Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

দৈনিক সেরা সাহিত্য সম্মাননাবিষয়: অণুগল্প তারিখ:২৬|০১|২১
||ভিন্নতা||
ভোর ৫:৫৭, এখনও এলোনা মালতীর ট্রেনটা। কর্তামা কাল বারবার বলে দিয়েছিল ওকে ৬:৩০ টার মধ্যে ঢুকতে, ছোটদাদাবাবু আর ছোটোবৌদি দুজনেরই আজ অফিস ছুটি, ওরা কি 'লং ড্যারাই…

 


দৈনিক সেরা সাহিত্য সম্মাননা

বিষয়: অণুগল্প 

তারিখ:২৬|০১|২১


||ভিন্নতা||


ভোর ৫:৫৭, এখনও এলোনা মালতীর ট্রেনটা। কর্তামা কাল বারবার বলে দিয়েছিল ওকে ৬:৩০ টার মধ্যে ঢুকতে, ছোটদাদাবাবু আর ছোটোবৌদি দুজনেরই আজ অফিস ছুটি, ওরা কি 'লং ড্যারাইভ' না কোথায় যাবে,  ওরা বেরোনোর আগে অন্তত বাসিকাজটা সেরে দিতে হবে।


সকাল ৬:৪০, মিত্তির বাড়ির কলিং বেলে আলতো করে চাপ দিল মালতী।

কর্তামা দরজা খুলেই শুনিয়ে দিলে একচোট।

- কতবার বললুম একটু তাড়াতাড়ি আসতে, এতক্ষণে আসার সময় হল মহারাণীর। যান এবার অন্তত বাসিকাজটা করে আমায় উদ্ধার করুন।

- হ্যাঁ, এখন-ই যাচ্ছি কর্তামা।


সকাল ৭:৩০, বাড়ির ছোটো ছেলে আর ছোটো বউমা বেরিয়ে গেছে চা বিস্কুট খেয়ে। আজ বাড়িতে জ্যাম-পাঁউরুটির বদলে লুচি-আলুরদম, বাড়ির বাকিরা আজ একসাথে জলখাবার খাবে, মালতীর আজ একটু বেশিই চাপ।


সকাল ৮:৩০, পাপানবাবু অর্থাৎ কর্তাবাবুর বড়ো নাতি তৈরি হচ্ছে স্কুলে যাবে বলে, সে হঠাৎ তার বাবাকে প্রশ্ন করে,

- আচ্ছা বাবা, প্রজাতন্ত্র মানে কি?

তার বাবা উত্তর দেয়, 

- প্রজাতন্ত্র হল সাধারণের বানানো নিয়মে সাধারণ মানুষের বাঁচার স্বাধীনতা। যেখানে প্রজা আছে কিন্তু তাদের উল্টোদিকে কোনো রাজা নেই। 

- কিরকম?

- ঐ যে কিছুটা ঐ গানটার মতো, 'আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে' । কি বুঝলে?

- হ্যাঁ বাবা, বুঝেছি। 


এর মাঝেই বাড়ির বড়ো বউ হাঁকে

- রামু, গাড়ি বের করো, পাপান স্কুল যাবে।

  মালতী তুমি আমাদের জলখাবারটা দাও।

খাবার টেবিলে আজ একসাথে পাপান, মা, বাবা, ঠাম্মু, দাদু খেতে বসেছে, ইস কাকাই, কাকিমণিও যদি থাকতো, কিন্তু একি ওরা কোথায়! ওরা খাবে না! 

-  মা, রামু কাকা, মালতী পিষিকেও ডাকো। ওরাও তো খাবে।

- আমরা আগে খেয়ে নিই দাদুভাই, তারপর ওরা খাবে; মন্তব্য মিত্তির গিন্নির।

ছোট্ট পাপান বুঝতে পারে না 'সবাই সমান' হওয়ার দিনেও ওরা আলাদা কেন!


বেলা ৯:৪৫, মিত্তিরমশাই আর তার বড়োছেলে সাদা পাজামা-পাঞ্জবি পরে তৈরি, পাড়ার ক্লাবে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান হবে, মিত্তিরমশাই-ই পাড়ার গণ্যমান্য হিসেবে পতাকা তুলবেন। তারপর অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরে কব্জি ডুবিয়ে পাঁঠার ঝোল।


দুপুর ২ টো, এঁটো বাসনগুলো গুছিয়ে রাখতে রাখতে মালতী ভাবে এতক্ষণে তার ছেলেটা বোধহয় কেক-বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। কখন যে বাড়ি ফিরতে পারবে কে জানে। দুপুরের মাংসের ঝোলটা আজ ও খায়নি। বাড়িতে নিয়ে যাবে ছেলের জন্য। আজকে একটা বিশেষ দিন, ছেলেটাকে একটু ভালোমন্দ খাওয়াতে হবে না!


বিকেল ৪ টে, বস্তির পাশের মাঠে শুরু হয়েছে খেলা, একশোমিটার, শটপুট, লেবু দৌড় আরও কত কি! মালতীর ছেলেটা ভালো খেলে। আজ একটা বালতি আর একটা টিফিনকৌটো জিতেছে ও।


সন্ধ্যে ৭ টা, কিছু পতাকা সূর্যদেব অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে নামিয়ে নেওয়া হয়েছে সযত্নে, আরও কিছু পতাকা তখনও উত্তোলিত, তারা অপেক্ষা করছে পরদিন অবহেলিত ভাবে ভূমি স্পর্শ করার জন্য।


রাত ৯ টা, 'only members are allowed' লেখা ক্লাবঘরের দরজার ফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসছে কিছু লারেলাপ্পা গানের শব্দ, ভেসে আসছে অ্যালকোহলের সাথে চুরুটের ধোঁয়া মেশা একটা বোঁটকা গন্ধ, 'মস্তি' চলছে পুরোদমে। 


দূরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে পাঁচটা কুকুর, সারাদিন আজ অনেক ভালো-মন্দ জুটেছে। রাতে আরও জুটবে। ওদের সাথেই দাঁড়িয়ে আদুল গায়ের বাচ্চাগুলোও ভাবে রোজ জে কেন 'প্রজাতন্ত্র দিবস' হয়না! ওদের মতো অযাচিত, অবাঞ্ছিত, অপাংতেয় প্রজারা তো অন্তত তাহলে জনদরদী মানুষদের দেখনদারীর দয়ায় একটু ভালো ভাবে রোজ দিন কাটাতে পারে।


- দেবাশ্রিতা মজুমদার