Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

ভালোবাসা তুমি ভালোথেকো৷নবনীতা সই ছোটোগল্প 18,3,21
দিদি কেমন আছেন?চলছে লিখে, শ্রীপর্ণা অন্য মেসেজে চলে গেলো৷ কত লোকের কতরকম মেসেজ৷ কিছু মানুষ সারাদিন, শুভ সকাল থেকে শুভ দুপুর , সন্ধ্যা, রাত পাঠিয়ে যাচ্ছে ৷ কেউ নানান গান, কবিতায় ভর…



 ভালোবাসা তুমি ভালোথেকো৷

নবনীতা সই 

ছোটোগল্প 

18,3,21


দিদি কেমন আছেন?

চলছে লিখে, শ্রীপর্ণা অন্য মেসেজে চলে গেলো৷ কত লোকের কতরকম মেসেজ৷ কিছু মানুষ সারাদিন, শুভ সকাল থেকে শুভ দুপুর , সন্ধ্যা, রাত পাঠিয়ে যাচ্ছে ৷

 কেউ নানান গান, কবিতায় ভরিয়ে রেখেছেন৷ কিছু কিছু রঙিন মনের মানুষ প্রেম নিবেদন ও  করে এই পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়া শ্রীপর্ণা কে৷ 

 

খুব ভালো লাগে শ্রীপর্ণার এগুলো দেখতে৷ যখন ঘরের মানুষটা আজ অবধি শ্রীপর্ণার কোন লেখা পড়া তো দুরের কথা চেয়ে দেখলো না, সেখানে কত মানুষের কত রকম কথায় , ভালোলাগা তো থাকেই৷ 

হয়ত বেশীরভাগ বানানো স্তুতি , হয়ত অনেকে কোন স্বার্থে লিখেছে,  তবুও ভালোলাগে৷


 কিছু কিছু মেসেজ তো মন ছুঁয়ে যায়৷

 যখন অচেনা কোন গ্রামের মেয়ে বলে, দিদি কালো মেয়ের কাব্যকথা উপন্যাস টা একদম আমার জীবনী৷

 অথবা শহরের চোস্ত আধুনিকা কোন স্বনির্ভর মেয়ে রাতে মেসেজ করে বলে, আন্টি কি করে তুমি রনির গল্পটা লিখলে? জানো তো আমার ভালোবাসার মানুষটার নাম ও রনি৷

 কতকিছু মিলে যায়৷ আর আবদার গুলো পড়ে তো মাঝে মাঝে রাগ হয় আবার কখনও আপন মনেই হেসে ওঠে শ্রীপর্ণা৷ 

দিদি আমার বরটা খুব পাজি লিখবেন আমার কথা৷ দিদি আমার শাশুড়ি একদম আপনার লেখা বন্যার কান্না গল্পের শাশুড়ির মতন ৷ আমারও ইচ্ছা করে দি দু কথা শুনিয়ে৷ 


তাই অবসর পেলেই মেসেজ পড়ে শ্রীপর্ণা৷ আজ বেশ খানিকটা সময় পেয়েছে৷ রঞ্জিত গেছে অফিস পিকনিকে৷ না শ্রীপর্ণা কে বলেনি যেতে৷ আসলে প্রায় ষাট ছুঁইছুঁই রঞ্জিত জানে, শ্রীপর্ণা কে নিয়ে গেলে , গুরুত্ব বেশী শ্রীপর্ণা পাবে৷ রঞ্জিতের বস অবধি শ্রীপর্ণার গল্প- কবিতা  পড়ে৷ তাই বলেই নি ৷ শ্রীপর্ণা ও যেতে চায়নি৷ আজ কিছু মনের মতন লেখার ইচ্ছা আছে৷ নিজের জন্য৷ কিছু কবিতা ৷


 হঠাৎ  কিছু মেসেজ ঘাটতে ঘাটতে,  মেসেজ রিকুয়েস্টে দেখলো একটি মেয়ে বেশ কদিন যাবৎ ধরে অনেকগুলো মেসেজ করে গেছে৷ খুলে পড়তে থাকে শ্রীপর্ণা৷


দিদি আমি বনগাঁ থাকি৷ আপনি কেমন আছেন ?


দিদি আপনি আমাকে একটা গল্প লিখে দেবেন?


আবার কিছুদিন পর লিখেছে...

দিদি গল্প না হোক , একটা কবিতা? আমি তো লিখতে পারিনা৷ কিন্তু মনে কথা জমে আছে৷


দিদি কেমন আছেন ?


এমন অনেক মেসেজ৷ 

মেয়েটি অনলাইন ছিলো৷ শ্রীপর্ণা ওকে হাই বলতেই


 ৷ উত্তর দেয়৷ কেমন আছেন দিদি?


ভালো৷ তুমি কেমন আছো?


ভালো না৷ দিদি আপনার সময় হলে কিছু বলার ছিলো৷ প্লিজ শুনবেন?


হ্যাঁ বলো৷


দিদি আমি রূপসা৷ থাকি বনগাঁ ৷ একটি নার্সিংহোমে এখন কাজ করি৷ আমাকে একটা গল্প লিখে দেবেন দিদি?


কি গল্প বলো?


আমার জীবনের গল্প৷ কবিতা হলেও চলবে৷ আমি কলেজে একটি ছেলেকে ভালোবাসতাম৷ আমার সিনিয়ার ছিলো৷  পড়াশুনায় খুব ভালো ছিলো৷  আমি খুব ভালোবাসতাম৷ দুজনে কত স্বপ্ন দেখেছি৷ ৷ 

জানেন দিদি নিজে টিউশন করে আমি সুজয় কে বই কিনে দিয়েছি৷ ওর বাবা  নেই তো৷  আর আমি বাবার একটাই মেয়ে৷ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার হলেও বেশ আদরে মানুষ ৷ বাবা একটি ছোটো কারখানায় কাজ করেন৷


কি হলো তারপর?


বেশ ভালো ছিলাম দুজনে জানেন দিদি৷ সবকিছু শেয়ার করতাম ৷ সবসময় সুজয় বলতো, আমি দেখতে খুব একটা ভালো না , তোকে আমার সাথে বিয়ে দেবে তো?

আমি বলতাম , আমার বাবা খুব ভালো ৷ কোনদিন  আমাকে কষ্ট দেননি৷ 

কত স্বপ্ন দেখেছিলাম দিদি৷


এখন সুজয় কোথায় ?


বলছি দিদি৷ তারপর সুজয় পাশ করে গেলো৷ আমিও ওকে সাহায্য করা শুরু করলাম৷ লক্ষ্য একটাই , সুজয়ের একটা চাকরী৷ 

সুজয়ের চাকরীটা সুজয়ের শুধু বাঁচার নয়, আমাদের স্বপ্ন কে বাঁচানোর জন্য বড় দরকার ছিলো৷ দিনরাত সুজয় পড়তো৷ আমি ওদের বাড়িতে যেতাম৷ সুজয়ের মা খুব ভালো বাসতেন আমায়৷ আমিও বাড়িতে বলে দিয়েছিলাম ৷ 

বাবা কিন্তু কিন্তু করলেও রাজি হয়েছিলেন৷


বেশ ভালো তো৷ বিয়ে করে নাও৷


গল্প তো শেষ হয়নি দিদি ৷ খুব খাটলো সুজয়৷ প্রায় দুবছর ৷ আমি পাশ করে গেলাম৷ চাকরী আর হয়না ৷ বাবার শরীর ভালো না৷ বাবা ব্যস্ত হয়ে গেলেন আমার বিয়ের জন্য ৷ কিন্তু আমার পক্ষে তো অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব ছিলো না৷ আমি মন শরীর সবকিছু দিয়ে সুজয় কে ভালোবেসে ফেলেছি৷ তারপর আমি এই নার্সিংহোমের কাজটা পেয়ে গেলাম৷ বাবা বলেছিলো আরও পড়াশুনা কর ,  বিয়ে না করলে ৷

আমি কাজে ঢুকে গিয়েছিলাম কারন সুজয়ের পক্ষে একা আর সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিলো না৷ ওর মা সেলাইয়ের কাজ করতো৷ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তখন৷


আহা রে ! তারপর?


তারপর যখন বাবা খুব অসুস্থ হলেন৷ আমাদের মনটা খারাপ ৷ তখন  সুজয়ের চাকরী হয়ে গেলো হঠাৎ করে৷ 

দিদি কি যে আনন্দ পেয়েছিলাম৷ মনে হয়েছিলো জীবনের সব আশা পূর্ণ হয়ে গেছে৷ 


বাহ্ দারুন  ৷ যাক কাজ তো পেলো৷


ঠিক৷ কিন্তু চাকরী পেয়ে সুজয় চলে গেলো৷ আমাকে বলে গেলো খবর দেবে৷ আর কোনদিন খবর পাইনি৷ আমার বাবা কে বলিনি৷ বলেছিলাম ট্রেনিংয়ে গেছে৷ ফিরেই বিয়ের ডেট ঠিক করবে৷  আমার বাবা ও পরম শান্তিতে চোখ বুজেছিলেন৷  


এমা কোথায় গেলো?


জানিনা৷ এখানে ভাড়া থাকতো৷ ঘর ছেড়ে মা কে নিয়ে গিয়েছিলো৷ আমাকে তো ঠিকানা বলে যায়নি৷ 


ফিরতে তো পারে৷


আর ফিরবে না দিদি৷ আমার এক বান্ধবী কে নাকি বলে গেছে, যে মেয়ে সামাজিক বিয়ের আগেই আমাকে সবকিছু দিয়ে দিয়েছে, তাকে ঘরের বৌ করা যায় না৷ 


আমি মা কে কিছু বলিনি৷ 

তবে মা বুঝে গেছে৷ মা তো৷ 

মা আর আমি ভালোই আছি৷ আমাদের নিজেদের বাড়ি৷ আয় করি৷ দুজনে খুব ভালো আছি৷ তাই চাই আপনি আমার জন্য একটা কবিতা লিখুন৷ সুজয় ও যেন ভালো থাকে৷ 


তোমার রাগ হচ্ছে না?


না দিদি৷ আমি তো ভালোবেসেছি৷ আমি চাই আমার ভালোবাসা ভালো থাক৷ 


আচ্ছা লিখবো৷ আজ তাহলে রাখি?


হ্যাঁ দিদি৷ অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার সবকথা শোনার জন্য৷


ভালোথাকো ৷ 


লিখলে আমাকে ট্যাগ করবেন৷ আমি আপনার ফ্রেন্ড লিস্টে আছি৷ মোটামুটি সব পোষ্টে কমেন্ট করি৷ আসলে আপনার অনেক পাঠক পাঠিকা তো৷


হ্যাঁ সে তো জানোই , সবাই কে উত্তর দেওয়া হয়না৷ ভালো থেকো৷


আপনিও ভালো থাকবেন দিদি ৷ আপনার কলমে আমাদের কথা বলবেন৷ 


মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো শ্রীপর্ণার৷ কিন্ত আবছা স্মৃতিতে একটা মুখ কি ভেসে উঠলো না?

না না শ্রীপর্ণা মনে করতে চায়না৷ সে কোন অন্যায় করেনি৷ জীবনে সেই মুহূর্তে ডিশিসান টা সঠিক ছিলো৷ সুজন ও তাই বলেছিলো৷ আমার জন্য অপেক্ষা করিস না ৷বিয়ে করে নে৷

 শ্রীপর্ণা তো বেইমানি করেনি৷ না না ঐ সুজয়ের সাথে শ্রীপর্ণার  কোন মিল নেই ৷ সুজয় না বলে চলে গেছে৷ শ্রীপর্ণা কে  সুজন নিজেই অনুমতি দিয়েছিলো৷ সুজন জানতো ওর চাকরী পাওয়া অবধি শ্রীপর্ণার  বাড়ির লোক বসিয়ে রাখবে না৷ 


আর শ্রীপর্ণা কি নিজেই বসে থাকতে  চেয়েছিলো? অত ভালো চাকরী করা পাত্র ৷ যেদিন শেষ দেখা হয় সুজনের সাথে৷ সেদিন ছটপট কি করেনি শ্রীপর্ণা ? সুজয়ের সেই অনুমতির পিছনে কতটা অসহায় অবস্থা ছিলো সেটা কি শ্রীপর্ণা জানতো না?  অনেকটা নিজের জীবনের মতই মনে হচ্ছে ঘটনাটা শ্রীপর্ণার৷ 


ক্লান্ত পায়ে হেঁটে বিছানায় বসে শ্রীপর্ণা৷ কোনদিন খোঁজ সে নেয়নি সুজনের৷ সত্যিই সুজন তাকে ভালোবাসতো৷ আর জীবনের প্রায় তিনকাল কাটিয়ে শ্রীপর্ণা ও চায়, সুজন যেখানে থাকুক ভালো থাকুক৷ 


শ্রীপর্ণা কবিতার খাতাটা টেনে নেয়৷ 

লেখা শুরু করে৷


ভালোবাসা তুমি ভালো থেকো


প্রতিদিন ভোর মেখে , আলতো আবদারে ডুবে থেকে, ভালোবাসা তুমি ভালো থেকো৷

 

সকালের নরম আলোয়, মিলেমিশে মন্দ-ভালোয় ভিজিয়ে নিও তোমার ভাবনা গুলো৷ 


দুপুর দুপুর অনামী ইচ্ছাগুলোর,ডানা মেলো রোজের খাতায়, তবুও  ভালোবাসা তুমি ভালোথাকো৷


অলস কার্নিশে যখন ক্লান্ত রোদ শেষ নির্যাস টুকু ঢেলে দেবে, তুমি দেবদাসের পাতায়  মুখে গুজে নেবে৷  ভালোবাসা তুমি অশ্রু রেখো ভালোবাসার দুঃখ কথায়৷ 


দিনের শেষে শ্রান্তি এসে ভিজায় যদি মনখানিকে, তুমি সন্ধ্যাতারায় দিক খুঁজো, তবুও ভালোবাসা তুমি কিন্তু ভালোথেকো৷


জোছনা পোড়া রাতের আলোয়, তুমি তোমার  সজনী কে রেখো ভালো৷ নিঝুম রাতের গল্প কথায় ভালোবাসা তুমি থেকো ভালো৷ 


আমাকে রেখে অনেকদুরে, বেঁধেছো প্রেম অন্যসুরে , তবুও তোমায় বলবো শুধু, ভালোবাসা তুমি ভালোথাকো৷


শেষ৷