Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

সৃষ্টি সাহিত্য যাপনকবিতা   :   রক্তের অক্ষরেকলমে   :    শক্তিপদ ঘোষতারিখ   :   ১২ , ০২ , ২০২১
আমি আজও পথ ছুঁয়ে থাকি , ঘাট ছুঁয়ে থাকি ;বৃষ্টিতে তেমনি ভিজবো বলে আজও আকাশের মেঘ ছুঁয়ে থাকি ।খুব নিবিড়-উষ্ণ একটা অভ্যুদয় দেখবো বলেনদ…

 


সৃষ্টি সাহিত্য যাপন

কবিতা   :   রক্তের অক্ষরে

কলমে   :    শক্তিপদ ঘোষ

তারিখ   :   ১২ , ০২ , ২০২১


আমি আজও পথ ছুঁয়ে থাকি , ঘাট ছুঁয়ে থাকি ;

বৃষ্টিতে তেমনি ভিজবো বলে 

আজও আকাশের মেঘ ছুঁয়ে থাকি ।

খুব নিবিড়-উষ্ণ একটা অভ্যুদয় দেখবো বলে

নদীটা বাঁক নিয়ে দূরে যেখানে অদৃশ্য হয়ে গেছে ,

দিগন্তের সেই নীল ছায়া আমি ছুঁয়ে থাকি ।

যদিও গাছের সব পাতার থেকে

সবুজ কণিকা সব কবে ঝরে গেছে ,

তবু বৃন্ত ছুঁয়েই থাকি ভালো , আমি ভালো থাকি ।

আজও একখানা জ্বলন্ত সূর্যকে মাথায় নিয়ে ,

দূরের দীপনেভা শিমূল গাছটার মতো

নীরব-নিঃসঙ্গ-নির্বিকার ঠিক আছি দাঁড়িয়ে ।


যদিও ভাদ্রের ভরানদী মাঝখানে

অবিরাম ঢেউ তুলে দুর্বার বেগে ছুটছে ,

দূরে সাগর একটা উদ্দাম ঢেউয়ের

অজস্র ফণা তুলে ফুঁসছে ,

কাঁটায় কাঁটায় আকীর্ণ পথ , দূর্বার চিহ্নমাত্র নাই ,

বারবার মরুঝড় , চোখে মুখে 

পোড়াবালির ঝাপটা , ঝাপটায়  বিধ্বস্ত ;

তবুও পথে আছি আমি পথের স্পন্দন ছুঁয়ে ।

পদে পদে ব্যাহত যাত্রা ,পা ছিঁড়েখুঁড়ে রক্তাক্ত ,

জানি , এই এতকিছুর তুমি কিচ্ছুটি জানছো না ;

তোমার সবটাই অজ্ঞাত ।


ফুলের মাস এলে দূরের সেই শিমূল গাছটা

মনে মনে খুব কাঁদে ; অনেক বিনিদ্র রাত্রি জেগে  তারপর একদিন--মাথাভর্তি 

একঝাঁক রাঙাফুলের ডালা সাজায় ;

জানি না--কী চায় সে , কার কাছে সে কী চায় ,

জানা না থাকলেও জানি আমি , ঠিক মনে আছে ,

তুমিও একদিন এমনি করে 

কবিতা চেয়েছিলে আমার কাছে ।

আমি দিতে পারিনি ;

কারণ ,কবিতা ব্যাপারটা ঢোকে না আমার মাথায় ।


সেদিন বুঝিনি এত সব থাকতে কেন আমার কাছে

কবিতা চেয়েছিলে , কী চেয়েছিলে কবিতায় ?

জানি না , আমার কলমে তুমি নিজে

আলোকিত হতে চেয়েছিলে কিনা  ; অথবা ,

আলোকিত দেখতে চেয়ছিলে কিনা আমাকে ?

আজও ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি ;

আজও নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছি--সেই

বোঝা আর না-বোঝার ঠিক মাঝখানটাতে ।


পরে ,  একসময় কবিতা কিন্তু এলো ;

ভরা জোয়ারের মুখে বানডাকের মতো

হুড়মুড়িয়ে এলো , প্লাবনের মতো

দু'কূল ছাপিয়ে এলো ।

শ্রাবণের মেঘের মতো দলবেঁধে

আকাশ ঝাঁপিয়ে সে এলো ;

তাকে গ্রহণ করবো যে--তখন আর 

তিল সময় নাই আমার হাতে , বুক তবু মরুভূমি ;

তোমারও তৃষ্ণা নাই , আর তৃষিতও নও তুমি ।


দলবেঁধে এসে মেঘেরা ফিরে গেল দলবেঁধে ,

ঝাঁক ঝাঁক না-বলা কথা বুকে নিয়ে

তারাগুলো আকাশের--সেই থেকে

বিনিদ্র রাত্রি কাটায় জেগে জেগে ;

কথাগুলো বৃথাই রাত্রি-আঁধারে 

জ্বলে নেভে জোনাকমালায় ।

ফুলহীন বাগিচায় ঘুরে ঘুরে ফিরে যায়

শূন্যহাতে মৌমাছি ;

শূন্য বাগিচার মাটি--আমি তবু ছুঁয়ে আছি ।


দিনে অজস্র রোদ মেখে পাখনায় ,

না-বলা কথাগুলো যখন

আমার চোখের সামনে বাতাসে উড়ছে ,

তখন দক্ষিণের খোলা বারান্দাটা চেয়ে দেখি ,

নিদাঘের চড়া রোদে খাঁ খাঁ করছে ;

উন্মুক্ত উঠোনটাও একটানা আগুনে পুড়ছে ।

তবুও শব্দব্রহ্ম আমার

নিঃশব্দ বীণার 'পরে ভর করে ;

পাণ্ডুলিপির স্তূপ--লেখা পড়ে থাকে , ধুলোয় ঢাকা , রক্তের অক্ষরে ।

--------------------------------------------------------------------