Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

কবিতা : জীবন চলছে যেমন চলবেকলমে : শক্তিপদ ঘোষতারিখ : ২৯ , ১১ , ২০২০
পৃথিবীতে যারা ভাবে , আর সব চলে গেলেও , শুধু তারা থেকে যাবে ,অক্ষয় বটের মতো তারা ঝুরির পরে ঝুরি নামিয়ে ,নিচে ডালপালার বিপুল ছায়া বিছিয়ে তা-ই রচনা …

 


কবিতা : জীবন চলছে যেমন চলবে

কলমে : শক্তিপদ ঘোষ

তারিখ : ২৯ , ১১ , ২০২০


পৃথিবীতে যারা ভাবে , 

আর সব চলে গেলেও , শুধু তারা থেকে যাবে ,

অক্ষয় বটের মতো তারা ঝুরির পরে ঝুরি নামিয়ে ,

নিচে ডালপালার বিপুল ছায়া বিছিয়ে 

তা-ই রচনা করে বিকল্প এক সাম্রাজ্যের জাল ।

ভাবে , যারা বেঁচে আছে এতকাল , 

তারা তাদের ছায়ায় এবং তাদের করুণাতেই

আছে বেঁচে ;

বিপদ , সার কথাটা এই--ঝেড়ে ফেললেই

 মাথা থেকে ।


তারা ভাবে , একমাত্র তারাই--পৃথিবীর

চিরস্থায়ী মৌরুসী পাট্টা ধরে ,

যার জোরে তারা তোমাকে আমাকে

দিনে রাতে উঠতে বসতে এত ঠাট্টা করে ।

ভাবে , এই পৃথিবী ভোগ্যা শুধু--তাদেরই জন্যে ;

তাদের মনের সুগভীর অরণ্যে

সেই কারণে সর্বক্ষণ লেগেই থাকে দাবানল ,

যার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মেটাতে আষাঢ়ে বাদল 

যথেষ্ট যে নয় , কমবেশি সবারই আছে তা জানা ; চোখ থাকতেও আমরা--তথাপি সব কানা ।


সেই কারণেই , ঘুমোতে যায় যারা ,

বাহির দরজায় রেখে দু'দশটা পাহারা ;

অথবা , ভিতরের দরজা যাদের--সর্বক্ষণ 

ভিতর থেকে সাঁটা ,

আশ্চর্য এই , সেই তাদেরই গৌরবগাথা

আমরা তাদেরই শোনাই--নেচে গেয়ে ;

ঠিক যেমন শুধুই বিষনজর থেকে বাঁচতে চেয়ে ,

সুখ ও সুস্থতা চেয়ে , নির্বিঘ্ন জীবন চেয়ে ,

স্বর্গবাসীদের নিয়মিত নজরানা দিয়ে

মন ভেজাবার চেষ্টা করি--ভজন গেয়ে

খোলে কত্তালে--অষ্টপ্রহর ,

তেমনি কৃপা ভিক্ষা করে--দু'হাত পেতে চাই বর।


তাদের মৃত্যুর পরে

পাথর কেটে কুঁদে সেই তাদেরই মূর্তি গড়ে

তোমরা যেমন যক্ষ্মায় ভুগে ভুগে

নিঃশেষ হয়ে গেছো এব্ং যাচ্ছো ,

একদিন আমরাও তেমনি নিঃশেষ হয়ে যাবো ।

অথচ , তোমরা যেমন জেনেছো , 

আমাদেরও বেশ আছে জানা ;

প্রজা আমরা , কর দিতে দিতে বাঁচা ,

এ সেই ওদেরই জমানা ।


তোমাদের মতো আমরাও যুক্তিহীন ভক্তির সুরা গলায় ঢেলে , ঢাকে ঢোলে আপনাকে ঢাকি ;

বারোমাসে বাইশবার যথারীতি নৈবেদ্য সাজিয়ে 

খাল কেটে সমাদরে কুমিরকেই ঘরে ডাকি ।

অথচ , যাতে কুমিরে না ধরে ,

কেউটে বা খরিসে ছোবল না মারে ,

কিম্বা , ভুলেও কখনো কোন চিতায়

গায়ে সেই তীক্ষ্ণ নখের থাবা না বসায় ,

সেই কামনায় দশ আঙুলে দশটা আংটি পরি ,

হাতে গলায় কোমরে ডোর বাঁধি , তাবিজ বাঁধি ;

যূপে মানতের পাঁঠা চড়াই , চড়কের মাচায় চড়ি ,

উপবাসের ব্রত করি , এতদ্রূপ ইত্যাদি ইত্যাদি ।


আবার ,গাজনের সন্ন্যাস নিয়ে--মনে মনে 

হয়ে উঠি দেবতার দূত ;

নিচে অগ্নিকুণ্ডের ওপর মাথা দুলিয়ে ,

সারা দেহে সূঁচ বিঁধে , কাঁটায় ঝাঁপিয়ে

দেখাই বাহাদুরি--হরেক অদ্ভুত ।

তারপর জীবন চলতো যেমন চলবে

একবেলা একসন্ধ্যে উপবাসী ;

হয়তো এমনই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা , বা

গড়িয়ে গড়িয়ে চলতেই ভালোবাসি ।

-------------------------------------------------------------------