# সৃষ্টি সাহিত্য যাপনবিষয় _ নিবন্ধ নাম_ নিজের আনন্দলেখিকা _ লিপিকা দত্ত সরকাররচনা কাল _ 9. 6. 2020 (মঙ্গলবার)তারিখ _ 17. 12. 2020
সমগ্র জগতে অসংখ্য মানুষ ছিলেন আছেন- যাঁরা কঠোর প্রচেষ্টা ও দৃঢ় মনোবলের সাহায্যে নিজেকে পরিবর্তন কর…
# সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
বিষয় _ নিবন্ধ
নাম_ নিজের আনন্দ
লেখিকা _ লিপিকা দত্ত সরকার
রচনা কাল _ 9. 6. 2020 (মঙ্গলবার)
তারিখ _ 17. 12. 2020
সমগ্র জগতে অসংখ্য মানুষ ছিলেন আছেন- যাঁরা কঠোর প্রচেষ্টা ও দৃঢ় মনোবলের সাহায্যে নিজেকে পরিবর্তন করে, মহান চরিত্র গঠন করে চিরকাল মানুষের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। তেমন কয়েকজনের কথা পড়ে দেখি......
রত্নাকর দস্যু:
দস্যু বৃত্তি করে নিজের জীবন কাটাতেন ও পরিবারের প্রতিপালন করতেন। একদিন যখন নারদ মুনি এসে বললেন, তাঁর এই পাপ কর্মফলের ভাগ পরিবারের কেউ নেবেন না। রত্নাকর দস্যু তখন বিশ্বাস না করে, নারদ মুনিকে গাছে বেঁধে রেখে পরিবারের প্রত্যেকের কাছে জানতে গিয়ে শুনলেন, পরিবার প্রতিপালন করা তাঁর কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সুতরাং তাঁর কৃতকর্মের পাপের ভাগ কেউ নেবেন না।
তখন তাঁর ভিতরে পরিবর্তন ঘটলো। নারদ মুনির কথা মত কঠোর তপস্যা করতে করতে, নিজের দেহের চারিদিকে বল্মীকের স্তূপ তৈরি হয়েছিল। তিনি জগতে পরিচিত হলেছিলেন ঋষি বল্মিকী হিসাবে।
রাম জন্মের আগে রামায়ণ রচনা করেছিলেন।
একজন দস্যু নিজের পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন শুধুমাত্র নিজের অন্তরের চেষ্টা ও কঠোর সাধনার দ্বারা।
অরবিন্দ ঘোষ:
ভারতীয় বাঙালি রাজনৈতিক নেতা ও দার্শনিক ছিলেন। বাল্যকালে ইংল্যান্ডে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে গমন করেছিলেন। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রাইপস পাস করেছিলেন।
দেশে ফিরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি চরমপন্থী দলেন সাথে যুক্ত ছিলেন।
ভারত মাতার স্বাধীনতার জন্য তিনি কারাবরণ পর্যন্ত করেছিলেন।
জীবন যতো এগিয়ে চলছিল, তাঁর মনে পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছিল।
মনে প্রশ্ন জেগেছিল
" মানব জীবনের উদ্দেশ্য কি ?"
" কি আমাদের প্রকৃত ধর্ম ?"
এমন আরো আরো অসংখ্য প্রশ্ন একজন বিদেশী শিক্ষায় শিক্ষিত ও দেশ মাতৃকার চরমপন্থী নেতাকে আধ্যাত্মসাধকে পরিণত করেছিল।
তিনি বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় 32 টি বই লিখেছিলেন ধর্ম - দর্শন - ভারতীয় সংস্কৃতির উপর।
সম্রাট অশোক :
মৌর্য সম্রাট অশোক এতো নিষ্ঠুর ভাবে রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন যে তাঁকে চন্ডাশোক ( নৃশংস অশোক) বলা হতো।
কলিঙ্গ যুদ্ধের পর রক্তে ভেজা মাটি দেখে, এত মানুষের মৃত্যু ও দয়া নদীতে জলের পরিবর্তে রক্ত বয়ে যেতে দেখে, তাঁর মনের নিদারুণ পরিবর্তিন ঘটেছিল।
তিনি নিজেকে কঠিন সংযম- শুদ্ধ শান্ত আচরণ ও ধর্মাচরণের দ্বারা, ধর্মাশোকে রূপান্তরিত করেছিলেন।
বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।
একজন নৃশংস সম্রাট নিজের হৃদয়ের পরিবর্তন করে ধর্মের পথে আদর্শ সম্রাটে পরিণত হয়েছিলেন।
মানুষ অভ্যাসের দাস। মানুষের অসাধ্য কোন কিছু নেই।
আমরা যখন অপরকে খুশী করতে নিজেকে লোক দেখানো পরিবর্তন করি, তখন আমাদের মন সবসময় চঞ্চল থাকে ও চৌর্য বৃত্তি অবলম্বন করে অপরের চোখের আড়ালে মন্দ কাজ করার জন্য। অপরে যাতে বাইরের চাল চলন- চাটুকারি কথা- ইত্যাদি দেখে শুনে ভাবেন আমরা কতো ভালো মানুষ। সকলের সামনে মহৎ ও আদর্শ মানুষ হিসেবে পরিচিত থাকি আমরা।
কিন্তু অন্তর পাপে পরিপূর্ণ থাকে। সব সময় গোপন পথ খুঁজতে থাকি, কোন পথে সকলের চোখের আড়ালে নিজের মনের খারাপ ইচ্ছা ও নোংরা অভ্যাসগুলো মেটাতে পারবো।
যখন আমাদের নিজেদের অন্তর একান্ত ভাবে চাইবে অপরকে খুশী করতে নয়. নিজের হৃদয়ে পবিত্র আনন্দকে লাভ করার জন্য নিজেকে পরিবর্তন করতে, তখন এ জগতের কোন অশুভ শক্তির ক্ষমতা আর থাকবে না অশুভ পথে আমাদের প্রলোভিত করে নিয়ে যেতে।
তাই আমরা হৃদয়ের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য, পরম আনন্দকে চিরস্থায়ীভাবে অন্তরে ধরে রাখার জন্য নিজেকে সত্যের পথে পরিচালিত করবো আজীবন।
লাভ লোকসানের হিসেব না কষে, জয় পরাজয়ের দিকে পিছন ফিরে, চেষ্টা করবো অবশ্যই।
এসো বন্ধু অপরকে খুশি করতে নয়, নিজের আনন্দের জন্য সত্যের আলোয় পথ চলি আজ এই মুহূর্ত থেকেই।
*** শান্তির সাথে সুস্থ থেকো বন্ধু।