কবিতা : ভিক্ষা পেতে হলেকলমে : শক্তিপদ ঘোষতারিখ : ১৯ , ১০ , ২০২০
ভিক্ষা পেতে হলে--ভেক নেওয়া চাই চাই ;কারণ , ভেক ছাড়া ভিক্ষা মেলে না ।বউ পেতে বরবেশেই দাঁড়াত হয় গিয়ে--একছাতনা-তলায় ; তোমাকেও তেমনি আগে দাঁড়াতে হবে ব…
কবিতা : ভিক্ষা পেতে হলে
কলমে : শক্তিপদ ঘোষ
তারিখ : ১৯ , ১০ , ২০২০
ভিক্ষা পেতে হলে--ভেক নেওয়া চাই চাই ;
কারণ , ভেক ছাড়া ভিক্ষা মেলে না ।
বউ পেতে বরবেশেই দাঁড়াত হয় গিয়ে--এক
ছাতনা-তলায় ; তোমাকেও তেমনি আগে
দাঁড়াতে হবে বড় একটা ছাতার নিচে ।
দেখবে , তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে--তুমি ভিজছো না ,
রোদে যখন গায়ে সবার ফোস্কা পড়ছে , সবাই
আপাদমস্তক স্নান করছে ঘামে , তখনও
দেখবে--তার কণাটুকু আঁচও লাগছে না তোমার
গায়ে ; তোমার হাতে তখন আলাদীনের
আশ্চর্য প্রদীপ ; তার মায়াকৌশলে
যে করেই হোক , একবার বসো গিয়ে গদিতে ।
তখন লুট করো , বাটপারি করো--কেউ দেখবে না ;
পরিবর্তে জয়ধ্বনি পাবে , বহু হাততালি পাবে
মঞ্চে-সভায় ; গায়ে গঙ্গাজল লাগবে না মোটেই ।
খুন করো--পুলিশ ছুঁতে আসবে না ;
দিনটাকে রাত করো--রাতটাকে দিন করো ,
কেউ দেখতে আসবে না । পরিবর্তে দেখবে ,
মিনিবিড়ালগুলো অষ্টপ্রহর তোমার পায়ে
মাথা ঠুকছে ; ফেঁতি কুকুরগুলো দিনে তিনবেলা
তোমার পা চাটছে । তখন বিরোধীরাও কেউ
তোমার ধারেপাশে ঘেঁষতে পারবে না ; তোমাকে তখন ঘিরে থাকবে তোমার রক্ষীবাহিনী ।
তুমি যতই কেন না জীবনের উল্টোরথের
রশি ধরে টানো , দেখবে--কেউ কিচ্ছুটি বলছে না ;
দিন গড়ায় যেমন--গড়াবে গড়গড়িয়ে ।
এরজন্যে--যেভাবেই হোক, ভোটব্যাঙ্কটা
গরম রাখতেই হবে । প্রয়োজনে ভাত ছড়াতে হবে উঠোনময় ; দেখবে , উঠোনজুড়ে কাকের মেলা বসেছে । মনে রেখো , পথঘাটের ময়লা পরিষ্কার করাতে কাকেদের জুড়ি নাই ।
যদি শিক্ষার কথা বলো , তবে বলবো--শিক্ষার
কী প্রয়োজন ? রামযাত্রায় রামের মালা বিকোয় কি
শিক্ষা দিয়ে ? তেলপোড়া , জলপোড়া , ঝাড়ফুঁক ,
রাশিফল , ভাগ্য গণনা এবং মাদুলি-তাবিজের এমন রমরমা কারবার চলছে কি সব শিক্ষা দিয়ে ? 'করোনা'র মারি রুখতে এমন কাব্যজোড়া প্রার্থনা , প্রভু প্রভু রব , পুজোপাট , হোমযজ্ঞ , এবং
রোগ সারাতে পাঁঠা মানত ইত্যাদি ইত্যাদি কি
শিক্ষা দিয়ে চলছে ? ঘরের মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দুর্গামঞ্চে মায়ের নামে জয়ধ্বনি , নাচানাচি
চলছে কি শিক্ষা মেনে ? সুতরাং , শিক্ষা থাকলো , কি থাকলো না--তাতে কিছু যায় আসে না ।
তবে হ্যাঁ , মুখ আর মুখোশের তফাত যেন না থাকে , খুব খেয়াল রাখতে হবে ।
দোহাই তোমায় , মুখে যেন অমন--শ্রাবণের
মেঘ টেনে রেখো না ; মুখের মেঘান্ধকার
ঢেকে রাখো দেঁতো হাসির ছটায় । দেখবে ,
কত সহজে তোমার বাঁকা মুখ , খাঁদা নাক , ট্যারা চোখ হাসতে হাসতে সোজা হয়ে গেছে ।
পথে নামলে , মুখটা তুলে হাঁটবে--যাতে তোমার শ্রীমুখে রবির ছটা দেখে মুগ্ধ হয় লোকে। এরসঙ্গে , আলাপচারিতায় ও বিনয়ভাবের নাটকেও
পোক্ত হও ।
হাসিমুখে কুশল বিনিময় করো , গায়ে পড়ে
ভাব জমাও , সাতপুরুষের খবর নাও , প্রয়োজনে খেত-খামার অবধি হেঁটে গিয়ে দেখা করো , যাতে শুধু দর্শনেই বিনাজলে চিড়ে ভেজে এবং কেবল কথাতেই অনেক কালের বরফও জল হয়ে যায় গলে । দেখবে , যারা এতকাল ধরে ফণা নাচিয়ছে , ফণা তাদের কত সহজে আপনা থেকেই
লুটিয়ে গেছে মাটিতে ;
কব্জির জোর তোমায় আর দেখাতেই হলো না ।
-------------------------------------------------------------------