Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

গোলাপ দিবস
চুমকি ভট্টাচার্য
গতকাল বিকেলে কর্তার ফোন এলো," শোনো, দুপুরের ঐ ট্যালট্যালে মাছের-ঝোল ফ্রীজে তুলে রাখো। আজ বাইরে ডিনার করবো, ঠিক ন'টায় তৈরী থেকো।" না না, ওসব রোজ ডে-র ধার ধারেন না উনি। বাড়ির রান্না করা খাবার…

 


গোলাপ দিবস


চুমকি ভট্টাচার্য


গতকাল বিকেলে কর্তার ফোন এলো," শোনো, দুপুরের ঐ ট্যালট্যালে মাছের-ঝোল ফ্রীজে তুলে রাখো। আজ বাইরে ডিনার করবো, ঠিক ন'টায় তৈরী থেকো।" না না, ওসব রোজ ডে-র ধার ধারেন না উনি। বাড়ির রান্না করা খাবার একঘেয়ে ঠেকলেই উনি এই পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।  আমিও ওঁর কথার খোঁচা গায়ে না মেখে, দিব্য  রুজ-পাউডার মুখে লাগিয়ে বেশ সুখি সুখি ভাব দেখিয়ে মহানন্দে ওঁর  সাথে বেরিয়ে পড়ি। গতকালও তেমনই বেশ আনন্দিত চিত্তে বাড়ির কাছেই একটি নামী রেস্তোরাঁয় গিয়ে উপস্থিত হলাম দুজনে। কিন্তু ভিতরে ঢুকবো কি, বাইরে বেশ বড়ো লাইন পড়েছে। কারণটা তখনই মালুম হলো -  রোজ-ডে তো, তাই গোলাপ হাতে এতো নবীন যুগলের সমারোহ। 

রেস্তোরাঁয় প্রবেশের জন্য আমরা যখন তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছি, তখনই দেখলাম একটি মেয়ে একগোছা গোলাপ হাতে দৌড়ে এলো। না, দৌড়ে আসা বললে ভুল হবে, মুখে একগাল হাসি আর চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে যেন পালকের মতো ভাসতে ভাসতে হাজির হলো। বন্ধ দরজার এপাশ থেকেই কাঁচের ভিতর দিয়ে কাউকে ইশারায় ডাকলো। তখনই আমাদের পরিচিত একটি ছেলে, যে কিনা ওই রেস্তোরাঁর কর্মী, বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে। আমাদের মুখোমুখি হয়ে লজ্জা পেয়েছে, ওর মুখই তাই বলে দিলো। সলজ্জ হেসে ছেলেটি বলল," আমার ওয়াইফ এসেছে আমার সাথে দেখা করতে - "। আমিও প্রত্যুত্তরে হেসেই বললাম, " বাহ্ , ভারী মিষ্টি তো তোমার মিসেস!"

 

এইসময়ই ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পেলাম আমরা। নির্দিষ্ট স্থানে বসে আমার 'উনি ' কে বললাম, " কি মিষ্টি না, বাচ্চা ছেলে-মেয়ে দুটি! নিশ্চয় নতুন বিয়ে হয়েছে, তাই এতো উচ্ছাস। " আমার 'উনি' নিরুত্তর। দেখলাম, গম্ভীর হয়ে এমনভাবে মেনুকার্ড দেখছেন যেন কোনো পরীক্ষার্থী লাস্ট-মিনিট সাজেশন মুখস্থ করছে। 

আবারও সেই ছেলেটিই হাসিমুখে সামনে এসে দাঁড়ালো খাবারের অর্ডার নেওয়ার জন্য। আমি অকারণ কৌতুহলবশতই প্রশ্ন করে ফেললাম, "এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে?"।  আমার 'উনি ' তখন লাস্ট-মিনিট সাজেশন থেকে চোখ সরিয়ে কটমট করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি সেদিকে দৃকপাত না করে ছেলেটির মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি। ছেলেটি লাজুক হেসে বলল, " ও একদম কিছু বোঝেনা জানেন, আজ কাজের কতো চাপ - " সে আবারও হেসে বলল, " ছুটে এসেছে বাড়ী থেকে, আমায় সারপ্রাইজ দেবে বলে। কোনোরকমে ওকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠালাম- বললাম, বাড়ি ফিরে গোলাপগুলো ওর থেকে নেবো আর একদিন ওকে খাওয়াতে নিয়ে যাবো।"

চোখের সামনে যেন দেখতে পেলাম মেয়েটির হাসিমাখা মুখখানি মুহূর্তে ম্লান হয়ে গেল।চিনচিন করে উঠলো ভেতরটা, গোলাপের ছোট্ট একটি কাঁটায় বিদ্ধ হল হৃদয়।