Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

বিভাগ প্রবন্ধমা না স্ত্রী?মঞ্জুশ্রী মণ্ডল১৬/১০/২০২০
পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে আমার যেটা মনে হয়েছে সংসারের পুত্রের বিয়ের পর শুরু হয় সংঘাত। যে গর্ভধারিনী মা সন্তানের কাছে এতদিন খুব খুব আপন ছিল সেই মা ধীরে ধীরে পর হতে থা…

 


বিভাগ প্রবন্ধ

মা না স্ত্রী?

মঞ্জুশ্রী মণ্ডল

১৬/১০/২০২০


পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে আমার যেটা মনে হয়েছে সংসারের পুত্রের বিয়ের পর শুরু হয় সংঘাত। যে গর্ভধারিনী মা সন্তানের কাছে এতদিন খুব খুব আপন ছিল সেই মা ধীরে ধীরে পর হতে থাকে, দূরত্ব বাড়তে থাকে। সহধর্মিনী স্ত্রী খুব খুব কাছের হতে থাকে। শারীরিক-মানসিক নানা চাহিদা স্ত্রীর কাছে পূরণ হওয়ার কারণে স্ত্রী খুব কাছের হতে থাকে ।সে এখন ভালোলাগার ভালোবাসার মানুষ হতে থাকে। মনে হয় যেন হাতে চাঁদ ধরা পড়েছে। সকল সুখ দুঃখ আনন্দ দেওয়ার জন্য সঙ্গী কাছে পেয়েছে। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া স্নেহ মায়া মমতা ভালবাসা একই থাকে মায়ের দিক থেকে। কিন্তু সন্তানের দিক থেকে যে সম্পর্কের হার্দিক বাঁধন ছিল সেটা অনেকটাই আলগা হতে থাকে। মা বুঝতে পারেন কিন্তু প্রকাশ করেন না। 

সংঘাত তৈরি হয় তখন যখন দেখা যায় সংসারের খুঁটিনাটি ব্যাপারে কাজে-কর্মে দুই প্রজন্মের তথা স্ত্রী ও মায়ের বৈষম্য দেখা যায়। মায়ের চিরাচরিত নিয়ম কানুন আদব-কায়দা ভালোলাগা মন্দলাগায় স্ত্রীর সাথে যখন বৈষম্য হতে থাকে তখন কিন্তু শ্বাশুড়ী আর বউয়ের মনোমালিন্য তর্ক-বিতর্ক ,ঝগড়া ,কোন কোন সংসারে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়ে যায়। সত্যি কথা বলতে কি মা যেভাবে, যে নিয়মে ,যে কায়দায়, যে ব্যবস্থাপনায়, যে সমস্যার সাথে সাথে অভিযোজিত হয়ে সংসারের হাল এতদিন ধরে রেখেছিলেন সেই সংসারে নতুন বউ যদি পুরনো নিয়ম কানুন ভেঙে দিতে চায় তাহলে তখনই শুরু হয় সংঘাত। বউ সময়ের সাথে সাথে নতুন নিয়ম নতুন ব্যবস্থাপনা নতুন পরিস্থিতি সবকিছুতেই যেভাবে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে সেটাই প্রয়োগ করার চেষ্টা করে শ্বশুরবাড়িতে। আর দ্বন্দ্ব শুরু হয় সেই খান থেকে। শাশুড়ি বউয়ের দ্বন্দ্ব ও সংঘাত কিন্তু পরস্পর বিরোধী। দুজন দুজনের নিয়ম নীতি কে মেনে নিতে পারে না বা মানিয়ে নিতে পারে না। 

স্ত্রী তখন সংসারের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তার স্বামীর কাছে বলতে থাকে। হয়তো দেখা যায় যা ঘটে তার কিছুটা অদল বদল হয় ,বাড়িয়ে বলে যাতে করে তার স্বামী সব বিশ্বাস করে।এই বালিশ মন্ত্র পেতে পেতে স্বামী স্ত্রীর উপরে বিশ্বাস জন্মে যায়। স্বামী ভুলে যায় মায়ের হাতে গড়া সংসারের পুরনো নিয়ম নীতি যার হাত ধরে, যার স্পর্শে, যার ভালোবাসায়, যার সান্নিধ্যে সে এত বড় হয়েছে, এই জায়গায় এসেছে ।সেই জায়গাটা আর মনেই রাখতে চায়না ,মনে রাখতে পারে না। নতুন সংসারে পুরনো রীতি কে মানিয়ে নেওয়া স্ত্রীর পক্ষে যখন সম্ভব হয়না তখন স্বামীর কাছে নানা রকম ভাবেই একই কথা যদি ঘ্যানর ঘ্যানর করে স্বামী একসময় সব বিশ্বাস করে ফেলে। ভুলে যায় তার সব অতীত কথা। ভুলে যায় মায়ের কষ্ট করে বড় করার কথা। এই পরিস্থিতিতে স্বামী যদি স্ত্রী এবং মায়ের সকল কথা শোনে অথচ কারো পক্ষ অবলম্বন না করে তাহলে হয়তো সেই সংসারে ফাটল ধরবে না। যে সংসারে স্বামী তার অবিবাহিত জীবনের অতীতের সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে স্ত্রী কে প্রাধান্য দেয় তাহলে কিন্তু সেই সংসারের ভাঙ্গন অনিবার্য। মা মায়ের দিক থেকে ঠিক, স্ত্রী স্ত্রীর দিক থেকে ঠিক ‌।

সংসার ভাঙ্গার জন্য অনেক সময় মেয়েদের কে দায়ী করা হয়। এখন আমার মনে হয় স্বামী স্ত্রীকে যদি সবকিছু মানিয়ে নিতে বলে ,বোঝাতে পারে এবং সফল হয় তাহলে সেই সংসার আবার জোড়া লাগে টিকে যায়। সুখে-দুখে আনন্দে কাটে। স্বামী যদি মায়ের পক্ষ অবলম্বন করে তাহলে স্ত্রীর রাগ হয় ,অভিমান হয়, বাপের বাড়ি গিয়ে থাকার হুমকি দেয় বিবাহ-বিচ্ছেদের হুমকি দেয়। সব মেয়েদের মানসিকতা তো সমান নয়। যে মেয়েরা স্বামীর বেড়ে ওঠার পিছনের অতীতটা হৃদয় দিয়ে অনুভব করে এবং মানিয়ে নেয় তাহলে সেই সংসার টিকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। যে মেয়েরা সংসারের সংস্কৃতি, কাজকর্ম ইত্যাদিকে মানিয়ে নিতে পারে না নিজস্বতাকে গুরুত্ব দিতে চায় ,আধুনিকতাকে মর্যাদা দিতে চায় সেই মেয়ে শেষ পর্যন্ত বিবাহবিচ্ছেদ ও মেনে নিতে চায়।

প্রশ্ন এবার ঐ পুরুষের ক্ষেত্রে। কোন পুরুষ নিশ্চিত কোনো মায়ের কাছ থেকে কোনদিন কোন অবহেলা স্নেহ মায়া-মমতা ভালোবাসার ঘাটতি দেখেনি। ওই মা ই ছিল তার এতদিন আপন। এইবার ওই পুরুষের বাছাই করার দায়িত্ব তার উপর থাকে। উদ্ধত, একগুঁয়েমি, স্বার্থান্বেষী ,মেয়েটিকে সে গ্রহণ করবে নাকি মায়ের পক্ষ অবলম্বন করবে।

আগেই বলেছি সব মেয়েদের মানসিকতা সমান নয়।

সাধারণত দেখা যায় স্বামী রা স্ত্রীদের পক্ষ অবলম্বন করে থাকে। স্ত্রীর পক্ষ অবলম্বন করার ফলে মায়ের স্থান অবশেষে আবর্জনার স্তূপের মত হয়ে যায়। ধনীর বাড়ির মা হলে সেই মায়ের স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে। গরিবের মা হলে সেই একই বাড়ীতে খুবই অবহেলায় অযত্নে বঞ্চনা য় দিন কাটাতে হয়।

 স্বামীরা এর যুক্তি হিসেবে কখনো বলে স্ত্রীকে এঁটে উঠতে পারেনি, ও চিৎকার চেঁচামেচি করে এই অশান্তির ভয়ে ওকে মেনে নিয়েছি। কেন? সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার আছে যতটা শুনেছি স্ত্রী যদি শাশুড়িকে শশুরকে মানিনে নিতে না পারে ,সংসারে অশান্তি করে তাহলে সেই স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়া অনায়াসে গ্রহণযোগ্য। তাহলে সেই স্বামী স্ত্রীকে ডিভোর্স দিতে পারে। তা না করে স্ত্রীর প্রতি মোহে অন্ধ হয়ে যায় কেন?

সংসার ভাঙনের পেছনে যতই একটা মেয়েকে দায়ী করা হোক না কেন আমার মনে হয় সংসার ভাঙনের জন্য পরোক্ষভাবে পুরুষরা দায়ী । তার পরীক্ষা দেওয়ার শুরু হয় তার বিয়ের পর থেকেই। স্ত্রীকে বোঝানো তার দায়িত্ব। দুটো পথ তার জন্য খোলা থাকে। এক হচ্ছে মা অথবা স্ত্রী কারো পক্ষ অবলম্বন না করা। এক কান দিয়ে শুনে এক কান দিয়ে বার করে দেওয়া।

দু'নম্বর হচ্ছে স্ত্রী এবং মায়ের সকল কথা শুনে সামনাসামনি বসে বিচারকের ভূমিকায় থেকে সঠিক বিচার করা। কে ঠিক বলছে কে ভুল বলছে। সব সময় নিশ্চিত মা ঠিক বলে না আবার সবসময় নিশ্চিত স্ত্রী ও ঠিক বলে না। তাই সঠিক বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারলে সংসারে ভাঙ্গন ধরবেই।