Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

||এক অপ্রেমিকার চিঠি🌿❤️🌸||
অনেক শব্দেরা ছুটে বেড়াচ্ছে ইতিউতি। কিন্তু কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না আমার কাছে। আমার থমকে যাওয়া কলম শুধুই স্মৃতিরোমন্থন করে চলেছে একের পর এক। ছোটো থেকে বড়ো হওয়ার পথে তোমায় ঘেরা ছোটো ছোটো মুহূর্তেরা আজও কি ভ…

 


||এক অপ্রেমিকার চিঠি🌿❤️🌸||


অনেক শব্দেরা ছুটে বেড়াচ্ছে ইতিউতি। কিন্তু কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না আমার কাছে। আমার থমকে যাওয়া কলম শুধুই স্মৃতিরোমন্থন করে চলেছে একের পর এক। ছোটো থেকে বড়ো হওয়ার পথে তোমায় ঘেরা ছোটো ছোটো মুহূর্তেরা আজও কি ভীষণ রকম জীবন্ত। তুমি ছেড়ে গেছ কিন্তু দিয়ে গেছ স্পর্ধা, স্বপ্ন দেখার স্পর্ধা। সমাজকে নতুন করে সাজিয়ে আবার নতুন কাব্য লেখার স্পর্ধা।  


মৃত্যুর সাথে তিনপাত্তি খেলতে খেলতে অবশেষে তাকে তুমি হারিয়ে দিয়ে চলে গেছ। আর তো কোনো সিনেমা তুমি আছো বলে হলে গিয়ে দেখা হবে না, তবে টিভি কিংবা ইন্টারনেটে তোমার সব সিনেমা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখব বারংবার, কথা দিলাম। 


আমার ফোনে একটা মিউজিক অ্যালবাম আছে জানো, কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীতের শুরুতে ঐ লাইনগুলোই কবিতার মতো করে পাঠ করা আছে সেখানে। ঐ অ্যালবামটা আমার খুব প্রিয়। না, শুধু গানগুলোর জন্য নয় তার আগের ঐ পাঠগুলোর জন্য, ওগুলো যে তোমার পাঠ করা। প্রায় রোজই শুনি তোমার কন্ঠ, তুমি চলে যাওয়ার পর আরও বেশি করেই শুনি ঐ অ্যালবামটা। ওগুলোর মধ্যে দিয়েই ছুঁতে চাই তোমায়। পৌঁছতে চাই তোমার কাছে। 


জানো, তোমার মতোই আমিও বারবার প্রেমে পড়েছি, বারবার আমি তোমার প্রেমে পড়েছি। সেবার কথাসরিৎ এর বাৎসরিক অনুষ্ঠানের আগে তোমাকে নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে, হুইলচেয়ার এ দেখে স্যার যখন ভয় পেয়ে জানতে চেয়েছিলেন "কি করে হল"? তুমি বলেছিলে "কিছু হয়নি তো। সামনে একটা নাটক আছে। তাতে হুইলচেয়ার এ বসেই অভিনয় করতে হবে সেটাই যাতে আসল মনে হয় তাই বাড়িতে কদিন এভাবেই থাকছি। প্র্যাক্টিস করছি আর কি!" স্যারের মুখে সবটা শুনে একরাশ মুগ্ধ হয়েছিলাম, তোমার মতো একজন অভিনেতা শুধুমাত্র নিখুঁত দেখার জন্য এইরকম দৃশ্য ও প্র্যাক্টিস করতে পারে - অবিশ্বাস্য! সেই প্রথম তোমার প্রেমে পড়া। অভিনেতা, কবি সবকিছুকে ছাপিয়ে মানুষ তুমির প্রেমে পড়া। আর তারপর থেকেই বারবার, প্রতিবার আমি তোমার প্রেমে পড়েছি।

উত্তম না সৌমিত্র ? কেউ জানতে চাইলে আমি চিরকালই তোমার নাম বলি। তার কারণ বোধহয় আমাদের সমকালে তোমার প্রভাব। বেলাশেষে, সাঁঝবাতি, পোস্ত, প্রাক্তন, ময়ূরাক্ষী আরও কত শত সিনেমা আমাদের কাছে এক একটা মাইলস্টোনের মতো- জীবনের পথে চলার রসদ, সাহস, শক্তি, শিক্ষা। 


জীবনে অনেক মুহূর্ত তৈরি করেছ তুমি। তবে জানো তুমি চলে যাওয়ার পর থেকেই মাঝে মাঝে আমার খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে "আমার শৈশব আমি ভুলব না, মুঠিতে শুকনো শিশির আমি তবু মুঠি খুলব না।" জানি সময়ের কাছে এ বড়ো অন্যায় আবদার। জানি "কৈফিয়ত, আফসোস - এই মুহূর্তে এসবের কোনো দাম নেই"; জানি "ভালোবাসা মানে কেবলই যাওয়া" ; জানি "সব ছেড়ে চলে যেতে পারে শুধু ভালোবাসাই" তুমি আমাদের ভালোবাসাই ছিলে, আছো, থাকবে। তবে তুমি তো শুধু ভালোবাসা নয়, অনেকটা আবেগ, এক আকাশ অনুভূতি। তুমি কখনো বিপ্লব, কখনো ভরসা, কখনো প্রেম , কখনো শিক্ষা।


তবে আজ একটু বেশিই মন খারাপ, তুমি ছাড়া এটা তোমার প্রথম জন্মদিন কিনা। তবু তোমার জন্য একগুচ্ছ শুভেচ্ছা পাঠালুম ইচ্ছেপাখির ডানায় করে, ভালো থেকো উদয়ন পন্ডিত। তারাদের দেশে কবিতা লিখো নিজের সুখে। এদেশে না হোক অন্তত ঐদেশে অভিনেতার চেয়ে তোমাকে সকলে কবি হিসেবে বেশি সমাদর করবে দেখো! আর আমরা থেকে যাব তোমার স্মৃতি বুকে আঁকড়ে। আকাশে কোনো শঙ্খচিলকে ভেসে বেড়াতে দেখলে হয়তো ভেবে বসব ফিরে এসেছো তুমি! অপেক্ষা করব আবার কখনো, কোনোদিন, কোনো রেলগাড়ির কামরায় যদি হঠাৎ দেখা হয় তোমার সাথে,তারজন্য। ততদিন নাহয় তুমি একটু বিশ্রাম নাও, খেলে বেড়াও আকাশ, তারা, মেঘেদের সাথে। অনেক কাজ, পরিশ্রম, কষ্ট হয়েছে, এবার তোমার ছুটির পালা।

আর শরীর? সেতো রূপমাত্র, নাই বা থাকল, কিন্তু তুমি থাকবে। তোমার জন্মদিনে কথা দিলাম তোমায়, "তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম"। 

                    -ইতি

   জন্মদিনে অনেক ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাসহ তোমার এক অপ্রেমিকা 


- দেবাশ্রিতা মজুমদার