Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ভাবনার গভীরে ডুব দিলেই কৃষ্ণ ও কালী এক

✍সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 
আধ্যাত্মিকতার ভূমি ভারতবর্ষ। যুগে যুগে অবতারের আবির্ভাব সহ আরো নানা পৌরাণিক উপাখ্যানের আকর ভূমি এই ভারতবর্ষ। বেদ উপনিষদের দেশ ভারতবর্ষে যুগে যুগে জন্ম নিয়েছেন আত্নজ্ঞানের উত্তুঙ্গ শিখরে থাকা আদিগুরু শঙ্করাচার্…

 



✍সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 


আধ্যাত্মিকতার ভূমি ভারতবর্ষ। যুগে যুগে অবতারের আবির্ভাব সহ আরো নানা পৌরাণিক উপাখ্যানের আকর ভূমি এই ভারতবর্ষ। বেদ উপনিষদের দেশ ভারতবর্ষে যুগে যুগে জন্ম নিয়েছেন আত্নজ্ঞানের উত্তুঙ্গ শিখরে থাকা আদিগুরু শঙ্করাচার্য, তৈলঙ্গস্বামী, বালানন্দ ব্রহ্মচারী, রামানুজ, চৈতন্য মহাপ্রভু, বামদেব, রামকৃষ্ণদেব, রামপ্রসাদ, আনন্দময়ী মায়ের মতো সাধক সাধিকারা। পথ দেখিয়েছেন দিকভ্রান্ত সংসারী মানুষকে। তৈরি হয়েছে 'তাঁকে' পাওয়ার বিভিন্ন পথ। কখনো সেই পথ বীরাচারী শক্তি সাধনার, কখনো বা বৈষ্ণব মতে ভক্তিরসের ধারা অবলম্বনে পথ। বৈষ্ণবরা নারায়ণ বা শ্রীকৃষ্ণের উপাসক। অন্যদিকে শাক্তরা কালী, তারা প্রভৃতি রূপের উপাসক। কিন্তু ধারণাগত দিক দিয়ে চিন্তা করলে উভয়েই এক। অর্থাৎ কৃষ্ণ ও কালী এক ও অভিন্ন। 


কিন্তু কীভাবে? 

শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান বলেই সকলে মানেন। সর্বশক্তিমান জগৎপালক নারায়ণ নররূপে মর্ত্যে লীলা করেছেন। তিনি কিন্তু জন্ম গ্রহণ করেননি! তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। যেহেতু মনুষ্য দেহ ধারণ করেছেন তাই জন্মদিনের অবতারণা। অর্থাৎ জন্মাষ্টমী পালন। তিনি জন্ম মৃত্যু রহিত অনাদির আদি গোবিন্দ। তিনিই সব। গীতায় তিনিই বলেছেন "অহম্ একম্ দ্বিতীয় নাস্তি"- আমিই এক। একমেবাদ্বিতীয়ম। আমার দ্বিতীয় নেই। দ্বিতীয় হয়নি কখনো বা হবেও না। চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী-"হরে নাম হরে নাম হরেনার্মৈব কেবলম্" অর্থাৎ কলি যুগে হরির নাম, কেবলমাত্র হরি নাম শ্রেষ্ঠ। এ ভিন্ন গতি নেই। পরম বৈষ্ণব মাত্রেই এ কথা মানেন।


আবার বৈষ্ণবদের বিপরীতে অবস্থান করেন শাক্তরা। যাঁরা শক্তির উপাসক। সেই শক্তিই দূর্গা। তিনিই কালী। তিনিই আদিশক্তি মহামায়া।

তিনিই দশ মহাবিদ্যার বিভিন্ন রূপে পূজিতা, কিন্তু সর্বাধিক পরিচিত বা জনপ্রিয় কালী রূপ। যদিও সব ব্রাহ্মণ আদতে শাক্ত(এ বিষয়ে অন্য সময়ে বলা যাবে) কিন্তু শাক্তরা তন্ত্র সাধক হন সাধারণত। তাঁদের কথায়, "কলৌ কালী কলৌ কালী কলৌ কালী ন সংশয়ঃ" অর্থাৎ কলি যুগে কালীর নাম করাই শ্রেষ্ঠ, এ বিষয়ে কোনো সংশয় নেই।


তাহলে মোদ্দা বিষয়টা কী দাঁড়াল? কৃষ্ণ ও কালী কি এক? হ্যাঁ এক। কৃষ্ণ অর্থে কালো। সেই কালোর গর্ভেই সমগ্র সৃষ্টি স্থিতি লয়। সব কিছুকেই গ্রাস করে আছেন কালো বা কৃষ্ণ। এর পাশাপাশি কালীও এসেছে কালো থেকেই। কালী অর্থে যিনি কালকে হরণ বা গ্রাস করেছেন। তাহলে ঘুরে ফিরে এসে যাচ্ছে সেই কালো-কৃষ্ণ-কালী। সব এক। কোনো রূপ নেই। তিনি অরূপ। তিনিই আবার স্বরূপে। তাই যিনি শ্যাম তিনিই শ্যামা। যিনি কৃষ্ণ তিনিই কালী। 


আচ্ছা এবার বিজ্ঞানকে ধরা যাক। ব্ল্যাক হোল্ থিওরির বিষয়ে তো সকলেই জানেন। সেই কৃষ্ণ গহ্বর! তার থেকেই সবকিছুর উৎপত্তি। বিজ্ঞান তো সেকথা প্রকারান্তরে স্বীকার করছে।


এবার একটু পুরাণের কথা।

বৃষভানু নন্দিনী রাধা চলেছেন কৃষ্ণ অভিসারে। পিছু নিলেন আয়ান ঘোষ। মনে সন্দেহ। কী দেখলেন আয়ান? দেখলেন কৃষ্ণের কালী রূপ! নিশ্চিন্তে ফিরলেন। না তাঁর স্ত্রী তাহলে ঠিকই আছেন!

ভক্তকবি জয়দেব তাঁর শ্যামরূপা মন্দিরে একই মূর্তিতে কালী ও কৃষ্ণ দর্শন করিয়েছিলেন বামাচারী তান্ত্রিক সাধককে।

যদি কেউ কখনো দক্ষিণ কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানের ভিতর যান, দেখবেন বাঁশি হাতে মা কালী। তিনি কৃষ্ণকালী। তাই তো চিন্তার গভীরে ডুব দিলেই দেখা যায় কৃষ্ণ ও কালী এক ও অভিন্ন।

জয় কৃষ্ণ। জয় কালী।


(পৌরাণিক বা আধ্যাত্মিক বিষয়ে মতান্তর বা পাঠান্তরের অবকাশ থাকে। তথ্যগত বা তত্তগত কোনো ভুল থাকলে পাঠক নিজগুণে ক্ষমা করবেন)


18.10.2020