Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন#বিভাগ_গল্প#শিরোনাম_জীবন_থেকে_নেওয়া#কলমে_মৃন্ময় সমাদ্দার#তারিখ_১৩/০১/২০২১
বয়স আঠেরোর কণিকা খুবই গরিব ঘরের মেয়ে। ওর বাবার খেতে দেওয়ার মত পয়সা নেই। তবুও মেয়ে তো। বয়সের সাথে সাথে যৌবন এসেছে শরীরে। তার উপর …



 #সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন

#বিভাগ_গল্প

#শিরোনাম_জীবন_থেকে_নেওয়া

#কলমে_মৃন্ময় সমাদ্দার

#তারিখ_১৩/০১/২০২১


বয়স আঠেরোর কণিকা খুবই গরিব ঘরের মেয়ে। ওর বাবার খেতে দেওয়ার মত পয়সা নেই। তবুও মেয়ে তো। বয়সের সাথে সাথে যৌবন এসেছে শরীরে। তার উপর গায়ের রংটা বেশ কালো। তাই মুখ ঝামটা শুনেই ওর দিন কাটে। ওর মা তোকে কালী বলেই ডাকে। এমনকি আশেপাশের অনেকেই। পেটেই দিতে পারেনা তার আবার পড়াশোনা। পড়াশোনার কোনো বালাই নেই। আছে শুধু সংসারের কাজ। ওর মাও ওকে বলে গায়ের যা রং তোর বিয়ে হবে না। আমাদের পয়সা কড়িও নেই তোর বিয়ে দেবো কিভাবে? তুই একটা অপয়া। তোর শুধু কাজ করেই যেতে হবে। কেউতো তোকে নেবে না। কিন্তু কণিকার গায়ের রং কালো হলে কি হবে ওর চোখ দুটো কেমন যেন মায়াবী। খুবই গভীর সে দৃষ্টি। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ওর পাড়ার অনেকেই হারিয়ে যেতে চায়। কিন্তু ও সেসব দিকে তাকায়ও না। ওদের অবস্থা দিনে দিনে আরও খারাপের দিকে যেতে লাগলো। ওর বাবা একজনের জমিতে চাষ করে সংসার চালাত। কিন্তু সেই বাবার অসুখ করল। ওর মা বাধ্য হয়ে বাসাবাড়িতে কাজ ধরল। সাত আটশ টাকা মাসে আয় করতো । ওর মা ওকেও বাসা বাড়ির কাজ ধরতে বলল। দু'তিনটে বাড়িতে নিয়েও গেল। একেই তো  সোমত্ত তার ওপর দেখতেও মোটামুটি  তাই কেউ ওকে কাজে রাখতে চাইছিল না। সবশেষে ওদের পাড়ার বনমালী বাবু কণিকাকে কাজে রাখলেন এবং মাসে হাজার খানেক টাকা মাইনে খাওয়া-পরা দেবেন ঠিক হলো। বছর বছর মাইনে বাড়বে অবশ্য ও যদি কাজ করে তাহলেই। 

         পরের দিন থেকে কনিকা বনমালী বাবুদের বাড়িতে কাজ শুরু করলো। কয়েকদিনের মধ্যে ওর নির্মল স্বভাবের জন্য বনমালীবাবু ও ওনার স্ত্রীর মন জয় করে নিল কনিকা। মাস তিনেক হলো এ বাড়িতে কাজ করছে কণিকা। এরইমধ্যে এখানে পেট পুরে খেয়ে দেয়ে কণিকার চেহারার মধ্যেও একটা জৌলুস এসেছে। সেটা ওর বাবা মায়ের চোখ এড়ায় না। ওর বাবা মা ওকে সাবধান করে দিতে থাকে কোনোভাবেই যেন পা না টলে যায়।ওকে বলে আমরা গরীব ঠিকমত খেতে পারিনা কিন্তু কেউ কোনদিনই বলতে পারবে না আমরা কারোর কাছে হাত পেতেছি।আমরা আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। তুই আমাদের এই জায়গাটা দেখে রাখিস। ওর বাবা-মায়ের কথা শিরোধার্য করে এগিয়ে যায়। 

        এদিকে বনমালী বাবু ও ওনার স্ত্রী ঠিক করেন কণিকার ভবিষ্যৎ তৈরি করে দেবেন।সেইমতো ওনারা কণিকাকে প্রতিদিনই একটু একটু করে পড়াশোনা শেখাতে থাকেন। স্কুলের পড়াশোনা নয় জীবনে চলতে গেলে যে যে বাধা-বিপত্তি আসে এবং তা কিভাবে কাটিয়ে উঠতে হয় তার পাঠ দিতে লাগলেন। কনিকাও বাধ্য ছাত্রীর মতো সব শিখতে থাকে। কনিকার এই বাড়িটা খুব ভালো লাগে ও নিজের বাড়ি  যেতেই চায়না। বনমালীবাবুদের বাবামায়ের মতোই শ্রদ্ধা করে ও। ওকেও ওনারা নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসেন। এখন এই বাড়িতে কণিকাকে সেভাবে কাজ করতে হয় না। বনমালীবাবুরা নিঃসন্তান তাই কণিকার ওপর ভালবাসাটা অনেক বেশি। এরপর একদিন বনমালীবাবু কণিকাকে একটা ব্যবসা করতে বললেন। যা টাকা পয়সা লাগবে তা ওনারা দেবেন বললেন। কিন্তু ও কি ব্যবসা করবে সেটাই তো জানেনা। তখন বনমালী বাবু ওনারই এক বন্ধুর মাধ্যমে জেনে কনিকাকে নিয়ে এক জায়গায় গেলেন সেখানে বিভিন্ন রকমের হাতের কাজ শেখানো হয়। কণিকাকে সেখানে ভর্তি করে দিলেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে কণিকা সব শিখে নিলো। এবার ও বনমালী বাবুর বাড়িতে বসে সেই সব জিনিস তৈরি করতে লাগলো। কাঁচামাল সব বনমালীবাবুই এনে দিতেন। কনিকা ঘরে বসে জিনিসপত্র তৈরি করত কিন্তু সেগুলো বিক্রি না করতে পারলে টাকা ঘরে আসবে কি করে? অবশেষে বনমালী বাবু কলকাতায় ওনার বন্ধুস্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কণিকার যোগাযোগ করিয়ে দিলেন। ওনারা নিজেরাই এসে কণিকার থেকে হাতের কাজ নিয়ে যেতে লাগলেন এর জন্য ওনারা ওকে বেশ ভালো পারিশ্রমিক দিতেন। এতে করে এখন কণিকার হাতেও টাকাপয়সা আসতে লাগলো। ও খুব উৎসাহিত হয়ে পরল এখন ওদের সংসার আগের থেকে অনেক ভালোভাবে চলতে লাগলো। এবার বনমালীবাবু কণিকাকে বললেন টাকা পয়সা জমিয়ে একটা কারখানা করতে এবং ওর অঞ্চলের দু একজন মেয়েকে শিখিয়ে-পড়িয়ে কাজে নিতে। সেইমতো বনমালী বাবুর সাহায্যে কনিকা একটা কারখানা করল এবং দশ জন মেয়েকে শিখিয়ে-পড়িয়ে কারখানা চালু করল। 

        এদিকে কলকাতার যে ব্যবসায়ীরা কণিকার জিনিসপত্র কিনতেন ওনাদের থেকে কেউ একজন বিদেশে থাকতেন। উনি কণিকার জিনিস নিয়ে যখন ওখানে গেলেন ওই দেশে কণিকার জিনিসের একটা চাহিদা তৈরি হলো। ওই বিদেশি ভদ্রলোক কলকাতার ব্যবসায়ীর মাধ্যমে কণিকার সাথে যোগাযোগ করে এবং একটা বিরাট বড় অংকের অর্ডার দেন। এও ঠিক হল দু মাসের মধ্যে ওনাকে জিনিস দিতে হবে। ও বলল "আমি তো কিছু জানিনা কিভাবে পাঠাতে হয় আমাকে তাহলে শিখিয়ে দিন"। তখন বিদেশি ভদ্রলোক বললেন উনি সব ঠিক করে দেবেন। একবার বিদেশে জিনিসটা পাঠাতে পারলে ওকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। 

             ও একটু ভীতসন্ত্রস্ত হয়েই কাজটা হাতে নিল। সবাইকে বলল। সবাই এক কথায় রাজি হয়ে গেল। সবাই বলল আমরা যখন খাওয়ার চিন্তা করতাম তখন কেউ আমাদের দেখেনি তুমি আমাদের খাওয়ার সংস্থান করেছ। দরকার পড়লে দিনরাত এক করে আমরা এই কাজটা সফল করব। হলোও তাই তখন দিন দশেক বাকি কণিকা পুরো কাজটা সমাধা করে ফেলল। সবার সাথে ও-ও রাত জেগে কাজ করেছে। সবারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ওরা সফল হল। একদিন রাতের দিকে বিদেশি ভদ্রলোক ফোন করাতে ও বলে দিলো ওনার সমস্ত জিনিস তৈরি হয়ে গেছে এবং প্যাকিং করা হয়ে গেছে। তখন ভদ্রলোক বললেন উনি দিন কয়েকের মধ্যে ওর কাছে আসছেন তখন উনিই সব জিনিস নিয়ে যাবেন। কিভাবে কি করতে হবে তখনই কণিকাকে শিখিয়ে দিয়ে যাবেন।সেইমতো সব কাজ হলো। কনিকা বর্তমানে বিরাট ব্যবসায়ী প্রতিমাসেই এখন ওর জিনিস বিদেশে যায়। ও রীতিমতো এখন ব্যস্ততম ব্যবসায়ী। এতকিছুর পরেও ও কিন্তু ওর জন্মদাতা বাবা মা আর অন্নদাতা বাবা-মায়ের প্রতি কোনো অবহেলা করে না। ওর পা এখনও মাটিতেই রয়েছে। কনিকার জিনিস এখন একটা ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এই কাজই এখন ওর সবকিছু। বর্তমানে শচারেক মহিলার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব একা কণিকার ওপর। সবাই ওকে ভালবাসে শ্রদ্ধা করে। ওর কথার অমান্য কেউ করে না। ও নিজের জীবনের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছে একাগ্রতা এবং সততা থাকলে সবই সম্ভব।