Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

।। সুনির্মল বসুর ছোটগল্প।।।। নীলাঞ্জনা, শুধু তোমার জন্য।।
নীলাঞ্জনার সঙ্গে দেখা বিশ বছর বাদে। আসলে, দুর্গাপুর থার্মাল প্রজেক্টের একটা কাজ দেখতে এখানে আসা। চিফ ইঞ্জিনিয়ার অনুতোষ চৌধুরীরঅনুরোধে তাঁর বাড়িতে আসতে হল নিরুপমকে। নীলাঞ্…

 


।। সুনির্মল বসুর ছোটগল্প।।

।। নীলাঞ্জনা, শুধু তোমার জন্য।।


নীলাঞ্জনার সঙ্গে দেখা বিশ বছর বাদে।

 আসলে, দুর্গাপুর থার্মাল প্রজেক্টের একটা কাজ দেখতে এখানে আসা।

 চিফ ইঞ্জিনিয়ার অনুতোষ চৌধুরীর

অনুরোধে তাঁর বাড়িতে আসতে হল নিরুপমকে। নীলাঞ্জনা যে অনুতোষ চৌধুরীর স্ত্রী, এটা জানা ছিল না ওর।

স্মৃতিতে ধাক্কা।

সেই নীলাঞ্জনা, নিরুপমের অতীত।

পরিচয়পর্ব সারা হল। নীলাঞ্জনার মধ্যে কোনো জড়তা নেই। নিরুপম স্বাভাবিক হতে পারছে না। স্মৃতি পিছু টানছে।

ভার্সিটিতে এক সঙ্গে পড়তো ওরা। সাহিত্য সভায় গল্প পড়তো নিরুপম। নীলাঞ্জনার বাবা কোম্পানির ডিরেক্টর। প্রতিদিন এম্বাসেডর চেপে আসতো ও।

নীলাঞ্জনা যথেষ্ট সুন্দরী। ছেলেদের পাত্তা দিত না। সেই মেয়ে একদিন যেচে আলাপ করতে এসেছিল নিরুপমের সঙ্গে।

আমিতো বন্ধন রায়ের প্রেমে পড়ে গেছি।

বন্ধন রায় নিরুপমের গল্পের নায়ক। সেই প্রথম আলাপ।

তারপর রাখালদের ক্যান্টিনে, কফি হাউসে, বসন্ত কেবিনে কতবার কথা হয়েছে, কত অসংখ্য বার। রাতে গোল দীঘির পাড়ে বসে চাঁদের আলোয় জ্যোৎসনায় ভিজেছে দুজন, কতদিন।

নীলাঞ্জনা স্বামীর সামনে অতীত পরিচয়ের কথা তোলেনি, নিরুপম উদাস থেকেছে।

এক সময় কফি মিষ্টি খেয়ে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।

বিকেলে পার্টিতে আবার দেখা।

অনুতোষ রিসেপশনে ব্যস্ত।

নীলাঞ্জনা কাছে এলো  নিরুপমের।

আবার দেখা হলো,

তাইতো,

কুড়িটা বছর পার,

জীবন তো রাজধানী এক্সপ্রেস,

হুম,

সেসব দিন মনে পড়ে,

পড়ে, না পড়াই ভালো,

কেন,

শুধু শুধু পুরনো ক্ষতে হাত,

দোষটা কার,

কারো নয়,

মানে,

দোষটা ভাগ্যের,

বিয়ে করেছো,

প্রেমহীন বিয়েতে আমার বিশ্বাস নেই, তাছাড়া সময় পাই নি,

নিজেকে কষ্ট দাও কেন,

জানিনা, বলতে পারব না,

আমি কিন্তু অপেক্ষা করেছিলাম,

জানি, আমার পায়ের তলায় তখন জমি ছিল না,

আমার বাড়ি থেকে বিয়ের চেষ্টা চলছিল, হয়ে গেল,

আর, সেই রাতে আমি কলকাতা থেকে পালিয়ে সোজা ধানবাদ,

খুব কষ্ট হয়েছিল, তাই না,

পুরুষের অক্ষমতা তুমি বুঝবে না,

জানি, তবু আন্দাজ করতে পারি,

ভালো হয়েছে, কেউ নেই, তাই কারো জন্য ভাবনার ঢেউ নেই,

তাই নাকি,

তুমি সুখী হয়েছো তো,

দেখে কি মনে হয়,

দেখে বোঝা যায় নাকি,

চলে যাচ্ছে বেশ,

মিস্টার চৌধুরী তো যথেষ্ট সফিস্টিকেটেড মানুষ।

তা ঠিক, তবে কি জানো, বিয়ে একটা অভ্যাস, একটা দায়বদ্ধতা, এই নিয়ে বেঁচে থাকা।

আমার মনে হয়, তোমাকে পাইনি বলে, তুমি রোজ আমার কাছে আসো, যখন তোমাকে দেখি না, তখন তোমাকে আরো বেশি করে দেখি,

কাজের সূত্রে আসো না এখানে,

না, ভাগ্য যে দেয়নি, তাকে ঘুরপথে পেতে চাইনা,

তুমি বদলে গেছো নিরুপম,

হবে হয়তো,

আমার তো সব মনে পড়ে,

কি,

সেই সব পুরনো দিনের স্মৃতি, সেইসব মায়াবী রাত, গড়িয়াহাটে সন্ধ্যেটা কাটানো, ঝিলের পাশে পাশাপাশি হাঁটা, আলেয়া সিনেমাতে উত্তম সুচিত্রার ছবি দেখা, সব সব,

আমি জানলে, এখানে আসতাম না,

আমি তো ভুলে থাকতে চাই, তুমি এসে আবার সব কিছু মনে করিয়ে দিলে,

নীলাঞ্জনা, এই ভালো। সেই সব দিনগুলো আমার জীবনের ওয়েসিস, স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা যায় বেশ,

তুমি পারো, আমি পারিনা,

তুমিও পারবে,

কিভাবে,

ঝরা ফুলের গন্ধ কেমন জানো, দেখবে তার মধ্যেও ভালোবাসার সুগন্ধ লুকিয়ে থাকে। আমাকে ভুলে যেও, আমাকে মনে রেখো না, স্বামী সংসার নিয়ে সুখে থাকো,

ততক্ষনে পার্টিতে ঘোষণা শোনা গেল, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস চৌধুরী, প্লীজ্ কাম অন স্টেজ।

নিরুপম দেখলো, নীলাঞ্জনা আর ওর স্বামী মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেল। ভালো লাগছে, ওদের দুজনকে।

ভালো থাকো তোমরা। সুখের বৃষ্টি আসুক তোমাদের জীবনে। সেই সব দিন রাত্রি গুলো আমার কাছে স্মৃতির সংগ্রহশালা হয়ে থাক, নিরুপম মনে মনে বললো।

ভালো থেকো নীলাঞ্জনা। সুখী হও।

নীলাঞ্জনা, আমি আর আসবো না। যেটুকু পেলাম, সেটুকুই আমার স্বর্ণ কমল সঞ্চয়, যা পেলাম না, তা হয়তো আমার ছিল না।

আমার নিঃসঙ্গ জীবনে সেদিনের স্মৃতি গুলো গভীর মমতায় আগলে রাখবো আমি, নিজেকে বোঝাবো,

কিছু হারায় নি আমি। ভালোবাসা হারায় না কখনো।

জীবনের বিভিন্ন মোড়ে বারবার শুধু তার অর্থ পরিবর্তন হয়। ঝরা ফুলের সুগন্ধ নিতে কজন জানে। যে জানে, সে জানে। তার কাছে বেঁচে থাকাটা প্রতিমুহূর্তে সানাইয়ের সুরের মতো  বেজে বেজে যায়।

কজন সেই সুরের মাহাত্ম্য শুনতে পায়, যে শুনতে পায়, তার বেঁচে থাকাটা অন্য মাত্রা পায়।

নিরুপম নিজেকে বোঝালো, নীলাঞ্জনাকে পেলে,

প্রতিদিনের ধূলিমলিনতায় হয়তো এই ভালবাসার

মর্যাদা নষ্ট হতো, অথচ, ওকে পায় নি বলে, আশ্চর্যজনকভাবে আজ ওদের সেদিনের ভালোবাসা চিরকালের ভালোবাসা হয়ে রইলো, এই পবিত্র ভালোবাসা স্মরণ করলে, এক জীবন পার করে দেওয়া মোটেই শক্ত নয়, নিরুপমের এরকমই মনে হল।

ততক্ষনে স্যান্ট্রো গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখে ও দ্রুত গতিতে শহরের হাইওয়ের দিকে ছুটে চললো।