Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপন #গল্প__বিবর্ণ_রং#কলমে__মহুয়া_মিত্র
আজ দোল । আকাশে বাতাসে রঙের গন্ধ । পাতায় ফুলে ফাগের ছোঁয়া । আজ নিজেকে রাঙিয়ে নেবার দিন । আর সেই উৎসবে সামিল হতে প্রস্তুত পরমা । বয়সটা তিপ্পান্ন হলে কি হবে , রং খেলায় সে অবলীলায়…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন 

#গল্প__বিবর্ণ_রং

#কলমে__মহুয়া_মিত্র


আজ দোল । আকাশে বাতাসে রঙের গন্ধ । পাতায় ফুলে ফাগের ছোঁয়া । আজ নিজেকে রাঙিয়ে নেবার দিন । আর সেই উৎসবে সামিল হতে প্রস্তুত পরমা । বয়সটা তিপ্পান্ন হলে কি হবে , রং খেলায় সে অবলীলায় কচিকাঁচাগুলোকে হারিয়ে দিতে পারে । আর পারবে নাই বা কেন , সে যে মাধববিলাসী , না হল সে রাধা , মীরা তো বটে । পরমার পার্থদাও যে বড্ড রং খেলতে ভালবাসে ।

সেই কোন ত্রয়োদশী বেলায় ন্যাড়াপোড়ার দিন প্রথম দেখা বাবার ছাত্র পার্থদার সাথে । সেদিনই পরমা তাকে নিজের মন , প্রাণ সব সঁপে দিয়েছিল । ন্যাড়াপোড়ার আগুন সপ্তপদীর অগ্নিশিখা হয়ে জ্বলে উঠেছিল কিশোরীর মনে । পরদিন পরমাদের বিরাট একান্নবর্তী পরিবারে রং খেলতে আসে পার্থ আর এক মুঠো লাল আবীরে মাথা ভরিয়ে দেয় পরমার । পাগলী মেয়েটা কিছুতেই আর মাথা ধুয়ে সে রং মুছে দিতে চাইছিল না ।

দিন যায় । পরমাদের গোঁড়া পরিবারে সারা বছর পার্থর সাথে ওর দেখা প্রায় হতই না , এক ঐ দোল ছাড়া । সেদিন সব আগল মুক্ত   এভাবে প্রতি বছর রং নিতে নিতে পরমা যুবতী হয়ে উঠল । ভাবল এবার পার্থদাকে জানাবে মনের সব কথা । সেবার দোলের দিন বিরাট চমক । পার্থ সস্ত্রীক রং খেলতে এল । তড়িঘড়ি দেশের বাড়িতে বিয়ে হওয়ায় ও কাউকে কিছু জানাতে পারে নি । পরমাকে রং দিয়ে বলল , - "কিরে কেমন হয়েছে তোর বৌদি ? "হেসে চলে গেছিল মেয়েটা । ঠাকুর ঘরে ওর সেই কান্নার সাক্ষী কেউ ছিল না । এরপর হঠাৎই তিন মাসের ব্যবধানে মা বাবার মৃত্যু পরমাকে অনেক বড় করে দিল । ছোট ভাই বোনগুলোর দায়িত্ব নিতে গিয়ে নিজেকে ভুলে গেল । তবে এত বছরেও রং খেলাটা নিষ্ঠার সাথে খেলত , তাই যে তার পূজার নৈবেদ্য ।

বাবা মারা যাবার মাস কয়েক বাদে পার্থদারা এলাকা ছেড়ে কোথায় যেন চলে যায় , পরমা কোন খোঁজ পায় নি । পরমার বড় ভাই কি করে যেন জানতে পেরেছে কাল বিকেলে পার্থদা মারা গেছে ।

সারা বাড়ি রং নিয়ে মেতেছে । হঠাৎ পরমা বাড়ির উঠোনে হাজির , পরনে লাল শাড়ি , সারা শরীর ভিজে সপসপে , যেন ডুব দিয়ে এল । তুলসীতলায় ছিন্নমূল লতার মত আছড়ে পড়ল সেই মেয়েটা । ডুকরে কেঁদে উঠে অবিবাহিতা বলল , - " আমায় একটা সাদা থান্ এনে দিতে পারিস্ । " পরমা আর কোন দিন দোল খেলেনি।