সৃষ্টি সাহিত্য যাপন # ইভেন্ট - জীবনের গল্প -ছোট গল্প# শিরোনাম - মুক্তির আকাশ # কলমে - কাকলি মুখার্জী# তারিখ - ৯/১২/ ২০২০
এক অতি সাধারণ ও গরীব পরিবারের মেয়ে অনন্যা। শুধুমাত্র রূপের জোরে বড়লোক পরিবারের ছেলে শুভময়ের সাথে…
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
# ইভেন্ট - জীবনের গল্প -ছোট গল্প
# শিরোনাম - মুক্তির আকাশ
# কলমে - কাকলি মুখার্জী
# তারিখ - ৯/১২/ ২০২০
এক অতি সাধারণ ও গরীব পরিবারের মেয়ে অনন্যা। শুধুমাত্র রূপের জোরে বড়লোক পরিবারের ছেলে শুভময়ের সাথে বিয়ে হয় তার। যদিও প্রথম দিকে,অনন্যার বাবার এতো বড়োলোক বাড়ীর সাথে সম্পর্ক করার ইচ্ছে ছিল না, পরে অনন্যার মায়ের কথায় আর মেয়েকে একটু সুখী দেখার আশায় বিয়েটা দেন তিনি।
বৌভাতের পরেরদিন সব আত্মীয় স্বজন চলে যাওয়ার পর থেকেই অনন্যার ওপর মানসিক অত্যাচার শুরু হয়। বৌভাতের তত্ত্ব দেখে অনন্যার শাশুড়ী মা নানারকম কটু কথা বলতে থাকেন, সেগুলো শুনে ওর খুব কষ্ট হয় । শুভময় ওখানে উপস্থিত থাকা সত্বেও কোন প্রতিবাদ করেনা। অনন্যা যখন নিজের ঘরে গিয়ে কাঁদতে থাকে, শুভময় ওকে বলে "মা ওরকমই, তুমি একটু মানিয়ে নিও"।
অষ্টমঙ্গলা থেকে ফিরে আসার পর অনন্যা কে শাশুড়ী মা জানিয়ে দেয়, সে আর কোনদিন বাপের বাড়ি য়েতে পারবে না। বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা মনেও না যেন আনে। অনন্যা সেই থেকে একদিনও বাবা-মা এর কাছে যেতে পারে নি। ওর বাবা- মা মেয়েকে দেখার ইচ্ছে হওয়ায় দুএকবার ওর শ্বশুর বাড়িতে এসেছিলেন কিন্তু তাদের সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন শুভময়ের বাবা এবং মা, তার সাথে একথাও বলে দেন যে,ভবিষ্যতে ওনারা ভুল করেও এবাড়িতে পা যেন না রাখেন। অনন্যার বাবা মা চোখের জল মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেছিলেন। ওর বাবা সেদিন বলেছিলেন, " এখন বুঝতে পারছো অনুর মা... সেদিন কেন আমি বড়লোক বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছিলাম না? মেয়েটাকে আমাদের একেবারে পর করে ফেললাম গো..." অনন্যার মা কোন কথা বলতে পারেননি শুধু নীরবে চোখের জল ফেলেছিলেন।
অনন্যাকে কোন আত্মীয় স্বজনদের সাথেও যোগাযোগ রাখতে দেয়নি ওনারা। খুব কষ্ট হতো ওর তবুও মুখে কিছু বলতে পারতো না, সবচেয়ে বেশি কষ্ট হতো এটা দেখে যে, শুভময় সব দেখে শুনেও চুপ করে থাকতো। কখনো কোন প্রতিবাদ করতো না। আরো একটা ব্যাপারে ওর ভারী আশ্চর্য লাগতো , সেই বিয়ের সময়ই এবাড়ির আত্মীয়দের দেখেছিল... তারপর থেকে আর কোনদিনও কোন আত্মীয় কে এবাড়িতে না আসতে দেখেছে... আর না কোন আত্মীয়ের বাড়ি এদেরকে যেতে দেখেছে!!! কিরকম অদ্ভুত ধরনের মানুষ এরা!!!
এভাবেই বেশ কয়েকমাস কেটে গেছে, সারাক্ষণ শুধু শ্বশুর শাশুড়ী র সেবা করা আর সংসারের টুকটাক কাজকর্ম করা এছাড়া অনন্যার আর তেমন কিছু করার ছিল না। এভাবে থাকতে থাকতে একটা সময় হাঁপিয়ে ওঠে, নিজেকে খাঁচায় বন্দী পাখির মতো লাগে। অঅনেক ভেবে সে ঠিক করে প্রাইভেটে এম.এ. পরীক্ষা দেবে। শুভময়কে একথা জানালে সে বলে "কি হবে আর পড়াশোনা করে? ".. নানারকম অজুহাত দেখিয়ে সেটাও দিতে দেয়নি।অনন্যা সেদিন খুব খুব কেঁদেছিল কিন্তু কোন লাভ হয়নি। কি আর করবে... এই অবস্থায়, ওর ডায়েরি লেখার অভ্যাসটাই ওকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।
একদিন দুপুরবেলা ফোনটা নিয়ে ঘাটতে ঘাটতে ফেসবুকে একজনের বন্ধুত্বের অনুরোধের নোটিফিকেশন চোখে পড়ে , অনন্যার কি মনে হয়.. ও সাথে সাথে অনুরোধটা গ্রহণ করে নেয়। তারপর থেকে মাঝে মাঝেই অরুণের সাথে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলে। ধীরে ধীরে ওদের বন্ধুত্ব গভীর হতে থাকে এবং কখন যে ওরা দুজনে একে অপরকে তুই সম্বোধনে কথা বলতে শুরু করে সেটা ওরা নিজেরাও মনে করতে পারেনা। যাইহোক, অনন্যার কাছে ওর সব কথা শুনে আর ওর ডায়েরি লেখার ব্যাপারটা জেনে অরুণ ওকে গল্প লেখার উৎসাহ দেয়, বলে.. "তুই গল্প লেখা শুরু কর, তোর লেখা গল্পগুলো বই আকারে প্রকাশ করার দায়িত্ব আমি নিজে নেবো।" অরুণের কথা শুনে অনন্যা খুব উৎসাহিত হয় সাথে ভয়ও পায়, তবু সে বলে "তুই যখন বলছিস তখন আমি নিশ্চয়ই লিখবো, শুধু একটু পড়ে দেখে বলবি লেখা ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা"। অরণ সব দেখে নেবে বলে তাকে আশ্বাস দেয়।
অরুণ নিজের কথা রেখেছে, ওর এক প্রকাশক বন্ধুর সাথে কথা বলে অনন্যার গল্পের বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে ফেলেছে।
আজ সেই দিন... যেদিন অনন্যার গল্পের বই "মুক্তি" র আনুষ্ঠানিক ভাবে মোড়ক উন্মোচন হলো আর অনন্যাও খুঁজে পেলো মুক্তির আকাশ....
( কলি )