Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপনগল্প -- বাজলো তোমার আলোর বেণু কলমে --- মহুয়া মিত্র 
কুমোরটুলি, কলকাতা, মানস পালের স্টুডিও, রাত এগারোটা ।।কাল মহালয়া । কৈলাস থেকে জগজ্জননীর আগমন বার্তা ছড়িয়ে পড়বে দিকবিদিকে, আশ্বিনের শারদ প্রাতে । চতুর্দিকে শু…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

গল্প -- বাজলো তোমার আলোর বেণু 

কলমে --- মহুয়া মিত্র 


কুমোরটুলি, কলকাতা, মানস পালের স্টুডিও, রাত এগারোটা ।।

কাল মহালয়া । কৈলাস থেকে জগজ্জননীর আগমন বার্তা ছড়িয়ে পড়বে দিকবিদিকে, আশ্বিনের শারদ প্রাতে । চতুর্দিকে শুধুই আনন্দ । 

আনন্দ নেই শুধু মৃৎশিল্পী মানস পালের মনে । তার বিরাট স্টুডিও জুড়ে আজ দেবী মূর্তির ভিড় । সেই রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজো দিয়ে শুরু হয়েছিল তার ব্যস্ততা । হরেক পূজোর হরেক থিমের সাথে মিলিয়ে দিন রাত এক করে তৈরি করেছিলেন আনন্দময়ীর মোহময়ী রূপ । কিন্তু আজ আর কোন ব্যস্ততা নেই । কাল থেকে একে একে প্রতিমা যাওয়া শুরু করবে বিভিন্ন প্যান্ডেলে । শুধু ব্রাহ্ম মূহুর্তে দেবীর চক্ষু দান করলেই তার কাজ শেষ । তিনি জানতেও পারবেন না কেমন থাকবে তার সন্তান সম মূর্তিগুলো! ফাঁকা স্টুডিও জুড়ে পড়ে থাকবে অসমাপ্ত কাঠামোগুলো । কিন্তু কাল সকাল অবধি তার কাজ আছে । একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিল্পী মন দিলেন দেবীর চক্ষু আঁকাতে । 


ঠিক ঐ একই সময়ে কুমোরটুলির অনতিদূরে একটি সংকীর্ণ গলি ।।

পথের শেষ ঠিকানা যার জানা থাকে তার চোখে থাকে পৌঁছানোর তাগিদ । কিন্তু আরতির চোখে ছিল ভয়, নিজের জন্য নয়, পেটের অস্ফুট কুঁড়িটার জন্য । সেই সুন্দরবনের ছোট্ট গ্রাম থেকে কলকাতায় বৌ হয়ে আসা ইস্তক ভয় যেন পিছু ছাড়ছে না আরতির । তবে গত একবছর ধরে পণের জন্য অত্যাচার সহ্য করতে করতে সব কেমন গা সওয়া হয়ে গেছিল । কিন্তু আজ যখন চুপিসারে শুনল যে ওকে পুড়িয়ে মারার তাল করছে ওর শ্বশুরবাড়ীর লোক তখন কিছু না ভেবেই বেরিয়ে পড়েছিল বাড়ি থেকে, বাঁচতে । কিন্তু ও যে এখানকার কিছু চেনে না, শুধু জানত এই জায়গাটার নাম আহিরীটোলা যার খুব কাছে মা গঙ্গা । কিন্তু কোথায় কি? সেই তখন থেকে পিছু ধাওয়া করেছে দু'তিনটি মাতাল , মুখে অশ্লীল কথা, সবটাই আরতির যুবতী দেহ ঘিরে । একসময়ে ছয় মাসের পেট নিয়ে ছোটা শুরু করল আরতি । পিছনে অট্টহাসি ক্রমশ কাছে আসছে । পায়ে লাগলো ইঁটের টুকরো । 'ওহ্ মা ' বলে পড়তে গিয়েও কেউ যেন ওকে সস্নেহে জড়িয়ে ধরল । আরতি চেয়ে দেখল সাক্ষাৎ মা ভুবনমোহিনী, চোখে সারা বিশ্বের রাগ । আরতিকে একটা দরজা দেখিয়ে বলল, -- " তুমি এই ঘরে ঢোকো । "

কিন্তু আরতি ঘরে কি যাবে , অবাক বিস্ময়ে দেখল একা নারীর তিনটে অসুরকে ধ্বংস করার লীলা । ততক্ষণে সেই দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছেন মানস পাল । সব দেখে আরতির মাথায় হাত রেখে বললেন, -- " ভয় নেই মেয়ে, চেয়ে দেখ মা দুর্গা তো দশ হাতে অসুর বধ করেছিলেন আর আমার উমা দুই হাতে তিনটে অসুর বধ করছে । "


পরদিন ভোর চারটে ।।

মানস পাল রাত জেগে চক্ষু আঁকার পর বড্ড ক্লান্ত । উমা তার জন্য চা নিয়ে এল , -- " বাবা, আরতি আমাদের বাড়িতে থাকুক ? "

চোখে জল এল শিল্পীর । তার তো আরেকটা মেয়েও ছিল, পণের জন্য শেষ হয়ে গেছিল মেয়েটা । আজ বুঝি সেই গৌরীই ফিরে এল বাপের ঘরে । মাথা নেড়ে  সম্মতি দেন তিনি ।

ওদিকে কখন আরতি এসেছে কেউ খেয়াল করে নি , আরতি বলল, -- " আমি এখানে থাকব যদি উমা দিদি আমার মেয়েকে তার মত ক্যারাটে শেখায়! "

আরতির কথায় হেসে ফেলে সবাই । উমা বলে, -- " ছেলে হলেও শেখাবো । "

ঠিক সেই সময়ে দূর থেকে ভেসে আসে সেই অমোঘ বাণী, 

" বাজল তোমার আলোর বেণু, 

মাতল রে ভুবন ।। "