Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#কিস_ডে
#ছোট_গল্প#চুমাচুমির_দিনে_জাগো#সুজাতা_দে
শরীরকথার ওঠাপড়ায় প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে প্রিয়ার শরীরে চুম্বন এঁকে দিত পঞ্চাশোর্ধ অতীন্দ্রনাথ। অবদমিত প্রেমের প্রকাশে পাগল হবার মুহুর্তে আজ অবাক হয়ে দেখল কোমর থেকে পা পর্য্যন্ত প্রায় প…



#কিস_ডে


#ছোট_গল্প

#চুমাচুমির_দিনে_জাগো

#সুজাতা_দে


শরীরকথার ওঠাপড়ায় প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে প্রিয়ার শরীরে চুম্বন এঁকে দিত পঞ্চাশোর্ধ অতীন্দ্রনাথ। অবদমিত প্রেমের প্রকাশে পাগল হবার মুহুর্তে আজ অবাক হয়ে দেখল কোমর থেকে পা পর্য্যন্ত প্রায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া

প্রতিবন্ধী  ডাক্তার প্রিয়াঙ্কা বর্মণ ওর চুম্বনে এতো বছর  পরে চুম্বনেই সাড়া দিয়েছে! ওহ আজ যে চুম্বনের দিন। ফেসবুকের পাতায় পাতায় প্রেমিক প্রেমিকাদের একে অপরকে   কিস ডে র রোমান্স এর ছবি আপলোড হয়েছে বিভিন্ন মুদ্রায়। 


অতীন্দ্রনাথ আর প্রিয়াঙ্কার প্রেমের পুলক জাগবার আগেই সাতটা বছর পিছনে ফিরে দেখি আসুন।


কলকাতায় নিজস্ব বাড়ি,মধ্য চল্লিশ উত্তীর্ণ, অবিবাহিত, টেম্পোরারি গেষ্ট লেকচারার পদে কলেজে চাকুরীরত পাত্রের জন্য চল্লিশ উত্তীর্ণ  সুশিক্ষিতা, সুপ্রতিষ্ঠিতা, অবিবাহিতা পাত্রী চাই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বা রূপ বিচার্য নয়।

পেপারে এই বিজ্ঞাপন দেখেই - অকালে স্পাইনের অস্টিওপরোসিস সমস্যায় শরীরের নিম্নাঙ্গের প্রায় চলৎশক্তিহীন অবস্থায়-হুইলচেয়ারে বসা পাত্রী প্রিয়াঙ্কার বাড়ির লোকজন অতীন্দ্রনাথের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। ওই অবস্থায়ও ডাক্তার প্রিয়াঙ্কা নিজের গাড়িতে চড়ে সরকারী হাসপাতালে গিয়ে নিজের রুগীদের চিকিৎসা করে। কিন্তু গৃহকাজের জন্য তাকে বিশ্বস্ত রমলাদির উপর নির্ভর করতে হয়। মা বাপ মরা প্রিয়াঙ্কার অভিভাবক বলতে তার বড়দি। আর অন্য তিন বিবাহিততা দিদিরা তার সংসারে কর্তৃত্ব চালায়। প্রিয়াঙ্কার অবিবাহিত বেকার যুবক কয়েকটি  বোনপো আর বোনঝিদের উপস্থিতি আর উমেদারিতেই তার বাড়ি সব সময় সরগরম থাকে। 


দুপক্ষের আলাপ আলোচনার পর জানা গেল সুশিক্ষিত ব্রিলিয়ান্ট অতীন্দ্রনাথ মাইক্রোবায়োলজিতে এম এসসি করার পরে পি এইচ ডি করে। পি এইচ ডি করার সময় তার লেডি বসের সাথে বিশাল মতবিরোধের ফলেই বোধহয় তার পি এইচ ডি হতে পাঁচ বছরের জায়গায় আট বছর লেগে যায়। মাঝে সে কিছু মাস বসের কাছে যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। এইসব ঘটনায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে খামখেয়ালের বশে সে নিজের বিষয় ছেড়ে দিয়ে  বিলারপুর ডেন্টাল কলেজে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে যোগ দেয়। যে পদটা ছিল টেম্পোরারি।  সেখানেই সাড়ে পাঁচ বছর কাটিয়ে দেয়। কলকাতা ছেড়ে আত্মীয়বিহীন জায়গায় টাইফয়েডে দারুণ ভোগান্তির শেষে ওই চাকরিটাও ছেড়ে দিয়ে রিটায়ার্ড বাবা ও অসুস্থ  শয্যাশায়ী মায়ের কাছে ফিতে আসে। নিশ্চিত আশ্রয় থাকলেও  বাবার পেনসনের টাকায় দিন চলে না। তার উপর অসুস্থ রুগ্ন মায়ের চিকিৎসার খরচ অনেক। দাদা আগেই সস্ত্রীক সপুত্র আলাদা হয়ে মাঝে পাঁচিল তুলে বাড়িটার অর্ধেক ভাগ বুঝে নিয়ে দায়ভার এড়িয়েছে। এই অবস্থায় কোনমতে কলকাতার কলেজটাতে গেষ্ট লেকচাররের পদে যোগ দিয়েছে। ক্লাস হিসাবে বেতন পায়। ক্লাস না থাকলে পায় না।  আর কলেজের সিনিয়র স্যারের কোচিনে সন্ধ্যায় স্টুডেন্ট পড়িয়ে আর কতোই বা আয়। এদিকে দাদার সাথে অতীন্দ্রনাথদের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। এই অবস্থায় বোন ভগ্নীপতি আর প্রিয় ভাগ্নে, ভাগ্নীই অভিভাবকের কাজ করে তার

 বিবাহের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়।


দুই তরফে দেখাদেখির পরেও বিয়েটা ঝুলেই থাকে। ফোনে অতীন্দ্র কথা বলতে চায় কিন্তু ব্যস্ততায় প্রিয়াঙ্কা শুধু ম্যাসেজ পাঠায়। এভাবেই বেশ কিছুদিন কাটে। 

আসলে প্রিয়াঙ্কার টাকায় রাজ করছিল ওর দিদির ছেলে মেয়েরা। বালিগঞ্জের বিশাল সাবেকি বাড়িটাতেও সবাই অধিকার ফলাতে চায়। তাই প্রিয়াঙ্কার বিয়েটা হোক তারা মন থেকে চায় না। অতীন্দ্রনাথ শিক্ষিত হলেও তার চাকরি অনিশ্চিত। ওদিকে অতীন্দ্রনাথের মা শয্যাশায়ী হওয়ায় রান্নার মাসি না আসলে বাপ বেটাকে হাত পুড়িয়ে রাঁধতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রিয়াঙ্কা আর্থিক সুরক্ষা দিলেও গৃহকাজের ক্ষেত্রে পুরোপুরি অকেজো। তবুও অতীন্দ্রনাথ ক্ষীণ আশা নিয়ে ছিল। কিন্তু জেদ আর খামখেয়ালিপনার জন্য নিজে থেকে বেশী এগিয়ে যেতে পারেনি। আবার তাদের এই ভাঙা জোড়াতালি দেওয়া মুরারিপুকুরের বাড়িতে ওই বড়লোক বাড়ির মেয়ে এসে শেষমেশ মানিয়ে নেবে কিনা সেটাও চিন্তার বিষয় ছিল। 

সিনিয়র প্রফেসরের মিসেস, দীপ্তি বৌদি কোচিং এর ওই পড়ানোর ঘরেতেই ওদের দুটিকে একবার একাকী চেষ্টাচরিত্র করে মিলিয়ে দিতে চাইলেও  ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসে অতীন্দ্রনাথ। 

তাই ওদের যোগাযোগটা দীর্ঘ বিরতির পরে পরে হাই হ্যালোর মেসেজেই আটকে থাকে। প্রিয়াঙ্কা যদিও কখনো কিছু লেখে অতীন্দ্রনাথ ইমোজি দিয়েই সংক্ষেপে উত্তর সারে। এভাবেই চলছিল।


মাস ছয় সাত আগে লকডাউনের শেষে রাজ্য সরকারের বদান্যতায় সব গেষ্ট লেকচারারদের জন্য একটা নতুন পোস্ট ক্রিয়েট করা হয়। অভিজ্ঞতার নিরিখে ফিক্সড পে হিসাবে বেতন একত্রিশ হাজার থেকে ছত্রিশ হাজার টাকা পর্য্যন্ত নির্ধারণ হয় এই নতুন স্যাক্ট ওয়ান স্টেট এডেড কলেজ টীচার পদে। তখন থেকে প্রিয়াঙ্কার ইমোজি পোস্ট বেড়ে যায় অতীন্দ্রনাথের হোয়াটসঅ্যাপে। 


প্রতি রাতে একাকী প্রিয়াঙ্কার হোয়াটসঅ্যাপে ডিপির ছবিটাতে আদর-চুম্বন আঁকতে থাকে আর শারীরিক তাড়নায় এক অবদমিত অদ্ভুত তৃপ্তি লাভ করে অতীন্দ্রনাথ। আজও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। ঠিক রাত বারোটায় অন হয়ে আজ প্রিয়াঙ্কা হঠাৎই চুম্বনের ইমোজি পাঠায়। তীব্র আশ্লেষে স্খলনের মুহুর্তে অতীন্দ্রনাথের হাত লেগে চুম্বনের ইমোজি সেন্ড হয়ে যায়। সাথে সাথেই প্রিয়াঙ্কাও উত্তরে লাভ সাইন পাঠিয়ে দিল,আরে বাহ!


এরপর, এরপরে আবার কি? বাকীটুকু পাঠকই নিজে থেকে  বুঝে নিন।

আজ যে চুম্বন দিবস,চুমাচুমির দিন।