Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#নব_প্রভাত#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য 
 ঢং-ঢং-ঢং..........‌বৈকুণ্ঠপুরীর সিংহ দরজার ঘন্টাটা বেশ কিছুদিন ধরে একটানা বেজেই চলেছে। কোনোরকম থামার নামগন্ধ নেই। আসলে মর্তে কোনোরকম অশান্তি হলেই গোলকধামে ঐ অ্যালার্ম ঘন্টাটা বাজে। ভগবান বিষ্ণু প্…

 


#নব_প্রভাত

#অরিন্দম_ভট্টাচার্য্য 


 ঢং-ঢং-ঢং..........

‌বৈকুণ্ঠপুরীর সিংহ দরজার ঘন্টাটা বেশ কিছুদিন ধরে একটানা বেজেই চলেছে। কোনোরকম থামার নামগন্ধ নেই। আসলে মর্তে কোনোরকম অশান্তি হলেই গোলকধামে ঐ অ্যালার্ম ঘন্টাটা বাজে। ভগবান বিষ্ণু প্রথম প্রথম ভাবছিলেন অন্যান্যবারের মতো এবারও কয়েক দিন বেজেই ওটা নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই একেবারেই গা করেন নি। কিন্তু এটা বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল একনাগাড়ে বেজেই চলেছে, আর চুপ করে হাতে হাত রেখে বসে থাকা যায় না। ভগবান তার অনন্ত শয্যা থেকে উঠে বিরক্তি ভরে মর্তের দিকে একবার তাকালেন -- ওঃ! কি করছে কি ওরা? এতো কিসের অশান্তি? কোত্থেকে আসছে এটা?

‌তিনি তার দিব্যচক্ষু দিয়ে দেখলেন, নীল সাদা রংয়ে রাঙানো বাংলার 'ব'-এর মতো একটা স্থান থেকে ঐ অশান্তির তরঙ্গটা উঠে আসছে। সাথে আরো একটা ছোট্ট তরঙ্গ। কিন্তু ওটা ঠিক কি, বুঝে উঠতে পারছেন না ভগবান।

‌--- প্রিয়ে, একটু মন দিয়ে শোনোতো -- কি বলছে ওরা? আর স্থানটাওতো ঠিক চিনতে পারছি না! মর্তে কি কোনো নতুন স্থানের জন্ম হলো আবার? লক্ষ্মীদেবীকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললেন উনি।

‌লক্ষ্মীদেবী অনেক কষ্টে উদ্ধার করলেন নতুন তরঙ্গটিকে। বললেন -- ওখানে ইদানিং হাতে ফুল নিয়ে একে অপরের সাথে সবাই নোংরা খেলায় মেতেছে। আর এটাই ঐ ঘন্টা বাজার মুল কারণ।ওখানে সকলের মুখেই একটা কথা চলছে -- 'খেলা হবে'। বাচ্চা থেকে বুড়ো, সকলেই ঐ একই কথা বলছে। আর ওটাই দ্বিতীয় তরঙ্গ।

‌-- খেলা? কি খেলা? ওরা কি হোলি খেলার কথা বলছে? বিষ্ময় ভরা মুখে ভগবান তাকালেন তার প্রিয়ার দিকে।

লক্ষ্মীদেবীও সম্পূর্ণরূপে কনফিউজড। তিনি বললেন -- কেউতো সেরকম খোলসা করে কিছু বলছে না।


এমন সময় দেবর্ষি নারদ এসে উপস্থিত হলেন -- নারায়ণ! নারায়ণ! আমাকে স্মরণ করেছেন ভগবান?


-- হ্যাঁ দেবর্ষি। আমাকে একটু খুলে বলুনতো, কি হচ্ছে ঐ স্থানটায়? জায়গাটা তো সেই কতো যুগ ধরে লাল রঙের ছিল, হঠাৎ নীল সাদা হলো কবে? 


-- নারায়ণ! নারায়ণ! আর বলবেন না। যখন থেকে ওখানে ঘাস ফুল ফুটেছে, তখন থেকেই ম্যাজিকের মতো সব লাল উড়ে গিয়ে নীল সাদা হয়ে যাচ্ছে।


-- তাই নাকি? সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু কোন খেলার কথা বলছে ওরা?


-- নারায়ণ! নারায়ণ! হোলি খেলা ছাড়া আর কোনো খেলার কথাতো আমি জানি না ভগবান।


-- কিন্তু সে তো ভালো জিনিষ! এতে নোংরার কি দেখলে প্রিয়ে? লক্ষ্মীদেবীকে উদ্দেশ্য করে বললেন ভগবান বিষ্ণু।


লক্ষ্মীদেবী কিছু বলার আগেই মহর্ষি বললেন -- নারায়ণ! নারায়ণ! এ হোলি, সে পবিত্র হোলি খেলা নয় ভগবান। এ ভাইয়ে ভাইয়ে রক্তের হোলি খেলা।


--- কি বলছেন দেবর্ষি? আমি যে ওদের হাতে ফুল ধরিয়েছিলাম। তবুও ওরা নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে ব্যস্ত! সে পদ্মফুলই হোক আর ঘাসফুল হোক, ফুল তো ফুলই। হ্যাঁ -- এটা ঠিক, বিভিন্ন ঠাকুর বিভিন্ন ফুলে সন্তুষ্ট। কিন্তু হাতে ফুল নিয়েতো আর কেউ মারপিট করে না।


-- নারায়ণ! নারায়ণ! ফুল মানে বন্ধুত্ব, ফুল মানে ভালোবাসা, ফুল মানে শ্রদ্ধা, ফুল মানে সন্ধি -- এই সাধারণ অর্থটাই এরা বোঝে না। সামান্যতম কান্ডজ্ঞানটুকুও নেই এদের।


-- ভেবেছিলাম বহুদিন তো বিপ্লব টিপ্লব হলো, পেটের জ্বালাতো জুড়িয়েছে এবার -- আর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কি হবে! মানে ঐ কাস্তে, হাতুড়ি এসব আর কি। তাই হাত থেকে ও সব কেড়ে নিয়ে হাতে হাতে ফুল ধরিয়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম একটু না হয় নিজেদের মধ্যে প্যার মোহাব্বত পর্ব চলুক। হোক না দুটো ভালোবাসার কথা। ব্যাকগ্রাউন্ডে আমিই না হয় বসে বসে বাঁশিতে দুটো লাভ সং বাজিয়ে দেবো। তখন কি জানতাম ছাই --এরা ফুলের মানেই বোঝে না!


-- নারায়ণ! নারায়ণ! এদের হাতে ফুল আর বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা -- এক জিনিস। আপনি বাঁশি হাতে অপেক্ষাই করতে থাকবেন, আর এরা নিজেদের মধ্যে হানাহানি চালিয়ে‌ই যাবে।


ভগবান বিষ্ণু এবার ধীরে ধীরে ভেতরে ভেতরে উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন -- ঠিক‌ই বলেছেন দেবর্ষি। এবার তো আমার নিজেরই মনে হচ্ছে কাস্তেটাকে ছুড়ে দিই ওদের দিকে। ওটা ঘুরতে ঘুরতে সুদর্শন চক্র বনে যাক।


-- নারায়ণ! নারায়ণ! জানেন ভগবান-- দুদিন আগেই ভগবান থরের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় আল্পসের চুড়ায়। তাঁর মুখেও এক‌ই সুর। উনি বললেন -- এ আমি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। আপনারা যতোই ওদের হাতে ফুল গুঁজে দিন না কেন.... ওসব ভালোবাসা টালোবাসা ওদের আসে না। তাই আমার হাতুড়িটাও রেডি করে রেখেছি। প্রয়োজন পড়লে বিষ্ণুকে একটা শুধু ফোন করতে বলবেন.....ওর ঐ বুমেরাংটার সাথে সাথে আমার হাতুড়িটাও ছুড়ে দেবো ওদের দিকে।


ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং ঢং............ হঠাৎ ঘন্টার আওয়াজ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকলো। ভগবান কানে আঙ্গুল দিয়ে ছুটে গেলেন টেলিফোনের দিকে। রিসিভারটা কানে তুলে নিয়ে বললেন -- থ-র -- আর পারা যাচ্ছে না। চলো এবার আমাদের খেলা শুরু করি......


খেলা শুরু হলো..... অন্ধকার সরিয়ে পুব আকাশটা ধীরে ধীরে রক্তিমবর্ণ ধারণ করছে। সারা আকাশে আজ কেউ যেন আবার লাল আবীর ছড়িয়ে দিচ্ছে। তবে কি রাত শেষ হলো এবার? জন্ম হলো নব প্রভাতের......