#আখরোট_কাঠের_বাক্স থেকে বেরিয়ে আসা #তৃতীয়_পত্রকাব্য
আমার সুপ্রিয়া,এই যে তোমাকে 'আমার' বলে সম্বোধন করি, এক অদ্ভুত শিহরণ জাগে জান? সারা গায়ে কেমন যেন কাঁটা দিয়ে ওঠে! এ জন্মে তুমি কোনদিন আমার হবে না, তোমাকে একান্তভাবেই আমার ক…
#আখরোট_কাঠের_বাক্স থেকে বেরিয়ে আসা #তৃতীয়_পত্রকাব্য
আমার সুপ্রিয়া,
এই যে তোমাকে 'আমার' বলে সম্বোধন করি, এক অদ্ভুত শিহরণ জাগে জান? সারা গায়ে কেমন যেন কাঁটা দিয়ে ওঠে! এ জন্মে তুমি কোনদিন আমার হবে না, তোমাকে একান্তভাবেই আমার করে পাবোনা কখনো, তবুও কি ঔদ্ধত্য দেখ! আচ্ছা এটাকে তুমি ছেলেমানুষি বলবে না পাগলামি বলবে? সে তুমি যাই বলো আমার হৃদয়মন্দিরে তুমি একান্তভাবেই আমার। সেখানে আর কারো জন্য এক চিলতে জায়গাও নেই। তাই চাও বা না চাও, তুমি আমার হয়েই আমার পাশে থাক সবসময়। ভোরবেলা ঘুম থেকে তুলে হাতে বেড টি ধরানো , সারাদিনের ছোট ছোট অলস কাজের বেলায়, ছোট ছোট কুঞ্চিত অলকদামে ছেয়ে যাওয়া কপাল, ছোট্ট কপাল থেকে চুল সরিয়ে কানের পাশে দেওয়া, সদ্য ঘুম ভাঙা চোখের ওপর লেপ্টে যাওয়া সিঁদুর, তোমার আঁচল দিয়েই আবার সেই টিপটা ঠিক করে গোল করে দেওয়া...! অপ্রস্তুত তুমি না পারো কিছু বলতে, না পারো আমাকে আটকাতে! কিন্তু তোমার চোখের আকুতি আমি দেখতে পাই। একটা কথার জবাব দেবে প্রিয়া, সত্যিই তুমি কি আমার আলিঙ্গন থেকে পালাতে চাও, নাকি অযুত নিযুত বছর ধরে বাঁধা পরে থাকতে চাও! দেখেছ লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে তোমার মুখটা। সত্যিটা আমি জানি গো, তোমাকে মুখ ফুটে বলতে হবে না। দেখেছ আমার সেই অভ্যাস, কথা বলতে শুরু করলে থামার ব্যাপার নেই। আসলে ভেবেছিলাম শুরুতেই বলে নেব, যদিও তৃতীয় বলেছি, কিন্তু এটা তৃতীয় নাও হতে পারে জান! আসলে আখরোট কাঠের বাক্সে অত চিঠির মধ্যে থেকে আমার আর তিন নম্বরী খুঁজতে ইচ্ছে করছে না, তোমাকে পাঠানো এটা আমার তৃতীয় চিঠি, এবার হলো তো!
ওই যে সেদিন প্রহর শেষের রাঙা আলোয়,
হারিয়ে যাওয়া অনুভূতির আলপথ বেয়ে...
ফিরে আসার সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল....
মাথার ওপর বয়ে চলা জলে হাঁচড়ে পাঁচড়ে শ্বাস...
মনে পড়ে ছুটে এসেছিলাম তোমার কাছে,
একরাশ শূন্যতা মাখা শুকনো রেনুর পথে
হাঁটতে হাঁটতে অনির্দিষ্টের দিকভ্রান্ত পথিক!
থমকে ছিলাম, ফাঁকা তোমার আসন তখন....
আবার পথ চলা শুরু অজানার পথে,
শেষ আলোর বিন্দু তখন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর...
আবছা আলোয় মানিপ্ল্যান্টের রঙ বদল,
সুখের চাদর ছিন্ন করে উঠছে গরল...
চোখের দৃষ্টি ধাঁধা লাগায় কুয়াশা চাদর
তবুও প্রতীক্ষা সেই ছোঁয়ার সেই অস্ফুট আদর।।
আমার এই কবিতার কথা কেউ জানে না, জান প্রিয়া! আমি জানাতেও চাই না, কারণ আমি শুধু তোমার কবি। ভালো মন্দ যাই হোক আমার কবিতা শুধু তোমার জন্যই তোমাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। এই জানো, ক্যালেন্ডারের পৃষ্ঠা জানান দিচ্ছে পূজো আসছে। আসলে আমার মা চলে যাওয়ার পর থেকে আমি এখন আর পূজোয় বাড়ি যাই না, মানে ছুটি চাই না। দাদারা আছে ঠিকই কিন্তু সেখানে তো আমার জন্য কেউ প্রতীক্ষা করে নেই! তার থেকে বরং যার প্রিয়া, আর প্রিয়জনেরা প্রতীক্ষায় আছে তাদের ছেড়ে দিই। জানো প্রিয়া পূজোয় বাড়ি যেতে পারবে জানতে পারলে হাওয়ায় উড়তে থাকে ওরা! প্রিয়জনের উৎকন্ঠা ভরা প্রতীক্ষার অবসানে যে আনন্দ ফুটে ওঠে, তার সঙ্গে কোন কিছুর তুলনা চলে না! আমাদের নিজেদের বেছে নেওয়া এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে আমরা গুনে চলি কটা পুজো আমরা এক ফ্রেমে কাটালাম। ফিরে এসে ওরা গল্প করে, খুব ভালো লাগে জান, ওদের আনন্দের শরিক হই আমি।
ভালো লাগার অনুভূতি
খুঁজতে বেরোই কোথা
অনুভূতি বোধ শূন্য সবাই
অন্তর জোড়া ব্যথা।
খারাপ লাগা অনুভূতি
ওটা জমিয়ে রাখা
কেউ দেবে না ভাগ কাউকে
মন যে তবে ফাঁকা।
অনুভূতিটা পাবে ফিরে
মেঘ টা ছিঁড়ে গেলেই
রোদের ঝিলিক উঁকি দেবে
ব্যাথা প্রেমে পড়লেই....
এই আজ আমাকে কবিতায় পেয়েছে জান! কিগো, এই প্রিয়া, এবার তবে কলম রাখি! তোমার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলে শেষ হবে না, তাই জোর করে থামিয়ে দিই নিজেকে। তোমার সঙ্গে যখন কথা বলি মনেই হয় না আমি সীমান্তের প্রহরী, অস্ত্রভারে সজ্জিত আমার শরীর, একা একা টেন্টের ভিতর আমার সশঙ্কিত দিনযাপন! মনে হয় আমি আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো অফিস সেরে ক্লান্ত শরীরে ফিরছি প্রিয়ার হাসিমুখের টানে....
তুমি কিন্তু খুব খুশি থেকো আমার সুপ্রিয়া! মনে রেখো তোমার নিশ্চিন্তের ঘুমের জন্যই আমার অনায়াস রাত্রিজাগরণ! তোমার খুশী আমার এই পাহাড়ের ওপরেও এক বুক অক্সিজেন! যদি কখনো দেখা হয় সেই হাসিটা যেন দেখতে পাই! আজকের মতো আসি তাহলে, তোমার দুই চোখে দুটো চুমু দিয়ে তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম, ভালো থেকো আমার সুপ্রিয়া....
তোমার সুপ্রিয়