Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#পুরুষ_দিবস#পিউ_হালদার_‌আশ১৯/১১/২০২০        মণীষার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায় মণীষা তখন মাত্র পাঁচ বছরের। ওর বাবা ওকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু মণীষা দেখতো রোজ বাবা মা অফিস থেকে এসে ঝগড়া করতো আর ওর ঠাম্মি থামাবার চেষ্টা করতো। কতদিন …

 


#পুরুষ_দিবস

#পিউ_হালদার_‌আশ

১৯/১১/২০২০

        মণীষার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায় মণীষা তখন মাত্র পাঁচ বছরের। ওর বাবা ওকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু মণীষা দেখতো রোজ বাবা মা অফিস থেকে এসে ঝগড়া করতো আর ওর ঠাম্মি থামাবার চেষ্টা করতো। কতদিন ওদের ঝগড়ার মাঝে পড়ে ধাক্কাধাক্কি তে ননীবালা দেবী মানে মণির ঠাকুমা পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছে। তবুও তিনি মণির কথা ভেবে ওদের থামাতে যেতেন। ছোট্ট মণি কিছুই বুঝতো না,, শুধু হাঁ করে তাকিয়ে থাকতো বাবা মায়ের দিকে। ঠাকুমা চোট পেলে ছুট্টে গিয়ে কচি হাত দুটো দিয়ে আদর করে দিতো, ওষুধ লাগিয়ে দিতো। তারপর ঠাকুমার কাছে খেয়ে ঠাকুমার ঘরেই ঘুমিয়ে পড়তো। 

     মণির বাবা তপন ঘোষাল একজন সফল ডাক্তার আর মা তন্দ্রিমা কলেজের প্রফেসর। দুজনেই উচ্চ শিক্ষিত। ইগো প্রবলেম বেশী দুজনের‌ই। টাকা পয়সা ধন দৌলতের কোনো অভাব নেই। বিশাল বড় জায়গা জুড়ে বাড়ি, দু দুটো গাড়ী, কি নেই?? নেই শুধু শান্তি। দুজনের স্কুল জীবনের প্রেম। দুজন দুজনকে ছেড়ে থাকতেই পারতো না।তারপর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে তপন বাবু মেডিক্যালে সুযোগ পেয়ে বাইরে পড়তে চলে যায় আর তন্দ্রিমা কোলকাতাতেই পড়াশুনা করে প্রফেসরের চাকরী পেয়ে যায়। দুজনেই যখন সুপ্রতিষ্ঠিত তখন ওরা সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করবে। সেই মতো দুই বাড়ির সম্মতিতে ওদের বিয়ে হয়ে যায়। সমস্যা টা বাধে বিয়ের একবছর পর থেকেই। হঠাৎ করে তন্দ্রিমার মধ্যে একটা চেঞ্জ আসে। কথায় কথায় রেগে যায়, বিনা কারণে তপনের সাথে ঝগড়া করে। আবার কিছুক্ষণ পরেই ঠিক হয়ে যায়। এইভাবে সবকিছুর মধ্যে দিয়েই তন্দ্রিমা দুবছরের মাথায় কনসিভ করে। বাড়িতে খুশির জোয়ার আসে। তপনের মা ভাবেন যাক এবার সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তন্দ্রিমা একটুও খুশি হয়নি ওর মা হবার খবর শুনে। ও চায়নি এত তাড়াতাড়ি কেউ আসুক কারণ তখন তন্দ্রিমা রাজশেখর বসুর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। উনি তন্দ্রিমার কলেজের কেমিস্ট্রির অধ্যাপক। তন্দ্রিমার থেকে বছর পাঁচেকের বড়। দেখতে তপনের তুলনায় অনেক সুন্দর আর স্মার্ট। তুলনায় তপন কিছুই না। যাইহোক একদিন রাজশেখর কে বাড়িতে নিয়ে আসে কলেজ ফেরার পথে তন্দ্রিমা। সকলের সাথে আলাপ করে কিছুক্ষণ থেকে উনি বিদায় নিলেন। সেদিন ছিলো পুরুষ দিবস। তপন আশা করেছিল তন্দ্রিমা ওইদিন হয়তো ওকে কিছু উপহার দেবে বা ওইদিন টা অন্যরকম ভাবে পালন করবে। কিন্তু সে আশায় জল ঢেলে দিলো তন্দ্রিমা। রাতে খাবার খেয়ে যে যার মতো শুয়ে পড়ে। তপন সব কিছু বুঝতে পেরেও তন্দ্রিমার থেকে রাজশেখরের সম্পর্কে কিছু জানতে চায়নি। 

         সেইদিন থেকে এই পুরুষ দিবস দিনটার প্রতি ঘেন্না এসে যায় তপনের। শুধু পুরুষ দিবস বললে ভুল হবে কোনো দিবস ই ও সহ্য করতে পারে না। নিজের জন্মদিন টুকুও পালন করতে দেয় না। তবুও ননীবালা দেবী নিজের হাতে পায়েস করে ছেলেকে দেন, সেটুকু উপেক্ষা করতে পারে না তপন। দেখতে দেখতে তন্দ্রিমার ডেলিভারির সময় হয়ে আসে। ডেটের আগেই সিজার করে ফুটফুটে মেয়ের জন্ম দেয় তন্দ্রিমা। রাজশেখর আসে হসপিটালে দেখতে।ননীবালা দেবী নিজের গলার সোনার চেনটা খুলে নাতনীর গলায় পরিয়ে দেন। পাঁচদিন পর ছোট্ট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ওরা বাড়ি ফিরে আসে। ননীবালা দেবী কোনো আয়া রাখতে দেন না, সবকিছু নিজের হাতে করেন।দেখতে দেখতে মণি বড় হতে থাকে। ওর হাবভাব, চোখের তাকানো অবিকল রাজশেখরের মতো।মেয়ে যত বড় হতে থাকে তপনের সন্দেহ তত বাড়তে থাকে। অশান্তি চরমে গিয়ে দাঁড়ায় মণীষার পাঁচ বছরের জন্মদিনের দিন। সকল নিমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে রাজশেখর ও আসে। হঠাৎ দুজনের গলা পেয়ে ঘরের সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে ও তপন থেমে যায়। 

     "আর কিছুদিন অপেক্ষা করো রাজ।তপন সন্দেহ করছে আর খুব অশান্তি হচ্ছে রোজ রোজ। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছি ডিভোর্স দিয়ে মণি কে নিয়ে তোমার কাছে চলে যাবো। "

      "দ্যাখো তন্দ্রিমা তুমি আমার কাছে আসতে চাইলে আমি না করবো না, কিন্তু তুমি তপনকে কষ্ট দিচ্ছো। ওর তো কোনো দোষ নেই। ও তো তোমাকে ভালোবাসে। হ্যাঁ মানছি মণীষা আমার মেয়ে, তা হলেও..... "

       এইটুকু শোনার পর তপন আর ওখানে দাঁড়াতে পারে না। তাড়াতাড়ি চলে যেতে গিয়ে বাইরের ফুলের টব টা পড়ে ভেঙ্গে যায়। তন্দ্রিমা আর রাজ বুঝতে পারে কেউ ওদের কথা শুনে নিয়েছে। ওরা বাইরে এসে দ্যাখে তপন ফুলের টবটা তুলছে আর চোখের জল মুছছে। ওরা তিনজনেই চুপ হয়ে যায়। তপন আসতে আসতে ওখান থেকে চলে যায়। 

     সন্ধ্যেবেলায় কেক কাটার সময় তপন কে কেউ দেখতে পায় না। অনেক রাতে মদ্যপ অবস্থায় ফেরে। তপনের জীবনটা পুরো ওলটপালট হয়ে গেলো। পরের দিন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে তপন চলে যায় ওর এক উকিল বন্ধুর কাছে। ডিভোর্সের পেপার ঠিকঠাক করে এসে তন্দ্রিমা কে জানায় ও যেনো রাজশেখরের বাড়িতে চলে যায়। ডিভোর্সের পেপার চলে যাবে। ননীবালা দেবী পারেনি কিচ্ছু করতে। ছোট্ট মণিকে ননীবালা দেবী রাখতে চেয়েছিলেন নিজের কাছে, কিন্তু তপন রাজী হয়নি, বলে" পরের মেয়েকে আর কতদিন নিজের করে রাখতে পারবো মা?? তার থেকে বরং মায়া কাটিয়ে যার মেয়ে তার কাছে পাঠিয়ে দাও"।

           মণীষা কে নিয়ে তন্দ্রিমা চলে যায় রাজশেখরের বাড়ি।সেখানে বেশ সুখেই দিন কাটছে ওদের। মণি ও আসতে আসতে বড় হতে থাকে। সে এখন আঠেরো বছরের যুবতী। ও জানে না যে ওর মায়ের আগেও একটা স্বামী সংসার ছিলো। এদিকে তন্দ্রিমার ডায়েরী লেখার অভ্যাস ছিল। ভালো মন্দ সব লিখে রাখতো ডায়েরীতে। এদিকে মণীষা কে তপন ওর স্কুল কলেজে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে যেতো। যত‌ই অন্যের সন্তান হোক না কেন পাঁচটা বছর তো নিজের সন্তান ভেবেই বড় করেছিল, সেই মায়া কি ত্যাগ করতে পারে? 

        একদিন মণীষা তন্দ্রিমার ঘর গুছোতে গিয়ে টেবিলের ওপরে দ্যাখে একটা ডায়েরী খোলা আছে। তখন ওর মা ছিলো না বাড়িতে। ও কৌতুহল বশতঃ ডায়েরীটা হাতে তুলে নিয়ে একের পর এক পাতা ওল্টাতে থাকে আর ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। তখন ই ও ঠিক করে নেয় তপন মানে ওর আর এক বাবার সঙ্গে ও দ্যাখা করবে। কিন্তু ওর মাকে কিছু জানতে দেয়না। ও ঠিকানা দেখে খুঁজে খুঁজে চলে যায় তপনের বাড়িতে। গিয়ে ওর ঠাম্মা কে জড়িয়ে ধরে। কিন্তু ননীবালা দেবী তো চিনতে পারেননি, অত ছোট বেলাতে দেখেছে। হঠাৎ মণির গালের তিলটা দেখে উনি চমকে ওঠেন। বলেন "কে তুমি?? দিদিভাই এর মতো গালে তিল"।

      মণি ওর পরিচয় দিয়ে তপনের কথা জিজ্ঞাসা করে। তপন ওর ঘরে ঘুমোচ্ছে শুনে ছুট্টে চলে যায় তপনের ঘরে। তারপর বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে। তপন তো চিনতো। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে মণিকে দেখে বলে "কে তুমি? হঠাৎ আমার ঘরে কি করছো? "

      মণি তখন ওর পরিচয় দিয়ে বাবার বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে। তখন ওর ঠাম্মি এসে ওর মাথায় হাত রেখে বলে যে "দিদিভাই তোর আমাদের কথা মনে ছিলো না না?? "

    না ঠাম্মি, তখন আমি কত ছোট। একটু একটু আবছা আবছা মনে পড়তো বাবা মায়ের অশান্তি, তুমি থামাতে। ব্যস এটুকুই। মুখ গুলো তোমাদের মনে ছিলো না। আজ মায়ের ঘর গুছোতে গিয়ে মায়ের ডায়েরী পড়ে সব জানতে পারি, আর দেরি না করেই চলে আসি তোমাদের কাছে। আজ আসি গো। এরকম মাঝে মাঝেই চলে আসবো তোমাদের কাছে। 

          এর কিছুদিন পরেই ছিল পুরুষ দিবস। মণীষার জীবনের প্রথম পুরুষ ওর এক বাবা তপন আর অন্যদিকে জন্মদাতা বাবা রাজশেখর। দুজনকেই ও সমান ভাবে ভালোবাসে। 

      আজ পুরুষ দিবস। মণীষা ঠিক করেছে আজ ও ওর দুই বাবাকে সারপ্রাইজ দেবে। তাই সেই মতো তপনকে একটা হোটেলে আসতে বলে আর ও নিজে রাজশেখর কে নিয়ে আসে, সঙ্গে তন্দ্রিমা কেও। তারপর সবাই যখন একসাথে হয় তখন দুই বাবাকে একসাথে পুরুষ দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে উপহার দেয় আর বলে" মা মানুক আর নাই মানুক আমার জীবনের এই দুই পুরুষকে আমি এখন থেকে সমান ভাবে সম্মান দেবো। আমার দুই বাবা আজ থেকে আমার কাছে সমান শ্রদ্ধার। একদিন এই পুরুষ দিবসের দিনেই আমার মা আমার বাবাকে অপমান করেছিল। আজ আমি বড় হয়ে বাবার অপমান ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। অপমান কখন ও ভোলা যায় না, তবু ও আমি এখন থেকে দুই বাবার কারোর অপমান হতে দেবো না "।

       তপনের এবারের পুরুষ দিবসের দিনটা একদম অন্যরকম কাটে। আর মণীষা ও তারপর থেকে দুই বাবার প্রতি সমান নজর রাখে।