Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-যাপন-দৈনিক-সেরা-লেখনী-সম্মাননা

#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন#বিভাগ_গল্প#জীবনের_দান#মৃন্ময়_সমাদ্দার#তারিখ_০২/০৩/২০২১স্টেশনের পাশে বস্তি। স্টেশন থেকেই দেখা যায়। বস্তিটাতে প্রতিটি বাড়ি,মনে হয় একে অপরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। এক বাড়িতে কথা বললে অন্য বাড়ি থেকে শোনা যায়।…

 


#সৃষ্টি_সাহিত্য_যাপন

#বিভাগ_গল্প

#জীবনের_দান

#মৃন্ময়_সমাদ্দার

#তারিখ_০২/০৩/২০২১

স্টেশনের পাশে বস্তি। স্টেশন থেকেই দেখা যায়। বস্তিটাতে প্রতিটি বাড়ি,মনে হয় একে অপরের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। এক বাড়িতে কথা বললে অন্য বাড়ি থেকে শোনা যায়। বেশিরভাগ বাড়ি দরমার বেড়া দিয়ে তৈরি। মাথার ওপর টিনের চাল। প্রায় প্রতি বাড়িতেই জনা চার পাঁচেক লোক থাকে। মানে এক একটা পরিবার। ট্রেনের যাত্রীরা প্রায়ই বলে ওদের অনেকেরই বড় বড় বাড়ি কেনা আছে কলকাতায়। সেগুলো সবই ভাড়ায় দেওয়া। ভাড়ার টাকায় এদের সংসার চলে। এদের মধ্যে অনেকেরই ঘরে টিভি ফ্রীজ সবই আছে। 

এ রকমই একটি বস্তিতে রমেশ ও তার মা বিমলাদেবি থাকেন। বিমলাদেবি বিধবা হয়েছেন প্রায় বছর তিরিশেক। রমেশের বাবা দুদিনের জ্বরে মারা গেছিল। অর্থাভাবে চিকিৎসাটুকুও করাতে পারেননি বিমলাদেবি। তবে ওদের মধ্যে আত্মসম্মান প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। রমেশের বাবা যখন অসুস্থ হলো তখন কারোর কাছে হাত পাততে পারেননি বিমলাদেবি। রমেশ তখন খুবই ছোট। ওর তখন বুঝবার মতন বয়সও হয়নি। কিন্তু ও বুঝতে পারছিল যে ওর বাবা অসুস্থ। যখন ওর বাবা মারা গেল তখন ওর মাকে কাঁদতে দেখে ও-ও কেঁদে উঠেছিল। বস্তির লোক জনেরা মিলেই রমেশের বাবার শেষকৃত্য করেছিল। ওদের বস্তির লোকেরাই রমেশকে দিয়ে সব রকমের কাজ করিয়ে নিয়েছিল। এই অবস্থায় রমেশের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল। কিভাবে সংসার চলবে তাই নিয়ে বিমলাদেবি চিন্তিত হয়ে পড়লেন।একদিকে স্বামী হারাবার দুঃখ অন্যদিকে সংসার চালাবার চিন্তা সব মিলিয়ে বিমলাদেবি অকূলপাথারে পড়লেন। যাইহোক মাসখানেক কোনরকমে কাটাবার পর বিমলাদেবি একটা হোটেলে বাসন-কোসন মাজা ঘষার কাজ নিলেন। সে কী দুঃসহ জীবন যন্ত্রণা। সেকি আর্থিক দারিদ্রতা। কিন্তু তবুও শিরদাঁড়া সোজা করে এগিয়ে চলেছেন বিমলাদেবি। ছেলেকেও সেভাবেই তৈরি করছেন। 

প্রতিদিন ভোর বেলা উঠে রমেশের জন্য খাবার দাবার তৈরি করে হোটেলে চলে যেতেন। সারাদিন সেখানে কাজবাজ করে রাতের দিকে ঘরে ফিরতেন একদম ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে। রমেশ মায়ের জন্য সারাদিন অপেক্ষা করত। মা ফিরলে পরে মায়ের সাথে গল্প করতে থাকলে বিমলাদেবি ক্লান্তির কারনে ঘুমিয়ে পড়তেন। রমেশও হতোদ্যম হয়ে পড়তো আর হোটেল থেকে মায়ের নিয়ে আসা খাবার খেয়ে মায়ের পাশেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তো। এভাবে চলতে চলতে বছর আটেক কেটে গেল। রমেশ এখন মোটামুটি ভাবে বছর ষোলোর হয়ে গেছে। ওর মা বিমলাদেবি হোটেলে কাজ করে,কিছু কিছু করে,অনেকটা টাকা পয়সাই জমিয়েছিলেন। সেই টাকা পয়সা দিয়ে একটা অটোরিকশা কিনলেন। এবার বিমলাদেবি অটো চালনা শিখে নিলেন আর নিজেই অটো চালাতে শুরু করলেন আর অটো চালনা শুরু করার পর হোটেলের কাজটা ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই ভোরবেলা উঠে অটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন আর ফেরেন সেই রাতে। এই সময়ের মধ্যে উনি হিসেব করে দেখলেন প্রথম মাসে অটো চালিয়ে সব খরচ খরচা বাদ দিয়ে প্রায় হাজার বিশেক টাকা আয় করেছেন যা হোটেল থেকে কয়েক গুণ বেশি। এদিকে মাকে সারাদিন খাটতে দেখে রমেশও একটা দোকানে কাজ নিল। ওখান থেকে মাস গেলে হাজার পাঁচেক টাকা পেত। এছাড়া দুপুরে যখন দোকান বন্ধ থাকত তখন রমেশ গাড়ি চালনা শিখলো। আবার ওর মায়ের জমানো টাকা দিয়ে একটা ট্যাক্সি কিনল। রমেশই চালাতো ট্যাক্সিটা। দোকানের কাজটা রমেশ ছেড়ে দিল। একদিকে বিমলাদেবি অটো চালিয়ে উপার্জন করছেন আর অন্যদিকে রমেশ ট্যাক্সি চালিয়ে উপার্জন করতে লাগলো। তখনো ওরা সেই বস্তিতেই থাকতো। তবে এখন ওদের ঘরবাড়ি অনেক উন্নত হয়েছে। ধীরে ধীরে সেই অন্ধকারময় দিনগুলো কাটতে শুরু করেছে। 

এভাবে চলতে চলতে প্রায় বছর পাঁচেক পর আবার জমানো টাকা দিয়ে ওরা একটা জমি কিনলো। জমি কিনে ওরা একটা বাড়ি করল। বস্তির ঘর ছেড়ে দিয়ে নিজেদের বাড়িতে উঠে এলো। ওদের দুজনের কাজের কারণে ঘরে টাকা-পয়সার যোগান অব্যাহত থাকল। এতে করে ওরা আবার টাকাপয়সা জমাতে শুরু করলো। টাকা পয়সা জমিয়ে ওরা এবার একটা লরি কিনলো। লরির জন্য ন্যাশনাল পারমিট বের করল। লরির জন্য একজন ড্রাইভারও রাখল। লরির ভাড়াও ওদের ঘরে আসতে থাকলো। একদিকে অটো, ট্যাক্সি এবং লরি সব জায়গা থেকেই আয় হতে লাগলো ওদের। ওদের পুরো জীবনযাত্রা পাল্টে গেল। এখন ওরা আর্থিক দিক দিয়ে পুরো স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। ওরা ওদের জমানো অর্থ দিয়ে একের পর এক লরি কিনতে লাগলো। এভাবে দশ দশটা লরি কিনল ওরা। গাড়ির ব্যবসায় পুরোপুরি নিয়োজিত হয়ে গেল ওরা। লরি গুলোকে রাখবার জন্য একটা জায়গা কিনে গাড়ি রাখার জায়গা তৈরি করল। এদিকে বেশ কয়েকটা বিলাসবহুল বাস ও ট্যাক্সিও কিনলো। যেগুলো ওরা ভাড়ায় খাটায় এবং একটা মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করে। এখন ওরা মানে বিমলাদেবি ও রমেশ কেউই আর অটো বা টাক্সি চালায় না। 

এক সময় যে বিমলাদেবি অন্যের হোটেলে বাসন মেজে জীবন শুরু করেছিলেন আজ তার ঘরে চার-পাঁচজন পরিচারিকা কাজ করে। এদিকে ব্যবসা দেখভাল করার জন্য রমেশ একটা কোম্পানি খুলল। যে কোম্পানিতে বর্তমানে প্রায় শ'খানেক কর্মচারী কাজ করে। এক সময় যাকে অন্যের দেওয়া খাবার খেতে হতো আজ সেই রমেশ শখানেক লোকের পেটের খাবারের যোগানদার। এভাবে ব্যবসায় মনোযোগ দিতে গিয়ে রমেশের প্রায় সাইত্রিশ আটত্রিশ বছর হয়ে গেছে। বিয়ের কথা মাথাতেই আসেনি। ব্যাবসা বাড়াবার চিন্তায় ওদিকে আর মাথা গলায় নি।ওর মাও এখন অনেকটাই শ্লথ হয়ে গেছেন বয়সের কারণে। উনি এবার রমেশকে বিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। বছর খানেকের মধ্যে রমেশের বিয়ে হয়ে গেল। মা ও বউ নিয়ে সুখেই সুখে শান্তিতে সংসার করছে রমেশ।