Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#ঠিকানা#সায়নদীপা_পলমল
"নমস্কার মাসি।" আচমকা অপরিচিত কন্ঠস্বর শুনে মুখ তুলে তাকালেন প্রৌঢ়া মুমতাজ। একটি কমবয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে তার সামনে। মুমতাজ প্রতিউত্তর দেওয়ার আগেই পেছন থেকে একজন পান খাওয়া দাঁত বের করে এগিয়ে এলো; লোকটাকে…



#ঠিকানা

#সায়নদীপা_পলমল


"নমস্কার মাসি।" 

আচমকা অপরিচিত কন্ঠস্বর শুনে মুখ তুলে তাকালেন প্রৌঢ়া মুমতাজ। একটি কমবয়সী ছেলে দাঁড়িয়ে তার সামনে। মুমতাজ প্রতিউত্তর দেওয়ার আগেই পেছন থেকে একজন পান খাওয়া দাঁত বের করে এগিয়ে এলো; লোকটাকে মুমতাজের চেনা চেনা ঠেকলেও মনে করতে পারলেন না কোথায় দেখেছেন। লোকটা সপ্রতিভ হয়ে বললেন, "আরে মাসিকে এতো নমস্কার করতে হবেনা, এসে বসো এখানে।"

মুমতাজ বুঝলেন লোকটা মধ্যস্থতাকারী।

"তা মাসি সোজা কাজের কথায় আসি, এনার মেয়ে হয়েছে পরশু। তোমাদের আশীর্বাদ চাই, তাই…" পান চিবোতে চিবোতে গড়গড়িয়ে বলল লোকটা। 

"বাড়ি কোথায়?" স্বভাবসিদ্ধ রুক্ষ গলা মুমতাজের।

ছেলেটা আমতা আমতা করে জবাব দিল, "আজ্ঞে সুকুমার পল্লী।"

"বাড়ি যা এখন।"

"কি!"

"এখানে এসেছিস কেন? আমরা বাড়ি গিয়ে তোর মেয়েকে দেখে আসবো, এখন পালা।" 

"আহা মাসি বোঝার চেষ্টা করো, ওরা কেউ বাড়িতে থাকেনা, বউটা এই অপারেশন অবস্থায় বাচ্চাকে নিয়ে তোমাদের সামলাবে কি করে! " পান খাওয়া লোকটা মুখ খুলল আবার। 

"আমি দিনক্ষণ বলে দিচ্ছি ঘরে থাকবি তুই। ঘরে লক্ষ্মী এলে এখন আমাদের রেট আট হাজার, সঙ্গে নতুন শাড়ি আর…"

"আ...আজ্ঞে মাসি আমার তো বাইরে চাকরি। একবার চলে গেলে..." মিনমিন করল ছেলেটা।

"আ মোলো যা বউ বাচ্চাকে এই অবস্তায় ফেলে তুই বাইরে চাকরি করতে যাবি? তা বলি তোর ঘরের লোক নাই কেউ? কাদের ঘরের ছেলে রে তুই? তোর বাপের নাম কি?" গড়গড় করে প্রশ্নগুলো করে গেল মুমতাজ। 

"ওই সুকুমার পল্লীতে, নিশীথকুমার দত্ত আমার বাবা। ওরা আসলে..." ছেলেটার কথা শেষ হওয়ার আগেই ওর হাত চেপে ধরে ওর দিকে কটকট করে তাকাল মধ্যস্থতাকারী লোকটা। চোখের ঈশারায় ছেলেটাকে থামার নির্দেশ দিয়ে মুমতাজের দিকে ঘুরল,

"ওহ মাসি এসব কথা রাখো, বল কত দেবে? আট হাজার দিতে পারবে না, চার করো।" পানের পিকটা পুচ করে ফেলে বলল লোকটা। 


★★★


"তোর কি মাথার ব্যামো হয়ে গেছে মাসি? আধা টাকায় রফা করলি কি করে?"

দলের বাকিরা ফিরে আসার থেকে একটার পর একটা অভিযোগের তীর তার দিকে ছুঁড়ে যাচ্ছে সমানে। সবাই ক্ষিপ্ত তার ওপর। মুমতাজ উনুনের গনগনে আঁচের সামনে বসে মাটিতে আঁচড় কেটে যাচ্ছে একনাগাড়ে, মুখে তার উত্তর নেই কোনো--- 


       কোনো এক সময় খুব শখ হত তার "আসল" ঠিকানা জানার, আসল মা বাবাকে একবার দেখার। অনেক বায়নার পর সেই সময়ের বড় মাসির কাছে সব জেনেছিল সে। কিন্তু জেনেও সেই ঠিকানাটা গিয়ে কড়া নাড়ার প্রবৃত্তি হয়নি তার যেখান থেকে জন্মের পরেই নির্বাসিত হয়েছিল সে, যে ঠিকানার মানুষজন আজ তাকে আর মনে রাখেনি। তবুও এতো বছর পর ঠিকানাটার উল্লেখ হওয়া  মাত্রই আজ সবকিছু যেন ওলটপালট হয়ে গেল…

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মুমতাজ। তারপর চোখ বন্ধ করে মনে মনে ঈশ্বরকে  বলে উঠল, "দাদার নাতনিটা যেন থাকে দুধে ভাতে…"