সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
"ঔঁ সরস্বতৈয়ঃ নম "
-বিপুল মন্ডল।
তাং - ১৬.০২.২০২১.
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর- তিনটি ভিন্ন রূপ-একই পরমেশ্বর ---সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় - তাদের কর্ম -- বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড জানে জন্ম - জন্মান্তর। কল্পান্তে না…
সৃষ্টি সাহিত্য যাপন
"ঔঁ সরস্বতৈয়ঃ নম "
-বিপুল মন্ডল।
তাং - ১৬.০২.২০২১.
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর- তিনটি ভিন্ন রূপ-একই পরমেশ্বর ---
সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় - তাদের কর্ম -- বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড জানে জন্ম - জন্মান্তর।
কল্পান্তে নাকি সমুদয় জগৎ রুদ্র কর্তৃক সংহৃত হয়
প্রজা সৃষ্টি ও পালনে প্রজাপতি ব্রহ্মার অন্তর হতে সরস্বতী জন্ম নেয়।
বিশ্বভূবন প্রকাশ তারই জ্যোতিতে -
এই জ্যোতি জ্ঞানই ব্রহ্ম জ্ঞান - এই জ্যোতিই সরস্বতী।
অষ্টবিধা দেবীর - শ্রদ্ধা, ঋদ্ধি, কলা, মেধা, তুষ্টি, পুষ্টি, প্রভা ও স্মৃতি।
তন্ত্রে ঐ অষ্টশক্তি-যোগ, সত্য, বিমল, জ্ঞান, বুদ্ধি, স্মৃতি, মেধা ও প্রজ্ঞা।
ঋক্ বেদে বাক্-দেবী ত্রয়ী মুর্তি ভূ, ভুব:, স্ব - জ্যোতির্ময়ী রূপে সর্বব্যাপীনি।
হৃদয়ে আলোকবর্তিকা প্রজ্বলিত করেন -
অন্তরে বাহিরে সর্বত্র জ্বলতে থাকে জ্ঞানের পূন্য জ্যোতি।
শ্বেতবর্ণা, শ্বেতপদে আসীনা, মুক্তার হারে ভূষিতা, পদ্মলোচনা, বীণাপুস্তকধারিনী, হস্তে শ্বেতরুদ্রাক্ষের মালা, শ্বেতচন্দনচর্চ্চিতা, শুভ্রবর্ণা, শ্বেত অলংকারে ভূষিতা।
আলোকময়ী তাই তিনি সর্বশুক্লা, সত্ত্বগুণময়ী- সকল সংশয়ছেদকারিনী ও সর্বসিদ্ধিপ্রদায়িনী।
গতিময় জ্ঞানের জন্যই তাকে নদী রূপে কল্পনা করা হয়েছে।
যিনি প্রবাহরূপে কর্মের দ্বারা মহার্নব বা অনন্ত সমুদ্রে মিলিত হয়েছেন।
নদী তাই চিত্ত- চঞ্চলা ভাঙে আর গড়ে, বিশুদ্ধ জল বহন করে, জীবন - জীবিকা প্রদান করে -
নিরন্তর তার গতিপথ পরিবর্তন করে।
সাগর পানে ধায় সদাই অসীম - অনন্তে মিলিত হবার ত্বরে।
সরস্বতী নদীর তীরেই বৈদিক ও ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির উদ্ভব।
নদীমাতৃক সভ্যতা - সংস্কৃতিতে বৈদিক যুগে সরস্বতীই প্রধান নদী;
কল্যাণময়ী নদীতটে সাম্-গায়কেরা বেদমন্ত্র উচ্চারণে ও সাধনে নিমগ্ন হত।
সরস্বতী বিধৌত ব্রহ্মাবর্ত বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত আশ্রয় ক'রে সাধনা করত আশ্রমবাসী ঋষিগন; বেদ-শাস্ত্রের সূচনা ও রচনা ঐ সরস্বতী নদী তীরেই।
তীর্থ ভূমি গড়ে ওঠে নদী তীরে, সারস্বত যজ্ঞও হত নদী-পারে।
সেই ভাব নিয়েই জ্ঞানের প্রতীক স্বরূপ দেবী পুস্তক হস্তে-
গ্রন্থ রচনার সহায়ক লেখনীটিও তার সাথে।
মাদূর্গা শুম্ভ ও নিশুম্ভ অসূরদ্বয়কে বধ করেন-
এক কোশিকী দেবীর উদ্ভব হয় - যার অপর নাম সরস্বতী।
মোহদুষ্ট অসুরকে সেই রূপ দিয়ে অদ্বৈত জ্ঞান দান করেন।
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে দেবীর চতুর্হস্ত, দেবীর বাহন ময়ূর মোরা পূজি দ্বিজ-হস্ত সরস্বতী - বাহন রাজহাঁস ;
এই হংস বংশীয়রা নিস্পৃহ, নিরাসক্ত, যেন মহাযোগী, পাঁকে চললেও গায়ে পাঁক লাগে না,
পঙ্কিল আবর্তের অশান্ত জগৎ সংসারেও ভীষণ শান্ত চিত্ত, ধীশক্তিতে ভরপুর,
কোনও রিপুই তাকে গ্রাস করতে পারে না।
জলে স্থলে অন্তরীক্ষে সর্বত্রই হাঁসের সমান গতি - অনায়াস , বার মাস।
দুর্লভ ক্ষমতার অধিকারী হাঁসই সক্ষম জলকে বাদ দিয়ে, গ্রহণ করে শুধু সারবস্তু- দুধ বা ক্ষীরটুকুই - যেটুকু নির্যাস।
জ্ঞান সাধনাতেও হাঁসের এ স্বভাব তাৎপর্যময়।
ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণও নামাঙ্কিত হয়েছেন পরমহংস হিসেবে, প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ;
ভীষণ বাস্তববাদী জ্ঞান চেতনায় মায়ের সাধক হিসেবে আরাধ্য তাই ;
ভক্তি সাধনায় যাকে মানুষ ভরসা পায়, যার কোনো কালিমাই নাই।
বীণাপাণির হস্তে 'কচ্ছপী' নামক বীনার বড় মধুর সুর,
পূজার্থী বা বিদ্যার্থীর জীবন ছন্দময় সঙ্গীতময় হোক, মুখ নিঃসৃত বানীও হোক সুমধুর।
বসন্ত -পঞ্চমী বা মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমীতে মা আবির্ভূতা হন ;
পূজি মাগো, দিও সাড়া, জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে সত্যিকারের মানুষ করো।
যেন নির্লিপ্ত থাকতে পারি যেমন তুমি মহাবিদ্যা হিসেবে প্রান বা আত্মা স্বরূপ জীবদেহে অধিষ্ঠান করো ;
জীবদেহের কোন কিছুতেই তোমার আসক্তি নেই, তুমি নির্লিপ্তা হয়েই মলিনতা তমসা অজ্ঞানতা হরো।।