ছোটগল্প
ভাতৃত্বের বন্ধন কথাছবি কর
--দিদি আসুন আপনাকে বড় রাস্তার মোড় পর্যন্ত ছেড়ে দিই ( একজন বাইকআরোহী কাছে এসে ধীরবেগে চালাতে চালাতে কথাগুলো বললো ) ।
মন্দিরা ভয় যথাসম্ভব বুঝতে না দিয়ে …
ছোটগল্প
ভাতৃত্বের বন্ধন
কথাছবি কর
--দিদি আসুন আপনাকে বড় রাস্তার মোড় পর্যন্ত ছেড়ে দিই ( একজন বাইকআরোহী কাছে এসে ধীরবেগে চালাতে চালাতে কথাগুলো বললো ) ।
মন্দিরা ভয় যথাসম্ভব বুঝতে না দিয়ে স্মার্টলি রেগে , ' কে আপনি ..যান এখান থেকে ' ।
--মসজিদের পিছনের নয়নজুলির পাশের রাস্তাটুকু পার করে দিই ; রাত হয়েছে । আপনি একা ...
বড়দিনের বিশেষছাড় থাকায় শপিংমলে ভিড় একটু বেশিই ছিল । ফ্লোর ম্যনেজার ন'টার আগে ছুটি দিলোইনা । মেইনরাস্তায় ফিরলে বাড়ি পৌঁছাতে দেরী হতো ঠিকই তবে নিরাপদ । আজ শর্টকাটের জন্য নয়নজুলির রাস্তাতেই ....
লোডশেডিংও এখনই হবার ছিল জানলে শর্টকার্ট পথ নিতোনা ।
--বাইকআরোহী : দিদি বসুননা ।
অন্ধকার , মাথায় হেলমেট থাকায় বয়সটা ঠিক অনুমান করতে না পেরে ভয়ার্তকণ্ঠে : ' জাস্ট গো টু হেল ' ।
বাইকআরোহী : নয়নজুলির ধারে সমাজবিরোধীরা অন্ধকারে নেশাটেশা ....
মন্দিরা : (কথার মাঝখানে থামিয়ে ) মতলবটা কি আপনার ? চিৎকার করে লোক ডাকবো কিন্তু। ( যদিও বেশ বুঝতে পারছে , চিৎকার করলেও কেউ শুনবেনা ) ।
বাইকটা দ্রুত অন্ধকারে মিলিয়ে গেল ।
ব্যাগ থেকে ফোন বের করে লোকেশন ট্যাগ করে পরিচিতদের মেসেজ দিল । পুলিশের ওমেন হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলো । সরকারী অফিস , রিং হয়ে গেল ..ফোন কেউ তোলেনি ।
শীতে নয়নজুলিতে তেমন জল না থাকলেও কচুরিপানায় ভরা । ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক , নেড়ি কুকুররা কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে পথের ধারে ঘুমিয়ে , মাঝেমধ্যে কেউকেউ , ঘেউঘেউ করে উঠছে । জোনাকির ঝাঁক ...বিশ্রীরকম ভয়ঙ্কর নিস্তব্ধতার শব্দ । মাঝেমধ্যে সাইকেলের রিং বাজাতে বাজাতে দু তিনটা সাইকেল আরোহী বেড়িয়ে গেল হুশ করে । ওরাও হয়তো শহরে গিয়েছিল কাজে । মনের ভিতর সব ধরনের ভয়ের কথা আসছে । না ভূতপ্রেতের ভয় নয় ; মানুষরূপী ধর্ষক জানোয়ারদের ভয় । নিত্য পেপার খুললে কত খবর , কত ঘটনা প্রকাশে আসেনা ।
মোবাইলের আলোতে বুঝতে পারছে বেশ কিছু মানুষ দূরে দাঁড়িয়ে । দু'জন তার দিকেই এগিয়ে আসছে ।
উল্টোপথে দৌড়াবে ...পা চলছেনা , মাথা কাজ করছেনা ।
এতোজন মিলে যদি ...
কাল খবরের কাগজের কোনায় , '' নয়নজুলিতে ধর্ষিতা যুবতীর ক্ষতবিক্ষত লাশ '' ।
ঘরে প্যারালাইসিসে পঙ্গু বাবা তার উপর মা'কে ফোন করলে মায়েরও টেনশন বাড়বে। অজানা আশংকায় ঈশ্বরকে স্মরণ করতেও পারছেনা ।
যাক , ধড়ে একটু প্রাণ এলো। দুজন মাঝবয়সী মহিলা এগিয়ে এসে বললো , ' বেটা ডরো মৎ , হামারে সাথ চলো ' ।
কথা না বলে এবার জোর কদমে হাঁটছে । কারন মহিলা মানেই নিরাপদ , এমনটা নয় । মহিলারাও অনেক সর্বনাশ করতে পারে ।
ওই তো সেই বাইকআরোহী । অন্ধকারেও সেই বাইকের নম্বরটা দেখে রেখেছিল । বাইক রেখে যুবাটির সাথে আরো কযেকজন দাড়িওয়ালা বয়স্ক , মাঝবয়স্ক লোক এগিয়ে এল । পিছনে মহিলা দুজন ।
এক নিমিষে সব ভয় দূর করে টর্চ নিয়ে একজন দাড়ি , টুপিওয়ালা বললো , ' বেটা হাম ইহা কা মৌলভী আছে । এ স্থান বহুত পাক আছে । ডরো মৎ । ট্রান্সফরমার উড় গযা হ্যায় ইসলিয়ে ক্যরেণ্ট আনে মে থোড়া টাইম লাগেগা ' ।
যুবকটির দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে , তুমহারা ভাই নে পুলিশ কো ইনফর্ম কর দিয়া হ্যায় ।
যুবকটি বললো : দিদি আপনি রেগে গিয়েছিলেন কিন্তু তাই বলে আপনাকে অসহায়ভাবে ফেলে আসতে পারতামনা । মসজিদে এসে খবর দিলাম। এতো রাতে মসজিদে খুব বেশী মানুষ থাকেনা তাই মৌলভী সাহেব কাছের দুজন মহিলাকেও ডেকে এনেছেন । এনারা সব আপনার সুরক্ষার জন্য ।
পুলিশের গাড়ি এলো । ক্যরেণ্ট চলে এলো ।
মহিলা কনস্টেবল : চলুন ম্যাম , আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিই ।
যুবকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে বললো , সমাজে এখনো তোমাদের মতো ভালো মানুষ আছে যারা মেয়েদের অসহায়তার সুযোগ নেয়না । প্রকৃত মানুষ হয়ে উপকার করে । মানুষের চেহারার কিছু অমানুষদের জন্য সম্পর্কের পবিত্রতা নষ্ট হয় । তাই অমানুষদের জন্য মানুষদের প্রতিও বিশ্বাস আসেনা ।
মন্দিরা ছলছল চোখে : থ্যাংকু ভাই ।
যুবকটি বললো , ভাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছো । সমাজে যে শুধুমাত্র ধর্ষক , নোংরা অমানুষ নেই সেটা প্রমাণ করিয়ে মা বোনদের সম্মান বিশ্বাস রক্ষার দায়িত্ব দাদাভাই , কাকা , মামা সমস্ত পুরুষদের ।
মন্দিরার পরিচিতরা এক এক করে ফোন করছে । মন্দিরা মা' কে ফোন করে জানালো , আসতে একটু দেরি হবে । একজন ভালো ভাই পেয়েছে , তাকে শ্রদ্ধা ভালোবাসার রাখীটা পড়াতে হবে যে ...
মন্দিরা মুসলিম ছেলে রহিমের হাতে ওড়না ছিঁড়ে রাখী বেঁধে দেয় পরম শ্রদ্ধায় ভালোবাসায়। মৌলভী সাহেব সহ সকলকে অ্যান্টি আঙ্কেল বলে সম্বোধন করে ভালোবাসার বাঁধনে বেঁধে ফেললো ।
মন্দিরা গাড়িতে উঠছে , রহিম বললো : দিদি রাখীর ভাতৃত্বের বন্ধনে যুক্ত হয়েছি , কথা দিচ্ছি যেকোন বিপদে একটা ফোন কোরো ; জান হাজির করে দেবো । প্রত্যেকবছর রাখী পরাতে ভুলে যেওনা ভাইকে ।
চোখে জল নিয়ে কাঁধ ঝুঁকিয়ে হাত নাড়াতে নাড়াতে সুন্দর পৃথিবীর চিত্র নিয়ে বাড়ি ফিরলো মন্দিরা ।