Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

5-11-2020
বিষয়----গল্প ।শিরোনাম----রুবেলা নিকেতন।
লেখিকা-----শিপ্রা মুখার্জি (মুখোপাধ্যায়)।ট্রেন্ড ফ্যামিলি কাউন্সেলর ।
ভোর থেকে রাত অবধি ,রূবেলার নাম মুখে মুখে ফেরে। ফ্ল্যাট বাড়িতে কাজের মেয়ে রুবেলা । সে বাড়ির বড়দার জুতো পালিশ,ছোর…

 


5-11-2020


বিষয়----গল্প ।

শিরোনাম----রুবেলা নিকেতন।


লেখিকা-----শিপ্রা মুখার্জি (মুখোপাধ্যায়)।

ট্রেন্ড ফ্যামিলি কাউন্সেলর ।


ভোর থেকে রাত অবধি ,রূবেলার নাম মুখে মুখে 

ফেরে। ফ্ল্যাট বাড়িতে কাজের মেয়ে রুবেলা । সে বাড়ির বড়দার জুতো পালিশ,ছোরদার ঘরের কাজ

করে দেওয়া । সবার জলখাবার এগিয়ে দেওয়া ।বিছানা পাট করা । আরও কতো কাজ আছে,তা গোনা নেই । বসতে সময় পায় না। একটা কাজ শেষ

হতে না হতে আর একটা কাজের ডাক এসে যায় ।


রূবেলা ভাবে আমায় ওরা কতো ভালোবাসে। তাই তো কথায় কথায় আমায় ডাকে। বিল্লোদিদি পাশের 

বাড়ির কাজের মেয়ে । বলে-----ভালোবাসে না ছাই।

ওরা ভালোবাসা--টালোবাসা জানে না ।


শীত পড়েছে কি পড়েনি,তোষক রোদে দেওয়া শুরু হলো । দুদিন অন্তর অন্তর ভারি ভারি তোষক ছাতে দেওয়া শুরু হলো । রূবেলা দু খানা তোষক মাথায় করে ছাতে নিয়ে গেল । বিল্লোদিদি ছাতেই ছিল ।রূবেলাকে দেখে চেঁচিয়ে উঠল-----তোর কি ভয়ডর 

নেই?যেদিন ঘার মটকাবে,সেদিন বুঝবি,বিল্লোদিদি 

ঠিক বলেছে কি না?

,----কেন গো বিল্লোদিদি?


বিল্লো আরো রেগে গেল। বললো ----মেয়ের কথা শোন। একটা ছোট্ট মেয়েকে দিয়ে ওরা তোষক 

ছাতে পাঠিয়ে দিলো!ঘাড় মটকালে ওরা কি ওরা 

কি তোর দেখা শোনা করবে?ঐ জোয়ান লোকটা 

আছে না?সে ছাতে তোষক দিতে পারে না?


-----না গো বিল্লোদিদি ,মেসোমশাই বলেনি। আমিই 

এনেছি ।

-----শাক দিয়ে মাছ ঢাকিস না। পাড়ার লোকেরা জানে ওরা তোকে দু,দন্ড থির হতে দেয় না ।

------না গো।

---------থাম তো। আমাদের বলে কান ঝালাপালা হয়ে 

গেল । দিন নেই রাত নেই খালি রুবেলা আর রুবেলা ।

রুবেলা ছাড়া কি আর কেউ নেই ও বাড়িতে!


রুবেলা বলে----'আমি করে দি তাই আমায় ডাকে ।


রাগে গজগজ করতে করতে বিল্লো বলে----

---ঘাট হয়েছে আমার । তোর বাবুরা খুব ভালো ।


বলতে বলতে নেমে যায় সিঁড়ি দিয়ে ।


রুবেলা জানে ওকে বিল্লোদিদি ভালোবাসে । কিন্তু 

বাবুদের বাড়ি কাজ করে বলেই দু মুঠো ভাত খেতে

পাচ্ছে । যা কিছু শিখেছে সব এখানে থেকেই শিখেছে।ছোরদার কাজ করে দেয় বলে ছোরদা লেখা পড়া শিখিয়েছে । বড়দাকে ভয় পায় রুবেলা ।

একটু এদিক সেদিক হলেই হাত পা চলে বড়দার ।

এইতো সেদিনের কথা । বড়দার চার বন্ধু এলো । ডাক 

পড়লো রুবেলার। বড়দা বললো------রুবেলা দোকানে যা। হাতে গরম লাগে এমন কাটলেট আনবি।


ছুটে চললো রুবেলা । মনে হলো বিল্লোদিদি যেন 

দেখতে না পায়। গায়ের জামার যা দশা ! এক ছুটে গেল আর এক ছুটে এলো । ঘরে ঢুকতে বড়দা বললো------কীরে,গরম এনেছিস তো?

বলতে বলতে ঠোঙাটা কেড়ে নিল। রুবেলার মাথায়

একটা চাঁটি মেরে বললো-----যা ভাগ এখান থেকে ।


মিঠুন দা বললো----পরিমল ওকে একটা দে।

বড়দা বললো----ওর খুব নোলা বেড়ে গেছে । বাড়িতে 

তো কিছু খায়নি । এখানে খেয়ে খেয়ে নোলা বেড়ে গেছে ।


চোখে জল এসে যায় রুবেলার। ভাত ছাড়া এ বাড়িতে 

কিছু ই জোটে না । তাও রোজ আধ পেটাভাত । মাসিমা রোজ বলেন-----ভাত একটু কম হয়ে গেল 

রে রুবেলা ।

রুবেলা জানে না মাসিমা কেন রোজ একই কথা 

বলেন । তবু ও রুবেলা হাসি মুখে বলে----আমার 

ওতেই হয়ে যাবে মাসিমা । মিঠুন দা হাত ধরাতে 

রুবেলার খেয়াল হলো ,সে এখন ও ঐ ঘরে দাঁড়িয়ে 

আছে ।

মিঠুন দা বললো------নে আধ খানা খা।

বড়দা রেগে রুবেলাকে আকথা কুকথা বলেছে ।

রুবেলার চোখ দিয়ে টপ্ টপ্ করে জল পড়লো ।

মিঠুন দা বললো----পরিমল তোকে বন্ধু ভাবতে 

লজ্জা হয় । রুবেলা না থাকলে তোদের মতো কুঁড়ে 

লোকদের কি হতো বলতো?

বড়দার মুখ লাল হয়ে গেল । মিঠুন দা কে বললো---- ------কাজের লোক রাখার ক্ষমতা নেই তাই বলছিস।

তা এতো যখন দরদ নিয়ে যা না । তখন দেখবো কি করিস।

মিঠুনদা বললো----সইবার ও একটা সীমা আছে ।


সেদিন থেকে রুবেলার চড় থাপ্পড় খাওয়া টা বেড়ে 

গেল । দশ দিন ও গেল না । রুবেলার পেটে লাথি 

মারলো বড়দা । হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে রুবেলাকে।


বিল্লো চেঁচিয়ে পাড়া মাত্ করেছে ।

--------এই যে বাবুরা ,দেখেন আপনারা । সুরেন বাবুর 

ছেলে রুবেলার পেটে লাথি মেরেছে। বিচার করেন 

আপনারা ।


বিল্লোর কান্না শুনে পাড়ার লোকই হাসপাতালে 

ভর্তি করেছে রুবেলাকে।


খবর পেয়ে সাগর দহ থেকে ছুটে এলো রুবেলার বাবা হরেন। মরতে মরতে বেঁচে গেল রুবেলা । জীবন বোস ওখানকার স্কুলের হেড মাস্টার মশায় । দরদী মানুষ । ছেলে মিঠুন,বাবার মতোই দরদী। তাই রুবেলার ঠাঁই হলো জীবন বোস এর বাড়িতে । হরেন সরকার ,

জীবন বোস এর পা ধরে বললো------বাবু আপনি 

হলেন গিয়ে দেবতা । মেয়েটাকে দেখবেন । দরকারে 

গাল ও দেবেন।


রুবেলার ঠাঁই হলো জীবন বোস এর বাড়িতে । শরীর ভালো হয়ে গেলে ও রুবেলাকে কাজ করতে দেয় না এ বাড়ির মাসিমা । রুবেলা জোর করে হাত থেকে টেনে নিয়ে কাজ করে ।

রুবেলা বলে-----মাসিমা আপনি কাজ করবেন আর আমি বসে বসে দেখবো?


কদিন ধরে জীবন বোস এর চোখে পড়ছে রুবেলার 

কাজ করা । তাই স্ত্রী কে বলেন-----মনিকা,তোমার কি কাজ করতে কষ্ট হয়?

মনিকা বলেছেন----কি করি বলোতো হাত থেকে 

টেনে নিয়ে কাজ করে । তাছাড়া আমার একটা মেয়ে 

থাকলে কাজ করতো না?

জীবন বোস বলেন --------তা অবশ্য করতো । আবার স্কুলে ও পড়তো। 

মনিকা বললেন-----তোমার স্কুলে ওকে ভর্তি করে 

দাও না।


তাই হয়েছে।রুবেলা আজকাল স্কুলে যায়।

---------------

রুবেলার হাসি পায় । কোথায় ও বাড়ির লোক আর কোথায় এ বাড়ির এরা । এখানে বিল্লোদিদির কথাগুলো এরা ই বলে । মিঠুন দা যেন নিজের দাদা ।

মাসিমা এতো মধু ঢেলে কথা কয় যে রুবেলার চোখে

জল এসে যায় । সন্ধ্যা বেলা পড়তে না বসলে মিঠুনদা 

বকাবকি করে । বলে-----তোকে ক্লাস এ প্রথম হতে 

হবে ।

ঠিক ই বলেছে মিঠুন দা।দাঁড়াতে হবে । এতো বড়ো 

একটা সুযোগ পেয়েছে রুবেলা । সফল হতেই হবে 

তাকে । গাঁয়ের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে ।

স্কুলে যেতে অনেক কথা শুনতে হলো ।' এই মেয়েটা

ঝি।'' ওর সাথে কে বসবে?জামা পড়েছে দেখ । যেন 

ভদ্র বাড়ির মেয়ে ।'

পাড়ার লোকেরা বলে----ক'দিন পড়ায় তা দেখ।

লোকের কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে বললেন জীবন বোস------ওদের কথা কানে দিস না । বড়ো হতে হলে 

অনেক কথা শুনতে হয় । সইতে ও হয় সে সব কথা।


রুবেলা ভাবে বাড়ির কাজ করলে কেউ ছোট হয় না ।রুবেলা কেন ছোট হবে?পয়সা নিয়ে তো সবাই কাজ করে । সবাইকে দেখাতে হবে যে রুবেলা একটা 

মানুষের মতো মানুষ হয়েছে ।


দু বছরের মধ্যেই স্কুলের বড়ো পরীক্ষা দিতে চলেছে 

রুবেলা । পথে দেখা বিল্লোদিদির সাথে । রুবেলা বলে 

------বিল্লোদিদি আমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি ।

তোমায় একটা প্রনাম করি। তুমি আমার ভালো চাইতে ,তাই তো পড়তে পেলাম । আশীর্বাদ করো 

যেন পরীক্ষায় পাস করি ।

বিল্লোর চোখের জল গালে নেমেছে । বিল্লো যেন ভগবৎ দর্শন করছে । তাকে প্রনাম করবে রুবেলা!

করুক । মনে মনে বিল্লো ঠাকুর কে ডাকলো।---রুবেলা -র ভালো করো ঠাকুর । মুখে বলে----আমার সব ভালো যেন তোতে যায় ।

************

পরীক্ষা শেষ হতে গাঁয়ে এসেছে রুবেলা । মাধ্যমিকের ফল বেড়োতে দেরী আছে । রুবেলার ইচ্ছে গাঁয়ের ছেলে মেয়েদের অক্ষর চেনানো ।

বাবু বলেছেন,-------রুবেলা থেমে থাকলে চলবে না ।পুরো শিক্ষা টা নিয়ে নিবি । তারপর গাঁয়ের উন্নতি করবি । এটা সবে শুরু । হাল ছাড়লে চলবে না ।


সাগর দহের জ্যাঠা,খুড়োরা ও খুশি । রুবেলা ছোটদের পড়াতে শুরু করেছে । তখন শশী জ্যাঠা এসে হাজির। রুবেলার বাবা হরেন সরকার বলে-----রুবেলা দেখ শশীদা তোর জন্য কি এনেছে ।

রুবেলা দেখলো শশীজ্যাঠার হাতে একখানা টিনের 

সাইনবোর্ড । তাতে লেখা "রুবেলা নিকেতন "। সবাই মিলে টিনের সাইনবোর্ড টা কদম গাছে ঝুলিয়ে দিলো।


শশীজ্যাঠা বললেন-----এইবার রুবেলা নিকেতন 

চালাতে পারবি না?

উঠে দাঁড়ালো রুবেলা । ওরা ওকে এতো ভালোবাসে!

চোখে জল এসে যাচ্ছে । বললো-----খুব পারবো 

জ্যাঠা মশাই ।

শশীবাবু বললেন-------হরেন তোর মেয়ের জন্য গায়ের একটা লোক ও মুখখু থাকবে না।


**********

রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছে ।গায়ে জ্বালা ধরেছে পরিমলের ।একটা কাজের মেয়ে মাধ্যমিকে

প্রথম?

জীবন বোস খুশি । অমন মেয়ে কে পড়িয়েছেন বলে গর্ব বোধ করছেন ।

মনিকা কে বললেন------রুবেলা কে আরো পড়াতে চাই। পারবে না?ধরো না তোমার একটা ছেলে আর 

একটা মেয়ে ।

মনিকা বললেন---------কেন পারবো না । ফেলা 

ছড়ার কাগজে লিখেই তো প্রথম হলো । পুরোনো

ডায়েরির পাতা,ক্যালেন্ডারের পেছনে লিখেই তো

 চালিয়ে দিলো ।


ও দিকে সাগর দহ গ্রামে হৈহৈরৈরৈ পড়ে গেছে ।

খাস খবরের টিম সদল বলে পৌঁছে গেছে সাগর  >

দহে। হরেন সরকার হাসবে না কাঁদবে । এমন একটা মেয়ে তার নিজের! ছেঁড়া কাঁথা,হাঁড়ি-কড়ার সাথে মাটির ঘরে দেখা যায় তাঁর মেয়ে রুবেলার মুখ টেলিভিশন এর পর্দায় । নানা প্রশ্নে হরেন ও তার 

বৌ কে দিশাহারা করে দিল তাঁরা। সাগর দহে 

কদর বেড়ে গেল হরেনের । কিন্তু আসল কদর যার 

পাওয়ার কথা তার কথা মনে করে চোখে জল এসে গেল হরেনের । হরেনের মতো গরীব কি কখনও বাবার কাজ করতে পারে!


*************

 গাঁয়ের উদোম আকাশ তলে ছেঁড়া মাদুরে শুয়ে 

 রুবেলার মনটা তির তির করে কাঁপছে । এই আকাশটা কি আলাদা? কলকাতার আকাশ ধোঁয়াটে,

 আর সাগরদহের আকাশ গাঢ় নীল । পেঁজা তুলোর 

 পাশ দিয়ে চিল উড়ে যাচ্ছে ।।

 হয়তো কলকাতায় এখন ******।

 বিল্লোদিদি,মাসিমা,মিঠুনদা,বাবু সবাই রুবেলা কে ভালোবাসে । আবার সেই কাঁপুনি টা শুরু হলো ।

 কলকাতার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা হবে । তাই কি

 ভয় পাচ্ছে সে!


মেয়ে কে শুয়ে থাকতে দেখে রাগ হয়ে গেল কাঁদুনির।

সারা গাঁয়ের কি এক রোগ হয়েছে । রুবেলা কে নিয়ে 

রঙঢঙ্ করছে । মেয়ে কী কখনো ছেলে হতে পারে?


রাগ করে বলে------এই মেয়ে শুয়ে আছিস কেন ?

পেটে যাদের ভাত জোটে না । পড়াশোনা তাদের জন্য 

কাঁটার মতো ।


রুবেলা বললো------মা মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আমার সাক্ষাৎকার হবে । তখন পড়ার খরচ দেবার কথা বলবো ।


কাঁদুনি 'থ'হয়ে গেল । মেয়ে বলে কি?মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবে! তাহলে মেয়ে অনেক বড়ো কাজ করেছে।হাঁ করে চেয়ে দেখে মেয়ে কে । তারপর বলে-------ওরা যদি খরচা দেয় তাহলে তুই পড় মা।আমার মতো যেন না হয় । খিদের জ্বালা যে কি জ্বালা !


রুবেলা কি জানে না খিদের কি জ্বালা! কতো দিন মা

কলমি শাক সেদ্ধ করে দিয়েছে। তাই দিয়ে পেট ভরাতে হতো । চাল জোগার হলে সেদিন ভাত ফুটতো

ঘরে । সেদিন ঘরে কী সুবাস । তখনই জেনেছে ভাতের

গন্ধ কি ভালো । সেদিন ওদের চালাঘর ও বাবুদের 

বাড়ি মনে হতো । ভাতের জন্য পাগল হতো ভাই দুটো ।বাবা আর ভাইরা খাওয়ার পর যা থাকতো,মা আর

রুবেলা তাই ভাগ করে খেতো। রুবেলার কি মনে 

হতো না আর একটু ভাত খাই। কিন্তু লোভ দমন 

করতো সে। মা কে থালা চাটতে দেখে বলতো-----

মা আমার পেট ভরে গেছে তুমি এটুকু খাও।

---বলে নিজের ভাতটাকে উপুড় করে দিতো মায়ের থালায় ।

কাঁদুনি বড়ো চোখে মেয়ের দিকে চেয়ে বলতো-----

কেন খাবিনা?

রুবেলা বলতো----পেটটা মোচড় দিচ্ছে ।

মুখে সে কথা বললেও খিদের জ্বালা নিয়েই কাটাতো

দিন।

কলকাতার মাসিমা বেশি ভাত দিলেও মা -ভাইদের 

কথা মনে করেছে সে।

***************

হরেন সরকার মেয়ে কে জীবন বোস এর বাড়িতে 

পৌঁছে দিয়েছে। কলকাতার কলেজে ভর্তি হয়েছে রুবেলা । মাসিমার শাড়ি পড়ে কলেজে গেছে । কিছু 

ছেলে মেয়ে ভালো চোখে দেখেছে। আর কিছু জেনে 

গেছে রুবেলা কাজের মেয়ে । পাখি পড়ানোর মতো 

মিঠুনদা বলেছে----ওদের কথায় কষ্ট পাবি না । ওদের 

থেকে তুই অনেক উঁচুতে । ছোট ভাববিনা নিজেকে ।


মিঠুনদার কথা গুলো মনে গেঁথে নিয়েছে রুবেলা ।

কলেজে প্রথম সারিতে বসেছে । স্যারেদের মুখে 

রুবেলা নামটা সবার আগে । কারোকে দরকার নেই 

রুবেলার । একে একে অনেকেএগিয়ে এসেছে ওর কাছে । ওদের দরকার রুবেলাকে।


বছর কেটে গেল প্রতি মাসের জলপানির টাকা জমিয়ে রাখে সে। হরেন মেয়েকে দেখতে এলে মেয়ে বাবার হাতে তুলে দিলো সেই টাকা । বললো-----বাবা চাল কিনে নিয়ে বাড়ি যেও। ভাইরা খেতে পাবে ।

মেয়ের কথায় হরেনের চোখে জল এসে যায় । সব

সময় কাঁদুনি বলে---মেয়ে কি তোমায় দেখবে?

এবার বাড়ি ফিরে কাঁদুনি কে বলবে---দেখো,কতো

টাকা দিয়েছে মেয়ে । আমাদের কথা ভাবে । বলেছে

চাল কিনতে ।


*************

কলেজ থেকে ফেরার পথে বিল্লোদিদির সাথে দেখা ।

বিল্লোদিদি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলো । পিছন থেকে রুবেলা ডাকলো-----কি গো বিল্লোদিদি,কথা না বলে চলে যাচ্ছো যে বড়ো।

পিছন ফিরে দাঁড়ায় বিল্লো । তারপর ছুটে এসে রুবেলার হাত ধরলো ।

-----রুবেলা তুই?চিনতে পারিনি । বাবুদের বাড়ির মতো চুকচুকে চেহারা হলো কি করে?

রুবেলা বললো----মনের সুখে গো। আত্মবিশ্বাস এসেছে । নিজেকে হেয় জ্ঞান করিনা । গরীব বলে 

চোরের মতো থাকতাম । এখন থাকি না । লুকাই না

নিজেকে । বলতে ইচ্ছা হয়----ওগো বাবুরা তোমরাই রুবেলার মতো মেয়েদের আত্মবিশ্বাস এনে দিতে পারো। ধনে গরীব হলেও মানে ধনী হবে । সবাই 

বলবে ঐ বাবুরা বিল্লো,রুবেলাদের দাঁড় করিয়েছে।


বিল্লো বললো----এই রুবেলা কি বলছিস?কিছু ই যে

বুঝতে পারছি না ।


তুমি বললে না চুকচুকে চেহারা কি করে হলো?

তাই বলছি । মাসিমার বাড়া ভাতের ভালোবাসা ।

বাবুর শাসনের ভালোবাসা । আর মিঠুন দার ভয় দেখানো, ------রুবেলা কথা না শুনলে কিন্তু পরিমল দের বাড়ি দিয়ে আসবো । ওদের ভালোবাসা আমাকে দৃঢ় করেছে । আমার চেহারা চুকচুকে করেছে ।


রুবেলা ভাবে একবার ও বাড়ি র বড়দা-

ছোরদাকে প্রনাম করে আসবে । ছোরদা অক্ষর 

চিনিয়েছে। আর বড়দা? হ্যাঁ বড়দার কাছে কেনা হয়ে 

আছে রুবেলা । বড়দা লাথিটা না মারলে তো রুবেলার উন্নতি হতো না । এটাই হয়তো হবার ছিল । নইলে রুবেলার জানা হতো না যে একটা কাজের মেয়ে ও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে তেমন খুঁটি পেলে।

****************সমাপ্ত **************