Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন#ভালোবাসা_দিবস#মৃন্ময়_সমাদ্দার#তারিখ_১৪/০২/২০২১
         শান্তি আর সোনা দুই বন্ধু। অনেকদিন থেকেই ওদের বন্ধুত্ব। সেই স্কুল জীবন থেকে শুরু করে কলেজও শেষ হয়ে গিয়ে চাকরি জীবনে দুজনেই প্রবেশ করেছে কিন্তু ওদের বন্ধ…



#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন

#ভালোবাসা_দিবস

#মৃন্ময়_সমাদ্দার

#তারিখ_১৪/০২/২০২১


         শান্তি আর সোনা দুই বন্ধু। অনেকদিন থেকেই ওদের বন্ধুত্ব। সেই স্কুল জীবন থেকে শুরু করে কলেজও শেষ হয়ে গিয়ে চাকরি জীবনে দুজনেই প্রবেশ করেছে কিন্তু ওদের বন্ধুত্বে কোন ভাটা পড়েনি। চাকরি জীবনে প্রবেশ করার পর প্রতিদিন হয়ত দেখা হয়না তবে ফোনে কথা হবেই হবে। একই পাড়ায় থাকে ওরা দুজনে। ওদের বাবা-মা অনেকবার ওদের বন্ধুত্ব ভাঙার চেষ্টা করেছিল কিন্তু কোনো ফল হয়নি। দুজনে যেন মানিকজোড়। একজন যেন অন্যজনের মনিহারা ফনী। যখন ওদের বন্ধুত্ব ভাঙ্গা গেল না তখন ওদের বাবা-মাও নিজেরা বন্ধু হয়ে যায়। দুই পরিবারই মোটামুটি একই রকমের। ওদের মূল্যবোধ প্রায় সমান। দুজনেরই দোতালা বাড়ি। দুজনের বাবাই সরকারি চাকরি করেন। দুজনেই মোটামুটি একই মানের ছাত্রী। কলেজে থাকাকালীন ওরা দুজনের মধ্যেই একাত্ম হয়ে থাকতো। ওরা কারুর দিকে তাকায়নি পর্যন্ত। ওরা নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। ফলে ওদের দিকে অনেকে লক্ষ্য করলেও ওরা কোন ভ্রুক্ষেপই করে নি। এখন দুজনেই দুই অফিসে কাজ করে। ফোনে কথা হয় বটে কিন্তু প্রতিদিন দেখা সাক্ষাত হয় না। 

        এই অবস্থায় শান্তির প্রদীপের সাথে সাক্ষাৎ হলো। প্রদীপও শান্তির সাথে একই অফিসে কাজ করে। একজন অতি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অধিকারী যুবক। কারণ খুব শিগগিরই ওর পদমর্যাদা বাড়বে। পদমর্যাদা বেড়ে একজন জেনারেল ম্যানেজার হবে। খুব সহজেই শান্তি প্রদীপের প্রেমে পড়ে যায়। টিফিনের সময় দুজনে দুজনের খাবার ভাগ করে খায়। ছলে বলে প্রদীপ শান্তির কেবিনে চলে আসে এবং বসে বসে গল্প করে। প্রদীপের প্রেমে হাবুডুবু খেতে শান্তির বেশি সময় লাগেনি। সপ্তাহান্তে ওদের দুজনে,মানে শান্তি ও সোনা মিলিত হতো। ওদের মধ্যে শুধু প্রদীপকে নিয়েই কথা হতো। কিন্তু ওদিকে সোনা চাকরি পেয়ে গেলেও কারুর সাথে এখনো সাক্ষাত হয়নি বা প্রেম হয়নি। ও মনে মনে একটু মনোকষ্টে ভুগতে শুরু করলেও শান্তিকে কিছু বুঝতে দিলো না। শুধু বলতো আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি না। শান্তি বলতো অবশ্যই,একদিন আমার অফিসে চলে আয়,রেস্তোরাঁতে বসে গল্প করা যাবে সাথে খাওয়া-দাওয়াও করা যাবে। 

এদিকে একদিন সোনার একটা ফোন এলো। ভুল নম্বর বলে দেবার পরেও ওদিক থেকে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলতে শুরু করলে ও উত্তর দিতে লাগল। এই ভাবে কথা বলতে বলতে ওপাশের ছেলেটি সোনার থেকে কথা আদায় করে নিল যে প্রায় দিনই ওকে ফোন করবে। এরপর থেকে শুরু হলো সোনার ফোনালাপ। ছেলেটি নিজের নাম বলেছিল সুভাষ। সোনা সুভাষ হিসাবেই কথা বলতো। এভাবে চলতে চলতে একদিন ওরা একটা জায়গায় দেখা করল। সুভাষকে দেখে সোনার মনেও প্রেমের সঞ্চার হয়। ওরাও চুটিয়ে প্রেম করতে লাগলো। এখন সোনাও শান্তিকে সুভাষ সম্পর্কে কথা বলতো | ওদিকে শান্তি আর প্রদীপের প্রেম প্রায় পরিণতির দিকে এগোতে চাইছে। এমন সময়ে শান্তি একদিন সোনাকে বলল চলে আয় আমরা তিনজনে একসাথে খাবার খাব। তুই আমি আর প্রদীপ। আর তোদের দুজনের পরিচয়টাও করিয়ে দেব। কথামতো ঠিক সময়ে সোনা পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট রেস্তোরাঁতে। তখনো শান্তিরা কেউ এসে পৌঁছায়নি। দূর থেকে শান্তিকে আসতে দেখে সোনা হাত  দেখালো। ওরা দুজনে একসাথে রেস্তোরাঁর ভেতরে ঢুকলো। একটা টেবিলে বসে গল্প করছে,এমন সময় শান্তিকে হঠাৎ হাত নাড়াতে দেখে ও পিছন ঘুরে তাকাতেই চমকে উঠলো। এ যে সুভাষ। ও কিভাবে এখানে এলো? এই কিভাবে প্রদীপ হতে পারে ? তাহলে প্রদীপ আর সুভাষ একই ব্যক্তি। শান্তি প্রদীপের সাথে সোনার পরিচয় করিয়ে দিল। সোনা চমকে উঠলেও শান্তিকে কিছু বুঝতে দিলো না। কিন্তু প্রদীপের মধ্যে কোনরকম উত্তেজনা নজরে এলো না। প্রদীপের সাথে পরিচয়ের পর শান্তি খাবারের অর্ডার দিল। একসাথেই খাওয়া-দাওয়া করলো। খাওয়া-দাওয়ার পর সোনা অফিসের বাহানা দেখিয়ে চলে গেল। 

          এদিকে প্রদীপ ও শান্তি আরো অনেকটা সময় রেস্তোরাঁতে বসে থাকল। প্রদীপ শান্তিকে বলল তোমার বান্ধবী চলে গেল কেন? ওকে ঠিক স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছিল না। আমাকে দেখবার সাথে সাথেই ও চমকে উঠেছিল কেন? তুমি কি সেটা লক্ষ্য করেছো? 

         এদিকে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে এসে সোনা অফিসে গিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল শরীর খারাপ লাগছে বলে। অফিস থেকে বেরিয়ে ও সোজা গঙ্গার ঘাটে চলে এসে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে বসে কাঁদতে লাগলো। ওর কান্না বাঁধভাঙ্গা জলের মতো চোখ বেয়ে বেরিয়ে আসছিল। ও এটা বুঝতে পারছিল না প্রদীপ কেন সুভাষ হিসেবে ওর সাথে পরিচয় করেছিল এবং প্রেমের অভিনয় করলো। এই কথাটা কি শান্তিকে বলবে? বললেও কিভাবেই বা বলবে। আর শান্তি এখন যে অবস্থায় আছে তাতে ওর কথা বিশ্বাস করবে তো? ও কি বলবে প্রদীপই হল সুভাষ? সেদিন সোনা অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করে বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেল। সারারাত ধরে চিন্তা করল কিন্তু কোন উত্তর খুঁজে পেল না। পরেরদিন শান্তিকে ফোন করে দুপুরে ওর অফিসে ডেকে নিল। শান্তি এলে পরে ওকে সব ঘটনা খুলে বললো। শান্তি সবটা শুনলেও পুরোটা বিশ্বাস করল না। কিন্তু ওর মধ্যেও একটা দ্বিধা কাজ করতে শুরু করেছিল। সোনাকে সহানুভূতি জানিয়ে ও অফিসে গেল। 

          অফিসে গিয়ে প্রদীপকে সব কথা জিজ্ঞাসা করল। প্রদীপ সব কথা শুনবার পরে বললো এবার বুঝতে পেরেছি তোমার বন্ধু কেন সেদিন আমার সাথে কথা বলেনি বা আমাকে দেখে চমকে উঠেছিল কেন? আসলে আমরা জমজ দুই ভাই। আমি বড় আর সুভাষ ছোট। সুভাষ আমার থেকেও ভালো চাকরি করে। খুব ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আমার থেকে ওর চুল একটু পাতলা। আমাদের দুজনের উচ্চতা একই ।তোমার বন্ধুকে আসতে বল আমি সুভাষকে নিয়ে আসবো তোমার বান্ধবীর সব দ্বিধা কাটিয়ে দেব। তবে সোনাকে কিছু জানাবে না| শান্তি সোনা কে ফোন করে শুধু বললো একবার চলে আসিস তোর সাথে অনেক কথা আছে। 

             সেইমতো পরেরদিন সোনা পৌঁছলো রেস্তোরাঁয়। শান্তিও চলে এলো। আগের দিনের মতো ওরা রেস্তোরাঁর ভেতরে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ পর প্রদীপরা রেস্তোরাঁতে ঢুকলো। প্রদীপরা মানে প্রদীপ আর সুভাষ। ওদের দুজনের হাতেই দুটো লাল গোলাপের বুকে।প্রথমে প্রদীপ শান্তিকে বুকেটা দিল। এরপর সুভাষ সোনাকে বুকেটা দিতে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়ে সোনা। প্রদীপদের দেখে সোনার ভুল ভেঙে গেল। ওরা তখন খেতে খেতে সব কথা আলোচনা করল প্রদীপ আর শান্তি এবং সুভাষ আর সোনা চারজন একসাথে জীবন কাটানোর প্রতিজ্ঞা করল। সেদিন থেকেই সেই পথে চলবার অঙ্গীকারবদ্ধ হলো ওরা। আজ যে চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি প্রেমের দিবস। তাই কাউকেই কান্নায় নয় ভালোবাসাতেই জয় করতে হবে।