সৃষ্টি সাহিত্য যাপন#তুলসী নাপিতের বোধোদয়#গল্প© মণীষা রায়
এক রবিবার শীতের রাতে খাওয়া দাওয়ার পর দাদু ঋক ও পিকুকে বলতে থাকে তার গাঁয়ের গল্প। তুলসী ছিল তাদের গ্রামের নাপিত । সে সদা হাস্যময়,রসিক মানুষ। এক নাগাড়ে বলে যেত মজার …
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
#তুলসী নাপিতের বোধোদয়
#গল্প
© মণীষা রায়
এক রবিবার শীতের রাতে খাওয়া দাওয়ার পর দাদু ঋক ও পিকুকে বলতে থাকে তার গাঁয়ের গল্প। তুলসী ছিল তাদের গ্রামের নাপিত । সে সদা হাস্যময়,রসিক মানুষ। এক নাগাড়ে বলে যেত মজার মজার কথা।। তবে তার স্বভাবে একটা বড় দোষ ছিল। হঠাৎ হঠাৎ বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে উধাও হয়ে যেত। মাস দুই তিন কখনো ছমাস গায়েব থাকার পরে আবার ফিরে আসত গ্রামে। এজন্য তার বৌ, ছেলে ও মেয়ের দুর্দশার অন্ত ছিল না। ফিরে এসে তুলসী গাঁয়ের লোকজনদের তার নানা অভিজ্ঞতার গল্প খুব রসিয়ে রসিয়ে শোনাতো। গ্রামের মানুষ তার কথা খুব উপভোগ করত। ছোট বড় সকলের খুব প্রিয় ছিল সে। তুলসী নাপিত মানে ঝোলা ভর্তি গল্প।
এক শীতের কাকভোরে গ্রামের অনেকেই ছুটছে তুলসী নাপিতের বাড়ি। তুলসী নাপিতের টালির একচালা ঘরের সামনে ,বেড়ার গেটের বাইরে বেশ কিছু লোক জমায়েত হয়ে জটলা করছে কিন্তু খুব আস্তে আস্তে। সকলের চোখে মুখে কৌতুহল, সেই সঙ্গে উৎকন্ঠাও।। ব্যপারটা কি? ঘটনাটা যে জানাবে, ঘটনা যে পরখ করেছে সেই তুলসী নাপিত দাওয়ায় চোখ বুজে পড়ে আছে। গ্রামের একজন মাতব্বর হেল্থ সেন্টারের তরুণ ডাক্তারবাবুকে তার ঘর থেকে প্রায় ঘুম থেকে তুলে এনেছে। খুব যত্ন সহকারে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে, ডাক্তারবাবু চোখে মুখে ক্রমাগত জলের ছিটে দিতে থাকলে চোখ খোলে তুলসী নাপিত । চোখ মুখ খুবই বিধ্বস্ত, ক্লান্ত ও ভয়ার্ত। ডাক্তারবাবুর নির্দেশে তুলসী নাপিতের বৌ মেনকা একগলা ঘোমটা দিয়ে, হাতে একটা দুধের গ্লাস নিয়ে ঘরের ভেতর থেকে দাওয়ায় এসে দাঁড়ায়। ডাক্তারবাবু মেনকাকে দুধটুকু খাইয়ে দিতে বলে । বিশ্রাম নিতে বলে তুলসীকে। কেমন থাকে সেটা যেন তাকে রিপোর্ট দেওয়া হয় বিকেলবেলা, বলে ডাক্তারবাবু বিদায় নেয়। সকলের মাঝে সোরগোল পড়ে যায়,
---তুলসীর জ্ঞান ফিরেছে, জ্ঞান ফিরেছে । যাক বাবা শান্তি। কি ঘটেছিল এবার জানা যাবে। কেন এমন অবস্থা হলো ? খুব ভয় পেয়েছিল বলে মনে হয়!!!
তুলসীর মুখে কোনো কথা নেই। সে চোখ বুজে শুয়েই রইল। মেনকা তুলসীর মাথাটা তুলে দুধের গ্লাস মুখের সামনে ধরলে চুক্ চুক্ করে দুধটা খেয়ে সে আবার চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়েই রইল।
এতটুকু বলে দাদু থামল। ঋক আর পিকু অস্থির । অধৈর্য হয়ে বলে,
---দাদু তুমি থামলে কেন? বলো তারপর কি হলো ?
---আরে বলছি, বলছি। বয়স হয়েছে যে, দাদুভাইইই দিদিভাইইইই । একনাগাড়ে কথা বলতে গেলে হাঁফ ধরে যে। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বলছি।
বড় আনন্দে কাটছে পিকু আর ঋকের দিনগুলো। দাদু, ও ঠাম্মি এসেছে তাদের বাড়িতে । তাদের কত গল্প বলে। ঠাম্মি কত নতুন নতুন খাবার দাবার বানিয়ে দেয়। সবচেয়ে সুখের বিষয় হলো স্কুল ছুটির পর আর তাদের বিদ্যা আন্টির ডে কেয়ারে গিয়ে থাকতে হয়না, সেই রাত আটটা পর্যন্ত।। মা বাবা অফিস ছুটির পর ফেরার পথে তাদের ঘরে নিয়ে যেত। মোটে ভাল লাগে না ওখানে থাকতে। দাদু, ঠাম্মি এলে যত দিন থাকে তাদের থাকতে হয়না ডে কেয়ারে। স্কুল ছুটির পর সোজা চলে আসে ঘরে দাদুর হাত ধরে। এবার অবশ্য একটা খুব বদমাইশ ভাইরাস আসার জন্য সব ওলট পালট হয়ে গেছে। দাদু ঠাম্মি এসেছিল ২০১৯ এর ডিসেম্বরে । ঠিক ছিল ২০২০ মার্চের শেষে চলে যাবে পাজি ভাইরাসের জন্যে লক ডাউন চলছে। তারা সব ঘরে বন্দি। মা ও বাবা ঘরে থেকে অফিসের কাজ করে। ঋক পড়ে ক্লাস টুতে। দাদা ঋকের থেকে বোন পিকু এক বছরের ছোট। সে পড়ে ক্লাস ওয়ানে। অনলাইনে এখন তারা স্কুল করে। দাদু ও ঠাম্মি ফিরে যেতে পারেনি তাদের বাড়িতে। ঋক আর পিকুর খুশির ঠিকানা নেই। বাইরে খেলতে যেতে না পারলে কি হবে ? খেতে, শুতে ,বসতে ঘুমাতে দাদুকে আবদার করলেই দাদু গল্প বলে একটার পর একটা। তারা ভাবে ঠাম্মি ও দাদু তাদের সাথেই সবসময় থাকতে পারে ? কেন চলে যায়? না গেলে চলবে না সেখানে যে তাদের বিস্তর জমি জায়গা, পুকুর আছে। সেগুলো দেখাশোনা করতে হয় যে! ভাগ্যিস দুষ্টু ভাইরাসটা এসেছিল তাইতো দাদু ,ঠাম্মি রইল এতদিন।
পরক্ষণেই জিভ কাটে দুজনে,
---- না, না আমরা দুষ্টু ভাইরাসটাকে চাই না। ও এসে কত লোককে মেরেছে। কত ক্ষতি হচ্ছে মানুষের। বাবা, মা দাদু ও,ঠাম্মি চা খেতে খেতে তাইতো বলে।
ঋক আর পিকুর সঠিক ধারণা নেই অসুখ সম্পর্কে। কারণ তাদের রোজকার জীবন ঠিক ঠাক চলছে। ঠাম্মি রোজ বলে,
-- ঋক, পিকু খাবার নষ্ট একদম করবে না। আজকাল অনেকেই ঠিকমতো খাবার খেতে পায় না। দরজার বাইরে পা রাখবেনা। মুখে, নাকে হাত দেবে না। কোন কারণে যদি একান্তই বাইরে বেরোনোর প্রয়োজন হয় মুখে মাস্ক পড়বে। বাইরে থেকে এসে জামাকাপড় চেঞ্জ করে গায়ে সাবান ও চুলে শ্যাম্পু দিয়ে স্নান করে নেবে।
সারাদিনে কতবার ঠাম্মি নযতো মা আবার কোনও কোনও সময় বাবাও স্ন্যানেটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে দেয়।
ঋক আর পিকুর ভাবনায় ছেদ পড়ে। দাদু বলতে শুরু করেছে গল্পের বাকি অংশটুকু। তারা দাদুর মুখের দিকে অতি উৎসাহে তাকিয়ে থাকে। দাদু বলে,
--- আমিও আমার কাকার পিছু পিছু ছুটেছিলাম তুলসী নাপিতের বাড়ি।
একটু চাঙ্গা হতেই তুলসী নাপিত ছেলে নিতাইকে আঙ্গুল নেড়ে কাছে ডেকে বলে,
--- নেতাই একবার সাইকেল চালিয়ে চট করে চলে যা বল্লভপুর গাঁয়ে। অমর ঘোষাল বাবুর ছেলের আজ পৈতে যে। ভিমরি না খেলে তো আমি এতক্ষণে ওখানে পৌঁছে যেতাম । তুই রওনা হয়ে যা। না হলে ওরা অসুবিধায় পড়ে যাবে । পৈতে, বিয়ের কাজে ক্ষৌরকারদের লাগে যে।
যদু কলু প্রথম তার বাড়ির কাছে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছিল তুলসীকে। কোনরকমে পাঁজাকোলা করে তুলে এনে তুলসী নাপিতকে তার নিজের দাওয়ায় শুইয়ে দেয়। সে এবার এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
--- কি হয়েছিল তুলসী দাদা তোমার?
--- সে অনেক কথা গো। বলছি, বলছি। একটুকু সবুর করো বাপু।
বল্লভপুরে ঘোষাল বাবুর বাড়ি তার ছেলের উপনয়নের কাজে তুলসী নাপিতকে যেতে হবে খুব ভোরে। শীতের দিন, ভোরের আলো ফুটতে অনেক সময় লাগে। তার উপর তাদের ঘরে একটা মাত্র ঘড়ি সেটাও খারাপ হয়ে পড়ে আছে। কটা বেজেছে তা বোঝার উপায় নেই। রাতে ভাল করে ঘুম হল না তুলসীর। বার বার উঠে উঠে বাইরের দিকে তাকিয়ে ভোর হওয়া পরখ করতে করতে একসময় তার মনে হয় এখন রাতের শেষ প্রহর। প্রভাত আসন্ন। দূরে দু একটা কাক ডেকে ওঠে। পাপিয়া পাখির পিউ কাঁহা পিউ কাঁহা একটানা বোলও সে শুনতে পায়। জ্যোৎস্না তখনও গলা রূপোর মতো চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে চাঁদের গা বেয়ে। ঝকঝকে নীল আকাশে অগুনতি তারা আর গোল পূর্ণ চন্দ্র বিরাজ করছে । কুয়াশার হালকা আবরণ থাকলেও চারদিক ভেসে যাচ্ছে চাঁদের আলোয়। কনকনে ঠাণ্ডা হিমেল বাতাস বইছে। কাঁথা মুড়ি দিয়েও শীতে তুলসী নাপিতের হাত পা জমে আসছে। তবু এই শীতে তাকে স্নান করতেই হবে। সে যাবে শুভ কাজে। স্নান সেরে পরিষ্কার ধোলাই করা জামা কাপড় পড়ে সে বাড়ির কাউকে ঘুম থেকে না জাগিয়ে নিজের ক্ষৌরকাজের বাক্সটা ( যার মধ্যে আছে কাঁচি ছুরি, ক্ষুর, নরুণ একটা ছোট বাটি, ফিটকিরি ও জল ভরা একটা বোতল।) ও নিজের থলেটা নিয়ে পথে নামল। চারিদিক নিস্তব্ধ। আসন্ন ভোরে পাখির কূজন শোনা যাচ্ছে না। সে শুনতে পাচ্ছে শুধু মাত্র ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা বিষন্ন সুর। তুলসী নাপিত গ্রামের বিশাল ঝিলের পাশ দিয়ে কাঁকুড়ে লাল মাটির রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছে। এর বাগান, তার পুকুর ,হাটতলা , বাঁশ বাগান, মন্দির, চন্ডীমণ্ডপ পেড়িয়ে সে উঠল হাইওয়েতে । নিচে গ্রামের দিকে তাকিয়ে দেখে তাদের গ্রামের হাইস্কুল চত্বরও শুনশান। স্কুলের দারোয়ান ঝাঁট পাট দেওয়া শুরু করেনি। ব্যাপারটা কি? এতটা পথ হেঁটে এসেছে সে অথচ ভোরের আলো ফোটার নাম নেই। হঠাৎ তার চোখে পড়ে সামনে একটা রিক্সা চলেছে। রিক্সাটায় কোনও সওয়ারি নেই। শুধু চালক চালিয়ে নিয়ে চলছে রিক্সাটা। তুলসী ডাকতে থাকে
-- এই এই রিক্সা ,,, রিক্সাআআআ ।
রিক্সাওলার আপদ মস্তক সাদা চাদরে ঢাকা। সে কিছু শোনে না। আপন খেয়ালে রিক্সা চালিয়ে এগিয়ে যায়। শেষে তুলসী নাপিত প্রথমে দ্রুত পায়ে হেঁটে তারপর দৌড়ে রিক্সাকে ধরার চেষ্টা করে। না কিছুতেই সে রিক্সার সামনে গিয়ে পৌঁছতে পারে না। রিক্সা সব সময় একটা নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে তার আগে আগে চলেছে। কত সময় পার হয়ে গেছে তার খেয়াল নেই। তার সম্বিত ফিরে আসে তখন যখন সে শোনে ভিন গাঁয়ে কোনো চার্চের ঘন্টা ঘড়িতে বাজছে রাত তিনটে। কোথায় এসে পড়েছে সে ঠাহর করতে পারেনা। হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন হলেও চাঁদের আলোয় সে দেখে রিক্সাওলা উধাও। অনুমান করতে পারে সে দাঁড়িয়ে আছে কোন অচেনা গাঁয়ের শেষ প্রান্তে এঁকে বেঁকে বয়ে যাওয়া ছোট একটি নদীর পাড়ে। সামনে মা কালীর মন্দির। অদূরে শ্মশান। অস্পষ্ট কালো কালো ছায়া ছায়া মতো দূরে কারা যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামনে চোখ পড়তেই দেখে একটা লাল কাপড় পড়া কপালে বিরাট বড় লাল সিঁদুরে্র টিকা লাগানো একটা লোক, যার মুখটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না । জটধরা চুল এবং লম্বা দাড়িতে মুখ ঢাকা। তুলসীর মনে হলো তান্ত্রিকের হাতে ধরা একটা পোড়া মাংসের ঠ্যাংই হবে, তার থেকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে মাংস খেতে খেতে জ্বলন্ত ভাটার মতো চোখ দিয়ে তাকে আপদ মস্তক জরিপ করছে। সামনেই ধিক্ ধিক্ করে জ্বলছে একটা চিতা। দুটো বড় সাইজের হাড় নিয়ে কেউ স্বশব্দে আঘাত করছে । তারফলে বিভৎস ঠক্ ঠক্ আওয়াজ তার কানে আসছে । পেঁচার হাড় হিম করা ডাকে তুলসী নাপিতের অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠে। সে প্রাণপণে ছুটতে থাকে। তার মনে হলো কে তাকে মেয়েলি গলায় নাকি সুরে, ক্রমাগত পেছন থেকে বলছিল
--- পেছন ফিরে দেখিসনা তুলসী। তাইলে বিপদ। জ্ঞাণ হারাসনি,বাপ। তাহলে আর রক্ষা পাবিনা। আর কোনও দিন ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাস না। আদারে বাদারে ঘুরে বেড়াস, কুনজর পড়েছে তোর উপর।
তুলসীর মনে হচ্ছিল এ মেয়েলি গলা যেন তার পরলোকগত মায়ের । মা পানের সাথে খেত সুগন্ধী জর্দা। যদিও জর্দা খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। ভুরভুর করে সেই জর্দার সুগন্ধ হাওয়ায় ভাসছে। স্পষ্ট মনে আছে তার নাকে এসেছিল তার সুঘ্রাণ। কত পথ সে দৌড়েছে তার হিসেব নেই। গাঁয়ে ঢোকার মুখেই প্রথম বাড়িটা যদু কলুর । তার ঘরের সামনে মূর্ছা যায় তুলসী নাপিত।
সবাই বলা বলি করতে লাগল,
---- বড় বাঁচা বেঁচেছ গো তুলসী । বরাতের জোর। রাখে হরি মারে কে? দেখ ছেলের বিপদ দেখে মরে গিয়েও মা এসেছে ছেলেকে রক্ষা করতে। একেই বলে মায়ের মমতা।
এই ঘটনার পর তুলসী নাপিত একদম বদলে গেল। আর আগের মতো মাঝে মাঝেই বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় না। মন দিয়ে সে সংসার করতে লাগল। এক গাঁ থেকে আরেক গাঁয়ে প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে লোকেদের চুল দাড়ি কাটত। নিজের কয়েক বিঘে জমিতে চাষবাস করত। তুলসী নাপিতের সংসারে শ্রী ফিরে এল। প্রতি বৃহস্পতিবার মেনকা সন্ধ্যায় লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়ে শাঁখে তিনবার ফুঁ দিয়ে নমস্কার করতে করতে বলত
--- মা মাগো সব তোমারই কৃপা। এই কৃপা দৃষ্টি সবসময় রেখ মা আমার সংসারের উপর।
আড়ালে হাসে রাধা, তুলসী নাপিতের মেয়ে। রাধা পড়াশোনায় তুখোড়। প্রত্যেক বছর ক্লাসে প্রথম হবার জন্য বিনা বেতনে তাকে স্কুলে পড়ার অনুমতি দিয়েছিল প্রধান শিক্ষক। কষ্টের সংসারে মা ,দাদা রাধাকে কি ভাবে ভাল রাখবে সেই চিন্তাতে বিভোর। তাদের আশা একদিন রাধা খুব বড় হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে। তাদের সংসারের হাল ফিরবে। রাধার থেকে বছর দুয়েকের বড় তার দাদা নিতাই পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয় সংসারের হাল ধরার জন্য। যখন যে কাজ পায় করে শুধু মাত্র দুটো পয়সার জন্যে।। মা উদয় অস্ত পরিশ্রম করে। এর বাড়ি ধানভাঙা, ওর বাড়ি ধান সেদ্ধ করা, মুড়ি ভাজা, ঢেঁকিতে পাট দিয়ে ধান থেকে চিঁড়ে বানানো, চাল কোটা, আরো কত শত পরিশ্রমের কাজ করে তাদের মা। তবেই চারবেলার খাবার জোগাড় হয়। তাদের এই টানাটানির সংসারটাকে দাঁড় করানোর জন্য,মা ও দাদা প্রতিদিন প্রাণপাত করছে। রাধাকে বড় পীড়া দেয়। পরিবারের এত কষ্ট সে মেনে নিতে পারে না। মনে মনে শপথ নেয় কিছু একটা করতেই হবে। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।
রাধা গাঁয়ের যাত্রাদলের নায়ক নটসূর্য ফটিক দাসকে ধরে পড়ে,
--- ফটিক কাকা এমন কিছু কর যে বাবা বাড়ি থেকে পালাবার কথা যেন কখনও আর চিন্তাতেও না আনে। আমি কথা দিচ্ছি তোমার ছেলেকে রোজ পড়াশোনা দেখিয়ে দেব ।
যাত্রা দলের হরবোলা কমল গভীর রাতে কাকের ডাক পেঁচা চিৎকার ও পিউ কাঁহার সুর শোনায় তুলসী নাপিতকে। অভিনেতা বিষ্ণু রিক্সাওলার সুন্দর অ্যাক্ট করে। সে রিক্সাটা এনেছিল সদরের এক রিক্সাওলার থেকে একরাতের জন্য। দলের অন্যান্যদের সাহায্যে ফটিক নিপুণ অভিনয় করে ভুতুড়ে অঘোর তান্ত্রিকের। মেয়েলি গলায় কিছুটা নাকি সুরে কথা বলে ছিল দলের খুদু যে যাত্রা দলে মেয়েদের পার্ট করে । নিখুঁত ভাবে ভয়ঙ্কর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল ফটিকের যাত্রা দলের লোকজনরা।
রাধা বহু বহ বছর পর দাদুকে বলেছিল এই গোপন কথা । তুলসী নাপিত তখন আর ইহলোকে নেই।
দাদুর গল্প ফুরলো ,
ঋক ও পিকুর ঘুমোতে যাবার,
ডাক পড়ল।
ঘরের বাতি নিভিয়ে,
ভাল করে লেপ মুড়ি দিয়ে,
আগামী সুন্দর একটা দিনের আশা নিয়ে
পড়ল তারা ঘুমিয়ে।
শেষ।।