নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: কভিড বিপর্যয় যেন সব কিছুই উলটপালট করে দিয়েছে। বহু চেষ্টা লড়াই সংগ্রাম চালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। চোখের সামনে হারাতে হয়েছে প্রিয়জনদের। বিশ্বজোড়া এই মহামারী আতঙ্কের মধ্যে তাই সচেতনতার বার্তা দিতে দেবী …
নিজস্ব সংবাদদাতা, তমলুক: কভিড বিপর্যয় যেন সব কিছুই উলটপালট করে দিয়েছে। বহু চেষ্টা লড়াই সংগ্রাম চালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। চোখের সামনে হারাতে হয়েছে প্রিয়জনদের। বিশ্বজোড়া এই মহামারী আতঙ্কের মধ্যে তাই সচেতনতার বার্তা দিতে দেবী দুর্গার আরাধনায় এবার স্বজন হারানোদের চোখের জলে ব্যাতিক্রমী শারদ উৎসবের সূচনা হল কোলাঘাটে।
কোলাঘাট নতুন বাজারের দুর্গোৎসব এবার ৪৮তম বর্ষে পা দিয়েছে। কিন্তু স্বজনহারাদের আর্তনাদে এই পুজো উৎসবের আনন্দ যেন অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে। কারণ, করোনার করাল গ্রাসে ইতিমধ্যেই হারিয়ে গিয়েছে কোলাঘাটের প্রায় ১১ জন বাসিন্দা। তাই চিরতরে হারিয়ে যাওয়া এলাকার মৃতদের পরিবারের শোকাহত সদস্যদের অশ্রুশিক্ত নয়নে ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মঙ্গলদ্বীপ জালিয়ে এবারে এই পূজোর উদ্বোধনের আয়োজন করা হয়। সেইমতো সোমবার শুভ তৃতীয়া শুভ লগ্নে এবছরের শারোদ উৎসব এক আড়ম্বড়হীন ভাবগম্ভীর আবহে উদ্বোধন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাই চন্দ্র মন্ডল, ব্লকস্তরের বিভিন্ন স্বাস্থ্য আধিকারিক সহ পুলিশ-প্রশাসন এবং পাঁশকুড়া বড়মা ও চন্ডিপুর করোনা হাসপাতালের প্রতিনিধিবৃন্দ। এছাড়াও হাজির ছিলেন বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার নার্স সহ প্রায় কুড়িজন স্বাস্থ্যকর্মী। এনাদের সবাইকেই করোনা যোদ্ধার সৈনিক সম্মানে ফুল-মিষ্টান্ন-চন্দন তিলক -উত্তরীয় ও সুদৃশ্য স্মারক দিয়ে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। আক্রান্ত করোনা জয়ী প্রায় পঞ্চাশজন বয়স্ক মানুষদেরও এদিন সম্বর্ধিত করা হয়। তবে সবকিছুই যেন ছাড়িয়ে যায় করোনায় সদ্যমৃত পরিবারের সদস্যদের বুকভরা আর্তনাদ।
কোলাঘাটের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অগ্রভাগেই ছিলেন সদ্যমৃত যুবকের মা রুবী পাত্র, পিতাহারা সোমনাথ বোস, স্বামীহারা মালতি ভৌমিক, মীরা মাজী, প্রতিমা মন্ডল'রা। এছাড়াও এদিন এসেছিলেন পথ দুর্ঘটনায় নিহত এ্যাম্বুলেন্স চালক রাজু মন্ডলের বোন ও নিহত কোভিড পেসেন্ট প্রদীপ সাঁতরার স্ত্রী শিবানীদেবী। তাদের হাতের মঙ্গল দীপ জ্বালিয়ে এই পুজো অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সূচনা হয় এদিন। মূলত অসহায় এই সকল পরিবারগুলির পাশে থাকার ও সবরকম সহায়তার বার্তা দিতেই এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা।
আয়োজকদের পক্ষে রবীন্দ্রনাথ দাস জানান - " আমরা গত প্রায় সাতমাস ধরেই সীমিত সামর্থের মধ্যেই করোনা ও আমফান কবোলিত অসহাদের জন্য বিরামহীনভাবে ব্যাপক কর্মসূচি রুপায়ন করে চলেছি। এরপর এই মহামারীকালে আমাদের শারোদ উৎসব বহুমুখী আয়োজনের মধ্য দিয়ে করোনা প্রতিরোধ সচেতনতার জন্য উৎসর্গ করেছি।"
এই দিন নার্সরা মঙ্গলদ্বীপ প্রদর্শন করেন। কভিড 19 সামনে করোনায় মৃতদের পরিবারের সদস্যদের সহমর্মিতা জ্ঞাপনের মাধ্যমে পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়। জেলা মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ নিতাই চন্দ্র মন্ডল মহাশয় কে সম্বর্ধনা ও দেওয়া হয়। এছাড়া ও মৃতদের পরিবারের শোকাহত সদস্যদের সহমর্মিতা জ্ঞাপন করা হয়।