওয়াজ। 

হঠাৎ এরই মধ্যে একটা গাড়ি থামলো। কিছুক্ষনের মধ্যে হাসির আওয়াজে আমরা চমকে উঠলাম। এরিমধ্যে শুনি  রবিন আমাদের নাম ধরে ডাকছে। আমরা ভয় আর কৌতূহল দুটো নিয়ে সামনে এসে শুনি রবিন যখন মালা কিনছিল তখন তৃণার বাবা ওকে ধরে ফেলে আর 3/4 টে চর থাপ্পড় মারে। তখন অনেক লোক দেখে ভয়ে এই মন্দিরের কথা  বলে ফেলে। 


মন্দিরে আসবার সময় নীলের বাবাকেও ফোন করে আসতে বলেন তৃণার বাবা। কিন্তু দুজনের দেখা হতেই চমকে ওঠে । প্রায় 30 বছর বাদে ওদের দেখা । ওরা একইসঙ্গে দীনবন্ধু এন্ড্রুজ কলেজ থেকে পাস আউট। খুব ভালো বন্ধু ছিল তখন । যাইহোক আরো অনেক কিছু হওয়ার পর ওদের নিয়ে আসতে বললো। আমি আর বাকিরা দরজা ধাক্কিয়ে ওদের ডাকছি কিন্তু কিছুতেই ওরা বের হচ্ছেনা। যতই বলি কিছু হবেনা ওরা আমাকে নানা রকম জন্তুর নাম ধরে ইয়ে দিয়ে যাচ্ছে। 

এরমধ্যে ওদের বাবারা ভেতরে চলে আসে। আর আমি মনের দুঃখে " এত করলাম তোদের জন্যে আর এখন এসব ভাষা বলছিস " মনে করে বাইরে গিয়ে সিড়িতে বসলাম । হঠাৎ প্যাকেটের দিকে চোখ পড়তেই আমি চমকে উঠলাম। আর দৌড়ালাম বাথরুম এর দিকে ।

ততক্ষনে ওদের বাবারা দরজা ধাক্কা দিয়ে গুতো দিয়ে বাকিরাও সাহায্য করে তৃণা আর নীলকে বাইরে বের করে এনেছে । আমরা ওদের দেখে হাসতে হাসতে পেট চেপে বসে পড়েছি ।

ওরা পারলে আমাকে খুন করে ফেলে। আসলে পালানোর সময় তৃণার নাইটি নীলকে আর নীলের পাঞ্জাবী তৃনাকে দিয়ে পালিয়েছি বেনারসী, পাজামা  বাকি জিনিস বাথরুমের কোনে ফেলে রেখে। 


নীল নাইটি পরে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে আর তৃণা লম্বা একটা ঢলঢলে পাঞ্জাবী (পাজামা ছাড়া) পড়ে।

আমি ওদের বাকি কাপড় দিতে গেলে কাকুরা বলে থাক আর এভাবে বিয়ে করতে হবেনা। তোমরা নিজেদের জামাকাপড় পড়ে নাও। অনেক মুখে চুনকালি দিয়েছ। একসপ্তাহ পড়ে সব নিয়ম মেনে তোমাদের বিয়ে দেওয়া হবে। 


একটা বিশাল ভুল বোঝাবুঝি দুই পরিবারের মধ্যে মিটলো। আমরা একটু বেশি রাতে ( ওই 10টা নাগাদ) যে যার বাড়ি ঢুকে উত্যম মধ্যম খেলাম (আমাদের সময় মা বাবারা মারলে আমরা ডিপ্রেশনেও  আসতামনা আর সুইসাইড করার কথাও ভাবতামনা )  তাই ধোলাইটা ভালই খেয়েছিলাম মনে আছে।


এক সপ্তাহ বাদে  প্রথম বন্ধুর বিয়েতে খুব আনন্দ, খাওয়া দাওয়া করেছিলাম।