Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা Creation-Literature-Living-Daily-Best-Writing-Honors

(৫০০ শব্দের একটি ভিন্ন স্বাদের জীবনের গল্প )
চালের রহস্যবিভা মিত্র ভদ্র
ভজার দোকানে চা খেতে খেতে ধনাদা হঠাৎ বলে উঠল হ্যাঁরে ভজা! বেশ সুন্দর করে একেবারে কড়া জর্দা দিয়ে একটা পান বানিয়ে দেতো রে! তাই শুনে বললাম সেকি! তুমি আবার পানের…

 


(৫০০ শব্দের একটি ভিন্ন স্বাদের জীবনের গল্প )


চালের রহস্য

বিভা মিত্র ভদ্র


ভজার দোকানে চা খেতে খেতে ধনাদা হঠাৎ বলে উঠল হ্যাঁরে ভজা! বেশ সুন্দর করে একেবারে কড়া জর্দা দিয়ে একটা পান বানিয়ে দেতো রে! তাই শুনে বললাম সেকি! তুমি আবার পানের নেশা ধরলে নাকি? আরে না না, ওসব নেশা টেশা নয়,মাঝে মধ্যে এরকম দু-একটি পান টান খেতে হয় বুঝলি! নয় তো ঠিক বাবু গিরি মানায় না।

               এই যাহ্! একদম ভুলে গেছি,তোর কাছে একটা সিগারেট হবে রে? হ্যাঁ তা হবে। কিন্তু তুমি তো সিগারেট খাওনা। অফিসে বসে সারাদিন তো কেবল ফুকুত্ ফুকুত্ বিরি ফোকো।তা এখন হঠাৎ সিগারেটের খোঁজ করছো!এই চুপ!চুপ! আস্তে বলনা সবাই শুনে ফেলবে যে! কতো লোক দোকানে বসে আছে বলতো? এখানে একটা সিগারেট না টানলে কি চলে?

ও..... বুঝেছি, পেটে তোমার জুটুক না জূটুক বড়লোকি চাল এখনো গেল না। তুই থামলি! জানিস!এখোন এটা চালেরি যুগ বুঝলি! দেশটা এখন কতো রকম চালে ভরে গেছে। এই যেমন লম্বা চাল,মোটা চাল, ছোট বড় , ভালো মন্দ সবরকমের চাল। দূর! চালের আবার যুগ হয় নাকি? হয়না মানে!হয় হয়, এদেশে সবই হয়। আগেও হোতো এখনো হয়। জানো ধনাদা, তোমার এসব প্যাঁচাল মার্কা কথাবার্তা শুনলে না আমার মাথাটাই ঘুরে কেমন যেন বেচাল হয়ে যায়। কি যা তা বকছো! সেই থেকে শুধু চাল চাল করেই চলেছো। আরে বাবা চাল আবার কে না চেনে শুনি! দূর ছোরা! আমি কোনো ভাতের চালের কথা বলছি না। বলছি যত সব চালবাজদের চালের কথা।যারা কেবল চাল খাটিয়েই বাজিমাত করে। এতো কম বুঝিস কেন রে? মাথাটা দেখছি তোর মোটাই রয়ে গেল। দিলিতো সব ক্যাচাল করে।সবে মাত্র সিগারেটটা ধরিয়ে কেমন সুখটান মারছিলাম বল তো! যা যা দ্যাখগে ভজার পানটা বানানো হলো কিনা। 

              তারপর ধনাদা রসিয়ে রসিয়ে পান চিবোতে চিবোতে বলল, আয় বোস। শোন তবে , এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ নানা ভাবে নানা কাজে নানা কায়দায় নানা জায়গায় কেবল চাল চেলে চলেছে। ছলে বলে কৌশলে কতোইনা চাল চলে এদেশে তাকি জানিস! তাই এক কথায় এটা চালেরি যুগ। কথাটা শুনে অবাক হোলি তো! এই ধরনা যেমন__কারো চালবাজি কথায়, কারো কাজেকর্মে আবার কারো কারো লেনদেন ব্যাপারে। তবে কি জানিস! অনেক সময় এই সব চালবাজরা ধরাও পড়ে যায়। কিন্তু তাতে অবিশ্যি তাদের কোনো লজ্জা হয় না। কারণ ওটা ওদের এক প্রকার পেশা হয়েই দাঁড়িয়েছে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলেও ধরে নিতে পারিস।

                  কথা গুলো শুনতে শুনতে আমার যেন ধনাদাকে বেশ সিরিয়াস বলেই মনে হচ্ছিল। ধনাদা যতোই রঙ্গ তামাশা করুন না কেন মাঝে মধ্যে কথাগুলোর কিন্তু বেশ গুরুত্ব থাকে। তাই বেশ মন দিয়েই শুনছিলাম। ধনাদা আমার কাঁধে হাত রেখে চাপরে বলতে লাগলো, কতো রকম চালের কথা শুনবি বল! এই ধরনা যেমন,সাধু ভন্ডামির চাল,সুদখোরের চাল, মহাজনের চাল, রাজনৈতিক চাল, উকিলের চাল, মন্ত্রিদের চাল, কালোবাজারির চাল, পুলিশের চাল, দুষ্কৃতির চাল আরো আরো কতো রকমের যে চাল আছে তা আর কহতব্য নয়। ঘরে বাইরে সব খানেই শুধু চালের ছড়াছড়ি।

              আরে ভাই বাড়িতে গিন্নি ও কিছু কম চাল চালে! এমনকি আমার ঐ পুটকে ছোরাটা পর্যন্ত! একেবারে ঠিক ওর মায়ের মতো।কথায় কথায় কেবল মিথ্যার চাল চালে। গতকাল রাতে শরীরটা খুব একটা ভালো লাগছিলো না। অফিস থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে বিছানায় গড়াতে গড়াতে ছেলেটাকে বললাম ,যাতোরে বাবা ঐ ঘরে টেবিলের উপর থেকে একটু অ্যাসট্রেটা এনে দেতে! শুনেই যা জোরে মুখ খ্যাচালো না যে কি বলবো তোকে। কি বলল জানিস!পারবো না। আমার স্কুলের অনেক হোম ওয়ার্ক পড়ে আছে এখনি করতে হবে। এদিকে চুপিচুপি অন্য ঘরে গিয়ে আস্তে করে কার্টুন চালিয়ে বসলো।বোঝ তাহলে কি অবস্থা। শুনে আমার তো আর হাসিই থামেনা। ওরে এটা শুধু হাসির কথাই নয়, আসলে চালে চালে কেবল এই পোড়া দেশটা কেন, গোটা সংসারটাই যে সবার উচ্ছন্নে যেতে বসেছে। ওহ্!ধনাদা সত্যিই তুমি কিছু পারো! হাঃ হাঃ হাঃ.....