Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

প্লিজ, গোলি মারো আর বলবেন না। আপনাকে এই অধিকার কেউ দেয় নি

তরুন চট্টোপাধ্যায়দিল্লিতে বিজেপির মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেছিলেন মিছিল থেকে গোলি মারো।আসলে উনি পরে সাফাই গেয়ে বলেছিলেন ট্রেরিরিস্টদের গুলি মারার কথা বলেছেন।আর এই শব্দ টি নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে।গুলি মারো শালেকো।এ যেন হিন্দী …

 


তরুন চট্টোপাধ্যায়

দিল্লিতে বিজেপির মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলেছিলেন মিছিল থেকে গোলি মারো।আসলে উনি পরে সাফাই গেয়ে বলেছিলেন ট্রেরিরিস্টদের গুলি মারার কথা বলেছেন।আর এই শব্দ টি নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে।গুলি মারো শালেকো।এ যেন হিন্দী চিত্রনাট্যের সংলাপ ।গুলি মারো শত্রু পক্ষ কে।আসল কথা হলো এই ধরনের কথা তো সংবিধান বিরোধী।বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনীহা।সে নয় বুঝলাম ।কিন্তু সেই স্লোগান রঙচঙে হয়ে ফিরে এলো বাংলার ভোটে।আর একুশের বাংলার ভোট কে কালিমালিপ্ত করতে প্রথমে তৃনমূল আর তার পর বিজেপি একই স্লোগান তুললো এই বাংলায় ।আর তার ফলে নিন্দার ঝড় উঠলো বাংলা জুড়ে ।

                         গুলি মারো তো চলছে বাংলার ভোট কে কেন্দ্র করে অহরহ।ভোটের দিনক্ষন এখনো ঠিক হয় নি।তবুও বাংলা বার বার রক্ত ঝরাচ্ছে।আর তাঁর সিংহ ভাগই রাজনীতি কেন্দ্রিক।এক্ষুনি এই স্লোগান বন্ধ না হলে সমূহ বিপদ।

কলকাতার টালিগঞ্জের তৃনমূলের মিছিল থেকে এই শব্দ শুনতে পাওয়া গেছে।আবার হুগলির চন্দননগরের বিজেপির মিছিল থেকে সেই একই শব্দ ।সেখানে আবার সেনা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ তাঁরা যেন এই সব দেশদ্রোহী দের গুলি করে।যে সেনাবাহিনী চব্বিশ ঘন্টা দেশের অতন্দ্র প্রহরী তাঁদের বলা হচ্ছে গুলি মারো।ধন্য রাজনীতি ।তাঁরাই যেন ঠিক করে দেবেন কারা দেশ ভক্ত ,আর কারা দেশদ্রোহী ।আইন আদালত সবই কি তাদের হাতের মুঠোয় ।অবাক লাগে যখন দেখি কোন রাজনৈতিক দল এই সব শ্লোগানকে নিন্দা না করে বরং উৎসাহ দেন।আহারে গোলি মারো।এবার যদি ভোটারেরা বলতে শুরু করেন একই শব্দ ।রাজনৈতিক দলের প্রতি।তখন তো তিনি হবেন দেশদ্রোহী ।

দিল্লিতে গুলি মারো স্লোগান টি উঠেছিল দিল্লির বিরোধী সরকারের মুখ থেকেই।জানা গেছে সেখানে ফুটেজ দেখে সরকার কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও করেন।কিন্তু মুশকিল হলো বাংলাতে।এখানে শাসক ও বিরোধী দলের মুখ থেকে গুলি মারো শব্দ বেরিয়ে এলেও উভয় দলের পক্ষ থেকে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহন করা হলো না।গ্রেপ্তার তো নয়ই ।ফলে আবার ও যদি এই শব্দ বেরিয়ে আসে অবাক হবার কিছু নেই।

কেউ বলুক আর না বলুক বিজেপি দল যে লাইন নিয়ে এবার বাংলা দখলে নেমেছেন তাঁর মধ্যে ধর্মের সুড়সুড়ি তো রয়েছেই।আর গুলি মারো শব্দ টি কোন এক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ই যে বলা হচ্ছে তাতেও কোন সন্দেহ নেই।কিন্তু একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে এই ধরনের কথাবার্তা আসবে কেন।কে কাকে গুলি মারবেন।

তৃনমূলের মিছিল থেকে গুলি মারো শব্দের পর অবশ্য কুনাল ঘোষ বলেন অতি উৎসাহী কেউ কেউ হয়তো এই শ্লোগান দিয়ে ছেন।দল এটি সমর্থন করেন না।কিন্তু বিজেপির দল বদলী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর মিছিল থেকে এই স্লোগান ওঠার পর এই লেখা পর্যন্ত এখনো কোন নিন্দা সূচক বাক্যের সন্ধান পাওয়া যায় নি।পরে কি হবে জানি না।

সমগ্র দেশেই উগ্রপন্থী কার্য কলাপের বিরুদ্ধে সে দেশের নাগরিক ।এ নিয়ে কোন সংশয় নেই।দেশ বিরোধী কার্য কলাপ যে বা যারা করবেন দেশের আদালত তার বিচার করবে।সেই বিচারে শাস্তির ও বিধান আছে।কিন্তু প্রকাশ্যে গুলি মারো যে বা যাঁরা বলবেন তাদের ও তো শাস্তি হওয়া উচিত ।স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা কি কারো উদ্দেশ্যে বলতে পারি গুলি মারো।কখনোই নয়।

সমাজ বদ্ধ মানুষ আমরা।আর সেই সমাজে একদল যখন অপর দলের দিকে গুলি ছোঁড়ে তখন সেটি হয় সমাজ বিরোধীদের কাজ।আর যারা প্রকাশ্যে গোলি মারো বলেন তারাও এই সমাজ বিরোধী বলেই পরিচিত।

রাজনিতীতে দুর্বৃত্তায়ন তো আজ শুরু হয়নি।সমাজবিরোধীদের দল আলো করে থাকতে দেখা গেছে বেশ কিছু বছর আগে থেকেই।আর এই কাজে বাম পন্থী ডান পন্থী রা আলাদা সারিতে নয়।তবে কোন কোন সময়ে আড়ালে আবডালে এরা থাকলেও যত দিন যাচ্ছে এই সমাজ বিরোধীরা প্রকাশ্যে চলে আসছেন।দেদার বোমা গুলি ছুঁড়ছেন বিরোধী দের দিকেই।ফলে সাধারণ মানুষ দেখতে পাচ্ছেন হাত কাটা ,নাক কাটা গোপাল দের।আর এই সব সমাজবিরোধীদের রমরমা যত বাড়বে গুলি মারো শব্দ শুনতে পাবেন জনগন।

                আসলে কোন রাজনৈতিক দলের মিছিল থেকে কি শ্লোগান উঠবে এটি স্হির করেন সেই দলের নেতৃত্ব ।সেই দিক থেকে এই শ্লোগান নিয়ে সমাজবিরোধীদের দিকে আঙুল তোলা অবশ্য ঠিক নয়।দলের সিল মোহর থাকলেই সেই শ্লোগান বলা হয় দল থেকে।তাই প্রশ্ন হলো গোলি মারো শ্লোগানে সিল মোহর দিলো কোন রাজনৈতিক দল।

অবশ্যই বিজেপি।অনুরাগ ঠাকুরের সেই শ্লোগান এখন ভাইরাল হয়ে বাংলায় ।এর পর যদি কেউ মিঠুনের চলচ্চিত্র মনে করে বলে ওঠেন ,মারবো এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে অবাক হবার তো কিছু নেই।

কোন এক রাজনৈতিক দলের মঞ্চ থেকে কোন নেতা কিছু শব্দ ব্যবহার করলে মিডিয়া ছুটে যান বিরোধী দলের কাছে।সঙ্গে সঙ্গে কি প্রতিক্রিয়া জানতে চান।আর সেই নেতাও তাঁর প্রতিক্রিয়া দিয়ে দেন অনায়াসেই ।দলের সিলমোহর লাগে না।দল ও সব বুঝেও নিজের দলের প্রতি আস্থা রাখেন।এটি সরকারী অফিসের পোস্ট ফ্যাকটো অনুমতির মতো।এখন তো অনুমোদন হলো না।পরে হয়ে যাবে আর কি।

কোন এক সম্প্রদায়ের প্রতি বিষোদ্গার, কোন এক ধর্মের প্রতি আনুগত্য কোনটিই পাথেয় নয়।ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্টের কাজ হলো সব সম্প্রদায়, সব ধর্ম কেই এক সুতোয় বাঁধা ।সেখানে আলাদা করে বাদ বিচার নিশ্চয় হবে না।আইনের শাসনের প্রতি আস্থা রাখতে হবে সকলকেই।বুঝতে হবে গুলি মারা আর গুলি মারো বলার মধ্যে বীরত্ব বলে কিছু নেই।কারন উভয়েই সমাজবিরোধীদের দলে পড়েন।

ধরে নিলাম গুলি মারো বলেছেন ,গুলি তো মারেন নি।কিন্তু তাঁর এই শ্লোগান শুনে যদি সত্যি গুলি চলে তার দায়িত্ব কে নেবে।ভাইরাল হওয়া টা আজকের যুগে তো জলভাত ।হিমালয় থেকে কন্যা কুমারিকা পযন্ত ছড়িয়ে পড়া তো কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান ।ফলে দায়ভার সেই দল নেবেন তো।

এক্ষুনি রাজনৈতিক দল গুলিকে ঠিক করতে হবে কি বলবেন কি বলবেন না।যারা বলবেন তাদের রাজনৈতিক ভাবে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।কিন্তু সেই প্রশ্ন বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে।সচলেই যে এক পংক্তি তে।

এবার যদি ভোটারেরা বলে ওঠেন গোলি মারো ।কি করবেন।সেই সময় তো আর দূরে থাকছে না।নগরে আগুন লাগলে দেবালয় কি বাদ যাবে।অবশ্যই নয়।আগুন তো সম্প্রদায় মানে না, ধর্ম মানে না।সে শুধু জানে জ্বলতে ও জ্বালাতে।দাহ্য পদার্থ যত পাবে লেলিহান শিখা বেড়েই চলবে।

এখনো সময় আছে।বাংলার সৃষ্টি ও কৃষ্টি কে ধরে রাখার।রবীন্দ্রনাথ নজরুলের বাংলা থেকে এই সব আবর্জনা শ্লোগান কে সরিয়ে সুস্থ সমাজ গড়ার।একে একে উন্নয়নের শ্লোগান উঠুক।কি করবেন সামাজিক কাজ আর কি করেছেন এর খতিয়ান দিন ভোটার দের।আর গুলি মারুন গোলি মারোর মতো শ্লোগান গুলিকে।

তবেই সুস্থ রক্ত পাত হীন ভোট হতে পারে।নচেৎ নয়।

দায় ও আপনার ।দায়িত্ব ও আপনার ।সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনৈতিক দল গুলিকেই।