Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

মাতৃভাষার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে

মাতৃভাষার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
✍️সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 
আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি। ভাষা দিবস। না, শুধু ভাষা দিবস বলা ভুল। এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় দিনটি। সৌজন্যে বাংলা ভাষা। অর্থাৎ বাংলা ভাষার জন্য যে আন্দো…

 


মাতৃভাষার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে


✍️সোমনাথ মুখোপাধ্যায় 


আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি। ভাষা দিবস। না, শুধু ভাষা দিবস বলা ভুল। এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় দিনটি। সৌজন্যে বাংলা ভাষা। অর্থাৎ বাংলা ভাষার জন্য যে আন্দোলন ঘটেছিল সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে, অধূনা স্বাধীন বাংলাদেশে, তারই পূর্ণ প্রকাশ এই ভাষা দিবস। বর্তমানে বাংলাদেশে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় দিনটি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বইমেলা প্রভৃতি চলে গোটা ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে।


আপামর বাঙালির কাছে অত্যন্ত ভালোলাগার, গর্বের ও ভালোবাসার এই দিনটি। হতে পারে বাংলাদেশের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠতা মুসলিম ধর্মাবলম্বী, কিন্তু তাঁরা তো আদতে বাঙালি! মাতৃভাষা তো মাতৃদুগ্ধের সমান। মায়ের তো জাত ধর্ম হয় না! বাংলা যে মায়ের ভাষা! শরীরের তন্ত্রীতে দোলা দেওয়া অনুরণন! হৃদয়ের অভ্যন্তর থেকে উঠে আসা মিঠে সুরের অনাবিল পীযুষধারা!


১৯৪৭এ দেশভাগের ইতিহাস সকলের জানা। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া উর্দু মানতে নারাজ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষ। বঙ্গীয় সমাজে বাঙালি আত্মঅন্বেষা ঘা খায় এর ফলে। উন্মেষ ঘটে ভাষা চেতনার। ক্ষোভ জন্ম নিতে শুরু করে। তারই সূত্র ধরে ১৯৪৮এ আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে এবং তার চরম পর্যায়ে প্রকাশ ঘটে ১৯৫২তে। দিনটি রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউর। শহিদের রক্ত শুষে নিয়েছে ঢাকার মাটি। কিন্তু ব্যর্থ হয়নি আত্মবলিদান। ১৯৫৬তে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাকিস্তানের সংবিধানে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয় বাংলা।

পাশাপাশি আরো একবার ভাষা আন্দোলন ঘটেছিল। ১৯৬১তে স্বাধীন ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচরে। সমগ্র বরাক উপত্যকা জুড়ে। শহিদ হয়েছিলেন প্রায় ১১জন আন্দোলনকারী। আসামে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাংলাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির লক্ষ্যে,

১৯৯৮তে রাষ্ট্রপূঞ্জের মহাসচিব ডঃ কোফি আন্নানের কাছে প্রস্তাব পেশ হয়। প্রাথমিকভাবে ২৯টি দেশ সমর্থন জানায়। ২০০০ সালে, ১৮৮টি দেশের সমর্থনে, ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রপূঞ্জ।


যে ভাষার এই গৌরবজনক ইতিহাস, সেখানে বাংলা নিয়ে আমাদের অবহেলা পীড়া দেয় বইকি! বাংলা বলতে লজ্জা লাগে অনেক বাঙালির! অনেকে 'জাস্ট' বলতে পারে না! মাতৃভাষা ভুলতে চেয়ে প্রবলভাবে আন্তর্জাতিক হওয়ার কি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা! ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষিতদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি, মুক্তকন্ঠে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। তাঁরা কেউ কেউ 'এলিমেন্টরি বেঙ্গলি' পড়ে 'বিন্দাস' আছেন! 

অথচ ত্রিপুরা, মণিপুর, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা প্রভৃতি রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষ আছেন। বহুল আলোচিত মায়ানমারের রোহিঙ্গারা বাংলা ভাষায় কথা বলেন। আফ্রিকার সিয়েরা লিয়েনে দ্বিতীয় ভাষা বাংলা। এমনকি ইংল্যান্ডে পর্যন্ত দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃতি পেয়েছে! 


গোটা বিশ্বে প্রায় ৭০০ কোটি মানুষ কথা বলেন প্রায় ৬০০০টির মতো ভাষায়। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপূঞ্জের হিসেব অনুযায়ী, আগামী ১০০ বছরে ভাষার সংখ্যা কমে যাবে প্রায় অর্ধেক। অর্থাৎ বিলুপ্ত হতে চলেছে ৩০০০টির মতো ভাষা! আমাদের অবহেলা অনাদরে বাংলা কি আগামী ১০০ বছরে বিলুপ্তপ্রায় ভাষার তালিকায় নাম লেখাবে? আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রশ্নটি তোলা রইলো!

21/02/2021