তরুন চট্টোপাধ্যায় । কলকাতাকরোনার রক্ত চক্ষু অব্যাহত।আসন্ন দুর্গা পূজা মরসুমে করোনাকে ভুলে মানুষের মিছিল পথে নামলে করোনা কিন্তু ভুল করবে না।উল্টে বরং সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাবে শতগুন ।আর সে ঢেউ আটকাবার মতো শক্তি থাকবে না এ রাজ্যের…
তরুন চট্টোপাধ্যায় । কলকাতা
করোনার রক্ত চক্ষু অব্যাহত।আসন্ন দুর্গা পূজা মরসুমে করোনাকে ভুলে মানুষের মিছিল পথে নামলে করোনা কিন্তু ভুল করবে না।উল্টে বরং সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাবে শতগুন ।আর সে ঢেউ আটকাবার মতো শক্তি থাকবে না এ রাজ্যের হাতে। তাই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্তক থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন চিন্তিত।পরিকল্পনা চলছে কি ভাবে এই বিশাল ঢেউ আটকানো যায় ।আর এই ঢেউ আটকাতে গেলে সব থেকে বেশি দরকার মানুষের সচেতনতা ।কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সেই চেতনা কতদূর এগোতে পারবে তা নিয়ে সংশয় আছে বৈকি।
কেরল রাজ্য একসময় করোনার ঢেউ আটকে দেশে সুনাম অর্জন করেছিল।সংক্রমণের হার নেমে গিয়ে ছিলো তলানিতে । কিন্তু ওনাম উৎসবের পর সেই ছবি গেল একেবারে বদলে। সমুদ্রের ঢেউ এর মতো আছড়ে পড়লো সংক্রমণ । যা আটকাতে কেরল সরকারের নাজেহাল অবস্থা ।
আগামী এক মাসের মধ্যে দুর্গা পূজো, দশেরা,দীপাবলী ও ছট পূজোর মতো উৎসবের আয়োজন হবে বাংলায়। আর এই চারটি উৎসবে উৎসাহের যে অন্ত থাকবে না তা বলাই যায় । ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দুর্গা পূজা কমিটিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষনা হয়েছে।তাই বলা যেতেই পারে এ রাজ্যের পূজা তো হবেই।কিন্তু সেই পূজা কমিটি গুলি স্বাস্থ্য বিধি না মানলে কি শাস্তি হবে তা নিয়ে এখনো কোন নির্দেশ জনমানসে আসেনি।আর মানুষের ঢল আটকাবার ক্ষমতা কি পূজা কমিটির আছে? নিশ্চয় নেই।ফলে ছাড় যত থাকবে করোনা ততোধিক বিক্রমে সংক্রমণের শিকার ধরে বেড়াবে।আর সেই সংক্রমণের ঢেউ আটকানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।যদি না মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসে।সোসাল ডিসটেন্ট ও মাস্ক ব্যবহার ছাড়া এ থেকে রক্ষা নেই।
পূজো ও উৎসবের বাজার করার ছবি ইতিমধ্যেই আমরা দেখছি।গতকাল কলকাতার এক জুতার দোকানের উপচে পড়া ভিড় সোসাল মিডিয়া তে ভাইরাল হয়।সে ছবি দেখে অনেকেই আতংকিত হয়ে পড়েন।
পূজো নিয়ে ইতিমধ্যেই কেন্দ্র সতর্ক করেছেন।পশ্চিমবঙ্গে গত এক মাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে যেতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্তক।পরিসংখ্যান অনুযায়ী অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যার দিক থেকে প্রথম দশটি রাজ্যের মধ্যেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ।দেশের 25 টি জেলায় মৃত্যুর হার সব থেকে বেশি।আর সেই পঁচিশের মধ্যে রয়েছে এ রাজ্যের কলকাতা ও উওর চব্বিশ পরগনা।দুর্গা পূজা কলকাতার সব থেকে বড় উৎসব।রাজ্যের মানুষ আসেন কলকাতার ঠাকুর দেখতে।দীপাবলী খুবই জাঁকজমক করে হয় উওর চব্বিশ পরগনাতেও।ফলে যদি স্বাস্থ্য বিধি ঠিকঠাক মানা না হয় তা হলে সমূহ বিপদ।করোনার সংক্রমণ ঢেউ আছড়ে পড়বে রাজ্য জুড়েই।
পূজো নিয়ে এ বছর শঙ্কাতে রয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর ও।উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্য অধি কর্তারাও ।আর সেই ছবি ধরা পড়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের ওয়েবিনারে।আর সেখানেই আলোচনা হয় এই সংক্রমণের ভয়াবহতা নিয়ে ।পূজোর বাজারে সংক্রমণ বাড়ছে।উৎসবের কদিন ঠাকুর দর্শন চললে সেই করোনা সংক্রমণের হার সব রেকর্ড যে ভেঙে দিতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।ফলে এই ঢেউ থেকে রক্ষা পাবার একমাত্র উপায় হলো সমস্ত রকম স্বাস্থ্য বিধি মেনে পথে নামা।নতুবা বিপদ আসন্ন ।
করোনার বাজারে উৎসব প্রান কেড়ে নিতে পারে।তাই আগে ভাগেই ভাবতে হবে এই বিপদ থেকে নিজেকে ও পরিবার কে রক্ষা করার উপায় ।একবার এই ঢেউ এসে পড়লে তা আসবে হাজার হাতির বল নিয়ে ।এই রাজ্যের করোনা পরিস্থিতিতে এখনো পর্যন্ত আশা ব্যঞ্জক কোন ছবি চোখে আসেনি।শুধুমাত্র সুস্হতার হার ছাড়া ।রাজ্যের করোনা তে মৃত্যুর হার কম হলেও তা অধিকাংশ দিনই 60 ছাড়িয়ে যাচ্ছে ।এই পরিস্থিতিতে আমাদের সজাগ থাকা ছাড়া গত্যন্তর নেই।নিজের প্রানের মায়া নিজেকেই ভাবতে হবে।মৃত্যুতে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।তাই সজাগ থাকতে সব মহল থেকেই নির্দেশ রয়েছে।
এবার পৃজো ও উৎসবের মরশুমে বয়স্ক মানুষজন যে ঘরেতেই থাকবেন তা অনুমান করা যায় ।কিন্তু কুড়ি থেকে চল্লিশ বছর কে নিয়েই উদ্বেগের পারদ বাড়ছে।কারন ইতিমধ্যেই এরা পেশাগত কারনে বাইরে যাচ্ছেন।পূজোর মরসুমে সেই বাইরে যে বেরুতে এরা চাইবেন তাতে সন্দেহ কি।কিন্তু এরা বয়সজনিত কারনে হয়তো সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।কিন্তু সংক্রমণ ছড়াতে তো বাধা থাকছে না।ফলে বিপদ শিয়রেই।
আর এরাই হবেন সুপার স্পেডার।যা ছড়িয়ে পড়বে রাজ্য জুড়ে ।
এমসের কমিউনিটি মেডসিনের প্রফেসর সঞ্জয় রাই ও আতঙ্কিতের বার্তাই দিয়েছেন।সংক্রমণ প্রতিহত করে পারস্পরিক দূরত্ব বিধি।মাস্কের মাধ্যমে একজন শুধু নিজেকেই রক্ষা করেন না ,অপরকেও রক্ষাকবচ দেন।তাই দূরত্ব বিধি ও মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরী ।কিন্তু সাত মাস বাদের জনগনের একটি অংশ এই সহজ সরল সত্য কথাটি যে বুঝতে চাইছেন না।এটিই সব থেকে বিপদজনক।
প্রতি উৎসবে অগ্নি সুরক্ষা বিধি ও ভিড় এড়াতে প্রশাসন নানা ব্যাবস্থা গ্রহন করেন।পুলিশ মোতায়েন থাকে প্রতিটি প্যান্ডেলে।কিন্তু করোনা আবহে দরকার স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা।তাই দরকার চিকিৎসকদের পরামর্শ ।
কারডিওথোরাসিক সার্জেন কুনাল সরকারের পরামর্শ এ বছর আবেগকে সরিয়ে বাস্তব বোধ কে জাগ্রত করুন।এ রাজ্য কম পরীক্ষা করেও কেসের সংখ্যা বাড়ছে ।প্রতিদিন নানা ভাবে চেষ্টা করেও তা কমানো যায় নি।সেখানে ঢেউ এসে পড়লে বিপদ তো বটেই ।
দুর্গা পূজা ও উৎসবের রেশ এ রাজ্যের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে।কিন্তু উৎসবের দিনে করোনা কে হাল্কা ভাবে নেওয়া উচিত হবে না।সামান্য অসতর্কতার সুযোগ পেলেই করোনা ঝাঁপিয়ে পড়বে।তাই দরকার সতর্কতা ।
পূজো উৎসবের দিন আবার আসবে।তখন না হয় আনন্দের বন্যা আসুক।
এখন দরকার করোনা সংক্রমণের হার কে গ্রেফতার করা।